Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতেশ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-২৫+২৬

শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-২৫+২৬

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৫
হোটেলে এসেই শ্রাবণ প্রথমে শাওয়ার নিতে গেলো। আর্শি ব্যালকনিতে গিয়ে আশেপাশের ভিউ দেখছে। শ্রাবণ তিন দিন এই মিলান শহরে থাকবে। তারপর আর্শিকে নিয়ে ভেনিসে দুইদিনের জন্য বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান তার। আর্শিও বলেছে ছুটি নিয়ে নিবে। এইটুকু তো বুঝেছে এই ছেলে যেমন জেদি তেমন মুডি! সামান্য এদিক-সেদিক হলে তিলকে তাল ভেবে গোমড়া হয়ে বসে থাকবে। ফুঁস করে ক্লান্তির নিঃশ্বাস ছেড়ো বারান্দা ছেড়ে রুমে প্রবেশ করলো। ঘাড়ে ব্যাথা হচ্ছে তার। মনে হচ্ছে প্রেশার কমেছে। রুম সার্ভিসে কল করে কিছু খাবার অর্ডার করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।

শ্রাবণ শাওয়ার নিয়ে শুধু ট্রাউজার পড়ে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বেরিয়ে বলল,
“এতক্ষণে ভালো লাগছে। খিদেও পাচ্ছে। তোমার খিদে পাচ্ছে না?”

বলতে বলতে চেয়ে দেখলো, আর্শি ঘুমিয়ে গেছে। কেবল সন্ধ্যা ৭টার কাছাকাছি এখন। অসময়ে ঘুমাতে দেখে শ্রাবণ এগিয়ে গিয়ে আর্শির কপালে হাত রাখলো। না স্বাভাবিকই আছে। কিন্তু জাগাতে ইচ্ছে হলো না। ভাবলো কিছুক্ষণ ঘুমাক। ততক্ষণে কেক যে অর্ডার করে রেখেছে আগে, সেটাও চলে আসবে। শ্রাবণ রুম সার্ভিসে কল করে জানতে পারলো আর্শি কিছু খাবারও অর্ডার করেছে। তাই বলে দিলো, কিছুক্ষণ পরেই যেন কেকের সাথে একসাথে পাঠায়।

______

প্রায় আধঘণ্টা পর কলিংবেলের আওয়াজে আর্শির ঘুম ছুটে। ঘুম ঘুম চোখ সামান্য খুলে জড়ানো স্বরে বলে,
“কে এসেছে?”

শ্রাবণ দরজা খুলতে খুলতে বলে,
“খাবার অর্ডার করেছিলে যে।”

“ওহ হ্যাঁ।”

আর্শি উঠে বসে চুলগুলো পরিপাটি করে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে যায়। শ্রাবণ এই ফাঁকে জলদি করে রুম কিছুটা ডেকোরেশনের কাজে লেগে পড়ে। কিন্তু হঠাৎই কিছু মনে পড়াতে ওয়াশরুমের দরজায় নক করে। ভেতর থেকে আর্শি বলে,
“আসছি!”

“পরে আসবে। আগে দরজা খুলো।”

“কেন?”

“এক সেকেন্ডের জন্য খুলো।”

বাধ্য হয়ে আর্শি দরজা খুলতেই শ্রাবণ পেছন থেকে একটা বক্স সামনে এনে বলে,
“পড়ে আসো।”

আর্শি বক্সটা হাতো নিয়ে ভ্রুঁ কুঞ্চন করে বলে,
“কী আছে এতে?”

“খুলেই দেখো। আর কোনো কোশ্চেন করবে না। যা আছে পড়ে আসো।”

আর্শি দরজা লাগিয়ে বক্স খুলে দেখে তাতে ল্যাভেন্ডার কালারের একটা ফিনফিনে জর্জেট শাড়ি। শাড়িটা তার পছন্দ হলো কিন্তু কাপড়ের ম্যাটেরিয়ালটা মোটেও না। বিস্ময় নিয়ে দরজা খুলতেই শ্রাবণ ছুটে এসে দরজা চেপে ধরে বলে,

“রেডি হয়ে একেবারে বের হবে।”

আর্শি দরজায় হাত রেখে বলে,
“এটা অনেক পাতলা!”

