সন্দেহ পর্বঃ ১ থেকে ৫

0
4088

সন্দেহ
সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ ১ থেকে ৫
.
.
.
পর্বঃ ১
.
.
সাদা লেপের কভার টা লাল হয়ে গেছে।
জায়গায় জায়গায় রক্তের দাগ লাগছে।
চুপচাপ কুকড়ে শুয়ে আছে অনু।
চোখ দিয়ে পানি তো ঝড়ছেই।
পাশের চেয়ারেই বসা নিলয়। চোখে মুখে বিশাল বিরক্তিকর ভাব। হাত থেকে বেল্ট ফেলে দিলো।
ঘেমে নেয়ে একাকার সে।
রাগ তখন ও কমে নি। মনে হচ্ছে চিবিয়ে খাবে সে অনু কে।
.
বেল্টের আঘাত যে এতটা কষ্টকর জানতো না মেয়েটা। ভালোভাবে উঠে বসা তো দূর ঠিকঠাক শুয়েও থাকতে পারছে না৷
আবার ভয়ে ভয়ে আছে। এই বুঝি নিলয় আবার এলো।
ঘর অন্ধকার করে দিয়ে নিলয় চলে গেছে।
মরলে মরুক না! তার কি দায়?
ওমন মেয়ের মরাই উচিৎ।
বিয়ে করবে একজন কে আর সংসার পাতবে অন্য জন কে নিয়ে? না তা হয় না।
নিজের বউ কে কিভাবে শায়েস্তা করতে হয়, নিলয় জানে।
.
.
অনু খুব চাইছে উঠতে। পারছে না ।
আজ ইচ্ছে মতো মারছে নিলয় তাকে৷
কেউ এসে ধরলো না , বাধা দিলো না।
লাথি, ঘুষি, শেষে বেল্ট দিয়ে পেটানো।
মেয়েটা যদি মরে যেতো?
অনুরুপা, নিলয়ের বৈধ স্ত্রী।
কালেমা পড়ে, রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হয়েছে।
নিলয় ব্যাংকে চাকরি করে আর অনু লেখাপড়া করতেছে।
মামার পছন্দে বিয়ে। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে অনু।
নিলয়ের ফ্যামিলি ও একই ।
খুব ধুমধাম করে না হলেও স্বাভাবিক ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হয় তাদের।
বেশ ভালোই তো চলছিলো দিন কাল। জয়েন্ট ফ্যামিলি নিলয়দের৷ এক বোন তিন ভাই । বোন মেডিক্যাল স্টুডেন্ট । বড় ভাই ব্যবসা করে ছোট ভাই লেখা পড়া৷ বড় ভাবি সারাদিন এ কাজ ও কাজ করে৷ বাচ্চা কাচ্চা নেই। নানা কাজে ব্যস্ত থাকে, ছোট বিয়ে করেনি। শ্বশুর শ্বাশুড়ি আছে। সারাদিন টুকিটাকি কাজ, পড়ালেখা, নিলয়ের জন্য অপেক্ষা, দিন শেষে পরিপূর্ণতা।
.
কিন্তু আজ? আজ হঠাৎ কি হলো নিলয়ের?
সকালে যখন নিলয় বাসায় থেকে অনুকে নিয়ে কলেজে দিয়ে গেলো তখন তো সব ঠিক ছিলো।
কিছুক্ষণ আগে নিলয় বাসায় ফিরিছে। অনু তার কিছুক্ষণ আগে।
বাহিরে যে গরম পড়েছে না? এসেই ওয়াশ রুমে গিয়ে লম্বা শাওয়ার নিয়ে এসে ব্যালকনিতে কাপড় মেলছিলো।
শাওয়ার নেওয়ার পর মুড অটোমেটিক ভালো হয়ে গেছে৷
আনমনে গান গেয়ে উঠে অনু
-শোন গো দখিনো হাওয়া, প্রেম করেছি আমি
লেগেছে চোখেতে নেশা দিক ভুলেছি আমি
শোন গো দখিনো হাওয়া, প্রেম করেছি আমি
মনেতে লুকানো ছিল সুপ্ত যে পিয়াসা
জাগিল মধু লগনেতে বাড়ালো কি আশা
মনেতে লুকানো ছিল সুপ্ত যে পিয়াসা
জাগিল মধু লগনেতে বাড়ালো কি আশা
উতলা করেছে মোরে, আমারি ভালবাসা
অনুরাগে প্রেম সলিলে ডুব দিয়েছি আমি
শোনগো মধুর হাওয়া প্রেম করেছি আমি
.
.গান শেষ করার আগেই নিলয় টেনে হিচড়ে ঘরে নিয়ে এসে মারলো।
খুব মারলো। বিয়ের পর আজ প্রথম অনুকে সে মারলো।
.
.
রাত তখন অনেক। নিলয় ফিরে এসেছে। এতক্ষণ বাহিরে সিগারেট এর পর সিগারেট খেয়েই চলেছে।
রুমে এসে দেখে অনু বিছানায় শুয়েই আছে। তফাত শুধু এটাই যে মেরে বিছানায় লেপের উপরে ফেলে গিয়েছিলো আর এখন লেপের নিচে।
ঘুম ঘুম অনু কে দেখে নিলয়ের রাগ আরো বেড়ে গেলো।
চুলের মুঠি ধরে টেনে খাট থেকে নামিয়ে ছাড়লো
অনু- এমন করছেন কেনো? কি করেছি আমি?
নিলয়- কি করেছিস? আগে বল কোথায় ছিলি?
– কলেজে ছিলাম। আপনি জানেন তো!
– যদি কলেজে থাকিস তাহলে ফিরে এসেই শাওয়ার নিলি কেনো? কার সাথে ছিলি বল? কার সাথে নষ্টামি করে এসেই গোসলে গেছিস?
.
.
পর্বঃ ২
.
.
নিলয়ের কথার কি উত্তর দিবে বা দেওয়া উচিৎ জানা নেই অনুর।
এতটা সন্দেহ? শুধু মাত্র গোসল করার জন্য?
.
সারা দিন ল্যাব ক্লাস ছিলো। ফরমালিনের বাজে গন্ধ, তার উপর ফাল্গুনে টান পড়েছে।
কখনো গরম, কখনো ঠান্ডা।
কিন্তু আজকে গরম বেশিই ছিলো। তাই এসে গোসল করেছে।
কোন খারাপ মতলব ছিলো না। আর এসব কেনোই বা মনে হবে।
নিজেকে সাফাই দেওয়ার কোন প্রয়োজন মনে করলো না।
কিছু বলার থাকলে তো বলবে।
.
.
অনু কে চুপচাপ থাকতে দেখে নিলয়ের আরো রাগ হচ্ছে।
বেহায়া মেয়ে মানুষ ।
ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো অনুকে।
চুপচাপ ফ্লোর থেকে উঠে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।
.
নিলয় ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসতেই ভাবি এসে পাশে বসলো। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
.
ভাবি- কিছু বললো?
নিলয়- না।
– আগেই বলেছিলাম সামাল দেও। এত লাই দিয়ো না, শুনো নাই। এখন বুঝো।
.
রাগে নিলয়ের মাথা কাজ করছে না। কেনো সে শুনেনি। আগে থেকেই কেনো নজরে রাখেনি সে।
রাগ করে বেরিয়ে যেতে নিলেই ভাবি হাত ধরে টেনে নিয়ে ড্রয়িং টেবিলে বসিয়ে দেয়।
– খেয়ে নাও।
– খাবো না আমি।
– আমি বলছি তো। পরে দেখছি ওই ব্যাপার টা।
দেখি হা করো।
.
