শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে পর্ব-০২

0
1631

#শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে🖤
#পার্ট_২
#Writer_Liza_moni

দুই মাসের ভাড়াটিয়া!এটা আবার কেমন মামুনি?

দুই মাস ও এখানে থাকবে। তোকে এত ভাবতে হবে না।
যা ফ্রেশ হয়ে নে।ভিজে তো শেষ হয়ে গেছিস।

মেয়েটা মাথা নেড়ে চলে গেল।
প্রান্ত সোফায় বসে বসে মোবাইল টিপছে। খুব বোর লাগছে তার।
.

আয়রা চুল মুছে তোয়ালে মেলে দেওয়ার জন্য বেলকনিতে যায়। বৃষ্টি এখন কমেছে। বেলকনিতে লাগানো আয়রার শখের ফুল গাছে অনেক সুন্দর ফুল ফুটেছে।
মাধবীলতা ফুল গাছে এত ফুল ফুটেছে যে পাতা দেখা যাচ্ছে না। আয়রার চোখ পড়লো গোলাপ গাছের দিকে।ভ্রু কুঁচকে গেল তার।

সকালে দেখে গেলাম দুই টা কালো রঙের গোলাপ ফুটেছে আর এখন একটা ও নাই?

আম্মুইইইইইই আয়রা গলা উঁচু করে মাকে ডাক দিল।

আয়রার মা যলদি রান্না ঘর থেকে আয়রার রুমে আসলেন।
মেয়েটা হঠাৎ রেগে গেলো কেন ?এই মেয়ের যা রাগ ,,,,

কীরে কী হয়েছে তোর?এই ভাবে ডাকছিস কেন?

আয়রার নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে। মেয়েটার এই একটা দিক তার মায়ের খুব ভাল্লাগে।ও যখন রেগে যায় তখন নাকের ডগা লাল হয়ে যায়।ফর্সা নাকটা দেখতে তখন কিউট লাগে।

আমি সকালে কলেজে যাওয়ার সময় দেখে গেছি আমার কালো গোলাপ গাছে দুই টা ফুল ফুটেছে এখন সেগুলো কোথায়? ছিঁড়ছে কে?
আমার ফুল গাছের ফুল ছেঁড়া একদম পছন্দ না। গাছের ফুল গাছে সুন্দর।

আমি তো জানি না মা।কে ছিঁড়তে পারে বল তোর তো কোনো ছোট ভাই বোন ও নেই।যে সে ছিঁড়বে। আয়রা চুপ করে গিয়ে বিছানায় বসলো।

অনেক কষ্টের গাছ তার। অনেক কষ্ট করে গাছের যত্ন নেয় সে।তার গাছের ফুল অন্য কেউ কেনো ছিঁড়বে যেখানে সে নিজেই ছিঁড়ে না।

অনু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,,

হিতৈষী আপু আসছে তাইনা ?

আয়রার মা কপালে হাত দিয়ে বিড় বিড় করে বললো,, হিতৈষী তুই আজ গেছিস মা,,,

কি হলো বলো?ঐ হিতৈষীর বাচ্চা আসছে সকালে ?

হিতৈষী সকালে আসছিল।

এখন ও আসে নাই ও?

আসছে,,, রুমে গেছে,,,

আয়রা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন হিতৈষীর বাচ্চা 😤
তোরে আমি কাঁচা গিলে খামু,,,,

আয়রা রুম থেকে বের হয়ে হিতৈষীর রুমে গেল।

আয়রার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আয়রার মা কপাল চাপড়ে বললো,,
হিতৈষী তু আজ গেয়া বেটা ,,,,
.
.
হিতৈষীর রুমে গিয়ে দেখে হিতৈষী চুল মুছতেছে,,,
আয়রা হিতৈষীর চুলে টান দিয়ে ধরে বললো ,,,
তুই যে নাম্বার ওয়ান খচ্চর সেটা আমি জানি। কিন্তু তুই যে এত বড় চোর সেটা আমি আজ জানলাম।

আয়রু সোনা,মোনা,জানু মানু সলি বাবু,,,,
আর জীবনে ও তোর গাছের ফুল ছিঁড়বো না আমি।

মাফ কর জান,,,

তুই আমার পা ধরলে তোরে মাফ করমু না। আমার কত্ত সুন্দর ফুল গুলো তুই ছিঁড়ে নিচোস,,,,তোর খবর আছে পেত্নী।

আহহ লাগছে তো চুল ছাড় না বইন,,,

আয়রা চুলে জোরে একটা টান মেরে ছেড়ে দিল।

ফুল গুলো দিয়ে কী করছোস তুই?
নেক্সট টাইম যদি আমার ফুল গাছের দিকে নজর দিস তাইলে তোর চোখ তুলে আমি মার্বেল খেলমু,,,,
.
.
প্রান্ত ড্রইং রুমে বসে বসে ওদের ঝগড়া শুনতে পাচ্ছে।

আয়রা হিতৈষীর রুম থেকে বের হয়ে ড্রইং রুমে আসলো। আয়রার খেয়াল নেই যে ড্রইং রুমে প্রান্ত বসে আছে।সে গিয়ে সোফায় বসে টিভি অন করে দিলো।টম এন্ড জেরি দেখতে তার ভাল্লাগে। এখন সে সেটাই দেখছে।

প্রান্ত ভ্রু কুঁচকে আয়রার দিকে তাকালো।আজব মেয়ে তো,,,
এখনো পিচ্চিদের মতো কার্টুন দেখে।

টি টেবিলের উপর রাখা সান গ্লাস চোখে পড়তে আয়রার ভ্রু কুঁচকে গেল।
এই বৃষ্টির দিনে আবার কোন পাগলে সান গ্লাস পড়ে?

