সন্দেহ
সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ ১১ থেকে ১৪
.
.
পর্বঃ১১
.
.
সাম্যরা যখন পৌছালো তখন ফযরের আজান হয়নি।
লাশ কেবিনে রাখা।
সাধারণ জ্বরে এভাবে মৃত্যু! কথায় আছে না খোদা বড় নিদারুণ, বুড়ো রাইখা নেয় তরুণ।
.
কেবিনে ঢুকে সাম্যর চোখ আগে অনু কে খুজতেছিলো। না জানি কেমন আছে সে।
ফুপুর লাশের বুকে সে মাথা রেখে শুয়ে আছে।
মৃত মায়ের বুক থেকে সরানো যায়নি অনুকে।
অনেকে চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি।
সীমন্তিনীরাও পারলো না।
.
অনুর কোমর অবধি চুল গুলো পুরো পিঠ ছড়িয়ে আছে।
রুম ভর্তি মানুষ।চতুর্দশী এই মেয়েকে এভাবে সবার সামনে স্পর্শ করা উচিৎ হবে কি না জানে না সাম্য কিন্তু তাকে যে অনু কে সামলাতে হবে।
– অনু!উঠো। প্লিজ।
– সাম্যদা! আমি উঠবো না।
মা কে বলো উঠতে, আমি উঠবো। হয়তো আর কোনদিন মা উঠবে না! প্লিজ আমাকে থাকতে দাও। প্লিজ।
.
সাম্য চুপচাপ পাশে বসলো। কিছুক্ষণ পর অনুকে চোখ বন্ধ করতে দেখেই
টান দিয়ে নিজের বুকে নিয়ে নিলো। ঝোক সামলাতে কয়েক কদম পিছাতে হলো।
– অনু….
– ঘুম পাচ্ছে সাম্যদা। মায়ের বুকে ঘুমাতে দাও না। খুব শান্তি যে ওখানে। প্লিজ
– আজ থেকে আমার বুকেই না হয় থাকো। প্লিজ।
.
অনু কথা বাড়ায়নি। সেন্সলেস হয়ে যায়।
পরদিন মায়ের দাফনের আগে খুব কান্না করে। সীমন্তিনীর অবস্থা আরো খারাপ।
বিশাল মাঠের এক কোণায় দু হাত আছড়ে কেদেছিলো সীমন্তিনী।
.
অনুর মায়ের জানাজা,দাফন শেষে সাম্য বাড়ি এসে অনুকে খুঁজতে লাগলো।
একজন বললো সেই যে গোসলে গেছে বের হয়নি।
সাম্যর খুব রাগ হচ্ছে। এদের কোন কান্ডজ্ঞান নেই না কি।
.
.
দরজা ঠেলে ওয়াশরুমের ভিতরে সীমন্তিনী গিয়ে দেখে চুপচাপ বসে আছে।
চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে।
রাত বাড়তে থাকলে সারা শরীর ঝাকিয়ে জ্বর এলো অনুর৷
অনুর বাবা এসে মেয়েকে খাওয়ানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু অনুর চোখে যেনো কেমন একটা ঘৃণা ছিলো যা তার বাবার থেকে তাকে অনেকটা দূরে নিয়ে যাচ্ছিলো।
রাতে সীমন্তিনী অনুর সাথে রইলো।
সাম্য বাহিরে ছিলো। ফুপুর জন্য তিন দিনের মানুষ খাওয়ানো হবে।
সবাই আলোচনা করছে।
নাহ্! শান্তি পাচ্ছে না।
অনুর রুমে এসে দেখে সীমন্তিনী ঘুমিয়ে মরে গেছে।
অনু আধশোয়া অবস্থায় বসে আছে।
চোখ বন্ধ। গাল বেয়ে পানি পড়ছে।
সাম্য এসে কোমর জড়িয়ে নিয়ে একটু দূরে বসায়।
.
সাম্য- ক্ষিধে পেয়েছে?
অনু- উঁহু!
-মন খারাপ?
– যার মা মারা গেছে ২৪ ঘন্টা সময় পার হয়নি তাকে….
– একটা কথা জানিস?
– কি?
– তোর শিমুদি কে দেখ! ঘুমিয়ে মরে গেছে। চল ওকে পুকুরে চুবানি দিয়ে নিয়ে আসি।
– আমি ঠিক আছি।
– ব্যাড জোক্স তাই না?
– তুমি কি এখানে থাকবে?
– হুম!
.
অনু কোন কথা না বলে চুপচাপ শুয়ে পড়লো। কিছু সময় পর বললো…
– সিগারেট খাওয়ার সময় তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগে। কিন্তু আমি তোমার ঠোঁটে কখনো চুমু খাবো না।
পোড়া জিনিস ভালো লাগে না সাম্যদা।
.
অনু বলে আবার চোখ বন্ধ করলো।
সাম্য হাতের সিগারেট ফেলে দিলো।
.
সকাল হতে আজ সাম্যকে অনু ডেকে তুললো।
সাম্য ফ্রেশ হয়ে নামাজ শেষে বেরিয়ে দেখে সীমন্তিনী, অনু মসজিদের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।
.
– এখানে কেনো? অনু বাড়ি চল।
– মায়ের কাছে যাবো সাম্যদা! বৃষ্টি নামবে, মা বৃষ্টিতে ভিজলেই মাথা ব্যথা করে।
.