ভাবি। নিলয় খাইয়ে দিচ্ছে।
নিলয় ভাবীর বাধ্যগত হয়ে খাচ্ছে।
ইরা। ভাবীর নাম ইরা।
সম্পর্কে নিলয়ের ফুপাতো বোন হয়। দুজন সমবয়সী হলেও ইরা নিলয়ের ছোট। নিলাশা রহমান ও
আশরাফুল ইসলামের তিন ছেলে, এক মেয়ে।
বড় ছেলে নীলাভ্র, মেঝ ছেলে নিলয় ছোট ছেলে নীল আর মেয়ের নাম আশা।
নীলাভ্রর স্ত্রী ইরা। বিয়ে হয়েছে ছয় বছর৷ নীলাভ্র বাবার ব্যবসা দেখাশুনা করে, নীল ব্যাংকে জব করে আর নীল লেখা পড়া।
ছোট বেলা থেকেই ইরার নিলয়ের প্রতি আলাদা একটা মায়া জন্মে গেছে।
মায়া না ভালোবাসা।
নিলয়ের প্রেমে তো অনেক আগেই মরে গেছে সে।
শুধু বেঁচে আছে তাকে দেখেই।
.
.
নীলের খাওয়া শেষে নীল চুপচাপ বাহিরে চলে যায়।একটা বার জিজ্ঞেস ও করলো না ইরা খেয়েছে কি না।
আচ্ছা ছেলেটা কি কখনো ওকে বুঝবে না?
ওর মুখের দিকে তাকিয়েই তো বেঁচে আছে সে।না হলে ভালোবাসার মানুষের বড় ভাই বউ হয়ে থাকা যে কতটা বেদনাদায়ক তা যদি বুঝতো তাহলে ইরাকে নিজের থেকে কখনো আলাদা করতো না নীল।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিলয়ের রেখে যাওয়া খাবার টা খেয়ে নেয় ইরা।
আজ অনেক দিন পর এটুক খেতে পারলো।
অনুর জন্য তো এটাও পারে না সে।
এই একটু এটো খাবারের জন্য কতই না কাঠকয়লা পুড়াতে হলো ইরা কে।
.
.
.অনুর সারা দিনের খবর নিয়ে নিলয় জানতে পারলো তেমন কিছুই সে করেনি।
ক্লাসেই ছিলো। তবে কি কেউ তাকে ভুল খবর দিয়েছিলো?
নাহ্ হয়তো ভাবীর বান্ধুবী দেখতে ভুল করেছিলো।
অনু ক্লাসেই ছিলো। কোন ছেলের সাথে হোটেলে না।
এক ড্রেস তো অনেকেই পড়তে পারে৷
নিলয় বড্ড ভুল করে ফেলেছে।
.
.
রুমে এসে দেখে অনু গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে।
মেয়েটা সুন্দরী । না অপরুপ সুন্দরী ।
ওর মাঝে ডুবে গিয়ে কূল পায় না নিলয়৷ বড্ড বেশি ভয়ংকর রকমের কষ্ট হচ্ছে নিলয়ের।
অনুকে মেরেছে সে।
মুখের উপর চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে কপালে চুমু দিলো। গভীর ভাবে। চোখের পানি গিয়ে অনুর গালে পড়লো। সারা গায়ে কালসিটে দাগগুলো স্পষ্ট ।
ড্রয়ার খুলে মলম নিয়ে এগিয়ে গেলো বিছানার দিকে।
দরজা খোলা ছিলো। আবার কি মনে করে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে উপর করিয়ে শুইয়ে আস্তে আস্তে মলম লাগাচ্ছিলো।
হঠাৎ অনু কেঁদে উঠে। জ্বলতেছে খুব।
– ঠিক হয়ে যাবে। মোনাবউ একটু সহ্য করো।
– উঁহু। পারছি না। জ্বলছে।
.
নিলয় কোন সুযোগ না দিয়ে পুরো ভর ছেড়ে দেয় অনুর উপর।
কানে ফিসফিসিয়ে বলে
– তবে বিষে বিষে বিষক্ষয় হোক।
.
.
দরজার পাশে দাড়িয়ে সবটা শুনলো ইরা।
নিলয় কেনো অনুকে আদর করছে? তাহলে কি নিলয়ের ভুল ভেংগে গেলো?
না এ হতে পারে না। নিলয় শুধুই ইরার । হোক না নিষিদ্ধ চাওয়া তবুও ইরার বেঁচে থাকার কারণ তো।
.
.