পাশ ফিরে প্রান্ত কে দেখে এক লাফ দিয়ে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো আয়রা। হঠাৎ করে প্রান্ত খেয়াল করে ভয়ে পেয়ে গেছে সে।বুকে থু থু দিয়ে রিমোট নিয়ে টিভি অফ করে দিল।

প্রান্তর খুব হাসি পাচ্ছে আয়রার কান্ড দেখে।

আয়রা নিজের রুমে দৌড় দিল। কেমন বিচ্ছিরি অবস্থা। আমার পাশেই লোকটা বসে ছিল আর আমি দেখিনি।দিন দিন বলদি হয়ে যাচ্ছি।

আয়রা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।গালে সেই চড়ের দাগ নেই এখন। লোকটা কী অদ্ভুত। এই বৃষ্টির মধ্যে সান গ্লাস পড়ে। দেখতে তো মাশাআল্লাহ।
কিউটের ডিব্বা।

আয়রা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে নিজে আঙ্গুল তুলে বললো,,
কিসের কিউট?এই ছেলে কোনো কিউট হলো? অসভ্য লোক একটা।কী জোরে থাপ্পর মেরে ছিল আমায়।এত জোরে আমার মা ও কোনো দিন মারে নাই।এই অসভ্য লোকের কোনো দিন ও বিয়ে হবে না হুঁ,,,,

আরফি আয়রা কে চড় মেরেছে এর শাস্তি তো ঐ খচ্চর কে পেতেই হবে,,,, ওয়েট এন্ড সি,,,

.
.
শুনো বাবা,,, তুমি যখন আমাদের বাড়িতে দুই মাস আছো এর জন্য কোনো ভাড়া তোমাকে দিতে হবে না। তুমি উপরের তলায় না থেকে
আমাদের এখানেই থাকো। গেস্ট রুমে। তোমার মা আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড। তুমি আমাদের বাড়ির অতিথি। তোমার আঙ্কেল তোমাকে এই আমাদের সাথেই থাকতে বলেছেন।

আমি দুই মাস না ও থাকতে পারি,,,১মাস বা তার ও কম সময় থাকতে পারি এখানে।

সমস্যা নাই। তোমার যত দিন কাজ আছে তত দিন এখানে থাকো।

আয়রা,,, এদিকে আয়,,,

আয়রা রুম থেকে বের হয়ে এসে বলে কী হয়েছে আম্মু?

আয়রার মা মুচকি হেসে বললো,,
এইটা হলো আদনান প্রান্ত। তুই প্রান্ত ভাইয়া বলে ডাকিস।

ক্রাশকে ভাইয়া বানাই দিলো,,,,ইটস নট ফেয়ার,,

এটা আমার মেয়ে আরফি আয়রা। তোমার ছোট বোনের বয়সী।

প্রান্ত কিছু বললো না। এমন সময় হিতৈষী রুম থেকে বের হয়ে আসে।প্রান্ত সে দিকে তাকালো।

আমি ও পরিচিত হতে চলে আসছি,,,

প্রান্ত এটা হলো হিতৈষী। আমার আরেক মেয়ে বলতে পারো।

প্রান্ত ভ্রু কুঁচকে বললো,,
আরেক মেয়ে বলতে পারি মানে?

না কিছু না। এই দুই জনই আমার আদরের দুই রাজ কন্যা।

আয়রা প্রান্ত কে গেস্ট রুম দেখিয়ে দে।ও ফ্রেশ হয়ে নিক। হিতৈষী আয়তো এদিকে,,,

কেমন জানি অদ্ভুত ব্যাপার। দুইজনের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ।এরা দুজন বোন সত্যি ?

আয়রা প্রান্ত কে রুম দেখিয়ে দিয়ে যাবার সময় বললো,,,
আপনার মাথায় নিশ্চয় স্ক্রু ঢিলা আছে,,, এই বৃষ্টির দিনে ও সান গ্লাস পড়েন অদ্ভুত,,,

এই মেয়ে শুনো,,,
তুমি আমার বয়সে ছোট তাই তুমি করে বলছি,,,
আমি সান গ্লাস পড়ি এর কারণ আছে।

আয়রা ভ্রু কুঁচকে বললো কী কারন?

আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখো,,,

আয়রা চোখ ছোট করে তাকালো।এত সময় খেয়াল করেনি আয়রা,,,এই ছেলের চোখের পানি হালকা সবুজ,,,

বেশি সময় তাকাই ও না ছোট বোন। অনেক মেয়ে পাগল এই চোখের জন্য ,,,তাইতো এই উপায়,,,

আয়রা এই প্রথম দেখলো এমন চোখ,,,
এই চোখ দেখে আরেক বার বাঁশ মানে ক্রাশ খেলো আয়রা,,,

এমন সবুজ চোখের মণি এলিয়েনের হয়,,,এই লোকটা নিশ্চয় ভিন গ্রহের প্রাণী,,,,

চলবে,,,, 🍁

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে