#শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে🖤
#পার্ট_৪
#Writer_Liza_moni
দীপ্ত তুমি এমন বদলে যাচ্ছো কেন বলো তো? তুমি আর আগের মতো নেই। তুমি কেমন জানি হয়ে গেছো।
দীপ্ত ফোঁস করে ফোনের ওপাশে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। হিতৈষী মুখে হাত দিয়ে কানে মোবাইল ধরে বিছানায় বসে আছে।দীপ্তর দীর্ঘ শ্বাস শুনতে পেলো সে।
কী হলো কিছু বলছো না কেন?কী হয়েছে তোমার?
হিতৈষী আমার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে।
হিতৈষীর কথাটা বুঝতে তিন সেকেন্ড সময় লাগে। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,
দীপ্ত তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমি ও যে তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। এমনটা হতে পারে না। তোমার পরিবার কে আমাদের কথা বলো নি তুমি?
দীপ্ত কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। বুকের বাঁ পাশে ঝড় বয়ে যাচ্ছে দুজনের। পরিবার নামক একটা জিনিসের জন্য ভেঙ্গে যায় হাজার হাজার মানুষের মন।হারাতে হয় ভালোবাসার মানুষটিকে।তারা যদি একটু বুঝতে পারতো এই মানুষগুলোর আবেগ, অনূভুতি,প্রেম, ভালোবাসা গুলো।
হিতৈষীর চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো কোলে রাখা বালিশের উপর।
নিরবতা ভেঙ্গে দীপ্ত বললো,,বলেছি আমি তোমার কথা তাদের।তারা এই খুঁত ধরেছে তুমি এতিম। তোমার পরিবার নেই। তুমি একটা মুসলিম পরিবারে থাকো।
হিতৈষী আর কিছু শুনতে পারলো না। লাইনটা কেটে দিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে বালিশে মুখ গুজে কান্না করতে থাকলো। বুকের মাঝে এক অসহ্য চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে।মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে মরে গেলেই ভালো হতো।
হিতৈষীর কোনো শব্দ না পেয়ে দীপ্ত কান থেকে ফোনটা চোখের সামনে এনে দেখলো হিতৈষী কল কেটে দিয়েছে। আবার কল বেক করলো না দীপ্ত।সে জানে তার মনে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে সেই একই ঝড় যে হিতৈষীর মনে ও বয়ে যাচ্ছে।
দীপ্ত চাইলে খুব পারতো হিতৈষী কে বিয়ে করতে। তার আর্থিক অবস্থা ভালো। এমন অনেক হিতৈষী কে সুখী করার মতো যোগ্যতা তার আছে। কিন্তু একটা দিব্বির জন্য চাইলে ও পারবে না সে।যে দিব্বি তার জন্ম দাত্রী মা দিয়েছে।
.
.
.
বান্দরবান খুব সুন্দর একটা জায়গা। কিন্তু স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার।ঝি ঝি পোকার ডাক,ব্যাঙের ডাক এই বর্ষায় এই সব খুব বিরক্ত লাগছে আয়রার।ব্যাঙ জিনিসটা একদম সহ্য হয় না তার। কেমন গা ঘিন ঘিনে একটা ব্যাপার। বেলকনিতে স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সে।এর কারণ হলো লোড সেডিং।এই মাত্র কারেন্ট চলে গেল।
পাহাড়ি এলাকায় এই একটা সমস্যা। হালকা বাতাস আর বৃষ্টি শুরু হলেই কারেন্ট চলে যাবে।
অন্ধকার আয়রার ভীষণ শত্রু। অন্ধকার জিনিসটায় খুব ভয় করে তার।মনে হয় চার পাশে তাকে কেউ ঘিরে রেখেছে।
যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে আয়রা।এক পা ও আগানোর শাহস হচ্ছে না।
এমন সময় মোমবাতির নিয়ন আলোয় আলোকিত রুম দেখে ঠোঁটের কোণে হাঁসি ফুটে ওঠে তার। রুমে কেউ মোমবাতি জ্বালিয়ে দিয়েছে।