সাম্যর চোখ এখন অনুর হাতের দিকে। বড় ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে৷
কারো মুখে কোন কথা নেই।
ককবরস্থানের পাশে আসতেই অনু দৌড়ে ভিতরে চলে গেলো।
মায়ের কবরের উপরে শুয়ে দুহাতে আকড়ে ধরলো।
প্রকৃতি যেনো সাড়া দিয়ে ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নামছে।
অনু হাতের ছাতা মায়ের মাথার কাছে ধরে বসে আছে।
বাকি অংশ টা কাগজ দিয়ে ঢেকে দেওয়া।
অনেক কথা বললো মা কে।
কে কি বলেছে, তার হাত দিয়ে ক্যানোলা পড়ানোর সময় ব্লাড পড়েছে।
সীমন্তিনীর ঘুমানো। সব কথা৷
বৃষ্টি বাড়তে থাকে। সাম্য জোড় করে অনুকে বাড়ি নিয়ে আসে।
পরদিন তিনদিনের মানুষ খাওয়ানোর পর সাম্যরা যখন চলে আসবে তখন অনুর বাবার ২য় বউ নিয়ে আসে অনুর দাদা।
ছেলে মানুষের বউ ছাড়া সংসার চলে না কি? তাছাড়া অনুর বাবা একা, আর ভাই নেই। অনুর কোন ভাই নেই।বংশ রক্ষার একটা ব্যাপার আছে।
অনুর বাবা সেদিন কিছু বলেনি।
অনু চুপচাপ ছিলো। খুব রাগ হলো সাম্যর। নিয়ে যাবে সে অনুকে। বাবা কে বলেছে সে যেনো অনুকে রেখে না যায়।
তখন নতুন হাদিস শোনানো হলো
– ৪০ দিন পার না হলে অনু কোথাও যেতে পারবে না।
.
সাম্য রেগে বলেই দিলো
– স্ত্রীর তিনদিনের দিন যখন ছেলে বিয়ে করতে পারে তো অনুও যেতে পারবে।
.
.
সময়ের মতো সময় কাটতে থাকে।
অনু সেদিন আসেনি। মায়ের কাছে থাকবে বলে।
কিন্তু হঠাৎ অনুর বাবার কল এলো।
অনু না কি ইদানীং কবরস্থানে বেশি সময় থাকছে। আরো সমস্যা আছে।
মূলত অনুর নতুন মা চাচ্ছে না সে এখানে থাকুক।
অনুর মামা যদি ওর দায়িত্ব নেয় তাহলে খুব ভালো হয়। না হলে হোস্টেলে দিয়ে দিবে। সে মাসের মাস টাকা পাঠাবে। শুধু ওর দায়িত্ব টা নিতে।
.
.
একমাত্র বোনের একমাত্র মেয়েকে মামা ফেলে দিতে পারেনি।
অনুকে যেদিন বাড়ি নিয়ে এলো সাম্য অনুকে দেখে থমকে দাড়িয়েছিলো ।
কাকে দেখছে সে?
অনেকটা শুকিয়ে গেছে, চোখ ডেবে গেছে, চোখের নিচে কালি।
আসার পরে মামি ওকে খাইয়ে দিলো।
চুপচাপ অনু গিয়ে ওর জন্য ঠিক করা আলাদা রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো ।
আজ থেকে আর ইচ্ছে হলে মায়ের কাছে যেতে পারবে না৷
খুব কান্না পাচ্ছে। বাবা নামক মানুষ টা কে সে ঘেন্না করে।
কাদঁতে কাদঁতে সে ঘুমিয়ে গেছে।
.
রাত ১১.৪৮
সবাই ঘুমে মনে হচ্ছে । সাম্য এগিয়ে গেলো অনুর রুমের দিকে।
দরজা লাগিয়ে অনুর পাশে বসতেই দেখলো হাতের নখের দিকে তাকিয়ে দেখে অনেক মাটি।
নেইলকাটার খুজে হাত,পায়ের নখের মাটি পরিষ্কার করে দিচ্ছিলো।
অনু চুপচাপ দেখছে৷
অনুকে জেগে দেখতে সাম্য এগিয়ে এলো।
.
– কি দেখছিস?
– কি করছো?
– চুপ!
.
লাইটস অফ করে দিয়ে সাম্য এগিয়ে এলো অনুর দিকে।
.
– সাম্যদা! অন্ধকারে ভয় লাগে। প্লিজ লাইট জ্বালাও।
– উঁহু! আমি আছি তো।
– প্লিজ।
.
সাম্য কোন কথা না বলে হেলান দিয়ে বসে অনুকে পিছন থেকে জড়িয়েই
চুলে নাক ডোবায়৷
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দরজায় টোকা পড়ে ।
সাম্যর মা- বাবা দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার ঘরের লাইটগুলো অফ। অন্ধকারে ভয় পায়। দরজাও বন্ধ ।
ঘুম ভেঙে যদি ভয় পায়?
সাম্যর মায়ের খুব সাধারণ চিন্তা।
.
অনু আর সাম্য একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।
অনু হাসছে। আর সাম্য? অবশ্যই যাচ্ছে তাই অবস্থা।
.
তখন হঠাৎ সাম্যর মা বললো
– সাম্য কে ডাকবো? ওর কাছে চাবি আছে।
.
সর্বনাশ করেছে। ঠিক তখন সাম্যর বাবা বললো কোন দরকার নেই।
মেয়েটা কে ঘুমাতে দাও।
উনারা চলে গেলো।
সাম্য হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
– পানি খাবে সাম্যদা?
– তোকে খাবো।
– নাড়িভুঁড়ি কি করবে?
– শুদ্ধো খাবো।
– হুহ্! যাও নিজের রুমে যাও
– চুপ। পানি দে
– নাও।
সাম্য ঢকঢক করে পুরো গ্লাস পানি খেয়ে নিলো।
আবছা আলোতে অনুকে দেখছে অনু হাত খোপা করেছে।
ওর দিকে তাকাতেই অনু বললো
– রুমে যাও সাম্যদা।
– রুমে গিয়ে সিগারেট টানবো।
– তোমার ইচ্ছে।
– সত্যি তো? তখন কিন্তু পোড়া ঠোঁটে….
– উফ্! কি হচ্ছে শুড়শুড়ি লাগছে তো।
– তাহলে চল!
– কোথায়?
– সাম্যর ভালোবাসার সাম্রাজ্যে…..
.
.
পর্বঃ১২
.
.
দেখতে দেখতে অনুর জেএসসি পরীক্ষা শেষ হলো।
শীতের কোন এক রাতে অনু আর সাম্যর মাঝে বেশ ভালোই ঝগড়া হলো।
সাম্যর মনে হচ্ছে অনু তাকে ইগ্নোর করছে। আগে যে মেয়েটা সাম্যর কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করতো ইদানীং সাম্যর সাথে বেশ দূরত্ব রেখে চলছে।
হুটহাট রাতে অনুর রুমে আসা সে পছন্দ করছে না।
সাম্যর বেশ গায়ে লাগছে বিষয় টা।
আজকে রাতে বেশিই হয়ে গেছে।
সাম্য স্পর্শ করতেই অনু দূরে সরে গেছে।
রাগ সামলাতে না পেরে সাম্য প্রথম অনুর গালে থাপ্পড় মারলো।
চুলের মুঠি ধরে কাছে নিয়ে এসে রাগী স্বরে বললো
– তুই নিজেকে খুব সুন্দরী মনে করিস তাই না? তোর থেকে হাজার ভালো, সুন্দরী মেয়েরা আমার জন্য পাগল। আর আমি কি না? পায়ের উপর পা তুলে
আমার বাড়িতে থাকছিস, আমার খাচ্ছিস আবার আমাকেই তেজ দেখাস?
নিজের বাপের বাড়ি তো টিকতে পারলি না, এসে ভাসা পানার মতো সেই পরের বাড়িতে পরে আছিস। আজাইরা দেমাগ দেখার সময় আমার নেই।
.
সাম্যর আঘাত শরীরে না লাগলেও কথা গুলো মনে লাগলো অনুর। সাম্যদা কেনো বুঝে না, ইদানীং শারিরীক, মানসিক দুভাবেই বেশ পরিবর্তন আসছে। এসব ভালো লাগছে না। হ্যাঁ,হয়তো অনেকটা পরিনয়ের সম্পর্ক তাদের কিন্তু তাই বলে তো আর এভাবে রাতে আসা যাওয়া ঠিক না।
আগে বুঝতো না অনু, কিন্তু ইদানীং সে বুঝে কতটা ভয়ংকর হতে পারে তাদের একসাথে থাকা।
সে চায়না আবেগের বশে কোন ভুল হোক। যার জন্য সারা জীবন পস্তাতে হবে।
.
.
রাগে ফুসতে ফুসতে ফেসবুক স্ক্রল করছে সাম্য।
একটিভ ফ্রেন্ডস এ আদিত্য আহমেদ নাম টা দেখেই কল দিলো।
দুবার রিং দেওয়ার পর রিসিভ হলো
.
আদিত্য – শালা এতদিন পর মনে হলো?
সাম্য- হুম! তুইও তো মনে করিস না।
– জানিস তো লেখাপড়ার চাপ অনেক। কেমন আছিস?
– ভালো। তুই আর তোর পিচ্চি?
– হুম ভালো। কিন্তু তোর কন্ঠ শুনে তো মনে হচ্ছে না ভালো আছিস?
– তোর পিচ্চি মানে অর্থি কই?
– বেড এ ঘুমায়। জানিস তো স্লিপিং ওয়াক….
– খুব ভালোবাসিস না ওকে?
– তোর থেকে আর বেশি কে জানে?
– ইচ্ছে করে না ওর কাছে যেতে? ফিজিক্যালি…..
– আমরা পুরুষ মানুষ ভাই। ওয়েট ওয়েট এসব জিজ্ঞেস করছিস কেনো,? সব ঠিক আছে তো? অনুরুপা?
.
সাম্য সব বললো আদিত্য কে।
– হুম! বুঝলাম। কিন্তু ভাই তুই ভুলে যাচ্ছিস! অনুরুপা এখন কিশোরী থেকে ধীরেধীরে নারী হয়ে উঠছে। ফিজিক্যালি,মেন্টালি চেঞ্জেস আসবে। আগের মেয়েটা নিতান্তই বাচ্চা মেয়ের কাজ ছিলো। ভয়,লজ্জা,নিরাপত্তা সব নিয়ে চিন্তা করবে মেয়েটি। মা হারানোর পর আরো বেশি ভেঙে পড়েছে। এখন ওকে সামলানো উচিৎ এসব না ভেবে৷
আর তাছাড়া হরমোনাল বিষয় আছে।
– অর্থি এখন তোর পাশে তোর বিছানায়। ওর তো চেঞ্জেস আসেনি।
– অর্থি আর আমার বিষয় টা আলাদা। এই মেয়েটা একদম বাচ্চা৷ ওর ফ্যামিলি জানে ও এখন আমার সাথে। আমিও জানি আমি ওর ক্ষতি করবো না। সব থেকে বড় কথা অনুর পরিবার নেই। এভাবে ওর গায়ে হাত তোলা তোর উচিৎ হয়নি। শারিরীক কষ্টের থেকে মানসিক ভাবে মেয়েটা ভেঙে পড়বে। অর্থির আমি না থাকলে দেখার জন্য ওর বাবা ভাই আছে। মোরাল সাপোর্ট আছে কিন্তু অনু? ওর তো কেউ নেই৷ ফ্যামিলি জানে তুই ওর কাছে যাচ্ছিস? তুই কি সিউর? তুই আবেগে বা কামনায় ওকে কিছু করবি না? আমি সিউর অর্থ আমার কাছে নিরাপদ কিন্তু তুই?? চিন্তা কর তোর….
বাকীটা তুই ভালোই বুঝিস৷
.
– ফিউচার প্ল্যান কি? বাহিরে যাওয়ার ইচ্ছে আছে?
– আমার থেকে অর্থির আগ্রহ বেশি রে ভাই। হুম যাবো। ওর সব ইচ্ছে পূর্ণ করবো।
– বিয়ে করে যাবি?
– নাহ্! এসে একদম বউ করে ঘরে তুলবো পিচ্চি কে৷ বিয়ের পর বউ দূরে রাখতে পারবো না।
– হাহাহা! ভালো বলেছিস তো৷
– তুই কি করবি? শোন ফ্যামিলি কে জানিয়ে দে অনুর কথা। মেয়েটার সাপোর্ট দরকার।
– হুম্ম! দেখি……
.
