শেষ_পর্যন্ত
পার্ট: ৩
অনেক ভেবে নিলার চোখের পানি যেভাবে মুছে দিতাম সেভাবেই আলিফার চোখের পানি মুছে দেওয়ার জন্য ওর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম….
আলিফার চোখের কাছে আমার হাত নিতেই ও রাগ দেখিয়ে সরে গেলো
–ওই কি করছেন মেয়ে মানুষের দুর্বলতা দেখলেই সুযোগ নিতে ইচ্ছে করে তাই না
–মানে কি
–যেই দেখলেন আমি কাঁদছি এমনি চোখের পানি মুছে দেওয়ার বাহানা নিয়ে আমাকে ছুতে চাইলেন
–আচ্ছা আপনি কি ঝগড়া করা ছাড়া থাকতে পারেন না
–কি বলতে চাইছেন আমি ঝগড়াটে মেয়ে
–না না আপনি খুব ভালো মেয়ে এবার দয়া করে ড্রয়িংরুমে চলুন সবাই অপেক্ষা করছে
–হুম যাবো তার আগে আমার কথা শুনোন আমি শুধু আব্বুকে কষ্ট দিতে পারবো না বলে বিয়ে করছি তা…
–ঠিক আছে আমি বিয়েটা ভেঙে দিচ্ছি (খুব সহজে তো বলে দিলাম কিন্তু বুকের ভিতরটায় যে খুব কষ্ট হচ্ছে এই মেয়েটাই যে এখন আমার বেচে থাকার শেষ ভরসা)
–না না আব্বু আপনাকে পছন্দ করেছেন বিয়েটা ভেঙে গেলে আব্বু ভাববেন আমি আপনাকে বলে ভেঙে দিয়েছি তখন উনি খুব কষ্ট পাবেন
–তাহলে বিয়েটা হচ্ছে
–হ্যাঁ কিন্তু
–আবার কি আরো কিছু বলার বাকি আছে
–হ্যাঁ আছে তো
–বিয়ের পরেই নাহয় শুনবো
ভাইয়া তাড়াতাড়ি আসো (রিয়ানের ডাক শুনে আর দাঁড়ালাম না আলিফাকে রেখেই ড্রয়িংরুমের দিকে চলে গেলাম)
সবাই বিয়ে নিয়ে কথা বলছে আমি গিয়ে রিয়ানের পাশে বসলাম, আজই যে বিয়েটা হয়ে যাবে আমি ভাবতেও পারিনি
রিয়ান: ভাইয়া দেখেছ তোমার ভাগ্য কতো ভালো যাকে পছন্দ করেছ তার সাথেই বিয়েটা ঠিক হলো তাও আবার আজকেই
আমি: কিন্তু রিয়ান আমি যে আলিফাকে এভাবে সাদামাটা অবস্থায় নিতে চাই না সেদিনের মতো জাঁকজমক ভাবে নিতে চাই
রিয়ান: ঠিক আছে তুমি চাইলে আমি আব্বুকে বলে বিয়ের তারিখ দুদিন পিছিয়ে দেই দুদিনে সব করে ফেলবো
আমি: হুম ঠিক আছে
রিয়ান আব্বুর সাথে কথা বলতে একটু দূরে চলে গেলো, আমি বাসার বাইরে এসে দাঁড়ালাম নিলাকে খুব মিসস করছি চোখ দুটু বন্ধ করলাম তখনি আলিফা ডাক দিল
–এই যে
–হুম কিছু বলবেন
–বিয়ে পিছিয়ে দিয়েছেন কেন
–আপনি আমার বাড়িতে এমন সাদামাঠা ভাবে যান তা আমি চাই না
–কিন্তু আমি এভাবেই যেতে চাই
–কেন
–আপনার মনে কি আমি খুশিতে নাচতে নাচতে আপনাকে বিয়ে করছি যে জাঁকজমক ভাবে বিয়ে করবেন
–আস্তে কথা বলুন বাসার ভিতরে সবাই আছে, আচ্ছা আপনি কি চেঁচিয়ে ছাড়া কথা বলতে পারেন না
–না পারিনা শুনুন বিয়ে আজকেই হবে আর এমন সাদামাঠা ভাবেই
–(একবার বলছে বিয়েই করবে না আবার বলছে আজকেই বিয়ে হতে হবে উফফফ কি যে চায় ও)
–ওই মিনমিনিয়ে কি বলছেন
–কই কিছু না তো
–আপনার বিয়ে করার খুব সখ তাই না যান আপনার আব্বুকে গিয়ে বলুন এখনি বিয়ের ব্যবস্থা করতে
–আপনি আমার উপর খুব রেগে আছেন কিন্তু কেন রেগে আছেন বলবেন প্লিজ
–কেন রেগে আছি আপনি বুঝতে পারছেন না হঠাৎ করে কোথা থেকে উড়ে এসে জোরে বসেছেন আমার জীবনে গতকাল একবার দেখা হলো আর আজকেই বিয়ে করতে চলে এসেছেন এসবের কোনো মানে হয় আর আব্বুর মাথাটাও গেছে কিছু বলতেও পারছি না
–দেখুন আপনার যদি এই বিয়েতে আপত্তি থেকে থাকে তাহলে আমাকে বলুন আমি জোর করে কারো ভালোবাসা পেতে চাই না
–আমার কথা তো আপনি শুনতেই চাইছেন না আসলে আ….
ভাইয়া আব্বু তোমাকে ডাকছেন (প্রিতির ডাকে আর দাঁড়ালাম না ভিতরে চলে গেলাম)
আব্বু আমার জন্য আলাদা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন হয়তো জিজ্ঞেস করতে চান বিয়ে পিছিয়েছি কেন, এখন আবার কিভাবে বলবো যে বিয়েটা আজই হতে হবে
–রিফাত কি হয়েছে বিয়ে পিছাতে চাইছিস কেন
–আসলে আব্বু
–তুই তো আলিফাকে পছন্দ করেছিস তাহলে এখন আবার কি হলো
–কিছু হয়নি আব্বু আসলে আমি চেয়েছিলাম আলিফাকে নিলার মতো জাঁকজমক ভাবে আমার বাড়িতে নিয়ে যাবো
–ওহ এই কথা ঠিক আছে আমি বিয়ে পিছ….
–না আব্বু আলিফা চায় আজই বিয়েটা হউক আর ও এসব জাঁকজমক পছন্দ করে না
–রিফাত তোর কোনো কাজে কখনো বাধা দেইনি আজও দিচ্ছি না যা করিস ভেবে চিন্তে কর….
–আব্বু মনে হচ্ছে তুমি অন্যকিছু বলতে চাও
–হ্যাঁ আসলে আলিফাকে দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটা খুব রাগি তুই মানি….
–আব্বু তুমি হয়তো ভুলে গেছ নিলাও এমন রাগি মেয়ে ছিল
–ভুলিনি ঠিক আছে তোর যা ভালো মনে হয় তাই কর বিয়েটা আজই হবে
–ওকে আব্বু
আলিফার পাশে বসে আছি আর আড়চোখে ওকে দেখছি আগে যেভাবে ছিল সেভাবেই বিয়ে করতে চলে এসেছে একটা শাড়ী পর্যন্ত পরেনি আর ওরই বা দোষ কিসের মেয়েটা তো বিয়ের জন্য একদম প্রস্তুত ছিল না আমি নিজেই তো আজ বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না, দুই পরিবারের কথা মিলে গেলো আর আজকেই বি….
–মা কবুল বলো (হঠাৎ কাজী সাহেবের কথায় ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো আলিফা কবুল বলতে চাইছে না কি করবো বুঝতেছি না আমি কি তাহলে ওর অমতে বিয়েটা করে ভুল করছি, আলিফাকে নিজের অজান্তেই কষ্ট দিচ্ছি না তো)
রিয়ান: ভাইয়া বার বার কোথায় হারিয়ে যাচ্ছ এদিকে তো বিয়ে পড়ানো হয়ে গেলো (রিয়ানের ডাকে আলিফার দিকে তাকালাম কবুল তো বললো কিন্তু ওর চোখে পানি, ওর আব্বুকে ছেড়ে চলে যাবে এজন্য কাঁদছে নাকি অন্য কোনো কারণ, আলিফা তখন কি যেন বলতে চেয়েছিল প্রিতি ডাক দেওয়াতে আর শুনা হয়নি তাহলে কি ও বিয়েতে অন্য কোনো কারণে রাজি না)
প্রিতি: এই ভাইয়া কি হয়েছে
আমি: হুম কিছু না
আব্বু: সন্ধ্যা নেমে আসছে অনেক দূর যেতে হবে এখন বেরিয়ে পড়া উচিত
আলিফার আব্বু: এখনি চলে যাবেন
আব্বু: হ্যাঁ এখনি যেতে হবে নাহলে অনেক রাত হয়ে যাবে
আলিফার আব্বু: ঠিক আছে
আমরা সবাই গাড়িতে বসে আছি কিন্তু আলিফা আসতে চাইছে না ওর আব্বুকে জরিয়ে ধরে খুব কাঁদছে, প্রিতি ওকে আনার চেষ্টা করছে কিন্তু আসছে না ইচ্ছে হচ্ছে আমি গিয়ে নিয়ে আসি, যাক অবশেষে আলিফা গাড়ির কাছে আসলো প্রিতি ওকে আমার পাশে বসিয়ে দিয়ে অন্য পাশে গিয়ে বসলো, রিয়ান ড্রাইভ করছে আমি আড়চোখে আলিফাকে দেখছি এখনো কাঁদছে কাঁদুক এখন আর বাধা দিব না কিন্তু এর পর আর কখনো ওকে কাঁদতেও দিব না নিলাকে যেমন ভালো রাখতে চেয়েছিলাম ওকেও তেমন ভালো রাখবো
প্রিতি: ভাইয়া তোমার ভিতর থেকে কি সব রোমান্স চলে গেছে
আমি: মানে
প্রিতি: দেখছ ভাবি কাঁদছে কোথায় ভাবিকে জরিয়ে ধরে কান্না থামাবে তা না বাইরে তাকিয়ে কি যেন ভাবছ
রিয়ান: আর বলিস না প্রিতি এই তিন বছরে ভাইয়া একদম পাল্টে গেছে
আমি: চুপ করবি তোরা
আব্বু: তুই বৌমাকে জরিয়ে ধরলেই তো ওরা চুপ হয়ে যায়
আমি: আব্বু তুমিও
আব্বু: হ্যাঁ আমিও কেন বাবা বলে কি মজা করতে পারবো না আর আমি কি শুধু তোদের বাবা বন্ধু না
আমি: তোমার মতো বাবা পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার আমাদের ভাগ্য ভালো যে তোমার মতো বাবা পেয়েছি
আব্বু: হ্যাঁ হ্যাঁ অনেক হয়েছে এবার বৌমার কান্নাটা থামা (আমাদের কথা শুনে আলিফা সবার মুখের দিকে তাকাচ্ছে এমন বাবা হয়তো ও আর দেখেনি, আমি ওর দিকে তাকাতেই রাগ দেখিয়ে নিচের দিকে তাকালো কি করবো জরিয়ে ধরবো কিনা বুঝতে পারছি না যদি রেগে যায়, অনেক ভেবে আস্তে করে ওকে জরিয়ে ধরে ওর মাথাটা আমার কাধে রাখলাম ও সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে তাই ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম “প্লিজ আব্বুর সামনে এমন করো না তুমি যেমন তোমার আব্বুকে কষ্ট দিতে চাওনা তেমনি আমিও আমার আব্বুকে কষ্ট দিতে চাই না”
যাক এবার থেমেছে আমার কাধে মাথা রেখে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে
বাসায় ফিরতে রাত প্রায় নয়টা বেজে গেলো, বাসার সামনে এসে তো আমি অবাক পুরো বাসা সাজানো একদম বিয়ে বাড়ির মতো কিন্তু কে করলো এসব
আমি: আব্বু এসব কি
আব্বু: সারপ্রাইজ
প্রিতি: আব্বু কখন করালে এসব
আব্বু: রিফাত যখন বলেছিল এমনভাবে বিয়ে করতে চায় না তখনি ফোন করে সব করতে বলে দিলাম
আমি: আব্বু তুমি….
আব্বু: আগামীকাল আর একটা সারপ্রাইজ আছে
আমি: কি
আব্বু: তখনি নাহয় দেখবি এবার বৌমাকে নিয়ে ভিতরে চল
প্রিতি: আমি ভাবিকে নিয়ে আসছি তোমরা যাও
বাসার সবাই এখন আলিফাকে নিয়ে ব্যস্ত তাই আমি রুমে চলে গেলাম
রমে এসে আবার অবাক হলাম দুই ফাজিল বাসরঘর সাজাচ্ছে
আমি: তোদের কে খবর দিল
রিয়াদ: তোর মনে কি আমরা তোর বিয়ের খবর পাবো না
সাগর: তুই আমাদের তোর বিয়েতে দাওয়াত না দিলে কি হবে আঙ্কেল আমাদের দাওয়াত দিয়েছেন
আমি: আব্বুই যে বলেছেন বুঝতে পেরেছি
রিয়াদ: বিয়ে করে ফেললি বললিও না
আমি: আসলে সবকিছু কিভা….
সাগর: রিফাত তোর কিছু বলতে হবে না আঙ্কেল আমাদের সব বলেছেন আর তুই দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছিস বিয়ে করেছিস এতেই আমরা খুশি
আমি: হুম
রিয়াদ: তো এখন কি করবি আমাদের সাহায্য কর তোর নিজের বাসরঘর তুইও সাজা হাহাহা
সাগর: ও এখন ভাবিকে ছেড়ে আমাদের সাহায্য করবে
আমি: থাম তোরা আমার ভালো লাগছে না একটু একা থাকতে চাই
রিয়াদ: রিফাত শুন
কারো কোনো কথা না শুনে ছাদে চলে আসলাম
ছাদের এক কোণে বসে চোখের জল ফেলছি আর সিগারেট টানছি, ঠিক তিনবছর আগে তো এমন একটা রাতই চেয়েছিলাম কিন্তু ভাগ্য আমার সাথে বেঈমানি করেছিল, সেদিন যদি সব ঠিকঠাক হতো তাহলে আজ আমার পাশে নিলা থাকতো কেন সেদিন এমন হলো, আজ নিলাকে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে আমি ওর শেষ কথা রেখেছি…..
চলবে?