“তো সমস্যা কই?”

আর্শি তীর্যক স্বরে বলল,
“সমস্যা কই মানে? এই শাড়িতে…. এই আমি এটা পড়ব না!”

শ্রাবণ বলে,
“আই অ্যাম ইউর হাজবেন্ড। তোমাকে কি এই শাড়ি পড়ে বাইরে যেতে বলেছি? তুমি যেতে চাইলেও আমি দিব না। শুধু আমি দেখব।”

“শাড়িটা…”

শ্রাবণ দরজা সামান্য খুলে আর্শির কথা শুরু হওয়ার পূর্বেই বলে,
“প্লিজ! আমি জানি তুমি শাড়িতে কম্ফোর্টেবল না প্লাস এতো পাতলা শাড়িতে তো নাই! তাও রিকুয়েস্ট করছি।”

আর্শি শ্রাবণের মুখপানে চেয়ে লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“ওকে!”

অতঃপর দরজা বন্ধ করে শাড়িটা পড়ে নেয়। শ্রাবণও বার্থডে কার্ড দিয়ে দেয়ালে লাগায়। ফুল দিয়ে বারান্দার টেবিলটা সাঁজায়। ল্যাভেন্ডার রঙের কেকটাও সেখানে রাখে। কয়েকটা ক্যান্ডেল গ্রিলের উপর রাখে। যদিও সেগুলো আর্টিফিশিয়াল ক্যান্ডেল। সব সাঁজিয়ে শ্রাবণ ভীষণ খোশ মেজাজে বলে,

“অল ডান। এখন বৃষ্টি এসে সারপ্রাইজ হয়ে যাবে পুরো। আসছে না কেন?”

অতঃপর বাথরুমের দরজার কাছে গিয়ে নক করে বলে,
“হয়েছে?”

আর্শি কুঁচি ঠিক করছে। জর্জেট শাড়ি পড়তে সুবিধা কিছুটা। আর্শি জবাব দেয়,
“হয়ে গেছে। আসছি।”

আর্শি কুঁচি ঠিক করতে করতে বক্সটা হাতে নিয়ে বেরোয়। শ্রাবণ হা করে তাকিয়ে আছে আর্শির দিকে। খোলা চুলে বিনা সাঁজে ল্যাভেন্ডার রঙের শাড়িতে স্নিগ্ধ ফুলের মতো লাগছে আর্শিকে। শ্রাবণের বিরতিহীন দৃষ্টিতে আর্শি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। এই দৃষ্টি যেন সাধারণ না। ঘোর লাগানো। এই ঘা*য়েল করা নজর থেকে বাঁচতে সে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায়। চিড়ুনী উঠিয়ে চুল আঁচড়ায়। বক্স থেকে চুড়িগুলো বের করে হাতে পড়ে নেয়। কানেও ঝুমকো পড়ে নেয়।

শ্রাবণের দৃষ্টি এখনও আর্শিতেই। সে এগিয়ে গিয়ে আর্শির পেছনে দাঁড়ায়। সামান্য ইতস্তত করে আর্শির কাঁধে প্রথমে হাত রাখে। আর্শি দৃষ্টি নিচু করে নেয়। শ্রাবণ আর্শির কানের কাছে মুখ নিয়ে স্মিত স্বরে বলে,

“মে আই?”

আর্শি মুখে জবাব দিতে পারলো না। আয়নায় শ্রাবণের চোখের দিকে একবার চেয়ে তৎপর দৃষ্টি নামিয়ে নিলো। শ্রাবণ আর্শির হাত ধরে ও-কে বারান্দায় নিয়ে যায়। তারপর চেয়ারে বসিয়ে নিজে বিপরীত পাশের চেয়ারে বসে। ফোনে এই আলো-আঁধারিতে আর্শির কয়েকটা ছবি তুলে বলে,

“কেকটা কাটো। পছন্দ হয়েছে না?”