আদিত্য সাম্যর ছোটবেলার বন্ধু। একসাথে উচ্চ মাধ্যমিক অবধি ছিলো। পরে আদিত্য মেডিকেল আর সাম্য আর্কিটেক।
তবুও যোগাযোগ, বন্ধুত্ব আগের মতোই৷ আদিত্যর কথাই ঠিক। অনু কে সময় দেওয়া উচিৎ।
ওকে একা ছাড়া প্রয়োজন। কিছুদিন ওকে ইগ্নোর করবে সে। যতই কষ্ট হোক। আজকের জন্য ওকে একটু হলেও কাঁদাবে। যাতে বুঝতে পারে সে সাম্য ছাড়া অনুর অস্তিত্ব নেই।
.
.
দেখতে দেখতে কেটে গেলো কয়েক মাস।
এই কয় মাসে সাম্য অনুকে শুধু ভুলেনি, মন থেকে মুছেও নিয়েছে।
ফ্রেন্ডস, আড্ডা,স্টাডি নিয়ে বেশ আছে সে।
সেদিন পহেলা বৈশাখ। বন্ধুদের সাথে রঙ খেলে সাম্য বাসায় ফিরে দেখে সীমন্তিনী কাদঁছে।
কান্নার কারণ জানতে চাইলে আরো বেড়ে গেলো।
একসময় বললো
– ওদের বড় মামা চীন থেকে যে ডিনারসেট পাঠিয়েছিলো ওটার একটা কাপ ভেঙে গেছে।
.
সাম্য ভাবলো মা হয়তো বকেছে তাই বোন কাদঁছে। স্বান্তনা দিয়ে বললো কাদিস না, মা কে বলবে কেনো পিচ্চি বোন টা কে বকেছে।
.
সাম্য কে থামিয়ে দিয়ে সীমন্তিনী বললো
– কাপ টা অনু ভেঙেছে, এর জন্য মা ওকে মেরেছে। খুব মেরেছে। আবার ওর হাত ও পুড়ে গেছে। ওর গালে মায়ের হাতের ছাপ বসে গেছে।
.
সাম্য কিছু না বলে এগিয়ে যায় অনুর ঘরে।
মেয়েটা নিশ্চয়ই কান্না করতেছে। কিন্তু ঘরে অনু নেই।
ছাদ থেকে নেমে আসলো। রান্না ঘরে অনেক কাজ।
ইদানীং এ বাড়িতে অনুর কাজের শেষ নেই।
প্রথমে সে মামী, কাজের লোকের হাতে হাতে কাজ করতো এখন নিজেই সব টা করে।
কাজের লোক রেখে কি দরকার টাকা নষ্ট করার। মূলত সাম্যর কথাটা গায়ে লেগেছে। সত্যি তো বলেছে তাই না?
শুধু শুধু বসে বসে খাওয়ার মানেই হয় না।
অনুকে খুজেও সাম্য পেলো না।
অনু হাতের সব কাজ শেষ করে দুপুরের রান্না বসিয়েছে।
হাতে ফোস্কা পড়েছে একটু। তবুও রান্না শেষ করলো।
দুপুরে সবাই খেতে বসলে মামি বললো বেগুনি ভাজে নি কেনো?
খুব সহজ উত্তর ছিলো মামি আমি তো পারি না, একবার দেখিয়ে দিন। করে দিচ্ছি।
কাজ শেষে যখন পিছন থেকে সাম্যর প্লেটের দিকে বেগুনি বাড়িয়ে দিলো সাম্য দেখলো হাত একটু না বেশ পুরে গেছে।
– মা! রাগ করেছিস সকালের ব্যবহারের জন্য?
অনু হেসে না মাথা নাড়িয়ে করলো।
– রাগ করিস না! আমি তো তোর মায়ের মতো তাই না? ভুল করলে কি তোর মা শাসন করতো না?
– আমার মা কখনো আমার গায়ে হাত তুলেনি।
.
কথাটা বলে অনু চলে গেলো৷ কারো গলা দিয়ে খাবার নামলো না আর।
.
.
বিকেলবেলা সাম্যর খালামনিরা এলো। সবাই আড্ডা দিচ্ছে। অনু মামীর সাথে কাজ করছে।
ওর মামী তাকিয়ে দেখে অনুর চুলে তেল নেই। মেয়েটা দিতে পারেনা।
আজ ওর মা থাকলে হয়তো
মামির কষ্ট লাগে ওর জন্য।
দ্রুত কাজ শেষ করে অনুকে নিয়ে বসে চুলে তেল দিয়ে দেওয়ার জন্য। মা-শাহ্-আল্লাহ্! মেয়ের মাথার চুলে মেয়ের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
.
মামীরা তিনবোন কথা বলছিলো। ড্রয়িং রুমে বসে অনুর চোখ তখন সাম্যর ঘরের দিকে।
কথায় কথায় শুনলো বড় খালার মেয়েকে সাম্যর জন্য রেখে দিলে কেমন হয়?
দুজন কে মানাবে ভালো।
লেখাপড়া শেষ হলে বিয়ের কথা এগুবে।
অনু সাম্যর পাশে দেখলো আপুটা বসে আছে। সত্যি দুজনকে খুব মানাবে। অনু চোখ সরিয়ে নিলো এবং
সেদিন থেকে দূরত্ব আরো বাড়িয়ে দিলো।
.
অনুর মা মারা গেছে ১১ মাস ১৮ দিন।
বিকেলবেলা মায়ের শাড়ি নিয়ে বসেছিলো অনু। আসার সময় কিছুই আনতে দেয়নি। মায়ের একজোড়া দুল আর কয়েকটা শাড়ি। এগুলো নিয়েই বেশ আছে।
মন খারাপ হলে এগুলো পড়ে অনু। গভীর রাতে বারান্দায় গিয়ে মায়ের সাথে কথা বলে।
সারাদিন কি হলো না হলো সব।
আজ বিকেলেই মন খারাপ হচ্ছে। ঠিক সে সময় দরজায় টোকা পড়ে।
সীমন্তিনী ডাকছে। সাম্যর ফ্রেন্ডরা এসেছে তাদের জন্য যদি হালকা নাস্তা করে দিতো।
.
অনু নাস্তা নিয়ে এগিয়ে গেলো। কয়েকটা মেয়ে এসেছে।খুব স্মার্ট। ছেলেরাও আছে।
নাস্তা এগিয়ে দিয়ে চলে আসতে নিলে একটা মেয়ে বললো
– দোস্ত তোদের বাসার মেইড টাতো বেশ সুন্দরী। বাহ্ খাবার ও তো খুব মজার বানায়। কোথায় পেলি?
.
অনুর কানে কথাটা গেলেও পাত্তা দিলো না। সবাই কে কফি দিচ্ছিলো। সাম্য চুপচাপ ছিলো।
ও একটু আড়াল হলেই ছেলেরা নানান মন্তব্য করছিলো আর হাসিতে ঘর কাপছিলো।
সাম্য চাইছিলো অনু কিছু বলুক কিন্তু অনু শুধুই তাচ্ছিল্যের সাথে মুচকি হাসলো।
এর পর বাড়াবাড়ি হলো। একটা মেয়ে ডেকে বললো
– এই যে সুন্দরী মেইড শুনো। আমার পায়ে একটু নেলপলিশ পড়িয়ে দাও তো।
.
সীমন্তিনী কথাটা শুনে রুমে ঢুকে চেচিয়ে বলতে লাগলো
– ও কোন কাজের মেয়ে না! ও আমার কাজিন। শুধু ভাগ্য খারাপ দেখে আজ ও এখানে। না হলে তোমাদের মতো হাই ক্লাস মেইড ও দশ টা রাখার এবিলিটি রাখে।
..
অনুর সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। মেয়েটার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো
– আপু! আপনি দিন আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।
.
সীমন্তিনী ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে অনুকে টেনে নিয়ে চলে গেলো।
.
.
পর্বঃ১৩
.
.
সময় বহমান। রোগ,সুখ দুঃক্ষের সময়সীমা থাকলেও শোকের কোন সময়সীমা নেই৷
অনুর মায়ের মৃত্যুর এক বছর পুরো হলো৷
সাম্যদের গাড়ি সরাসরি কবরস্থানের পাশে। প্রায় নয় মাস পর সে ফিরেছে।
সাদার মধ্যে হালকা নীল সুতো দিয়ে ফুলের কাজ করা থ্রিপিস পড়েছে।
চুল গুলো হাত খোপা করা ৷ মাথায় ওড়না দেওয়া।
.
কবরস্থানের পাশেই অনুর বাবা,দাদা সহ অনেকে এসেছে। মোনাজাত ধরেছে।
তাচ্ছিল্যের সাথে হাসে অনু।
এগিয়ে যায় হুজুরের কাছে।
চোখ দিয়ে পানি তো পড়ছেই।
কাপাকাপা কন্ঠে বলে সে কি তার মায়ের কবরের কাছে যেতে পারবে!
সে জানে মেয়েদের কবরস্থানে যেতে নেই। তবুও কিছুক্ষণ….
.
অমায়িক আবদার অনুর। নিতান্তই বাচ্চার মতো শোনাচ্ছে।
অনুমতি পেতেই দৌড়ে মায়ের কবরের কাছে চলে যায়।
মুখ বরাবর কবরে কয়েক টা চুমু দেয়। তারপর দুহাতে আকড়ে ধরলো কবর টা।
আজ অনু কাঁদছে সাথে মুখে হাসিও।
আগরবাতি জ্বালালো। তারপর কথা শুরু হলো ।
রেজাল্টের কথা বললো, মামা মামির কথা,অনেক কথা৷
রান্না শিখেছে সে, অনেক কিছু পারে। এখন আর অন্ধকার ভয় লাগে না,কুকুরের ভয় নেই। কত শত কথা হলো!
.
.
অনুর বাবা দূর থেকে দেখছিলো। কাছে গিয়ে মাথায় হাত দিতে যাবে তখন অনু ওর মামার হাত ধরে।
মামা কে জিজ্ঞেস করে কি দোয়া পড়লে আল্লাহ্ বেশি খুশি হবে? শিখিয়ে দিতে৷
মামার উচ্চারণের সাথে সাথে উচ্চারণ করে মায়ের জন্য দোয়া করে ।
.
.
বিশাল বাড়ি ছিলো অনুর। ছিলো কারণ এখন নেই৷ বাড়িতে মানুষ গিজগিজ করছে। আজ ওর মায়ের জন্য মানুষ খাওয়ানো হচ্ছে। জোড়া গরু আর জোড়া মহিষ দিয়ে।
অনেক খরচ করেছে বুঝা যাচ্ছে।
অনু বাড়ির ভিতরে গেলো না।মাঠের এক পাশ টা তে কাঠাল গাছে হেলান দিয়ে বসেছিলো।
কারো সাথে কোন কথা বলছে না।
সামনের প্যান্ডেলে এতিম বাচ্চাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
.
অনু এগিয়ে গেলো সেদিকে। সাম্য অনুর পিছন পিছন যাচ্ছে।
যারা ওদের খাবার দিচ্ছিলো সবাই দাড়িয়ে গেলো। কুশলাদি বিনিময়ের পালা।
ছোটমা বলেই সবাই ডাকতো কি না।
অনু এগিয়ে গিয়ে বাচ্চাদের বললো
– জানো! আমিও না তোমাদের মতো এতিম। আজ আমার মায়ের মৃত্যু বার্ষিকী। আমারো না কেউ নেই। বয়সে ছোট হলে হয়তো কোন এতিম খানায় ঠাই নিতে পারতাম। তোমাদের ও কেউ নেই, আমার ও কেউ নেই৷ আমি যদি তোমাদের এক পাত বেড়ে খাওয়াই তোমরা কি রাগ করবে? বিনিময়ে শুধু আমার মায়ের জন্য দোয়া করিও। তোমরা কি খাবে?
.
