সংঘাতের মেঘ পর্ব-০১

0
136

#সংঘাতের_মেঘ
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রতা
#পর্বঃ১

“আমি আপনাকে কিছুতেই বিয়ে করতে পারবো না রায়হান ভাই। আপনার অনেকগুলো বান্ধবী।”

মেহেরজানের কথা শুনে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ রায়হান তালুকদারের কপাল কুঁচকে গেল। সে বিরক্তি নিয়ে বলল
“মেহের কি বলতে চাচ্ছিস তুই!”

মেহেরজান রায়হানের দিকে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে
“আপনি কি কানে কম শোনেন রায়হান ভাই। আমি তো বললাম যে আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না। তাছাড়া আমার উনি আছে।”

রায়হান তালুকদার হতভম্ব হয়ে মেহেরজানের দিকে তাকিয়ে রইল। মুহূর্তের জন্য তার মুখে কথা ফোটেনি। খানিক পরে, সংযত হয়ে বলল
“উনি? উনি কে মেহের? এতদিন তো শুনিনি তোর কারো কথা!”

মেহেরজান একটু মুচকি হাসল আর বলল
“শুনবেনই বা কেন? সবকিছু কি আপনাকে বলতে হবে?”

রায়হানের ভ্রু কুঁচকে গেল আরও। সে কিছুক্ষণ মেহেরজানের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে ধীরে ধীরে বলল
“মেহের, তুই ভুলে যাস না আমি কে এই রায়হান তালুকদার যা চায় তাই পায়। আর যা পায় না তা কেড়ে নেয়। সো রেডি থাকো বেবি মিসেস তালুকদার হওয়ার জন্য।”

মেহেরজান আবার চোটে উঠে বলল
“আপনি কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছেন রায়হান ভাই। বেশি করলে কিন্তু আমি বিয়ের দিন পালাবো। এই মেহেরজান ও কিন্তু কম যায় না।”

বলেই মুখ বাঁকালো মেহেরজান।

রায়হান তালুকদার মেহেরজানের চ্যালেঞ্জ শুনে খানিকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইল। তারপর তার ঠোঁটের কোণে এক অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠল। মৃদু হেসে বলল
“পালাবি? তুই পালিয়ে কোথায় যাবি মেহের? তুই জানিস না রায়হান তালুকদারের হাত কতদূর পৌঁছায়। আমি তোকে ধরে আনতে পারবো না, এমন জায়গা এই দেশে নেই।”

মেহেরজান এবার সত্যিই বিরক্ত হলো। চোখে স্পষ্ট চ্যালেঞ্জের দৃষ্টি নিয়ে বলল
“আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করবেন না রায়হান ভাই। আমি আপনার মতো মানুষকে চিনি। কিন্তু মনে রাখবেন, আমি কোনো খেলনা নই। বিয়ে আমার ইচ্ছেতে হবে, আর যদি আপনি জোর করেন, তবে সে বিয়ে আপনার কল্পনাতেই থেকে যাবে।”

রায়হানের মুখে এবার একটু গম্ভীর ভাব এল। তার মনের ভেতরে হতাশা আর রাগ মিশ্রিত কিছু অনুভূতি জাগতে লাগল। কিন্তু সে নিজেকে সংযত করে, মৃদু হাসি ধরে রেখে বলল
“তুই যা বলছিস, তাতে তোর সাহসের অভাব নেই, সেটা মানতেই হবে। তবে তুই আমাকে চ্যালেঞ্জ করলে কী হতে পারে, সেটা ভেবে দেখিস।”

মেহেরজান এক পা এগিয়ে এসে চোখের দৃষ্টিকে সরাসরি রায়হানের চোখে রেখে বলল
“আমার জীবনের সিদ্ধান্ত আমি নিজেই নেবো, রায়হান ভাই। আর যদি আপনি জোরাজুরি করতে থাকেন, তবে আপনাকে বুঝতে হবে যে এই মেহেরজান আপনার চেয়ে বেশি শক্তিশালী।”

রায়হান কণ্ঠস্বরে এক ঝলক রাগ ফুটিয়ে বলল,
“দেখা যাক, কে কাকে হারায়!”

মেহেরজান রায়হানের কথা শুনে গভীর শ্বাস নিয়ে শান্তস্বরে বলল
“রায়হান ভাই, আমি হার-জিতের খেলায় নেই। আপনি যদি আমাকে ভালোবাসতেন, তাহলে আমার ইচ্ছাকে সম্মান করতেন। কিন্তু আপনি শুধু জেতার জন্য খেলছেন।”

রায়হান তিক্ত হেসে উত্তর দিল
“তুই বুঝিস না, মেহের। এটাই তো আসল জীবন—হার-জিতের খেলা। আর আমি এই খেলায় সবসময় জয়ী হই।”

মেহেরজান নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
“আপনার সেই খেলা আপনার জন্য সুখকর হতে পারে, কিন্তু আমার জীবনের নিয়ন্ত্রণ আপনি পাবেন না। আমি নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নেবো। আপনি যা-ই ভাবেন না কেন, আমি পালিয়ে যাবো, প্রয়োজনে এমন জায়গায় যাবো যেখানে আপনার ক্ষমতা পৌঁছাবে না।”

রায়হানের চোখে ক্ষণিকের জন্য অনিশ্চয়তা দেখা দিল, কিন্তু সে তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলে নিয়ে কঠিন গলায় বলল
“তুই পালাতে চাইলেও, আমি তোকে খুঁজে বের করবো। রায়হান তালুকদার কোনো খেলায় হার মানে না।”

মেহেরজান এক পা পিছিয়ে গেল, গভীরভাবে তাকিয়ে বলল
“তাহলে দেখা যাক, কার ইচ্ছাশক্তি শক্তিশালী।”

এই বলে মেহেরজান রায়হানের চোখের দৃষ্টির সামনে থেকে চলে গেল, আর রায়হান তালুকদার সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল মেহেরজানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে।

—————

মেহেরজানকে রুম থেকে বের হতে দেখে ওর ছোট বোন আরিয়ানা ভ্রু নাঁচিয়ে বলল
“কিরে আপুই রায়হান ভাই কি বলল!”

মেহেরজান নাক ফুলিয়ে বলল
“তুই তোর রায়হান ভাইয়ের কাছে থেকেই শোন গিয়ে।”

বলেই আরিয়ানার পাশ কাটিয়ে চলে গেল মেহেরজান। আরিয়ানা হতভম্ব হয়ে রইলো। কি হলো এটা।

মেহেরজান রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আরিয়ানা কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। তারপর সে এক পা দুই পা করে মেহেরজানের পিছু নিল।

“আপু, কিছু তো বল!” আরিয়ানা ব্যাকুল হয়ে জিজ্ঞেস করল।

মেহেরজান কোনো উত্তর দিল না। নিজের ভাবনায় ডুবে রইল। রায়হানের সাথে কথা বলার সময় তার যে শক্ত অবস্থান ছিল, তা একবারে গলে গেছে মনে হচ্ছে। তবে মুখে দৃঢ়তার আভাস নিয়ে সে বলল
“আরিয়ানা, সব কিছু নিয়ে এত জিজ্ঞেস করিস না। তুই যা বুঝতে চাইছিস, তার থেকেও অনেক বেশি জটিল ব্যাপার এটা।”

আরিয়ানা মুচকি হেসে বলল
“আপু, আমি কিন্তু তোর সব বুঝি। তোর আর রায়হান ভাইয়ের মধ্যে যা কিছুই হোক না কেন, তুই ঠিকঠাক সামলে নিতে পারবি। তুই তো মেহেরজান!”

মেহেরজান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
“হ্যাঁ, মেহেরজান তো আমি… কিন্তু সবাইকে সন্তুষ্ট রাখা কি এত সহজ?”

বলেই সে আরিয়ানার দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে হেঁটে চলে গেল।

#চলবে কি?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে