#শ্যামাপ্রিয়া
#পর্ব৩
#তামান্না_আনজুম_মায়া
বিয়ের আমেজে মেতে উঠেছে সৌরভদের বাড়িতে সবাই।মানুষে গিজগিজ করছে পুরো বাড়ি,বেপারী বাড়ির সবাই টানা চার দিন নিমন্ত্রিত। বাড়ির তিন বউ সেখানে কাজে টুকটাক সাহায্য করছে হাসি খেলায় মেতে উঠেছে সবাই।
গায়ে হলুদের স্টেজের সামনে চেয়ার পাতা হয়েছে ইসমার কাজিনরা বসে আছে।
ইসমা গিয়েছে তিথির কাছে,মেয়েটা দারুণ ভাবে সাজাতে পারে,তবে সবাইকে সাজিয়ে দেয় না কখনো,মেয়েটার এই গুণ প্রকাশ পাওয়ার কোনো উপায় নেই কারন সে নিজে কোনো দিন সাজেনি!মানুষ অন্তত লিপস্টিক, কাজল দেয়।এর থেকে এটাও আশা করা ভুল।
ইসমা কে শাড়ি পড়িয়ে তৈরি করে দিলো তিথি।ইসমা জোড়া-জোড়ি করলো শাড়ি যাতে আজকে অন্তত পরে।
ছাদের চিলেকোঠার ঘরটায় থাকে তিথি,নিচে ও থাকতে পারতো তবে দিনে কয়েকবার তার মুখ দেখা তার সৎ মায়ের ভীষণ অপছন্দের!
তিথি কে ঠেলেঠুলে বাসন্তী রঙা এক শাড়ি পড়িয়েছে ইসমা।চুল গুলো খোঁপা করে নিয়েছে তিথি মাথায় সম্পুর্ন গোলাপের এক গাজরা।
মেয়েটা সত্যি আদুরে!ইসমা শুধু ভাবে গায়ের রং বাদ দিয়ে কেনো মানুষ আসল সৌন্দর্য খুঁজে না?এই যে তিথির চেহারাটা এতো মায়াবী,স্নিগ্ধ দেখলেই কেমন চোখ জুড়িয়ে যায়!শ্যামলা রঙটা ছাড়া তো তিথি সোনায় মুড়িয়ে রাখার মতো।একটা কমতি কি ডেকে দিবে সবকিছু?
ইসমার ভাবনার ছেদ ঘটে তিথির কন্ঠে –,,কিরে চল। কি ভাবছিস এতো পরে দেখা যাবে তোর ভাইয়ের বিয়েতে তোকে রেখেই সবাই মেয়ের বাড়িতে চলে যাবে!
তিথি আর ইসমা গেলো নিজেদের বাড়িতে,পথে দেখা হলো সুরেখা বেগমের সাথে।ইসমা হেসে তিথিকে পরিচয় করিয়ে দিলো
–,,আন্টি এটা তিথি আমার ফ্রেন্ড।
তিথি সৌজন্যেতার খাতিরে সালাম দিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করলেন।সুরেখা বেগম হেসে জবাব দিলেন
–,,এইতো ভালো মা।তুমি কেমন আছো?
সুন্দর গড়নের মধ্যবয়স্কা মহিলা পড়নে চকচকে কাজ করা থ্রি পিস!তবে তাকে দেখে ততোটাও বয়স মনে হয়নি তিথির।সুরেখা বেগম চলে যেতেই ইসমা ফিসফিস কন্ঠে বললো
—,,আন্টির কিন্তু ভাইয়ার বয়সী একটা ছেলে আছে!
তিথি চোখ বড় বড় করে তাকায়,দেখে তো বুঝাই যায়নি।
ইসমা কে দেখে একটা মেয়ে ছুটে আসলো–,,আপু তোমাকেই তো খুঁজছিলাম কখন থেকে,জানো তো এখানে কাউকেই চিনি না বোর হচ্ছিলাম!
তিথির দিকে তাকিয়ে বলে–,,এই সুইট আপি টা কি তোমার ফ্রেন্ড?
ইসমা হেসে বললো–,,হ্যাঁ ওর নামই তো তিথি!
তিথি নামটা শুনেই এক জোড়া চোখ দ্রুত চোখ রাখলো সেদিকে!সোনালী রঙা আলোতে সোনালী শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে কোনো এক অপ্সরা!
