#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৩
দেখতে দেখতে ডিসেম্বর মাস। ইটালিতে শীত ঋতুর আগমন ঘটেছে। কয়েক জায়গায় তুষার বৃষ্টিরও খবর এসেছে। আর্শির বসন্তের পর শীত ঋতু একটু বেশি পছন্দ। প্রেগনেন্সির ৪ মাসে পড়বে তার। বাংলাদেশ থেকে খবর এসেছে, আর্শির বাবা-মা, ভাই-ভাবি সবার আগামীকাল ইটালির ফ্লাইট। এতে যেন আর্শি আরও বেশি খুশি। নিজেদের থাকার অ্যাপার্টমেন্টের পাশের অ্যাপার্টমেন্টটা এক মাস যাবত ফাঁকা। তাই সেটাই এক মাসের জন্য ভাড়া নিয়ে নিয়েছে। আর্শি বসে বসে শ্রাবণের সাথে ফোনে কথা বলছে আর ফ্রুট কাস্টার্ড খাচ্ছে। পাশে লিসা কানে ইয়ারফোন গুজে পড়ছে। তখন সোহা ছুটতে ছুটতে আসে। এসেই বলে,
“কালকে তুষার বৃষ্টি হবে।”
আর্শি কথাটা শুনেই আনন্দে চিৎকার করে ওঠে। তারপর বলে,
“সত্যি!”
“হ্যাঁ। মাত্রই আবহাওয়া নিউজে এলো।”
“তাহলে কালকে…”
আর্শির বলার মাঝে ফোনের অপরপাশ থেকে শ্রাবণ বলে ওঠে,
“এই তুমি কিন্তু কাল বেরোবে না। জানো, কতো অ্যাকসিডেন্ট হয় তুষারপাত হলে?”
আর্শি বিরক্ত হলো খানিক। ফের বলল,
“কিছুই হবে না। গতবার আমরা এই সময়ে কতো ঘুরেছি জানেন? এখানে শীতকালে গাড়ির টায়ার অন্যরকম থাকে যাতে অ্যা*কসিডেন্ট ঝুঁকি কমে। যখন হালকা তুষারপাত হয় তখন রাস্তায় লবন ছিঁটানো হয়। আর ভারী তুষারপাত হলে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। আমরা হেঁটেই যাওয়া-আসা করি।”
“তাও যাবে না।”
আর্শি রেগে গেল। বলল,
“উফ! আপনি এমন করেন কেন? আমরা ক্লাস শেষে একটু রেস্টুরেন্টে যাব। বাঙালি রেস্টুরেন্ট। মমো, কাবাব এসব খাব। তারপর চলে আসব।”
“ঘরে এনে খাও। ফ্রোজেন সব তো পাওয়া যায়।”
“আপনার যখন এসব খেতে ইচ্ছে করে, আপনি ঘরে বসে খান? নিজে তো কলিগ, ফ্রেন্ডদের নিয়ে পার্টিও করেন। আর আমি একটু বেরোলেই দোষ? এমনভাবে বলছেন, যেন আমি নয় মাসের প্রেগন্যান্ট! আর সব তুষারপাত আমার মা-থার উপরই পড়বে!”
শ্রাবণ লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“আঙ্কেল-আন্টি যে আরও দুইদিন পর কেন যাবে, বুঝতে পারছি না! এখন উনারা ওখানে থাকলে তুমি শুধরে থাকতে। তোমার ফ্রেন্ডরা তোমার কী খেয়াল রাখে তা বুঝতেই পারছি!”
আর্শি সোহাকে ইশারায় বলল, ওরা সাথে পরে কথা হবে। সোহাও মাথা নাড়িয়ে চলে গেল। আর্শি লিসার দিকে একবার চেয়ে দেখলো, লিসা পূর্বের ন্যায় আছে। এবার আর্শি কণ্ঠ কিছুটা খাদে নামিয়ে বলল,
“আপনি সবকিছুতে আমার ফ্রেন্ডদের কেন টানেন বলেন তো? আপনার কি মনে হয়, আমরা সবসময় ঘুরাফেরাই করি?”