হিতৈষী আপু ছাড়া আর এই কাজ কারো না।কারন হিতৈষী খুব ভালো করেই জানে আয়রার অন্ধকারে ভয় হয়। আয়রা বেলকনি থেকে রুমে আসলো।
রুমে চোখ বুলিয়ে দেখলো না কেউ নেই তো। হিতৈষী আপু,,গলা উঁচু করে ডাকলো আয়রা।
সাড়া শব্দ পেল না কারো। আয়রার পড়ার টেবিলের উপর মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখা।
মোমবাতিটা হাতে নিয়ে হিতৈষীর রুমে এগিয়ে গেল সে। হিতৈষীর রুমে ঢুকার আগেই কলিং বেল বেজে উঠলো।
বাড়িতে কারো সাড়া শব্দ নেই। আয়রা তার মাকে ডাকলো বার কয়েক। না কোনো সাড়া পেল না।
বুকের মাঝে ডিপডিপ করছে তার। কলিং বেল আবারো বেজে ওঠে। আয়রা এবার হিতৈষী কে ডাকলো। না কোনো সাড়া পেল না।
অল্পতেই হিতৈষী আর মায়ের উপর অভিমান জমেছে আয়রার।
এই বাড়িতে একা ফেলে কোথায় চলে গেছে সবাই।
দরজা খুলে দেওয়ার শাহস পাচ্ছে না আয়রা। কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে প্রান্ত কে ডাকলো।
না প্রান্তর ও কোনো সাড়া পেল না।এই দিকে মোমবাতির মোম গলে আয়রার হাতে পড়ছে।ভয়ে হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে। স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি।
এক ঢোক গিললো আয়রা।আবারো কলিং বেল বেজে উঠলো। আয়রা ধীর পায়ে ভয়ে ভয়ে গিয়ে শাহস করে দরজা খুলে দিল।
আর অর্ধ ভেজা প্রান্ত কে দেখে সস্থির একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।
এত সময় লাগে দরজা খুলতে? বৃষ্টির পানি ছিটকে এসে গায়ে পড়েছে।আর আমি প্রায় ভিজেই গেছি।
আয়রা কিছু বললো না।প্রান্ত ঘরে ঢুকে বললো আরো নেই কেন? চার দিকে অন্ধকার।
আয়রা দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললো,,লোড সেডিং হয়েছে। শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে লোড সেডিং খুব বেশি হয়।
ওহ আচ্ছা।আন্টি কোথায়?
জানি না।
মানে?
ডেকেছি অনেক বার।সাড়া পাইনি।
ওহ তোমার বোন?
ওর ও কোনো সাড়া পাইনি।
আজব ব্যাপার। তোমাকে এই বাড়িতে একা ফেলে তারা কোথায় গেলেন?এটা কেমন কথা?
জানি না।
প্রান্ত আর কথা বাড়ালো না। মোবাইলের টর্চ জ্বেলে রুমে চলে গেল।ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে।তা না হলে ঠান্ডা লেগে জ্বর আসবে।
সন্ধ্যার পর মোবাইলে রিচার্জ করার জন্য বের হয় প্রান্ত। মোবাইলের ব্যালেন্স শেষ। ব্যালেন্স না থাকলে মোবাইল রে কেমন এতিম এতিম লাগে।
.
.
আয়রার হাত জ্বলে যাচ্ছে উত্তপ্ত গলন্ত মোমে। আয়রা রুমে আসলো। বিছানার উপর থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে টর্চ জ্বেলে মোমবাতি রেখে নিভিয়ে দিল। বিছানায় বসে হাতের উপরে পরা মোম গুলো পরিষ্কার করে নিলো। হাতের তালু একদম লাল হয়ে গেছে।
আয়রা মোবাইল হাতে নিয়ে আবার হিতৈষীর রুমে আসলো। না নেই কোথাও হিতৈষী। রুম খালি।
আয়রার ভ্রু যুগল কুঁচকে গেল। এমন তো কখনো হয়নি। হিতৈষী এই রাতের বেলায় বৃষ্টির মধ্যে অন্ধকারে কোথায় গেল?
আয়রা এবার মায়ের রুমে গেল। না এই রুম ও খালি।মা নেই। ভয়ে বুক ধড়ফড় করছে। কেমন একটা অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়েছে সে।মা, হিতৈষী কেউ নেই। এই বাড়িতে এখন সে আর প্রান্ত একা। কোথায় চলে গেল এরা?এই বৃষ্টির রাতে এই অন্ধকারে আমাকে একা ফেলে।এক অচেনা ছেলের মাঝে,,,,,,
চলবে,,,, 🍁