ফাহমিদ এই প্রথম বারের মতো কোনো মেয়ের দিক এতো সময়ের জন্য তাকিয়েছে!মেয়েটার মুচকি হাসিটা যেনো হৃদয়ে এসে লাগছে ওর!গোলাপ গুলো চকচকে মুক্তোর মতো জানান দিচ্ছে আমরা ভীষণ সৌভাগ্যের অধিকারী এই অপ্সরার খোঁপায় সোভা পেয়েছি!
ফাহমিদের হাত আপনাআপনি নিজের বুকে চলে গেলো,বুঝতে পারলো সে ফেঁসেছে খুব বা’জে ভাবে আটকে গেছে এই রমনীর উপর!
চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো–,,তুমি আমার হৃদয়ের রাণী, আমার শ্যামাপ্রিয়া!
সৌরভ বন্ধুর তব্দা খাওয়া দেখে এগিয়ে আসলো।
কাঁধে চাপড় মেরে জিজ্ঞেস করলে—,, কিরে কি হইছে কখন থেকে এক ধ্যানে কি দেখছিস?
–,,তিথিকে!
সৌরভ মুখ ভরে হাসলো–,,অবশেষে তুই প্রেমে পড়লি!তাও এমন একজনের যার এসবের প্রতি বিন্দু মাত্ররো ইন্টারেস্ট নেই,তোকে অনেক কাঠখড় পুড়া’তে হবে বন্ধু!
—,,আমি রাজি!যেকোনো উপায়ে তিথি শুধু আমার হোক।
ফাহমিদ হাসলো,এই মেয়েটাকে দেখেই প্রথম কতো কিছু বলেছে,এখন এই মেয়েটাই তাকে মুগ্ধতার, মায়ার বাঁধনে আটকে ফেললো!
———–
নিশিতা ভীষণ রকম বিরক্ত হলো,শেষে কিনা সৌরভ কে ফাহমিদের বন্ধু হতে হলো?বাড়ি থেকে দূরে থাকছে কবে থেকে,এরকম একটা গ্রাম্য জীবন কিছুতেই কাটাতে চায় না তাই অনেক কষ্টে নানার বাড়ির ঠিকানা জোগাড় করে সেখানে থাকছে!শহরের আভিজাত্য ছেড়ে এই বাড়িতে আর ফিরতে চায় নি সে।কিন্তু হায় ভাগ্য তাকে এখানে এনে ফেললো।বাড়ির কারো সাথে দেখা হয়ে যাওয়ার ভয়ে রুম থেকে বের হচ্ছে না।তার উপর ইসমা,সৌরভ তাদের পরিবার ও নিশিতা কে চিনে।
অনু এসে এবার টেনেটুনে বের করলো নিশিতা কে!বলতেও পারছে না সে যাবে না।অনু নিশিতা বের হতেই মুখোমুখি হয় নেহাল আর তিথির।
তিথি নিশিতা কে দেখে অবাক হয়ে বলে–,,নিশি তুই?একা আসলি যে কাউকে তো জানালিই না হোস্টেল থেকে চলে আসলি?
তিথি এক হাত চেপে ধরতেই নিশিতা ঝাপটা মেরে ফেলে দিয়ে বলে–,,কে আপনি?নোং’রা হাতে কেনো ধরছেন আমাকে?আমি আপনাকে চিনি না আর কে হোস্টেলে থাকে আমি এখানে বেড়াতে এসেছি!শহরের মানুষ দেখলেই গায়ে পড়তে ইচ্ছে করে?
তিথি চোখ বড় বড় করে তাকালো,নিশিতা বরাবরই একটু অহং”কারী শহুরে জীবন তার পছন্দ তাই ক্লাস এইট থেকেই হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে।বাড়িতে না পারতে আসতো যেনো,চার বছরে সর্বোচ্চ পাঁচ বার এসেছে!
নেহাল রাগে কিড়মিড় করছে বোনটা এতো স্বার্থপর কিভাবে হলো সবার সামনে পরিচয় দিতে অস্বীকার করছে?
অনু বলে উঠলো–,,এগুলা কেমন বিহেভিয়ার নিশিতা?তিথি আপুর সাথে এমন করছিস কেনো?মা জানতে পারলে ভীষণ রাগ করবেন।
নিশিতা শুকনো ঢোক গিললো,ওই বাড়িতে পার্মানেন্ট ভাবে থাকতে হলে তাকে যে সুরেখা বেগম কে হাতে রাখতেই হবে,ফাহমিদ কে বিয়ে করতে পারলেই ওই বড় বাড়ির রাজত্ব ওর হবে!
নিশিতা আমতা আমতা করতে শুরু করে।নেহাল জানে তার বোন এতোদিন কোথায় ছিলো, কি করছে শহরে গিয়ে শুধু মা কষ্ট পাবে ভেবে বলেনি,যে বাড়িতে তার মায়ের জায়গা হয়নি সে বাড়িতে গিয়ে নিশি কিভাবে আত্নসম্মান ভুলে থাকছে তাই বুঝে আসে না নেহালের!
তিথি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখলো নিশিতার উপর অনু কে জিজ্ঞেস করলো —-,,তুমি ওকে কিভাবে চিনো অনু?
–,,আমার ফুফাতো বোন আপু!
তিথির যেনো মাথায় বা’জ পড়লো,নিশিতা নেহালের মা মানে নাজমা বেগম তার মেজো চাচ্চু রিপনের সাথে পালিয়ে বিয়ে করেছিলো যা মানতে পারেনি সিকদার বাড়ির কর্তা সাত্তার সিকদার!তিনি মেয়ে কে ত্যাজ্য করেছিলেন,আর আদর্শে আত্নসম্মানে টইটুম্বুর মহিলা নাজমা বেগমের মেয়ে কিনা তার সেই বাবার বাড়িতেই গিয়ে উঠেছে!
নেহাল হাত উঁচালো নিশিতাকে মা’রার জন্য। তিথি থামিয়ে দিয়ে বললো–,,কি করছিস তুই।ছোট মানুষ চল এখান থেকে সকালে ডেকে বুঝিয়ে বলতে হবে!
দূর থেকে কথা শুনতে না পেলেও কিছু একটা হয়েছে তা বুঝলো ফাহমিদ।এগিয়ে এসে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই ইফাত ছুটে আসলো!
হাঁপাতে হাঁপাতে বললো—,,তিথি আপা মেজো চাচী মেজো চাচী,,,!
তিথি ইসমা কে ডেকে জিজ্ঞেস করলো মেজো চাচী তোদের বাড়িতে ছিলো না?
–,,অনেকক্ষণ হলো তো বাড়ি গেছে বললো তার নাকি মাথা ব্যাথা করছে!
তিথি চিন্তিত হয়ে বললো—,,বল ইফাত কি হয়েছে?
ছোট মেয়েটা ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। খবর পেয়ে এসেছেন খোদেজা, আঁখি। সৌরভের মা রানু বেগম।
হাসিখুশি পরিবেশ মুহুর্তেই আ’তংকে ছেয়ে গেছে।আত্মীয়দের মধ্যে, অনু,সজীব সিকদার,সুরেখা বেগম,সাথে সৌরভের বাবা আফসার জামান!
আঁখি বেগম মেয়েকে আবার জিজ্ঞেস করলেন—,,কি হয়েছে ভালো করে বলছিস না কেনো?
ইফাতের কাঁপা কন্ঠ–,,রক্ত!মেজো চাচী হাতের শি’রা কেটে ফেলেছে।রিপন চাচ্চু কোথায় যেনো দৌড়ে চলে গেছে!
তিথি এক দৌড় লাগালো বাড়ির দিকে,নেহাল হতবুদ্ধের মতো দাড়িয়ে রইলো,হঠাৎ ই ফাহমিদ এগিয়ে এসে বললো—,,নেহাল তুই এখানে?
নেহালের গলা কাঁপছে, ফাহমিদ আবার জিজ্ঞেস করলো–,,কিরে কথা বলছিস না কেনো?
সুরেখা নেহাল নাম শুনেই এগিয়ে আসলো নিশিতার কাছে জেনেছে তার ভাইয়ের নাম নেহাল!
নেহাল কাঁপা কন্ঠে বললো–,,মা,,!
উদভ্রা”ন্তের মতো দৌড়ে গেলো বাড়ির দিকে। যতই অহং”কারী হোক,জন্মদাত্রী মা তো নিশিতা কেঁদে উঠে বললো–,,মা!
সে কান্না করছে অনবরত। অনু জিজ্ঞেস করলো–,,কোথায় ফুপ্পি!
ফাহমিদ এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো সৌরভ তুই নিশিতাকে চিনিস?
—,,হ্যাঁ নিশিতা তো জয়নাল দাদুর মেজো ছেলের ঘরের সন্তান!
বৃদ্ধ সাত্তার সিকদার ছিলেন ভিতরের ঘরে,হট্টগোলের শব্দে বাহিরে আসলেন!
ফাহমিদ যা বুঝার বুঝে গেলো এখন সর্বপ্রথম কাজ নাজমা বেগম কে সুস্থ করা!সেও ছুট লাগালো বেপারী বাড়ির দিকে একে একে সবাই ছুটে আসলো।
জয়নাল বেপারীর চোখ ছলছল মেয়ের মতো রেখেছেন তিনি বাড়ির বউদের এক মেয়ের করুন দশা এই বৃদ্ধ বয়সে এসে দেখতে হবে ভাবতেও পারেনি!
জুলেখা বেগম কি করবেন বুঝতে পারলো না।তিথি মেয়েটা একা হাতে সামলাচ্ছে,অন্যদের মতো কেঁদে কেটে ভাসাচ্ছে না!
তিথি ব্যস্ত কন্ঠে বললো–,,নেহাল গাড়ি বের কর!
নেহাল দ্রুত ছুটলো গাড়ি এনে গেইটের বাহিরে রাখলো,নাজমা বেগমকে কোলে তুলে গাড়ির ভিতর রাখলো নেহাল দরজার বাহিরে দাড়িয়ে এবার কেঁদে দিলো মা ছাড়া আর কে আছে তার!
তিথি বিরক্তি নিয়ে জোরে এক ধমক দিলো–,মেয়েদের মতো ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদবি না নেহাল মেজাজ বিগরে গেলে ঠাটিয়ে এক চ’ড় লাগাবো এখন! রক্ত পড়া বন্ধ হচ্ছে না, নাকি চাস তোর মা টা এখানেই এভাবে মরু’ক!
হসপিটালে নিতে হবে তো নাকি!
ফাহমিদ কথা গুলো শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো এই মেয়ে এমন সময় এই কথা বলছে?কোন ধাঁচে তৈরি এটা!
তিথি আরো জোরে বললো–,,এই গা’ধা গাড়ি স্ট্রার্ট দে।
আঁখি বেগম এসে বললো আমি তোদের সাথে যাই!
তিথি কঠিন কন্ঠে বললো–,,তুমি বাড়িতে থাকো চাচী,সবাই আছে দাদী আর দাদু অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাদের খেয়াল রেখো।আমি আর নেহাল সামলে নিবো!
ফাহমিদ এগিয়ে এসে বললো –,,আমিও সাথে যাচ্ছি আন্টি আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন!
তিথি এবার বললো–,,নেহাল তুই গাড়ি চালাতে না পারলে পিছনে আয় ভাই চাচীর মাথার কাছে বস আমি গাড়ি চালাচ্ছি!টাইম ওয়েস্ট হচ্ছে।
ফাহমিদ এগিয়ে এসে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্ট্রার্ট দিলো।
নেহাল ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে,তিথি এতোক্ষণ রাগারাগি করলেও এখন শান্ত কন্ঠে বললো–,,চাচী ঠিক হয়ে যাবে এতো চিন্তা করছিস কেনো?দেখবি ডাক্তার দেখালেই চট করে সেরে উঠবে!
নেহাল সম্মতি সূচক মাথা নাড়লো।তিথি নেহালের হাত চেপে ধরে বললো–,,বিপদে ভেঙ্গে পড়লে চলে?তুই ছাড়া চাচীর কে আছে বল,তাকে তো তোকেই দেখে রাখতে হবে।শক্ত হতে শিখ!
ফাহমিদ দেখলো মুগ্ধ চোখে মেয়েটা এই রেগে ছিলো আবার এই যেনো একদম নরম হয়ে গেছে!
হসপিটালের সামনে এসে নামলো ওরা, ভেতর থেকে নার্স সহ এসে নাজমা বেগম কে নিয়ে গেলো।
রিসিপশনে গিয়ে ফর্ম ফিলআপ করলো তিথি। প্রাইভেট হসপিটাল,রাত তখন এগারোটা প্রায় লোকজন কম,নিস্তব্ধ পরিবেশে বেঞ্চিতে বসে পড়লো নেহাল মায়ের চিন্তায় দিশেহারা।
নার্স ডেকে বললো –,,ম্যাম এখনই ত্রিশহাজার টাকা জমা করতে হবে!পেসেন্টের কন্ডিশন খা”রাপ,ধারনা করা হচ্ছে হাত কা’টার সাথে সাথে উনি স্ট্র”ক ও করেছেন দ্রুত চেকআপ শুরু করতে হবে!
তিথি এগিয়ে গেলো সেদিকে,ফাহমিদ অবাকের উপর অবাক মেয়েটা একটা বারের জন্য ও বিচলিত হচ্ছে না!এতো টা কঠিনও কি মেয়ে মানুষ হয়?
ফাহমিদ এগিয়ে গিয়ে বললো–,,টাকা আমি দিচ্ছি!
তিথি স্বাভাবিক ভাবে চেয়ে থেকে বললো–,,ধন্যবাদ!তবে আপনার থেকে টাকা নিলে এটা আমাদের পরিবারের জন্য অপমান জনক হবে।
ফাহমিদ কে সরিয়ে তিথি এগিয়ে গিয়ে পার্স থেকে বিশ হাজার টাকা বের করে দিলো!
নার্সের উদ্দেশ্য বললো–,,বাকি দশহাজার আধ ঘন্টার মধ্যে জমা করছি!
মহিলাটি জিজ্ঞেস করলো–,,ম্যাম আপনি পেসেন্টের কি হোন?
–,,মেয়ে!
ফাহমিদ চকিত নয়নে তাকালো!তিথি একবার ফাহমিদের দিক তাকিয়ে বললো–,,আপনার যদি অসুবিধে না হয় আমার সাথে একটু আসবেন?
–,,চলুন!
তিথি আশেপাশে খুঁজে ভাগ্যক্রমে একটা বিকাশের দোকান খোলা পেলো,মনে মনে আল্লাহ কে ধন্যবাদ দিলো সে।দোকানদার তিথির পরিচিত তিথি কে দেখেই জিজ্ঞেস করলো–,,তিথি মা এতো রাতে?কোনো সমস্যা?
—,,আংকেল দোকান কি বন্ধ করে দিচ্ছেন?আমার চাচী হসপিটালে ভর্তি টাকা উঠাতাম বিকাশ থেকে!
বৃদ্ধ লোকটি লকার চেক করে বললো–,,বিশ হাজারের বেশি নেই মা!
তিথি চোখ চকচক করে উঠলো –,,এতেই হবে আংকেল,অসংখ্য ধন্যবাদ আমি টাকা সেন্ড করে দিচ্ছি আপনার নাম্বারে!
———-
হসপিটালে ফিরে এসেই টাকা জমা করলো তড়িঘড়ি, পিঠ ঠেকিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করলো,সত্যি এবার তিথি ক্লান্ত, অনুভূতি কি আদো লুকানো যায়?মা মা’রা যাওয়ার পর থেকে নাজমা বেগমই তাকে বড় করেছেন মায়ের ভালোবাসা দিয়েছেন,সে মানুষ টা আজ মৃত্যুর সাথে লড়ছে কি করে নিজেকে সামলাচ্ছে শুধু সে নিজেই জানে!তার দাদু, নেহাল ভীষণ নাজুক প্রকৃতির বাবা ছোট চাচ্চু দেশের বাহিরে থাকে,তিথির উপর সব ভার যেনো এসে পড়েছে অদৃশ্য ভাবে।এতো কম বয়সেই মেয়েটা নিতে শিখে গেছে দায়িত্ব!
ফাহমিদ তিথির মলিন মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ, সৌরভের কথাটা মনে পড়লো তার।তিথির ব্যক্তিত্বের প্রেমে যে পড়বে না সে কোনো পুরুষই না।
ফাহমিদ যেনো দ্বিতীয় বারের মতো প্রেমে পড়লো এবার রূপের না ব্যক্তিত্বের!
চলবে?