শ্রাবণের জবাব,
“না। আমি বলতে চাইছি,”
আর্শি ফের বলে ওঠে,
“বুঝেছি আমি। আমরা কিন্তু খুব একটা রেস্টুরেন্টে যাই না। আমি ছাড়া আমার ফ্রেন্ডরা সবাই পার্টটাইম জব করে। কেউ অনলাইনে রাইটিং সাইটে রিসার্চ আর্টিকেল লেখার জব করে তো কেউ বিভিন্ন শপে স্বল্প সময়ের জন্য। আমিও করেছিলাম, বাংলাদেশ থেকে ফিরে আর করিনি।”
শ্রাবণ এবার হার মেনে নেয়,
“আচ্ছা ঠিক আছে। যাও কিন্তু কেয়ারফুল থাকবে।”
“হুম। আপনাদের যে আজ নাইটক্লাবে পার্টি আছে, যার জন্য জলদি অফিস থেকে ফিরেছেন, সেখানে আবার ড্রিং*ক করবেন না তো?”
“আরে ধুর! আমরা আমাদের সেকেন্ড প্রজেক্ট শেষ করার খুশিতে একটু খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করেছি। আয়োজনটা করেছে আমার কলিগরাই। এখন আমি না গেলে খারাপ দেখায়।”
“বুঝেছি। আপনি কতো লাকি দেখেছেন, আমি আপনার উপর রাখঢাক দেখাই না। আমি মনে করি, আপনি যে আমাকে জানিয়েছেন, এটাই মেইন। আমাকে না জানিয়েও তো যেতে পারতেন। আর আমি আপনাকে জানালেই আপনি খালি না করেন! হুহ্!”
“তোমার ভালোর জন্যই তো।”
“হয়েছে। এবার ফ্রেশ হোন। অফিস থেকে ফিরেই কথা বলতে লেগে গেছেন। আমিও ঘুমাব। অনেক রাত হয়েছে।”
শ্রাবণ ঘড়িতে সময় দেখে। তাদের রাত নয়টার দিকে পার্টি শুরু হবে। তাই বলে,
“গুড নাইট। আর হ্যাঁ, তোমাকে আরেকটা কথা বলতে ভুলেই গেছি! ফেব্রুয়ারিতে আমি আসছি। তখন দুই মাসের ছুটি তো একমাস কাটিয়েছি। সেটাই সাথে এক্সট্রা এক মাস বাড়িয়ে ইটালিতে আসব।”
আর্শি অবাক হয়ে বলে,
“আপনাকে এতো ছুটি ওরা কীভাবে দেয়?”
“দেয়। কারণ আমি এই অফিসে প্রায় দুই-আড়াই বছরের মতো আছি। আমি ছুটি কাটাইনি। বছরে একটা লিমিটেশন ছুটি থাকলেও আমি সেগুলো নেইনি। আর রইল ঘুরাঘুরি, সেসব তো মাস্টার্স করাকালীন করেছি।”
“ওহ! ভালো। তবে আমার মনে হয় ছুটিটা ফেব্রুয়ারির লাস্টে নিয়েন। ডেলিভারি যদি জলদি হয় তাহলে তখন থাকতে পারবেন।”
“উমম, ভেবে দেখি। ততোদিনে তোমার কন্ডিশনেও বুঝা যাবে। এখন রাখছি। তুমি ঘুমাও। রাত জেগো না।”
এরপর আর্শিও বায় বলে ফোন রেখে পানি খেয়ে শুয়ে পড়ে।
_______
সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণ পড়াশোনা করছে আরিয়া। হঠাৎ তলপেটে সামান্য ব্যাথা শুরু হয়। আরিয়া ওয়াশরুমে গিয়ে দেখে সামান্য ব্লি*ডিং হচ্ছে। তাতেই আরিয়া ভয় পেয়ে যায়। আরিয়া আশিককে চিৎকার করে ডাকে। আশিক পড়ছিল। এগারোটায় তাদের পরীক্ষা। ঘণ্টা খানেক পড়ে তারপর ভার্সিটিতে যাবে। আরিয়ার চিৎকার শুনে আশিকও কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। সে তড়িঘড়ি করে উঠে ওয়াশরুমের কাছে যায়। তারপর দরজায় নক করে উৎকণ্ঠিত হয়ে শুধায়,
“কী হয়েছে? তুমি ঠিক আছো?”
