#সংসার
#রাফিজা_আখতার_সাথী
#নিরাপদ_থাকুন
ফুফি যেদিন বলেছিলো সাথীকে আমার ঘরের বউ করে নিয়ে যাবো।
সেদিন কেন যানি খুব নেচে ছিলাম।
।
“কি মজা কি মজা সায়ন ভাইয়ের বউ হবো।”
তখন তো বউ শব্দের মানেই বুঝতাম না।
।
ভাবতাম বউ মানে কোনো পুতুল খেলা। যেখানে শুধু শাড়ি পড়াপড়ি ছাড়া আর কিছুই থাকবে না।
,
কিন্তু এখন বুঝি বউ মানে সংসারের নতুন গিন্নি।
যার হাত ধরে পুরো পরিবার সামনে চলবে।
,
,
যেই আমি বউ মানে শাড়ি পরে থাকা বুঝতাম আজ সে শ্বাশুড়িকে গোসল করাই, শশুরের ঊযুর পানি আগিয়ে দিই আরো কত কি।
,
নিজের তিন বছরের ছোট্ট মেয়ে সায়নীকে পুতুল বর বউ বানিয়ে দিই। আর সায়নের অফিসে যাওয়ার আগে সব কিছু গুছিয়ে দেওয়া তো আছেই। রান্নাবান্নার কথা আর কিই বা বলবো। বুয়ার রান্না নাকি ভালো লাগে না কারোর তাই নিজেরই রান্না করতে হয় সব সময়।
,
একদিন রান্না করছি।
মাবাবা নিজেদের রুমেই আছে আর মেয়েটাও তাদের কাছেই আছে।
সায়ন অফিস থেকে ফিরে এসে কলিং বেল চাপতেই আমি দরজা খুলে দিয়ে আবার রান্নাঘরে চলে এলাম। সায়ন পিছনে পিছনে এসে আমার ঠিক পিছনে দাড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার কাধে থুতনি রাখলো। আমি বললাম,
,
-যাও ফ্রেস হয়ে আসো। আমার আর ৫ মিনিট লাগবে।
,
-তুই এমন হয়েগেছিস কেন বলতো সাথী।
আমার কি মনটা বলেনা তোর সাথে কিছুটা সময় পার করি।
কিন্তু তোর সব সময় এতো ফরমাল কথা কেন বলতে হয়। একটু মিষ্টি কথা বলা যায় না।
,
-আমার টাইম নেই তুমি যাও তো।
আগে ফ্রেস হয়ে আসো খাওয়া দাওয়া করে তারপর তোমার যত অভিযোগ আমাকে দিও।
,
দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে সব কিছু গুছাতে গুছাতে বিকাল ৬টা বেজে গেলো।
এর ভিতর মেয়েটাকে কাছে পাইনি।
সেই দুপুরে খাইয়ে দিয়েছি তখন যা কাছে ছিলো। এখন হয়তো বাবার সাথে ছাদে খেলছে।
,
,
এখন আবার রাতের জন্য খাবার রান্না করতে হবে। তাই রান্না শুরু করলাম আবার।
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে গোছাতে আশকরতে রাত ১১টা বেজে গেছে।
,
,
ঘরে গিয়ে দেখি।
মেয়েটা ঘুমিয়ে গেছে।
সায়নের বুকে মাথা রেখে সুয়ে আছে। সায়ন এখনও ঘুমাইনি মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
এটা আমার দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য।
বাবার বুকে মেয়েকে দেখতে মনটা জুড়িয়ে যাচ্ছে।
ছোট বেলায় আমিও যখন বাবার বুকে ঘুমাতাম মাও হয়তো এই ভাবে দেখতো বাবার ভালোবাসাটা।
,
,
দরজাটা আটকে দিয়ে।
খাটে বসে পেয়েটার কপালে একটা চুমু দিয়ে বারান্দার দিকে গেলাম। বাসাটা রুপসা ঘাটের পাশেই।
এখান থেকে রুপসা সেতুটাও খুব ভালো দেখা যায় যদিও ওটা প্রায় দুই কিলোমিটার দুরে।
রাতের রুপসা ব্রিজ দেখতে খুব ভালোলাগে।
সোডিয়াম লাইটে কংক্রিটের ব্রিজটার চেহারাটায় যেন পাল্টে গেছে।
যেন মনে হচ্ছে কোনো নিপুন কারিগরের হাতের সোনা খচিত একটা নকশা।
ভাবনার ভুতর থেকে বের হয়ে দেখলাম পাশের চেয়ারটাতে সায়ন বসে আছে।
,
-তোর যখন পাচ বছর বয়স তখন থেকে তোকে ভালোবাসি। আমারতো তখন বারো বছর বয়স প্রেম ভালোবাসার বিষয়ে কেবল একটু আধটু জ্ঞান হয়েছে।
তবে লজ্জাসরম জিনিসটা ছিলো না বলেই হয়তো তোকে বিয়ে করার কথা মাকে বলতে পেরেছিলাম। ভাবতাম তুই অবুঝই রয়ে যাবি।
তোকে সামলাতেই আমার দিন কেটে যাবে, তুই আমার সংসার কিভাবে সামলাবি। কিন্তু আজকে আমার খুব গর্ব হয় বুঝলি। সেই ছোট্ট অবুঝ মানুষটা একবাচ্ছার মা। আমার পুরো পরিবারকে কিভাবে সামলে রেখেছে।
জানিস সাথী মাঝে মাঝে মনে হয় তুই কোনো রোবট।
কারণ কোনো মানুষের দ্বারা সারাদিন অক্লান্ত ভাবে কাজ করা কি আদৈ সম্ভব!