নীলাভ্রর বাসায় আসতে আসতে প্রায় রাত দেড়টা।
নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হয়। মেয়েটা তার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে।
ইরার গালে হালকা স্পর্শ করতেই ইরা রেগে উঠে বলে
– রাত বিরেতে এমন আদিক্ষেতা ভালো লাগে না।
যাও, যাও তো। খাবার বাড়া আছে খেয়ে নাও।
.
নীলাভ্র কিছু বলে না। চুপচাপ উঠে ফ্রেশ হয়ে এগিয়ে যায় ডায়নিং রুমে।
.
পর্বঃ ৩
.
.
.
সকাল হতেই অনুর ঘুম ভাংলো। পাশেই নিলয়। ওর মুখ দেখে কাল সব কথা মনে পড়ছে।
প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে। কান্না করলেই এমন হয়।
লম্বা শাওয়ার নেওয়ার পর বেরিয়ে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ায় অনু।
সারা গায়ের অনেক জায়গায় দাগ পড়েছে। নীল, কালো হয়ে আছে।
কিন্তু এখন তাকে বাহিরে যেতে হবে।
বাড়ির বউ বেলা করে ঘুমালে চলবে না।
কিন্তু দাগ গুলো?
যতটা পারলো ঢেকে নিলো কাপড়ে, বাকী টা কনসেলার ফিয়ে। যাক মেকাপ নামক জিনিস টা আজকে কাজে লাগলো।
.
.
.
আজকে ছুটির দিন। সবাই বাসায়। ইরা সকাল থেকে রান্না গুছিয়ে রাখছে।
অনু রান্নাঘরে যেতেই দেখলো মেয়েটার চুল দিয়ে পানি পড়ছে।
একবার চিন্তা করলো৷ জিজ্ঞেস করবে? নিলয়ের কথা?
আবার ভাবলো থাক না হলে ওকে সন্দেহ করতে পারে।
.
.
দুই বউ মিলে সকালের খাবার জলদি বানিয়ে ফেলেছে৷
নিলয়ের কফি নিয়ে অনুকে যেতে বলে শ্বাশুড়ি। কিন্তু অনু চাইছে না নিলয়ের সামনাসামনি হতে। তাই সে ইরা কে বলে
– আপু তুমি দিয়ে আসো। আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি, আর হাতেও তো আটা লেগে আছে।
.
ইরা যেনো অপেক্ষা করছিলো। কফির মগ নিয়ে এগিয়ে গেলো রুমের দিকে।
.
.
নিলয়ের ঘুম কেবল ভেঙেছে। কাল রাতের জন্য সে অনুতপ্ত। খুব ভুল করেছে। উঠতে গিয়ে খেয়াল হলো কেউ আসছে।
নিশ্চয়ই অনু। আবার চুপচাপ শুয়ে পড়লো।
কফির মগ রেখে দাড়িয়ে আছে ইরা৷
নিলয়ের ফর্সা গলার দিকে।
নাহ্ এখানে থাকলে কষ্ট আরো বাড়বে।
চলে যেতে নিলেই নিলয় টান দিয়ে খাটে নিয়েই মুখ ডুবায় গলায়।
.
কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে নিলয়ের বুঝতে যে এটা অনু না। কারণ অনুর সুবাস এমন নয়৷
মুখ তুলে তাকিয়ে ইরা কে দেখেই যত দ্রুত সম্ভব উঠে পড়ে সরি বলতে থাকে।
ইরা কিছু বলে না চুপচাপ চলে যায়।
কিছু না বলেই ইরা ওয়াশরুমে গিয়ে কাদঁতে থাকে।
.
নিয়তি কেনো তাকে নিয়ে খেললো? কি হতো নিলয়ের বউ বানিয়ে এ বাড়িতে আনলে?
চিৎকার করে কাদঁতে থাকে। নিলয়ের এই একটু কাছে আসা যে আরো পোড়াবে।
.
.
দুপুরের রান্না করছিলো অনু।
কষ্ট হচ্ছিলো কিন্তু মা কে কিভাবে বলবে সাহায্য করতে আর ইরা ভাবীর না কি শরীর খারাপ।
নিজে একা সব করতে হিমশিম খাচ্ছে তবুও করছে।
আজ সারা দিনেও সে নিলয়ের সামনে পড়েনি। ভুলেও না।
.