আরিয়া দরজা খুলে বলে,
“আশিক, আমি এখনি ডাক্তারের কাছে যাব। আমার ভয় করছে।”
“কেন কী হয়েছে?”
“ব্লি*ডিং হচ্ছে।”
আশিক আরও ঘাবড়ে যায়। আরিয়ার এখন সেকেন্ড ট্রাইমেস্টার চলে। আশিক জিজ্ঞাসা করে,
“বেশি হচ্ছে? পেইনও হচ্ছে?”
“পেইনও একটু হচ্ছে। ব্লিডিংও একটু হচ্ছে।”
“একটু অপেক্ষা করো, আমি খালামণিকে বলি। খালামণির পরিচিত গাইনোকলিজিস্ট আছে। তোমাকে বারবার বলি, এতো টেনশন নিও না। কাল জোড় করে পরীক্ষা শেষে ঝাল ফুচকা খেলে! আমার কথাই শুনো না তুমি!”
আরিয়া চোখ বন্ধ করে বলে,
“যা করার তাড়াতাড়ি করো। আমাদের দশটার দিকে ভার্সিটিতেও যেতে হবে।”
আরিয়াকে বিছানায় বসিয়ে আশিক তার খালামণিকে বলতে যায়। মিসেস নেহা ও মুশফিকা চা খাচ্ছিলো। আশিককে হন্তদন্ত হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতেদেখে মুশফিকা বলে,
“আস্তে নামো।”
আশিক হড়বড়িয়ে বলে,
“আরিয়ার ব্লি*ডিং হচ্ছে। খালামণি, তুমি তোমার পরিচিত গাইনোকলিজিস্টকে বলে ইমার্জেন্সি একটু চেকআপ করতে আসতে বলো না।”
মিসেস নেহা ও মুশফিকা উভয়ই ঘাবড়ে যায়। মিসেস নেহা উৎকণ্ঠা নিয়ে শুধায়,
“বেশি পেইন হচ্ছে না তো?”
“বলল তো সামান্য।”
“আমি এখনি কল করছি।”
মুশফিকা ইতোমধ্যে আরিয়ার কাছে চলে গেছে। আরিয়া ভয়ে বারবার পানি খাচ্ছে। মুশফিকা বলে,
“তুমি শান্ত হও। টেনশন কমাও। কিছু হবে না। মাঝেমাঝে এমন হয়।”
“আমার ভয় করছে অনেক। আমার বেবি…”
আরিয়া বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছে। মুশফিকা ওকে শান্ত করতে ব্যাস্ত। মিসেস নেহা ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে আরিয়ার কাছে আসেন। তিনিও আরিয়াকে শান্ত থাকতে বলছেন। অতঃপর আরিয়াকে নিয়ে উনারা হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা করে।
________
যথারীতি ডিনার শেষে শ্রাবণ ও তার কলিগরা পানীয় পান করছে। শ্রাবণ কোকের গ্লাস নিয়েছে। বাকিরা অ্যা-লকো*হল নিয়েছে। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ শ্রাবণের শরীর খারাপ লাগলে সে বলে,
“হেই গাইজ, অ্যাই অ্যাম ফিলিং আনকম্ফর্টেবল। অ্যাই অ্যাম ফিলিং অ্যা হেডেক এন্ড অ্যা লিটল ডিজি।”
ইরিনা সন্দিহান কণ্ঠে বলে,
“বাট ইউ টেকিং কোক অনলি!”
