#শ্যামাপ্রিয়া
#পর্ব৫(অন্তিম পর্ব)
#তামান্না_আনজুম_মায়া
তিথির পেছন পেছন আসলো ফাহমিদ,তিথি বলে উঠলো
–,,আপনি ভিতরে গিয়ে অপেক্ষা করুন আমি কফি নিয়ে আসছি!
–,,আপনার রুম কোনটা?যেটাতে আপনি থাকেন ওইটার কথাই কিন্তু বলবেন!
তিথি দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়ালো ছেলেটা এতো তেঁদড় কোনো কথা শোনার মানুষই না!
–,,ছাদের চিলেকোঠার ঘরে থাকি আমি।
–,,যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন?
–,,অনুমতি না দিলে বুঝি যাবেন না?
–,,তা তো আমি যাবোই!
তাহলে চলুন, ফাহমিদ ভ্রু কুঁচকে বললো
–,,রুম দেখাবেন বলে কফি খাওয়াবেন না?
তিথি কোনো কথা না বলে ভিতরের দিক চলে গেলো।সিঁড়ি বেয়ে উঠলো ফাহমিদ।
তিথি রুমে এসে দরজা ধাক্কা দিলো ভিতরে ঢুকে গেলো পেছনে ফাহমিদ।
রুমে ঢুকেই ফাহমিদ হা হয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটা এই মাঝারি সাইজের রুম টাকে কি সুন্দর ভাবে গুছিয়েছে!
এক পাশে দুইটা সোফা,অপর পাশে পড়ার টেবিল।একটা পর্দা টেনে দিয়ে পাশে বিছানা।ওয়াশরুমের অপরপাশে একটা ছোট্ট কেবিনেট তার সংলগ্ন একটা বৈদ্যুতিক চুলা!যার উপর এখন মনোযোগ সহকারে কফি বানাচ্ছে তিথি।
ফাহিমদ ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে দাঁড়ালো তিথির পেছনে।কফি তৈরি করে পেছনে ফিরতেই চমকে উঠলো তিথি।
ফাহমিদ কে এতো কাছে দাড়িয়ে থাকতে দেখে হঠাৎ করে ভয়ই পেয়ে গেছিলো।
তিথি সৌজন্যে মূলক হেসে কফি কাপ এগিয়ে দিলো।
তিথি প্রথমে ইতস্তত বোধ করলেও ফাহমিদের একের পর এক কথা বলাতে জড়তা কাটতে থাকলো তার। ছাদে হেঁটে হেঁটে কথা বলছে দুজন, দরজায় আড়ি পেতেছে সব ভাই বোন।ইসমা বলছে–,,আমাকে দেখতে দে আমার ছেলে বি’দ্বেষি বান্ধুবী কেমনে প্রেম করতাছে!
সৌরভ বললো–,,দুটোকে মানিয়েছে ভালো।দুজনেরই বিপরীত মানুষের প্রতি এর্লা’জি ছিলো।এবার যদি এদের একটা গতি হয়!
———
বড়দের আড্ডায় এবার সবাই কে থামিয়ে দিয়ে সুরেখা বললো
,,যদি কেউ কিছু মনে না করেন তো একটা কথা বলতাম!
জয়নাল বেপারী বললো–,,বলো অনুমতির কি আছে,আমরা আমরাই তো!
–,,আসলে আমরা মানে ফাহমিদের বাবা আর আমি চাই তিথি কে ফাহমিদের বউ করে ঘরে তুলতে!
সুরেখা শ্বশুরের দিক তাকিয়ে বললো –,,বাবা আপনার কি কোনো আপত্তি আছে?
পুরো ঘর ময় নিরবতা। এবার হেসে উঠলেন সাত্তার সিকদার সাথে জয়নাল বেপারী।
দুজনই একত্রে বললেন–,,উত্তম প্রস্তাব!তবে ছেলে মেয়ের মত নেওয়া জরুরি!
সুরেখা বললো–,,বাবা আপনার নাতিই বলেছে তার তিথিকে পছন্দ, আমার বিয়ে করতে না চাওয়া ছেলেটা নিজে বিয়ে করতে চেয়েছে বাবা।সত্যি মেয়েটা জা’দু জানে।
সাত্তার সিকদার বললো–,,তা যা বলেছো বউ মা।
সবার মতামত নেওয়া হলো এইরকম একটা সিদ্ধান্তে সবাই সম্মতি দিলো!