আর্শি কেকটা দেখলো। অতঃপর স্মিত হেসে বলল,
“সব একদম মিলিয়ে এনেছেন? ফ্লাওয়ার ভাসেও ল্যাভেন্ডার ফ্লাওয়ার।”

শ্রাবণ মাথা চুলকে বলল,
“আসলে আমি তোমার জন্য তিনটা রং সিলেক্ট করেছিলাম। এখানে এসে আজকের দিনে প্রথমে তোমাকে ল্যাভেন্ডার রঙে দেখে মনে হলো, আজকের দিনটা তোমার জন্য ওই রংটাতেই সাঁজাই। লুক, তোমাকে কতোটা স্নিগ্ধ লাগছে তুমি নিজেও জানো না।”

আর্শি লাজুক হাসে। শ্রাবণ হাত বাড়িয়ে আর্শির সামনের চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দেয়। কপোল ও কানে শ্রাবণের হাতের ছোঁয়া লাগতেই কেঁপে উঠে আর্শি। শ্রাবণও তা বুঝে ফিচলে হাসে। আর্শি সামান্য তোঁতলানো স্বরে বলে,

“কে–ক কা*টি! মেল্ট হয়ে যাবে তো!”

“হু হু।”

আর্শি কেক কে*টে প্রথমে শ্রাবণকে খাওয়ায়। অতঃপর শ্রাবণও আর্শিকে খাওয়ায়। দুপুরের মতো দুজনে দুজনকে খাইয়ে দেওয়ার পর রুম সার্ভিসে কল করার পর ওরা বাকি কেক ও খালি ডিশ গুলো নিয়ে যায়। আর্শি ব্যালকনিতে বাইরের দিকে মুখ করে একটা ল্যাভেন্ডার ফুল ফুলদানি থেকে উঠিয়ে হাতে নিয়ে বসে আছে। মুগ্ধতার চোখে কোলো অম্বরে চাদরের মতো বিছিয়ে থাকা তারকারাজি দেখছে। সাথে আছে অর্ধচন্দ্রমা। শ্রাবণ পেছন থেকে এসে সামান্য নিচু হয়ে আর্শির কাঁ*ধে থুতনি ঠেকিয়ে নিরব থাকে। তৎক্ষণাৎ আর্শি লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে সামান্য নড়ে উঠে। শ্রাবণ বলে,

“পূর্ণিমাতেই আকাশের ওই চাঁদটা অনেক সুন্দর দেখায়। কিন্তু আমার কাছে এই অর্ধ চন্দ্রমাকেও মোহনীয় লাগছে। কারণ কী জানো?”

আর্শি মাথা নাড়ায়। শ্রাবণ ঘোরলাগা কণ্ঠে জবাব দেয়,
“কারণ, আমার মনের আকাশের চাঁদটা আমার সামনে বসে আছে! আকাশের চাঁদ যেমন একটাই থাকে। আমার মনেও তুমি একমাত্র চাঁদ। এই চাঁদের সৌন্দর্যে কোন পূর্ণিমা লাগে না। সে সব ক্ষেত্রেই মোহনীয়। এই চাঁদকে ছোঁ*য়ার একমাত্র অধিকার আমার আছে তাই না? ”

আর্শি এবার যেন নড়ন ক্ষমতাও হারিয়েছে। শ্রাবণের শীতল ঘোর লাগা কন্ঠস্বর আর্শিকে যেন বরফ করে দিয়েছে। শ্রাবণ ফের বলে,

“আমি আমার মনের আকাশের চাঁদটাকে একদম নিজের করে পেতে চাই। তাকে খুব গভীরতম ভাবে ছুঁ*য়ে দেখতে চাই। তার আড়ষ্ট ভঙি আমাতেই থাকুক।”

আর্শি নিরব। শ্রাবণ কিয়ৎক্ষণ অপেক্ষার পর আর্শিকে লজ্জায় আরও মুষড়ে পড়তে দেখে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিজের বক্ষমাঝারে আগলে দেয়। ভালোবাসা তো স্নিগ্ধতার প্রতিরূপ। ঠিক আকাশের ওই চাঁদটার মতো।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৬
ভেজা চুলে ব্যালকনিতে বসে আছে আর্শি। স্নিগ্ধ সকালে উদিত সূর্যের দিকে নির্নিমেষ চেয়ে আছে সে। রুমে শ্রাবণ উঁবু হয়ে ঘুমাচ্ছে। হঠাৎই তাকে মন খারাপের রেশ ঘিরে ধরেছে। তবে কি শ্রাবণের হুটহাট মন খারাপের রোগটা তাকেও পেয়ে বসলো? প্রশ্নটা মনে হতেই মৃদু হেসে ওঠলো। কিছুক্ষণ আগে শ্রাবণকে বলেছিল, একটু হাঁটতে বেরোবে। সকালের নাস্তাটা বাহিরে করবে। কিন্তু শ্রাবণের বেরোতে ইচ্ছে করছে না। ঘুম পাচ্ছে। আরও কিছুক্ষণ পর রুমেই খাবার অর্ডার করে নিবে বলে মনস্থির করে ঘুমিয়ে পড়লো। আর্শির খিদেও পেয়েছে। সে এবার উঠে দাঁড়ালো। তারপর রুমে গিয়ে শ্রাবণের হাত ধরে টানতে শুরু করলো। শ্রাবণ পিটপিট করে চেয়ে শুধায়,

“কী হয়েছে?”

“আমার খিদে পেয়েছে।”

“তাহলে আসো!”

আর্শি ভ্রুঁ কুঁচকে শ্রাবণের পিঠে একটা কি*ল দিয়ে বলে,
“আমার সত্যি খিদে পেয়েছে। আপনি যদি না যান তবে বলেন। আমি একাই চলে যাব। সোজা গিয়ে অ্যাপার্টমেন্টে উঠব। আপনি এখানে পড়ে পড়ে ঘুমান!”

এই বলে আর্শি রেগে বিছানা থেকে নেমে যেতে ধরলে শ্রাবণ ওর হাত টেনে নিজের কাছাকাছি নিয়ে আসে। আর্শি ঝুঁকে পড়ে শ্রাবণের মুখের কাছে। শ্রাবণ সম্মোহিত দৃষ্টিতে চেয়ে আর্শির সামনের দিকে ঝুঁকে পড়া চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে বলে,

“তুমি জানো? রাগলে তোমাকে কেমন লাগে?”

আর্শি মাথা নাড়িয়ে না জানায়। শ্রাবণ ফের বলে,
“রাগলে তোমাতে ঐশ্বরিক সৌন্দর্য ভর করে। সবাই হাসি মুখের প্রেমে পড়ে, আমি তোমার রাগান্বিত মুখটাতে বারবার প্রেমে পড়ি! কেনো বলো তো?”

আর্শি নজর হটিয়ে কিঞ্চিত হাসলো। অতঃপর জিজ্ঞাসা করলো,
“কেন?”

শ্রাবণ হেসে জবাব দেয়,
“তোমার চোখ দুটোতে তখন মায়া ভর করে। আরও শত শত কারণ আছে, যা আমি বলে শেষ করতে পারব না।”

“ওহ আচ্ছা! তুমি নাহয় সেই মায়াতে ডুবে থাকতে পারো। কিন্তু আমার কী হবে?”

আর্শির হাস্যজ্জ্বল মুখে এহেনো কথা শুনে শ্রাবণ সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে আর্শি শ্রাবণের হাত ছাড়িয়ে সোজা হয়ে বসে তীক্ষ্ণ মেজাজে বলে,
“এখন কি তবে আমি আয়নার সামনে গিয়ে নিজের চোখ দেখতে থাকব? যাতে করে নিজের চোখের মায়ায় নিজেই ডুবে গিয়ে দিন-দুনিয়া ভুলে, খিদে ভুলে থাকতে পারি!”

শ্রাবণ এবার বুঝলো। সে ঢোক গিলে বলে,
“কয়টা বাজে?”

“দশটা!”

“এতো! আমি তো ভাবলাম ৮টা বাজে।”

আর্শি কিছু না বলে শুধু শ্রাবণের দিকে এক পলক তাকালো। শ্রাবণ তাতেই উঠে সুরসুর করে ওয়াশরুমে হাত-মুখ ধুঁতে চলে গেলো। আর্শি মুখে হাত দিয়ে হাসলো।

_________

আরিয়া ক্যাম্পাসের একটা জায়গায় মন খারাপ করে বসে আছে। কিছুক্ষণ পরপর ফোন দেখছে আর বিড়বিড় করছে। এদিকে আশিক আরিয়াকে খুঁজছে। সে আরিয়ার সাথে ভার্সিটির থেকে বেরোচ্ছিল, তখনি এক জুনিয়র মেয়ে তাকে একটা কাজে আর্জেন্ট ডেকে নিয়ে যায়। আশিক আরিয়াকে বলেছে যাতে সে ক্যান্টিনে গিয়ে অপেক্ষা করে। আরিয়া প্রায় আধা ঘণ্টা যাবত ক্যান্টিনে অপেক্ষা করেছে। তারপরও আশিক না ফেরাতে আরিয়া এখন ক্যাম্পাসের একটা কোনায় গিয়ে বসে আছে। বিড়বিড় করে বলছে,

“কী এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ যে এতক্ষণ লাগে করতে? যদি রিসার্চের কাজের জন্যই মেয়েটা ডেকে থাকে তাহলে সারাটা দিন কী করেছে? এই মেয়েটার হাবভাব আমার মোটেও ভালো লাগে না। বিরক্তিকর!”

আশিক আরিয়াকে কল করে। আরিয়া ফোন রিসিভ করতেই আশিক বলে,
“তুমি ক্যান্টিনে নেই। আমি তোমাকে ক্যান্টিনে খুঁজে এলাম।”

আরিয়া দাঁতে দাঁত পি*ষে বলে,
“তুমি এখন গেছো? ঘড়িতে সময় দেখতো।”

আশিক বুঝলো বউ তার রেগে গেছে। তাই সরাসরি জানতে চায়,
“কোথায় তুমি এখন?”

আরিয়া তারপর স্থান বললে আশিক কল কেটে সেখানে যায়। গিয়ে দেখে আরিয়া গালে হাত দিয়ে বসে আছে। বিকেলের পড়ন্ত রোদ তীর্যকভাবে আরিয়ার মুখের উপর পড়ছে। হালকা গোলাপি হিজাবে রোদের মধ্যে আরিয়াকে কোনো গাল ফুলানো পুতুল বললে ভুল হবে না। আশিক মুগ্ধ নজরে কয়েক সেকেন্ড চেয়ে থেকে মৃদু হেসে ফোনের ক্যামেরা অন করে কয়েকটা ছবি তুলে নেয়। অতঃপর ছবিগুলো জুম করে দেখে বলে,

“মা শা আল্লাহ। ভাগ্য করে একটা গুলুমুলু পুতুল পেয়েছি। এখন পুতুলের রাগ ভাঙাতে হবে।”

আশিক এগিয়ে গিয়ে আরিয়ার পাশে গিয়ে বসলো। আরিয়া তা দেখে একটু সরে বসে অন্যদিকে মুখ ঘুরালো। আশিক তা লক্ষ্য করে দুষ্ট হেসে বলে,

“ওই মেয়েটা অযথাই আমাকে এতক্ষন বসিয়ে রেখেছে। কাজটা কিন্তু ও নিজে চাইলেও করতে পারতো। বা শোয়েবকে দিয়েও করাতে পারতো। কিন্তু সে যে চাইছিল আমাকে দিয়েই করাবে! আমার সাথেই করবে! তাইতো দেরি হয়ে গেল।”

আরিয়া ফুঁসছে আর আশিক মিটমিটি হাসছে। আরিয়া ব্যাগ থেকে কলম বের করে মুহূর্তের মধ্যে আশিকের গ*লার কাছে খোলা ক*লম ধরে অসহিষ্ণু স্বরে বলে,

“কেন? ওই মেয়েটার তোমাকেই কেন লাগবে কাজের জন্য? ওই মেয়ে কি জানে না, তুমি বিবাহিত? আমি বহুদিন থেকে লক্ষ্য করছি, ওই মেয়েটা তোমার আশেপাশেই ঘুরঘুর করে। এতো কী? এক ফ্যাকাল্টির কাছে রিসার্চ পড়েছে বলে কি সারাক্ষণ সে তোমার পেছনেই ঘুরবে কাজের জন্য? আরও তো আছে রিসার্চমেট। তাদের সাথে তো আমি ওই মেয়েকে দেখি না!”