শ্রাবণ মাথায় হাত দিয়ে বলে,
“ইয়াহ বাট অ্যাই অ্যাম নট ফিলিং ওয়েল। অ্যাই ওয়ান্ট সাম রেস্ট।”
তখন ইরিনার বয়ফ্রেন্ড বলে,
“ওকে। ইউ ক্যান টেক রেস্ট ইন হোটেল রুম।”
শ্রাবণ সম্মতি দিলে ওয়েটারকে ডেকে একটা রুম বুকড করে। শ্রাবণ সেখানে গিয়ে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করে। কিছুক্ষণের মধ্যে সে ঘুমিয়েও যায়।
_____
ডাক্তার আরিয়াকে চেকআপ করে বলেন,
“আপনাকে সাবধানে থাকতে হবে। তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। তবে এই ধরণের সমস্যাতে কিন্তু মি*সক্যা*রেজও হয়। কিছু মেডিসিন দিচ্ছি।”
ডাক্তারের কথা শুনে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। অতঃপর ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে মিসেস নেহা বলেন,
“দেখলি? এতো বলি সাবধানে থাক। শুনিস তো না।”
আরিয়া মন খারাপ করে বলে,
“সব শুনব।”
“হুম। এখন ভার্সিটিতে যা। টেনশন করবি না। এই আশিক, তোরা গাড়িতে করে যা। আমি আর মুশফিকা রিক্সা করে চলে যাব।”
আশিক মাথা দুলিয়ে আরিয়াকে নিয়ে গাড়িতে ওঠে।
চলবে ইন শা আল্লাহ,
#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৪
(সেনসিটিভ পর্ব, ইগনোর করলেও করতে পারেন।)
সকালে প্রচণ্ড মা*থা যন্ত্রণা নিয়ে ঘুম থেকে উঠে শ্রাবণ। চোখ মেলে নিজের আশেপাশে নজর বুলানোর সময় পাশে ইরিনাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে প্রথমে কিছুটা অবাক হয়। তৎপর মস্তিষ্ক বিষয়টা ভালোভাবে লক্ষ্য করলে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে সে! গতকাল রাতের তার যতোটুকু মনে আছে, তাতে সে রুমে একা এসেছিল। রেস্ট নিতে এসেছিল। তাহলে এখানে ইরিনা কীভাবে এলো? ইরিনার তো এখানে আসার কথা না। হঠাৎই ফ্লোরে নজর গেলে দেখতে পায়, গতকাল ইরিনার পড়নের টপ ও শ্রাবণের শার্ট নিচে পড়ে আছে। যা দেখে শ্রাবণের অক্ষিযুগল বৃহতাকার ধারণ করেছে। তার ভয় হতে শুরু করে। শরীর বেয়ে শীতল ঘম্রস্রোত বয়ে যাচ্ছে। সে যা সন্দেহ হচ্ছে তা যদি হয়! তৎক্ষণাৎ সে বিছানা ছেড়ে উঠে নিজের মা*থার চু*ল ধরে টানতে থাকে। অতঃপর শার্টটা উঠিয়ে তাড়াহুড়ো করে পড়ে নিয়ে হোটেল রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
শ্রাবণ বেরিয়ে যেতেই ইরিনাে বয়ফ্রেন্ড ওয়াশরুমের দরজার আড়াল থেকে বের হয়। শয়*তানি বাঁকা হেসে নাহিদকে মেসেজ করে দেয়,
“অল ডান!”