কিন্তু একটা জিনিস তুই খেয়াল করেছিস সাথী?
,
-কি খেয়াল করিনি আমি? সব তো ঠিকঠাকই করছি।
,
-আহ চুপ করে শোনতো আমার কথা। এই যে এতো দ্বায়িত্ব তোর সাবার প্রতি এতো কেয়ার। এর মাঝে তুই আমাকে মনে রাখিস তো?
,
আলতো করে সায়িনের গালটা ধরে,
-তুমিই তো আমার অস্তিত্ব।
তোমাকে ছাড়া আমি যে কিছুই কল্পনা করতে পারিনা। যাকে কেও ভুলে যায় তাকেই মনে পড়ে।
কিন্তু তুমি সেই মানুষ যে আমার মনের ভিতর সবসময় থাকো।
তোমাকেতো ভুলিই না তাহলে মনে পড়বে কিভাবে। সংসার মেয়ে এইসব সামলাতেই দিন যায়।
কিন্তু আমারও মনটা বলে তোমার সাথে একান্ত সময় কাটায়। কিন্তু দেখো সব কিছু গোছাতে গিয়েই রাত ১১টা। ক্লান্ত হয়ে পড়ি এই অবস্থায় মনটাও বলে যে ছাদে গিয়ে তোমার বুকে মাথা রেখে চাদটা দেখি।
কিন্তু দেহের ক্লান্ত যে আমাকে ঘুমাতে বলে
,
-আমার যে সেই আগের সাথীকে ফিরে পেতে মন বলে। প্রতিদিন বিকালে ফুচকা খাওয়ার আবদার। শুক্রবার পার্কে যেতে চাওয়া। এই দিন গুলো কি আর ফিরবেনা সাথী।
,
-বয়স বাড়ার সাথে সাথে সব চাহিদা থাকেনা। আর থাকলেও ব্যাস্ততা সেটা হতে দেইনা।
,
-কে বলেছে হতে দেইনা।
এটা বলেই সায়িন আমাকে পাজাকোলে তুলে নিলো। তার পর ছাদের দিকে হাটা দিলো।
,
,
সায়নের বুকে মাথা রেখে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছি। আমি জানি সায়ন ঐ আকাশের চাদ কে দেখছে না। যদি বলি আকাশের দিকে তাকাও তাহলে ও বলবে আমার বুকে এতো সুন্দর চাঁদ থাকতে দুরের ঐ ক্ষত চাদ কেন দেখবো।
,
-তোকে নিয়ে আমি বুড়ো হতে চাই সাথী। কিন্তু তোর আবদার গুলো যেন আগের মতই থাকে। ফুচকা খেতে বাইরে না গেলাম। বাইরে থেকে এনে ঘরেই তো খেতে পারি। আর শুক্রবার মানে বাইরে যাবোতো যাবোই। এখন আমি আর তুই না আমরা সবাই যাবো আমি,তুই,সায়নী,মাবাবা সবাই।
,
-ঠিক আছে তাই হবে। এখন তোমার বুকে আমাকে একটু ঘুমাতে দাওতো। আর জ্বালিও না।
,
ঘুমিয়ে যায় সায়নের বুকে। সকাল ঊঠে আবার আমার সংসার সামলাবো।
,
সমাপ্ত