আশিক ভয় পাওয়ার ভান করে হাত উঁচিয়ে সরল মুখ করে বলে,
“আমি কীভাবে বলব বলো? জুনিয়র দরকারে ডাকলে তো না করতে পারি না। তুমি বলো কীভাবে না করব?”

“কেন? তোমার মুখ নেই? মুখ দিয়ে না করবে। আল্লাহ তোমাকে মুখ দিয়েছে না? ওহ হ্যাঁ! জুনিয়রদেরকে না কীভাবে করবে? তাই না? ওরা এতো মধুর স্বরে ‘ভাইয়া! ভাইয়া!’ করে যে তুমি গলে পানি হয়ে যাও! সুন্দরীদের ডাক বলে কথা! ওয়েট, জেবিন তাই না? দাঁড়াও!”

শেষোক্ত কথাগুলো এক প্রকার ব্যাঙ্গ ও রাগ নিয়ে বলেই আরিয়া উঠে যেতে নিলে আশিক ওর হাত চেপে ধরে। অতঃপর বলে,
“তুমি এতো হাইপার হয়ে জেবিনের কাছে যাচ্ছো? ও তো চলে গেছে।”

“চলে গেছে না? তাহলে কালকে ওইটার চু*ল ধরে দে*য়ালে কয়েকটা বা*ড়ি মা*র*ব! অন্যের স্বামীর দিকে এতো ব*দনজর কেন? তাও আবার সিনিয়র আপুর স্বামীর দিকে! বা-*ড়ি দিতে দিতে মুখের ন*কশাই বদলে দিব। ডা ই নি একটা!”

আশিক এবার আর হাসি চেপে রাখতে পারলো না। আরিয়ার হাত ছেড়ে গা দুলিয়ে হাসতে লাগলো। আরিয়া চমকে তাকিয়ে বিস্ময় নিয়ে আশিককে দেখছে। তাও আশিকের হাসি থামছে না, বরং বাড়ছে। আরিয়া কোমড়ে দুই হাত গুঁজে ক্ষীপ্র দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। কিয়ৎক্ষণ বাদে আশিকের হাসির দমক কমে এলে সে বলে,

“তুমি এতো জেলাস! ও মাই গড! বিশ্বাস হচ্ছে না।”

আরিয়া নিজের ব্যাগটা উঠিয়ে আশিকের গায়ে ছুঁ*ড়ে মে*রে রাগান্বিত স্বরে বলে,
“হ্যাঁ তাই তো! বিশ্বাস হবে কেন? আমি তো সবসময় তোমাকে বিয়ের আগে ইগনোর করেছি। তাই বিয়ের আগে যারা পাত্তা দিতো তাদের রেখে আমাকে কেন গুরুত্ব দিবে? থাকো তুমি!”

এই বলে আরিয়া হনহনিয়ে চলে যাচ্ছে। আশিক আবারও হেসে ফেলে। আরিয়া পিছু ফিরে ফের আশিককে হাসতে দেখে জেদ করে বড়ো বড়ো কদম ফেলে চলে যাচ্ছে।

“বউ আমার ভীষণ রেগে আছে। দৌঁড়ো আশিক!”

এই বলে আশিক নিজেরটা সহ আরিয়ার ব্যাগ উঠিয়ে ছুট লাগালো। ততক্ষণে আরিয়া ভার্সিটির গেটের কাছে চলে গিয়ে বেরও হয়ে যাচ্ছে! আজ বুঝি আশিকের ক*পালে ভীষণ দুঃখ আছে!

চলবে ইন শা আল্লাহ,

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