বাচ্চারা চিল্লিয়ে সম্মতি জানালো।
অনু চোখের পানি মুছে এগিয়ে গেলো।
.
সাম্য আজ নতুন অনুকে দেখছে। যে সত্যি নারী হয়ে উঠছে।
সবার খাওয়া শেষ হলে অনু প্যান্ডেল থেকে বেরিয়ে এলো । হাজার খানেক মানুষ খেলেও অনু এক গ্লাস পানিও মুখে দিলো না।
বাহিরে আসতেই অনু দেখলো
বাবা,দাদা,ফুপু সবাই দাঁড়ানো।
ফুপুর কোলে বাচ্চা একটা ছেলে। দুমাসের হবে হয়তো।
– অনু তোর ভাই। দেখ একদম তোর মতো।
.
অনুর চোখের বাধ ভাঙলো। গলায় থাকা দুটো চেইনের মধ্যে একটা খুলে বাবুর গলায় পড়িয়ে দিলো৷
বাবা বেশ খানিকটা খুশি। দাদাও এগিয়ে এসে বললো ভাই বাড়ি চল।
– আজ আমি যদি ছেলে হতাম কিংবা আমার মা যদি একটা ছেলে জন্ম দিতে পারতো তাহলে কি আপনি আমার মায়ের সাথে এক ঘরে থাকতেন? ভালো ব্যবহার করতেন? ঠিক সময় চিকিৎসা করাতেন?
.
অনু দাড়ালো না। কারণ জানে বাবা নামক প্রানীটার কাছে এসবের উত্তর নেই।
.
.
অনু সেবার মাধ্যমিক দিয়েছে। রেজাল্টের পর কলেজ।
এদিকে সাম্যর স্কলারশিপ হয়েছে।
কানাডা তে যাচ্ছে সে।
এসে বিয়ে করবে খালাতো বোন রিমি কে।
অনু ছাড়া এখন কিছু বুঝে না বাড়ির কেউ। সব কাজেই অনুকে চাই।
সাম্য চলে যাবে বলে বাড়িতে অনেক মানুষ।
হাতের কাজ শেষ করে রুমে এসেই মায়ের শাড়ি পড়ে নিলো অনু।
আজ প্রায় চারমাস পর পড়লো। বড্ড মন খারাপ কি না!
সাম্য অনুর সাথে সেরাতের পর থেকে কথা বলে না বললেই চলে। অনুও মানিয়ে নিয়েছে। চোখের সামনে সাম্যর প্রেমিকা,হবু বউ কে। আগে কাটা কাটা লাগতো এখন সব ঠিক ঠাক।
কিন্তু মানুষ টা চোখের সামনে থাকতো। কাল থেকে থাকবে না।
ওযু করে এসে নামাজে বসেছে অনু।
সিজদায় পড়ে অনেক কাদঁছে।
নামাজ শেষে দাঁড়িয়ে দেখে সাম্য খাটে বসে আয়েশি ভঙ্গিতে সিগারেটে টান দিচ্ছে ।
অনু অবাক হলো না। খুব স্বাভাবিক ভাবে জিজ্ঞেস করলো
– ভাইয়া কিছু লাগবে?
– উঁহু!
– আচ্ছা!
.
অনু বারান্দায় চলে যায়। আকাশে মেঘ জমেছে । বৃষ্টি নামতে পারে।
তাইতো চুপচাপ প্রকৃতি।
.
সাম্য সিগারেটের পর সিগারেট টানছে৷
অনুকে দেখছে। অনেক লম্ভা হয়েছে তো। চুল গুলোও। বিউটিবন টা পারফেক্ট। একটু শ্যামলা হলে ভালো হতো। আগে ছিলো, এ বাসায় এসে আর সাদা হচ্ছে।
.
.
বাহিরে বৃষ্টি নামলো।বিদুৎ চলে গেলো।
অনু রুমে গিয়ে খাটের একপাশে চুপচাপ শুয়ে পড়লো। কারণ এটা সাম্যর বাড়ি, সে বললে সাম্য যাবে না। প্রয়োজন হলে সে চলে যেতে পারে। সাম্য স্পষ্ট করে আগেই বলে দিয়েছিলো৷
.
হালকা ঘুমের মাঝে অনু বুঝলো ঘর ভরে গেছে ধোয়ায়। এশট্রে এগিয়ে দিলো সাম্যর দিকে।
– ভাইয়া আপনার বাসা! আমি চলে তো যেতে বলতে পারি না। কিন্তু আমার শরীর ভালো না আর বাসায় অনেক মানুষ যদি একটু…
-?
– সিগারেট ফেলে দিতেন…
.
সাম্য ফেলে দিলো। অনু ধন্যবাদ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলো তখন সাম্য খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অনুর ডান কাধে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো৷
– আপনার হবু বউ পাশের রুমে৷ আপনি হয়তো ভুলে এসেছেন। সার্ভেন্ট দের রুমে রাতে আসাটা ঠিক হয়নি।
.
কিছুক্ষণ পর অনু বুঝলো সাম্য কাদঁছে।
.
অনুর বাম হাত সাম্যর মাথায় দিতেই বুকে মাথা রেখে সাম্যর কান্নার বেগ বেড়ে যায়।
সাম্য কে কখনো এভাবে দেখেনি অনু।
কিন্তু সে চুপ।
– কেনো করছিস এসব? কি দরকার ছিলো? চলে কেনো যাচ্ছিস না? এত অপমানের প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছে করে না?
দুই বছর ধরে জ্বালাচ্ছি। কথা বলি না, কাছে আসি না তোর কষ্ট লাগে না?
তুই কি কিছুই বুঝিস না?
চুপ করে থাকিস না কিছু বল।।
– পরের ঘরে থাকছি,খাচ্ছি এসব তো সহ্য করতেই হবে।
– আজো সে কথাই মনে রাখবি? কাল চলে যাচ্ছি যদি মরে যাই?
– রিমি আপু বিধবা হবে।
– ওই রিমি কেনো আসলো। তোর আর আমার মাঝে?
– আপনি উঠুন।
– ভালোবাসি অনু। বড্ড ভালোবাসি তোকে।
.
-ভালোবাসা ততটা পবিত্র হওয়া উচিৎ যতটা কাফনের কাপর পবিত্র হয়৷
.
অনুর কথা শুনে সাম্য উঠে বসে। কিন্তু হাত ছাড়ে না।
অনেক সময় যাওয়ার পর মান অভিমানের পালা শেষ হলো।
দূর থেকে আজানের শব্দ আসছে। সাম্য বেরিয়ে যাওয়ার আগে অনু কে রুমে যেতে বলে।
কোন কিছুই প্যাকিং করেনি৷
অনু নামাজ পড়ে মামা কে চা দিয়ে এগিয়ে যায় সাম্যর রুমে৷
সেদিন সাম্যর থেকে অনুর রেহাই নেই। এক মিনিটের জন্য চোখ থেকে আড়াল হতে দিচ্ছে না। মনে হচ্ছে এই কয়েক বছরের কমতি কয়েক ঘন্টা তে পুষিয়ে নিচ্ছে।
দুপুরের খাবার সাম্য রুমেই খাবে বলে। অনু খাবার এগিয়ে নিয়ে যেতেই রিমি বলে ও যাবে৷ অনু এগিয়ে দেয়।
গোসল সেরে সাম্য এসে দেখে রিমি খাবার নিয়ে এসেছে৷ অনুকে ডাকে, রিমি কে চলে যেতে বলে। রিমি এখন কথা বাড়ায় না। পরে এর হিসেব তো অনুর থেকে নিতেই হবে৷
.
সাম্য, অনু কিংবা সাম্যর মা কেউ ঠিক মতো খেতে পারলো না। গলা দিয়ে খাবার নামলোই না।
কিছুক্ষণ পর সাম্য বের হবে। অনুর ডাক পড়লো।
দরজা লাগিয়ে দিয়ে সাম্য কে অনু প্রথম বার পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
খুব কান্না করছে ।
– তাহলে না যাই?
– উহু! যাও তারাতাড়ি আসবে।
– হুম! আপনার জন্য নাকফুল সমেত ফিরবো।
– কিচ্ছু লাগবে না। শুধু তুমি হলেই হবে।
– সাবধানে থাকবেন ম্যাম! কল দিতে ভুলবেন না প্লিজ৷
– হুম!
– এখন ছাড়েন! সবাই অপেক্ষা করছে।
.
অনু ছেড়ে দিলো। সব কিছু আবার চেক করে সাম্য একদম তৈরি হয়ে দাড়ালো।
অনুর চোখ, মুখ, নাক লাল হয়ে আছে।
কপালে চুমু দিতেই অনুর কান্নার বেগ বেড়ে গেলো।
খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
-প্লিজ কান্না করিস না। এমন করলে আমি যেতে পারবো না শমপাপড়ি।
.
অনু সাম্যর পায়ের উপর দাঁড়িয়ে ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখে।
ধাক্কা সামলাতে সাম্য কয়েক কদম পিছিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে হেলান দেয়।
বেশ কিছুক্ষণ সময় নেয় দুজনে।
দরজায় টোকা পড়ে।
.
.
সাম্য যখন চলে যায় অনু তাকায়নি ওর দিকে। সাহস হয়নি।
তারপর ছয় মাস ভালোই কাটলো। কিন্তু হঠাৎ সাম্যর ব্যস্ততা বাড়লো।ফ্রেন্ডস হলো। অনুর সাথে প্রায় রাগারাগি চেঁচামেচি করে।
অনু কিছু বলে না। অবহেলা, রাগ সব যেনো ওর জন্যেই বরাদ্দ। আবার সব পাল্টে যেতে লাগলো। তবুও অনু সবটা দিয়ে সাম্য কে আগলে নেওয়া চেষ্টা করে কিন্তু
ঠিক তখন হঠাৎ করে বিয়ের সম্বন্ধ এলো। সারা রাত অনু সাম্য কে কল দিলো। ম্যাসেজ দিলো কিন্তু কোন রিপ্লে এলো না।
অনুর বিয়ে হয়ে গেলো।
সাম্য যখন জানলো তখন অনুর বিয়ে হয়েছে সাত দিন৷
.
.
নিলয় বাসায় এসে চিল্লিয়ে বাসা মাথায় তুলেছে।
বাসায় শুটকি মাছ রান্না করেছে।
অনু পাঁচ বার বমি করেছে। গন্ধ সহ্য করতে পারছে না সে।
প্রেগন্যান্সিতে এসব নরমাল কিন্তু সে মানতে নারাজ।
তার পিচ্চি বউ টা কষ্ট পাচ্ছে।
অনুর পাঁচ মাস চলছে। পেট একটু বড় হয়েছে৷
নিলয়ের কাছে কেমন পুতুল পুতুল লাগে।
চিল্লাচিল্লি করে এসে পুতুল
বউ এর পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে৷
– এত চিল্লাচিল্লি করেন কেনো?
– আপনি আপনি করেন কেন?বাসার সবাই জানে তারপরও কেনো রান্না করেছে?
– আহারে! কিন্তু এখন তো স্মেল পাচ্ছি না।
– সামনের রাস্তায় ড্রেনে ফেলে দিয়ে এসেছি।
– মানে?
-যা আমার বউ, বাচ্চা কে কষ্ট দিবে সব আমি তাদের থেকে এভাবেই সরিয়ে দিবো।
.
.
পর্বঃ১৪
.
.
রাগে ইরার পিত্তি সহ জ্বলে যাচ্ছে।
মনে হয় দুনিয়ার আর কেউ কোন দিন কন্সিভ করেনি আর কেউ কোন দিন মা হয় নি।
যতসব আদিক্ষেতা। একদম সহ্য হচ্ছে না।
নিলয় ইদানীং দুপুরে বাসায় আসে।
লাঞ্চ টাইমে বাসায় এসে অনু কে খাইয়ে দেয় নিজ হাতে৷
আজ কেও ব্যতিক্রম হয়নি।
কিন্তু খাওয়ার সময় অন্য কথা উঠিয়েছিলো। যা ইরার পছন্দ হয়নি।
.