অনু মাছ খায় না। কাটতেও পারে না। এ নিয়ে মা সেই কখন থেকে কথা শোনাচ্ছে। কি করবে সব মিলিয়ে যাচ্ছে তাই অবস্থা।
.
রান্না শেষ হতে হতে দুটো। টেবিলে খাবার দিয়েই গোসলে গেলো অনু। দ্রুত গোসল সেরে সবাই কে খেতে দিচ্ছে।
এখন এত সময় ছিলো না কিছু করার।
নিলয়ের আঘাত গুলো সবার চোখ এড়ালো কিন্তু নীলের চোখে পড়লো।
হাতে অনেক লেগেছে। কালো হয়ে আছে জিজ্ঞেস করতে গিয়েও থেমে গেলো।
কোমড়ের কাপড় সরে গিয়েছে।
মেয়েটা একদম শাড়ি সামলাতে পারে না কিন্তু মায়ের কড়া আদেশ বউ মানুষ শাড়িই পড়বে।
নিলয় যে অনুকে মেরেছে বুঝলো নীল।
তার গলা দিয়ে খাবার নামলো না।
ভাইয়া কি করে পারলো এই পিচ্চিকে মারতে?
আর মা কেনো ওমন করে সব সময়?.
.
.
নিলয় কে দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ইরা।
কালো পাঞ্জাবী, নীল জিন্স, চশমা তে যেনো রাজপুত্র।
কিন্তু নিলয়ের মনে অপরাধ বোধ সে আজ অনু ভেবে…..
ছি ছি ছি। ভাবি না যেনো কি ভাবছে।
রুমে এসে দেখে অনু কাপড় গুছাচ্ছে।
চুল খোলা ছিলো। হাত দিয়ে খোপা করা শুরু করলেই নিলয় গান ধরে
-কন্যা রে,কন্যা রে
বাঁকা চুলেতে খোঁপা আর বাইন্ধো নারে
ঐ চুলেতে জাদু আছে রে
আমার ঘুম আসে না রাতে
একলা ঘরে রে
.
পিছন থেকে অনু কে জড়িয়ে নিয়ে সরি বলছে।
অনু চুপচাপ।
– কিছু তো বলো?
– কি বলবো।
– আই এম সরি অনু।
– সন্দেহ সম্পর্ক ভেঙে দেয়৷
– আমি সরি তো। (কান্না কান্না ভাবে)
– হুম। কখনো আমাকে সন্দেহ হলে আমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করবেন। প্লিজ।
– আচ্ছা। এবারের মতো মাফ চাইছি।
– কফি নিয়ে আসছি৷
.
.
অনু চলে যাওয়ার পর নিলয় ফেবু তে লগিন দিয়ে দেখে একটা আইডি থেকে ম্যাসেজ রিকুয়েষ্ট।
ছবি পাঠিয়েছে। যেখানে অনু হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে কোন ছেলের বুকে।
ছবি দেখে নিলয়ের আবার রাগ উঠে গেছে।
চোখমুখ লাল হয়ে আছে।
অনু খুব স্বাভাবিক মতো কফির মগ এগিয়ে দিতেই নিলয় কফি অনুর দিকে ছিটকে মারে।
কফি গিয়ে অনুর গলায় লাগে৷ পুড়ে গেছে, নিলয় উঠে অনুর হাত পিছনে দিয়ে দেয়ালের সাথে ঠেলে দিয়ে বলে
– আসলেই তুই খারাপ। ভুল মানুষের এক বার হয় বার বার না।
.
ওদের ঘর থেকে আসা শব্দ শুনে তৃপ্তির হাসি দেয় ইরা। সে যে আগুন আবার জ্বালাতে পেরেছে।
.
.
পর্বঃ ৪
.
.
নীল বারান্দায় সিগারেটে টান দিতে দিতে ভাবছিলো
অনু কে মেঝো ভাইয়ের বউ হিসেবে এনে কি সে সত্যি ভুল করে ফেলেছে?
অতীত থেকে হয়তো মেয়েটা একদিন মুক্তি পেতো কিন্তু এই যন্ত্রণা থেকে কি করে বাঁচবে?
অনুকে নীল প্রথম দেখেছিলো তার প্রেমিকার বাসায়।
সীমন্তিনীর ফুপাতো বোন। সেবার উচ্চ মাধ্যমিক দিবে।
মা নেই,বাবা আবার বিয়ে করেছে। অনুর ঠাই হয়েছে মামার বাসায়।
খুব একটা সুখে নেই। কারণ মামি দেখতে পারে না। মামা দেখেই দেখে না।
সারা বাড়ির কাজ করে তারপর লেখাপড়া। বাড়িতে সীমন্তিনী অনুর একমাত্র ভরসা।
অনুকে দেখে নীল মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলো। এ যেনো গোবরে পদ্মফুল।
ওর কথা আগে থেকে জানতো চেহারা দেখে মায়ায় পড়ে যায়।
কিছু কর‍তে ইচ্ছে করে। সে সময় বাসায় মেঝো ভাইয়ের বিয়ের কথা চলছিলো।
বাবার কাছে সব টা বলতে বাবা একবার দেখতে চায়।
দেখে পছন্দ করে৷ ভাইয়াদের পছন্দ হয় কিন্তু মায়ের পছন্দ হয়েছিলো না। কারণ মেয়ের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো না।
কিন্তু বাবার আগে মা টিকতে পারলো না।
বাবার যুক্তি ছিলো আমাদের বাড়িতে মেয়ে আসবে বউ হয়ে মেয়ের ফ্যামিলি না।
বিয়েটা ঘরোয়া ভাবেই হয়েছিলো।
নীল সেদিন অনুর হাত ধরে বলেছিলো
– আমাকে তোমার ভাই মনে করো বোন। আজ থেকে তোমার ভাইয়ের দায়িত্ব নিলাম। আশা আর তুমি দুজনেই আমার কাছে এক।
.
নীলের কথায় রেগে গিয়ে নীলাভ্র বলেছিলো
– ভাই কি তুই শুধু একা? আমি না? অনু তুমি আমাকে দাদাই বলেই ডাকবে যেমন আশা ডাকে।
.
আশা কাঁদোকাঁদো স্বরে বলে
– হুম! এখন আমার আদর ভাগ হবে?
সমস্যা নেই জ্বালানো কমবে। এরা যা জ্বালায় না? আমি বেঁচে গেছি।
.
.
.
ইরার ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে নীলাভ্র।
পিচ্চিটা তার ঘরের বউ।
ছোটবেলা থেকে দেখেছে ওকে।
কমলা সুন্দরী বলে ডাকতো।
কারণ একদিন অরেঞ্জ কালারের ড্রেস পড়ে, কমলা গাছের নিচে বসে কমলা খাচ্ছিলো।
সে থেকেই নীলাভ্র ইরা কে কমলা সুন্দরী বলে ডাকে।
ঘুমন্ত ইরার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে নীলভ্র।
শাড়ি এলোমেলো। কপালে চুমু দিতেই ইরা জেগে উঠে।
ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে থাকে নীলাভ্রর দিকে।
ঈশ কি মিল দুজনের চেহারায়।
বিশেষ করে চোখ দুটো। অনেক মিল।
ইরার ঘোর লেগে আসছে। নিলয়ের চোখের নেশা। কিন্তু চোখ খুললেই বুঝতে পারবে নিলয় না নীলাভ্র তার পাশে।
থাক না চোখ বন্ধ।
কল্পনায় বসবাস হোক নিলয়ের সাথে ছোট্ট সংসারে……
.
.
.
নিলয়ের আজকের ব্যবহারে অনু অবাক হয়নি। জিজ্ঞেস ও করেনি। কি জিজ্ঞেস করবে? থাক না ওসব।
অভ্যেস তো আছেই এসব মার খাওয়ার।
মাঝের কয়েকটা মাস ভুলে গিয়েছিলো এসব। মামি তো তাকে এসব কষ্ট দিতে দিতে শক্ত বানিয়ে দিয়েছে।
এখন আর কষ্ট হবে না। সহ্য করতে পারবে।
কাজের মেয়ের মুখে শুনেছে
ইরাভাবি কে না কি ভাইয়া ধমক দিয়েছিলো। তাই ভাবীর বাবা ভাই এসে নিয়ে চলে গেছিলো।
তাদের মেয়েকে কেউ ধমকাবে এটা মেনে নিয়ে পারবে না তারা। এ নিয়ে না কি অনেক ঝামেলা হয়।
কিন্তু অনুর তো কেউ নেই।
না বাপ-ভাই আছে, না আছে মা। যাওয়ার কোন জায়গাও নেই।
.