অপরদিকে নাহিদ সিলেটে নিজের বেডরুমে বসে উচ্চস্বরে হাসছে। কিছুক্ষণ পর নিজে নিজেই হিসহিসিয়ে বলতে থাকে,
“আমি জানি মিস্টার শ্রাবণ, আপনি ইনোসেন্ট। কিন্তু আপনার আপনজনেরা জানবে আপনি ক্যারেক্টারলেস! এন্ড ইউর প্রেগন্যান্ট ওয়াইফ! উফ আর্শি! নিজের হাসবেন্ডের এমন অ*ন্তর*ঙ্গ ভিডিও যখন দেখবে, তখন তোমার রিয়াকশন কেমন হবে? আমার তো সামনাসামনি লাইভ সেটা দেখতে ইচ্ছে করছে। কী করব? কী করব?”
নাহিদ আবার উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করে। এই সময় নাহিদের আচরণ দেখে যে কেউ বলবে নাহিদ মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। হিং*স্র হয়ে উঠেছে সে।
________
আর্শি সকাল থেকে খুব ফুরফুরে মেজাজে আছে। তাদের অ্যাপার্টমেন্টের বাহির থেকে সব বরফে আবৃত। ভার্সিটিতেও আজ ক্লাস কম। দুপুরে ওরা সবাই বাঙালি রেস্টুরেন্টে খিচুড়ি ও গো*শ*ত ভুনা খেতে এসেছে। মোনা, লিসা, হ্যারি, পিটার এরা সবাই বিদেশি হয়েও আর্শি ও সোহার সাথে বাঙালি খাবার খুব মজা করে খায়। হ্যারি একটু ঝাল কম খায়। তাই সে ঝোল কম নেয়। বাকিরা ভালোই ঝাল খেতে পারে। ওরা ছয় জন খুব আনন্দে সময়টা পার করলো। বিকেলে এই রেস্টুরেন্টেই মমো খেতে আসবে। এখন ভার্সিটিতে গিয়ে ল্যাবের কাজ করবে।
সন্ধ্যা হতেই অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে আর্শি নিজের ফোন চেক করে হতাশ হয়। শ্রাবণ বলেছিল আজ তার অফিস নেই। তাহলে একবারও কল করলো না। বিকেলে বেরোনোর আগে আর্শি চেক করেছিল, শ্রাবণ অনলাইনে নেই। মেসেজ করেছিল, সেটাও সিন করেনি। আর্শি একটা আপেল খেতে খেতে সোহাকে বলে,
“তোর জিজু আজ আমাকে ভুলেই গেছে। গতকাল রাতে কতো সতর্কতা বাণী শুনিয়েছিল। অথচ আজ একটা বারও কল, মেসেজ কিচ্ছু না!”
সোহা মজা করে বলল,
“এই? ভাইয়ার আবার অ্যা*লকোহ*লের নে*শা আছে নাকি? বললি তো, কাল নাকি পার্টি ছিল।”
আর্শি হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলে,
“আরে না! উনার এসবের নে*শা নেই। ভার্সিটিতে থাকতে সি*গারে*টের নে*শা হয়েছিল। আমার ভাইয়েরও। ওরা তো আমাদের বাড়িতেই বেশি আড্ডা দিতো। তো আমি একদিন ভাইয়ার রুম গুছাতে গিয়ে খাটের দেয়ালের সাইডের কর্ণারে সিগরেটের একটা অংশ পেয়েছিলাম। তারপর সেই নিয়ে যা কান্ড! উনার পরিবার, আমার পরিবার মিলে এমন ধো*লাই দিলো যে ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। উনাদের তখন টাকা গুনে গুনে দিতো। যাওয়ার ভাড়া, আসার ভাড়া। আর খাওয়ার জন্য বাসা থেকে খাবার দিতো। তুই বল, ছেলে মানুষকে এভাবে কেউ টাকা দেয়? এই অত্যা*চা*রে বেচারারা সি*গরেট ছেড়েছে। এরপর কলিও বলল যে ভাইয়া আর সি*গরেট খায় না।”
সোহা বলল,
“তাহলে তো ভালোই। তবে পার্টির ব্যাপার তো। ভুল বশতও খেয়ে ফেলতে পারে। তুই এইসব চিন্তা করিস না। আজ তো আঙ্কেল-আন্টিদের ফ্লাইট। পাশের ফ্লাটটা একটু ক্লিন কি করাবি না?”