সুরেখা বললো–,,তবে একেবারে ছেলের বউ নিয়েই ফিরবো।কারো আপত্তি নেই তো?
জুলেখা বেগম বললেন–,,আপত্তি থাকবো কেন আমার নাতনি তোমাদের পরিবারে যাবে এতে তো আরো খুশি আমরা।
তবে তাই হোক শুক্রবারই বিয়ের তারিখ নির্ধারন করা হোক!
——–
বড়দের সব কথা গিলে নিয়ে দৌড় লাগালো ইফাত। হাফাতে হাফাতে গিয়ে পৌঁছালো সিঁড়ির উপর।
–,,তোমরা এখানে জানো কি হয়েছে? তিথি আপু আর ফাহমিদ ভাইয়ার বিয়ে শুক্রবার। বড়রা একটু আগেই সব ঠিক করলো!
কথাটা শুনতে পেলো তিথি।ফাহমিদ নিজেও অবাক একেবারে বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে?তিথি যদি এখন না করে দেয় তখন কি হবে আগে কিছুদিন মেয়েটা কে জানা বুঝার তো দরকার ছিলো!
তিথি ফাহমিদের দিকে একবার তাকালো দ্রুত পায়ে নেমে গেলো ছাদ থেকে।
সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো।
রাতে তিথির ঘরে আসলো জয়নাল বেপারী, তিথি জানতো তার দাদু এখন আসবে!
জয়নাল বেপারী এসেই বসলো নাতনীর পাশে।তিথি গম্ভীর হয়ে বসে রইলো
–,,শোন বোন,জীবনে অনেক সময় এমন কিছু বয়ে আনে যা আমাদের কে শুধু কষ্টই দেয়।তবে সব সময় যে এমনটা হবে এরকম ধারনা রাখাটা ভুল।ফাহমিদ ভালো ভদ্র ছেলে,সে নিজে থেকেই তোকে পছন্দ করেছে তাই আমরা এই সিদ্ধান্ত টা নিয়েছি!
তিথির নতমস্তক কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো–,,কিন্তু দাদু!
–,,কিসের কিন্তু? বিয়ে একটা পবিত্র সম্পর্ক, বিয়েটা হোক দুজন দুজনকে জানবি বুঝবি দেখবি তোদের মাঝে ভালোবাসা অদশ্য ভাবেই আসবে।বিয়েতে রহমত হিসেবে আল্লাহ ভালোবাসা সুখ শান্তি দান করেন।আমি দাদু হয়ে চাইবো তুই বিয়েটা কর,তোর বাবার সাথেও কথা হয়েছে সে ও খুশি হয়েছে!এবার বাকিটা তোর ইচ্ছে।
–,,আমি ফাহমিদের সাথে এই বিষয় কিছু কথা বলতে চাই যদি সব কিছু মিলে তো আমার কোনো অসুবিধে নেই!
জয়নাল বেপারী খুশিতে নাতনীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
সকাল না হতেই তিথির ডাক পেয়ে ফাহমিদ চমকালো।দ্রুত ফ্রেশ হয়ে ছুটলো ছেলেটি।ঘাট পাড় সিঁড়িতে বসে আছে তিথি।তার পাশে গিয়ে বসলো ফাহমিদ!
ফাহমিদের উসকোখুসকো চুল দেখে হাসলো তিথি স্নিগ্ধতায় ঘেরা হাসিটি মুগ্ধ হয়ে দেখলো ফাহমিদ।
তিথি সবুজ পানি গুলোর দিকে তাকিয়ে বললো–,,মনে হচ্ছে ঘুম থেকে উঠেই এক প্রকার ছুটে এসেছেন?এতো তাড়া কিসের মহাশয়?
ফাহমিদ চুল গুলো ঠিক করতে করতে বললো–,,আপনাকে পাওয়ার তাড়া মহাশয়া!
তিথি চট করে তাকালো ফাহমিদের দিকে।ছেলেটি তার দিকেই তাকিয়ে।
–,,যদি আমি আপনার না হতে চাই তখন?
–,,জোর করে হলেও নিজের বানাবো।প্রথমে সময় দিবো,নিজে তোমার মন মতো হওয়ার চেষ্টা করবো তার পরও যদি তুমি ঝামে’লা করো তো আমি জোর করে হলেও তোমায় নিজের করবো!
–,,তাই বুঝি?
তিথি একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো মজা করা বাদ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথায় আসি আমি আপনাকে যে কারনে ডাকলাম।
–,হুম বলো!
,,আপনি কেনো আমাকে পছন্দ করেছেন তা আমি জানি না।
,,তোমাকে জানতে হবে ও না!
তিথি বিরক্তি নিয়ো তাকালো আবার বললো–,,আজ অব্দি এমন কোনো মানুষ নেই যারা আমাকে আমার গায়ের রঙ নিয়ে কথা শুনায়নি!আমার এতে মাথা ব্যাথা নেই তবুও আপনি কেনো আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন জানতে চাচ্ছি আমি।সবাই সুন্দরই খোঁজে ফাহমিদ আপনি কেনো ব্যতিক্রম হবেন এই প্রশ্নের উত্তরটাই চাই আমার!
ফাহমিদ বলে উঠলো–,,আমার চোখ তোমার মাঝেই মুগ্ধতা খোঁজে পেয়েছে শ্যামাপ্রিয়া!
আমি সুন্দর বলতে তোমার মায়া ভরা চোখ,তিমিরে ঢাকা অম্বরের ন্যায় তোমার দীঘল কালো চুল।তোমার পলাশ রাঙা ঠোঁটের হাসিকেই বুঝি।তোমার মুক্তোর মতো চকচকে হৃদয় তোমার ব্যক্তিত্বের প্রেমে আমি পড়েছি।তোমাকে প্রথম দেখায় ই আমি ভালোবেসে ফেলেছি!জানি বিশ্বাস করবে না তবুও চাইবো একবার বিশ্বাস করে হাতটি ধরো যাতে প্রমান করতে পারি কতোটুকু ভালোবাসি!
ভালোবাসায় এতো কিছু দেখতে নেই তিথিয়া।এবার বলো তুমি কি আমার এই ভালোবাসার পূর্ণতা দিতে হাত বাড়িয়ে দিবে আমার দিকে?হাত রাখবে আমার হাতে সারাটি জীবন একসাথে চলার জন্য? কথা দিচ্ছি আজীবন ভালোবাসবো তোমায়!
তিথির চোখ জলে চিক চিকি করে উঠলো, ভালোবাসার কাঙ্গালি কে কেউ এমন ভাবে ভালোবাসবে কোনো দিন কল্পানাও করেনি তিথি।
তিথি চোখ বুঁজে নিলো, হাত বাড়িয়ে দিলো ফাহমিদের হাতে।
———
আজ শুক্রবার নিয়ম মাফিক বিয়ে সম্পন্ন হলো ফাহিমদ ও তিথির।
তিথির ঘরে মিটমিটে আলো জ্বলছে লাল রঙা বেনারসি পড়ে এক হাত লম্বা ঘোমটা টেনে বসে আছে তিথি।দরজা ঠেলার শব্দে অজানা নতুন অনুভূতিতে ছেয়ে গেলো তিথির মন মস্তিষ্ক!
ধীর পায়ে এগিয়ে আসলো ফাহমিদ।তিথির ঘোমটা দুহাতে সরাতেই মেয়েটি লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে বসলো।
ফাহমিদ ফিসফিস কন্ঠে বললো–,,লজ্জাবতী লতা নেতিয়ে পড়ুক আমার বুকে!আমি স্বযত্নে তাহার লজ্জা রাঙা মুখ দেখবো নয়ন ভরে।অতঃপর একদিন সব লাজ ভেঙে দিবো ভালোবেসে!
তিথি যেনো আরো বেশি লজ্জা পেলো।ফাহমিদ কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো–,,ভালোবাসি শ্যামাপ্রিয়া!
চলো আজ চন্দ্রবিলাস করি,চাঁদের মায়া মাধুরি মিশিয়ে শুরু করি আমাদের নতুন পথচলা!
সমাপ্ত