নিলয়- বাবা! আমার কিছু কথা ছিলো।
বাবা- বল
– আসলে বাবা! আমার নামে যে দোকান টা আছে ওটার মাসিক ইনকামের টাকা টা আমি সামনের মাস থেকে নিতে চাচ্ছি।
ইরা- হঠাৎ? আগে তো জোর করলেও নিতে না?
নিলয়- নতুন সদস্য আসছে৷ তার একটা ভবিষ্যৎ আছে৷
ইরা- তাই? না কি অনুর আবদার মেটাতে হিমশিম?
নিলয়- অনুর তেমন আহামরি আবদার কোন সময় ছিলো না।তাছাড়া তুমি জানো যে অনু কন্সিভ করার খবর পাওয়ার পরেই আমার প্রোমোশন হয়েছে। আমি চাচ্ছি আমার বাচ্চার, আমার ওয়াইফের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু করতে৷ আজ আমি আছি, কাল নাও তো থাকতে পারি।
.
.
নিলয়ের কথায় একমত সবাই। ইরা বাদে। তা নিয়ে নিলয় ভ্রুক্ষেপহীন।
কথা গুলো বলছিলো আর অনুর মুখে ভাত তুলে দিচ্ছিলো। রুটিন মাফিক খাওয়া। মাছ তো খায় না৷
খাওয়া শেষে অনুকে নিয়ে নিলয় রুমে চলে যায়।
যেহেতু এখন প্রমোশন হয়েছে তাই বাসায় বসেও কাজ করে নিতে পারে।
অনুর জন্য নিলয় পুরো রুমের সব চেঞ্জড করেছে।
ছোট্ট একটা ফ্রিজ রেখেছে ঘরে। তাতে শুধু আইসক্রিম।
জুতো টা অবধি পাল্টে দিয়েছে। হাদিস,গল্পের বই, উপন্যাস সব আছে৷
অনুর যাতে কখনো মনে না হয় ওর মা নেই বলে আজ ওর কেউ নেই।
বিকেলে বেরিয়েছিলো ছোট বোন আশা কে আনতে যেতে।
মেডিক্যাল লাইফ শেষ করে আসছে। পোস্টিং এর শহরেই করিয়ে নিয়েছে।
.
.
বিকেলে নিলয় বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরা শুটকি মাছ রান্না করে আর ওটার গন্ধেই অনু নাযেহাল।
.
পুরো রুম অন্ধকার করে রেখেছে সাম্য। বাড়ি এসে খাওয়া দাওয়া কিছুই করেনি। ভাইয়ের জন্য খাবার নিয়ে এগিয়ে গেলো সীমন্তিনী। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে সাম্য। সিগারেট শেষ হতেই আবার ধরালো।
– ভাই! কই তুই?
– বারান্দায়! কেনো?
– খেয়ে নিবি! আয়।
-রেখে যা পরে খেয়ে নিবো।
.
সীমন্তিনী চলে যাওয়ার সময় বিছানায় ছোট্ট একটা বক্স দেখে। হাতে নিতেই সাম্য বলে
– বাকী যা আছে সব তোর কিন্তু ওইটা রেখে যা।
– এটা বুঝি আমার ভাবীর জন্য!
– ধরে নে তাই।
– আয় তো খেয়ে নিবি। কত কথা জমে আছে। ঈশ অনু যদি থাকতো।
– তাহলে চল!
– কোথায়?
– অনুর কাছে।
.
.
নিলয় কাজ করছিলো কিছু। আশা এসে নিয়ে গেলো অনুকে। রান্নাঘরের লগোয়া ডায়নিং টেবিলের বসে আছে অনু৷
নীল আর আশা মিলে কি যে খিচুড়ি রান্না করছে কে জানে?
অনু- কি করো তোমরা?
নীল- পিঠা বানাবো।
– কি পিঠা?
আশা- মাংস পিঠা।
অনু- আচ্ছা দাও আমি করে দিচ্ছি।
.
তখন নিলয়ের মা এসে তার দুই ছেলেমেয়ের উপর রাগ ঝাড়ছে। বাড়িতে আরো এক বউ আছে সে থাকতে এই পোয়াতি মেয়েকে দিয়ে কাজ করানোর কি দরকার? মায়ের এমন পরিবর্তন নীল কে অবাক করে। সত্যি সব পাল্টাতে সময় লাগে না ।
সে অনু কে নিয়ে চলে যেতে চাইলে অনু বলে হাতে হাতে করে শেষ করে দিচ্ছে আর ভাজার সময় চলে যাবে৷
বাড়ির সবাই কিছু না কিছু কাজ করছে।
আড্ডায় মুখর পরিবেশ । কাজ শেষে নীলয় অনুকে ড্রয়িং রুমে রেখে বাহিরে গেলো।
সিগারেট খোরদের এই এক সমস্যা, যখন নেশা লাগে মাথা ঠিক থাকে না।
মাঝেমধ্যে একটুখানি না খেলেও সামলে রাখতে পারেনা।
.
.
কিছুক্ষণ পর দরজায় কড়া নড়লো। কাজের মেয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই আটাশ উনত্রিশ বছর বয়সী এক লোক বাসায় ঢুকলো।
– জ্বি কাকে চাই?
– নীলদের বাসা এটা?
– জ্বী! আপনি আসেন৷
.
চুলে তেল দেওয়া শেষ করেছে কেবল। অনু উঠে দাড়াতেই কেউ একজন খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে। সামনেই শ্বাশুড়ি বসা।আর সবাই রান্না ঘরে। তবুও সব স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। অনু পাথড়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে। সব অনুভূতি কি শূন্য হয়ে গেলো? ঘোর লাগছে খুব ।
গন্ধটা খুব চেনা। স্পর্শ টাও। তার বাহুডোরে থাকা অবস্থান অস্ফুটস্বরে বললো
– সাম্য দা
.
.
.
#চলবে …