“তাই তো! ক্লিনার আন্টিকে কল করে বলতে হবে। কাল সকাল সকাল যেন এসে ক্লিন করে দিয়ে যায়। আর পিটার না বলেছিল, দুইটা ম্যাট্রেসের ব্যাবস্থা করে দিবে।”
“মনে করা পিটারকে।”
আর্শি পিটারকে কল করে।
________
শ্রাবণ সকাল থেকে এখন দুপুর, নিজের রুম থেকে বেরোয়নি। ফোনও অফ করে রেখেছে। তার খুব ভয় হচ্ছে। এসব আর্শি জানলে? শ্রাবণের আরেক ফ্ল্যাটমেট গ্রিণ এসে লাঞ্চের জন্য ডেকে গেছে। কিন্তু শ্রাবণের হুঁশ নেই। এভাবেই দুপুর গড়িয়ে বিকেল। শ্রাবণের হাঁসফাস লাগছে। সে বেঁহুশ অবস্থায় একটা মেয়ের সাথে অন্যায় করেছে, এটা যতোবার ভাবছে ততোবার নিজেকে জঘন্যতম মানুষ মনে হচ্ছে তার। অনেক সাহস করে সে ফোন হাতে নিয়ে আর্শিকে কল করলো। আর্শি ল্যাপটপে রিসার্চের টপিকের সার্চ করছিল, শ্রাবণের কল আসাতে ল্যাপটপ অফ করে বসলো। রিসিভ করে নিজেই প্রথমে বলল,
“কাল পার্টিতে বুঝি অনেক টায়ার্ড হয়ে গেছিলেন? সারাদিনে আপনার কোনো খোঁজ নেই?”
শ্রাবণ ঢোক গিলে ভাঙা স্বরে বলল,
“আর্শি.. আমি..”
শ্রাবণের কণ্ঠে অস্বাভাবিকতা বুঝতে পারে আর্শি। সে চিন্তিত হয়ে শুধায়,
“কী হয়েছে? আপনার কণ্ঠস্বর এমন শোনাচ্ছে কেন? শরীর খারাপ আপনার?”
শ্রাবণের এখন অসহ্যরকমের কষ্ট হচ্ছে। ভয়ও হচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে, আর্শি তাকে ছেড়ে চলে যাবে। সে লয়াল হতে পারেনি। এসব ভাবনা গুলো তার মস্তিষ্ককে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। আর্শি জবাব না পেয়ে ফের জিজ্ঞাসা করে,
“শ্রাবণ, কী হয়েছে? কথা বলছেন না কেন?”
শ্রাবণ এবার আকুল স্বরে বলে,
“তুমি আমায় ভালোবাসো তো? সব পরিস্থিতিতে আমার সাথে থাকবে তো?”
আর্শি অবাকের সাথে বিভ্রান্তও হয়। জবাবে বলে,
“অবশ্যই ভালোবাসি। আপনি এভাবে বলছেন কেন? কিছু হয়েছে? অফিসের ঝামেলা?”
“তুমি সবসময় আমার সাথে থাকবে সেটা বলো।”
আর্শি বুঝতে পারছে না, শ্রাবণ এরকম কেন করছে। শ্রাবণকে শান্ত করতে বলে,
“আমি আপনার সাথেই তো আছি। বাহ্যিকভাবে দূরে হলেও মানসিক ভাবে আমরা কাছে। এখন আপনি বলুন, আপনি এমন করছেন কেন?”
শ্রাবণ হড়বড়িয়ে বলে,
“কিছুনা! কিছুনা! আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।”
“জানিতো। আপনি আমাকে নিয়ে এই ভয় পাওয়াটা কমান তো। এতো চিন্তা করতে আছে? কালই তো আব্বু-আম্মু, ভাইয়া ও কলি আসবে। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।”
শ্রাবণ ভীতু স্বরে ফের শুধায়,
“যদি কোনোদিন জানো, আমি মানুষটা ভালো না। তখন কি আমায় ছেড়ে যাবে?”
আর্শির এবার আরও চিন্তা হচ্ছে। শ্রাবণকে এভাবে কথা বলতে সে আগে শোনেনি। আজকের ব্যাবহার স্বাভাবিক না। আর্শি বলে,
“সময় কাকে কোথায় এনে দাঁড় করায় তা কেউ জানেনা। আমিও জানিনা। তবে আপনার সম্পর্কে না জেনে তো আমি বিয়েতে রাজি হইনি। আর বারবার ছেড়ে যাওয়ার কথা বলছেন কেন? নিজেকে এমন ভাবে রাখুন যাতে এই প্রশ্নটাই আপনার মনে না আসে। আপনার কথাবার্তাতে কেমন ভীতু ভাব শোনা যাচ্ছে। কিছু হয়েছে? বলুন না। শেয়ার করলে হালকা হতে পারবেন।”
শ্রাবণ একটু সময় নিয়ে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। অতঃপর বলে,
“আমার শরীরটা ভালো লাগছে না। ঘুমাব। তুমি চিন্তা করো না। একটা খারাপ স্বপ্ন দেখে তোমাকে কল করেছিলাম।”
“ওহ আচ্ছা। খারাপ স্বপ্ন দেখলে তিনবার ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ পড়বেন। তাহলে এই স্বপ্ন আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (মুসলিম, হাদিস: ২২৬২)”
“হুম। রাখছি। তুমি টেনশন করো না। এভরিথিং ইজ ফাইন।”
আর্শি নিরবে হাসলো। শ্রাবণও কল ডিসকানেক্ট করে কিছুক্ষণ বসে থেকে নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে অজু করতে গেলো।
_______
পরের দিন আর্শির বাবা-মা, ভাই-ভাবি সবাই এসে পৌঁছেছে। সবাইকে দেখে আর্শি অনেক খুশি। মিসেস আশালতা মেয়ের জন্য দেশ থেকে এতো এতো খাবার, আচাড়, নাড়ু, শীতের পিঠা বানিয়ে এনেছেন। সেসব এখন লাগেজ থেকে বের করছেন। জামা-কাপড় বলতে শীতের পোশাক দুয়েকটা আর নিত্যদিনের পড়নের কাপড় এনেছেন। এখান থেকে যা লাগে কিনে নিবেন বলে বেশি কাপড় আনেননি। মোনা, লিসা, সোহাকেও মিসেস আশালতা নিজের মেয়ের মতো আদর করে পিঠেপুলি খেতে দিয়েছেন। পুরো অ্যাপার্টমেন্টে যেন উৎসবের আমেজ। মিসেস আশালতা, হ্যারি ও পিটারকেও ফোন করে আসতে বলেছেন। এই ভিনদেশে এরাই তো তার মেয়ের সুখ-দুঃখের সঙ্গী।
ওদিকে নাহিদ A*I এর মাধ্যমে ইরিনা ও ইরিনার বয়ফ্রেন্ডের ক্লিপ এ*ডিট করে শ্রাবণকে বসিয়ে দিয়েছে। ভি*ডিওটা দেখে খালি চোখে একদম রিয়েল লাগছে। আপ*ত্তিকর অংশগুলো ইরিনার বয়ফ্রেন্ড ব্লার করেই পাঠিয়েছে। নাহিদ এডিট করা ভিডিওটা প্লে করে সব ঠিক কীনা চেক করে নিলো। আরও দুয়েকদিন পর এটা আর্শির কাছে পৌঁছাবে।
চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।