.
পরদিন সকালে
.
.
অনুকে ক্যাম্পাসে নামিয়ে দিয়ে যায় নিলয়। সারা রাস্তা একটা কথাও বলেনি।
বাইকে উঠার পর অনু কাধে হাত রাখতেই হাত সরিয়ে নিতে বলে।
মনে হয় অনু খুব পাপ করে ফেলছে।
পুরো ক্লাস অনু কারো সাথে কথা বললো না।
চুপচাপ থাকতে দেখে বন্ধুরা কয়েকজন মিলে ক্লাস শেষে ওকে ডাকে।
ফুসকা পার্টি হবে।
অনু চলে যেতে চাইলে সবাই আটকায়।
বাধ্য হয়ে ওদের সাথে দাঁড়ায় অনু।
.
কিছু সময় পর স্বাভাবিক হয়ে এসেছে ঠিক তখন কোথা থেকে যেনো নিলয় এসে হাজির।
অনুর সাথে মেয়ে ছিলো। এটা চোখে পড়লো না নিলয়ের। ওর চোখে পড়লো অনু দুইজন ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে ফুসকা খাচ্ছে আর তামাশা করছে।
ওই যে! যে যা দেখতে চায় তাই দেখে।
.
খুব স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে অনুর ফ্রেন্ড দের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে।
অনু বুঝতে পারে এটা ঝড়ের পূর্বাভাস।
বাইক এসে থামে এক রেস্টুরেন্ট এর সামনে।
কেবিন সিস্টেম। ভালোই প্রাইভেসি আছে।
প্রেমিক প্রেমিকার জন্য।
নিলয় এসে বসতেই ওয়েটার পর পর ২৫ প্লেট ফুসকা নিয়ে আসে।
অনু এবার ভয় পেয়ে যায়।
নিলয় ইশারা করে খেতে। ভয়ার্ত চেহারায় তাকিয়ে আছে অনু।
নিলয় ভ্রুক্ষেপহীন।
এক সময় জোর করে মুখে তুলে দেয় ফুসকা।
স্বাভাবিক থেকে অনেক ঝাল।
অনু খেতে পারছে না।
নিরবতা ভেঙে নিলয় বলে
– স্বামীর হাতের জিনিস খেতে বুঝি ঘেন্না লাগে? পর পুরুষদের সাথে তো খুব হেসে হেসে খাইতে পারিস।
.
.
পর্বঃ ৫
.
.
সেদিনের পর থেকে অনু নিজের সাথেই নিজে ঘর বন্দী। নিলয় চুপচাপ তাকে ক্লাসে যেতে না করে দিয়েছে।অনু সেখানে কিছুই বলেনি। বলার মতো কিছু আছে বলে সে খুজে পায়নি।
যার নিজের বলতে কোন বাড়ি নেই,মা বাবা নেই সে কি করে কিছুর প্রতিবাদ করবে?
জীবন টা বড্ড অসহায় লাগে।
মাঝেমধ্যে ইচ্ছে হয় দূরে কোথাও চলে যেতে ।
কবরস্থানের ভিতরে গিয়ে মাঝেমধ্যে বসে থাকতে ইচ্ছে করে আগে যেমন মন খারাপ থাকলে যেতো।
চারপাশ কত নীরব! আলাদা শান্তি কাজ করে।
.
.
অনুর ক্লাসে যাওয়া বন্ধ হওয়াতে বেশ খুশি ওর শ্বাশুড়ি।
অনু লেখাপড়া করুক এটা মোটেও তার পছন্দ না অথচ ইরা কিন্তু বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
.
সারাদিন একাজ ও কাজ করে দিন কখন চলে যায় বুঝায় যায় না।
গরম এসে পড়েছে।
ইরা ইদানীং পড়া নিয়ে বেশ ব্যস্ত।
নীলাভ্র সমান তালে সাপোর্ট করছে।
অনু ইদানীং বেশ আছে । মুখে সব সময় হাসি লাগিয়ে রাখে।
প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে হাসি থাকেই। থাকবেই না কেনো? সে ভালো আছে।
তার শাড়ির প্রতিটি আঁচল জানে সে ভালো আছে।তার মাথার বালিশ জানে সে ভালো আছে।
.
.
দুপুরের খাবার শেষে ঘুমিয়ে পড়েছিলো অনু।
হঠাৎ শ্বাশুড়ির কটু কথায় ঘুম ভাঙে। কি পেয়েছে ছেলেদের কে কষ্ট করে মানুষ করে? বাহিরে বৃষ্টি নামছে আর বউ ঘুম দিছে।
.
অনু ধড়ফড়িয়ে উঠে, দ্রুত যায় ছাদের দিকে।
কাপড় নিয়ে এসে রান্না ঘরে গিয়ে বিকেলের নাস্তা বানায়।
সবাই কে নাস্তা দিয়ে এগিয়ে যায় নীলের রুমের দিকে।
.
অনু- ভাইয়া আসবো?
নীল- আসো।
– তোমার খাবার টা। বলছিলাম ভাইয়া…
– কি বলবা বলো..
– আসলে ভাইয়া একটু খোজ নিতে পারবে? ডিপার্টমেন্টে? ইনকোর্স এর ডেট দিয়েছে কি না?
.
ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে অনুর দিকে তাকালো নীল।অনেক দিন পর দেখছে ।
কপালের কাটা দাগ টা আছে। গলার দিকের টাও আছে৷
অনু রূপবতী কিন্তু ওর চোখে তেমন গভীরতা নেই,লেখিকার গল্পের নায়িকার মতো টানাটানা চোখ না। দেখলেই প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে এমন চোখেও প্রশংসাই নাই কিন্তু কিছু একটা আছে যা বুকে গিয়ে লাগে। বড্ড লাগে।।
.
.
– ভাইয়া তোমার সমস্যা হলে থাকুক।
– আমি খোঁজ নিবো।
– ধন্যবাদ ভাইয়া।আমি যাই।
– অনু শোনো
– জ্বী ভাইয়া
– এটা নাও।
– কি?
– শুভ জন্মদিন। এটা আমি না সীমন্তিনী দিয়েছে।
.
..
আজ অনুর জন্মদিন ছিলো? ভুলেই গিয়েছিলো সে। এই দিন টা তে কেনো জন্ম নিয়েছিলো কে জানে?
নিলয় ভুলে গিয়েছে? আজ তার জন্মদিন ছিলো??

.
.
ইরার এসব আদিক্ষেতা একদম সহ্য হচ্ছে না। নিলয় কেনো অনু কে বললো দুজনের খাবার ঘরে নিয়ে যেতে? ও কি ভুলে গেলো না কি যে ওরা যৌথ পরিবারে থাকে?
আগে অনু কলেজ গেলে নিলয়ের আশেপাশে থাকতে পারতো। কিন্তু ইদানীং যে সে তার বউ কে চোখে হারায়৷
.
অসহ্যকর! কোথায় সে অনু কে নিজের থেকে দূরে দূরে রাখবে তা নয় উল্টো হচ্ছে৷
মনে মনে সে কতবার অনু কে মারতে যায় হিসেব নেই।
নাহ্! বড্ড ভুল হয়ে গেছে।
আগে যদি নীলাভ্র কে সরিয়ে দিতো তাহলে নিলয় কে পেতে সুবিধা হতো। কারণ দেবরের সাথে বিধবা ভাবির বিয়ে কোন খারাপ বিষয় না৷ বরং প্রচলিত কিন্তু এখন শুধু নীলাভ্র না, অনুও আছে তার সাথে।
দুইজন কে খুন করা আদৌও সম্ভব? রাগে নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে ইরার।
.
.
#চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে