শেষ_পর্যন্ত
পার্ট: ১৮
দৌড়ে আলিফার কাছে যাচ্ছি মনে হচ্ছে ও এখনি লাফ দিবে, জোরে একটা চিৎকার দিলাম আলিফা….
তাড়াতাড়ি গিয়ে ওকে জাপটে ধরলাম।
আমি: আলিফা কি করছ পাগল হয়ে গেছ নাকি, বলেছি তো রাতুলকে খুঁজে এনে দিবো
আলিফা: ওহ বাবারে আর একটু হলেই তো পড়ে যাচ্ছিলাম এভাবে কেউ জাপটে ধরে
আমি: এভাবে জাপটে না ধরলে তো তুমি নিজেই লাফ দিতে
আলিফা: মানে কি আমি কেন লাফ দিতে যাবো
আমি: তুমি এখানে সুইসাইড করতে আসোনি
আলিফা: পাগল হয়েছ আমি সুইসাইড করতে যাবো কেন
আমি: তাহলে আমাকে কিছু না বলে এখানে এসে দাঁড়িয়ে আছ কেন তাও আবার এমন কিনারায়
আলিফা: আমার কিছু ভালো লাগছে না তাই একা থাকার জন্য এখানে এসেছিলাম কিন্তু খুঁজতে খুঁজতে তুমিও চলে আসলে একা থাকা আর হলো না
আমি: (ঠাস)
আলিফা: রিফাত তুমি আমাকে মারলে
আমি: তো কি করবো এমন একটা কান্ড করার পর আদর করবো, তোমার কোনো ধারণা আছে আমি কতোটা ভয় পেয়েছিলাম। সারা বাসা তোমাকে পাগলের মতো খুঁজেছি যখন এসে দেখলাম তুমি এভাবে ছাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছ তখন তো আমি….. দূর কাকে কি বলি তুমি তো সত্যিকারের ভালোবাসা কি সেটাই বুঝনা, যদি এতটুকু বুঝতে আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি তাহলে আজ আমাকে এমন টেনশন দিতে পারতে না। তোমাকে যখন প্রথম দেখেছিলাম একটা ভেজা বিড়ালকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করছিলে তখন ভেবেছিলাম তুমি অন্য মেয়েদের মতো না কিন্তু এখন দেখছি তুমি অন্যদের মতোই।
আলিফা: কি বলতে চাইছ
আমি: বলতে চাইছি এটাই যে তুমি সেইসব মেয়েদের মতো যাদের এক ছেলের ভালোবাসায় হয় না তাই দুদিকেই পরে আছ কাউকেই ছাড়ছ না
আলিফা: ছিঃ রিফাত এসব তুমি কি বলছ
আমি: কেন ভুল কিছু বলেছি নাকি তুমি তো তাদের মতোই যারা….
আলিফা: ব্যস রিফাত অনেক বলেছ এবার একটু থামো। কি বলেছ আমার এক ছেলের ভালোবাসায় হয় না তাই দুদিকেই পড়ে আছি কাউকেই ছাড়ছি না, শুনো ছোটবেলা থেকে এতিমখানায় থেকেছি তো মা বাবা ছিল না সঠিক শিক্ষাটা দেওয়ার জন্য, নিজে থেকে যেটুকু শিখেছি সেটার মধ্যে এটাও পরে যে কাউকে ঠকানো ঠিক না। আর এজন্যই আমি দুদিকে পরে আছি বুঝতে পারছি না কাকে ঠকাবো। তুমি বলতে পারো আমি কাকে ঠকাবো…?
আমি: (সত্যিই তো ও কাকে ঠকাবে)
আলিফা: জানি চুপ হয়েই থাকবে কারণ তুমিও জানোনা আমার কাকে ঠকানো উচিত। রাতুল যাকে আমি তিনবছর ধরে ভালোবাসি, যে কিনা আমার বিয়ে হয়ে গেছে শুনেও আশা নিয়ে বসে আছে ও দেশে ফিরে আসলে আমি ওর কাছে ফিরে যাবো বলতে পারো ওকে আমি কিভাবে ঠকাই। তুমি যে কিনা নিলা নামের মেয়েটাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো, নিলাকে হারিয়ে আমার মাঝে নিলাকে খুঁজে পেয়েছে, প্রতিটা মুহূর্তে স্বপ্ন দেখে আমি একদিন নিলা হয়ে নিলার মতো ওকে ভালোবাসবো, যার পরিবারের প্রতিটা মানুষ আমাকে নিলা ভাবে, যার কাছে আমার আব্বু আমাকে তুলে দিয়েছেন বলতে পারো তাকে আমি কি ভাবে ঠকাবো।
আমি: আলিফা আমার কথা শুনো
আলিফা: তুমি ঠিক বলেছ আমি খারাপ মেয়ে তাহলে বলতে পারো তুমি কি…? তুমি তো একটা অকৃতজ্ঞ, হুট করে বিয়ে করে ফেলছ মেয়েটা অন্য কাউকে ভালোবাসা সত্যেও তোমার কাছে পরে আছে শুধুমাত্র এইটা ভেবে যে তুমি নিলাকে হারিয়ে একবার কষ্ট পেয়েছ এখন যদি আবার ভালোবাসা হারিয়ে পেলো তাহলে অনেক কষ্ট পাবে। আর তুমি কিনা মেয়েটা কে এতো খারাপ ভাবো
আমি: আলিফা আমি এভাবে বলতে চাইনি
আলিফা: তোমার জন্য না আমার মনে একটু একটু করে মায়া জন্মাতে শুরু করেছিল, হয়তো আমার অজান্তে আমার মনের মধ্যে তোমার জন্য ভালোবাসাও সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এখন আর সেটা বাড়বে না….
আমি: আলিফা আমার কথা শুনো প্লিজ
আলিফা: আমার সম্পর্কে যার এমন খারাপ ধারণা তার সাথে কথা বলার ইচ্ছা আমার নেই
আমি: আলিফা আ….
আলিফা: আমি আর তোমার সাথে কথা বলবো না তুমিও কথা বলার চেষ্টা করো না।
আমি: আলিফা।
আমার কোনো কথা না শুনে চলে গেলো। কি বলে ফেললাম এসব, এই কথাগুলো তো আমি বলতে চাইনি। এসব তো কখনো আমার ভাবনাতেও আসেনি আর আজ কিনা পাগলীটার মনে এভাবে আঘাত দিলাম।
জানিনা আলিফা এখন কি করছে হয়তো কাঁদছে। আস্তে আস্তে রুমের দিকে আসলাম, দরজার কাছে আসতেই দেখি আলিফা কাপড়চোপড় গুচাচ্ছে, আরে এই রাতের বেলা কোথায় যাবে ও।
আমি: আলিফা কোথায় যাবে এসব গুচাচ্ছ কেন
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: প্লিজ পাগলামি করো না আমার কথা শুনো
আলিফা: তোমাকে তো নিষেধ করেছি আমার সাথে কথা বলবে না
আমি: তুমি নিষেধ করলেই আমি শুনবো নাকি, বলোনা কোথায় যাচ্ছ
আলিফা: যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাবো তাও তোমার কাছে থাকবো না (এখন কি করি পাগলি তো খেপে গেছে)
তাড়াতাড়ি গিয়ে আব্বুকে আনলাম, আমার কথা না শুনলেও আব্বুর কথা তো শুনবে।
আব্বু: আলিফা মা কোথায় যাচ্ছ
আলিফা: (আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে, বুঝতে পেরেছে আমি না পেরে যে আব্বুকে নিয়ে এসেছি)
আব্বু: ওহ বুঝেছি রিফাতের সাথে ঝগড়া করেছ, আচ্ছা তুমি এখন যাবে কোথায়
আলিফা: জানিনা
আব্বু: মেয়েরা স্বামীর সাথে ঝগড়া করলে কোথায় যায় জানো তো
আলিফা: বাবার বাড়ি
আব্বু: হ্যাঁ বাবার বাড়ি যায়। তো তুমি কোথায় যাচ্ছ
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আব্বু: পাগলী মেয়ে স্বামীর সাথে ঝগড়া হয়েছে বলে কি নিজের বাবা কে ছেড়ে নিজের বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে
আলিফা: (অবাক হয়ে আব্বুর দিকে তাকিয়ে আছে)
আব্বু: এখন তো আমিই তোমার বাবা আর আমার বাড়িই তো আমার মেয়ের বাড়ি তাহলে নিজের বাড়ি ছেড়ে কোথায় যাচ্ছ (আলিফা কাঁদতে কাঁদতে এক দৌড়ে গিয়ে আব্বুকে জরিয়ে ধরলো)
আব্বু: শুনো মা তুমি যাবে কেন যেতে হলে যে তোমার সাথে ঝগড়া করেছে সে যাবে
আমি: আব্বু কি বলছ এসব
আব্বু: তুই আমার আলিফা মার সাথে ঝগড়া করেছিস এক্ষণি আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যা
আমি: আব্বু কি বলছ (আমি তো প্রায় কেঁদেই দিচ্ছিলাম তখনি আব্বু আমাকে চোখ মারলেন, বুঝলাম এসব বলছেন আলিফার রাগ কমানোর জন্য)
আমি: রাগিণী থাকো তুমি একা একা তোমার বাবার কাছে আমি চলে যাচ্ছি।
ভালোই হয়েছে বিয়ে করার পর একদিনও শান্তিতে আড্ডা দিতে পারিনি আজ ঝগড়া করে অন্তত শান্তিতে আড্ডা দিতে পারবো। কিন্তু আজ যা বলেছি আলিফা আমাকে ক্ষমা করবে তো। কেন যে এতো রেগে গিয়ে এসব বলতে গেলাম। আমারই বা দোষ কিসের ওকে ছাদের কিনারায় দেখে এতো ভয় পেয়ে গেছিলাম যে মুখে যা এসেছে তাই বলেছি। আলিফার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচতাম কি নিয়ে।
রিয়াদ আর সাগরের সাথে আড্ডা দিয়ে অনেক রাত করে বাসায় ফিরলাম। বাব্বাহ্ সবাই আমার জন্য ড্রয়িংরুমে বসে অপেক্ষা করছে, সাথে রাগিণীও আছে।
আব্বু: কোথায় ছিলি
আমি: এইতো রিয়াদের বাসায়
আব্বু: এখন তোর ফিরার সময় হলো আমরা কতো চিন্তা করছিলাম, আর তোর ফোন কোথায় ফোন রিসিভ করছিলি না কেন
আমি: ফোন মনে হয় সাইলেন্ট করা
আব্বু: বৌমা আজকে ওকে খাবার দিও না শাস্তি হউক সবাইকে চিন্তায় রাখার
আলিফা: ওকে আব্বু।
যে যার রুমে চলে যাচ্ছে, এইটা কি হলো খিদে তো লেগেছে অনেক। আলিফার পিছন পিছন রুমে আসলাম।
আলিফা রুমে এসেই শুয়ে পড়লো কি জেদি মেয়েরে বাবা এখনো কথা বলছে না।
আমি: আব্বুর কথা শুনে আমাকে সত্যিই খাবার দিলে না
আলিফা: আব্বু যা বলেন তাই হবে
আমি: তাহলে এতোক্ষণ আমার জন্য চিন্তা করছিলে কেন
আলিফা: আমার বয়েই গেছে আপনার জন্য চিন্তা করতে, আমি তো শুধু আব্বুকে দেখানোর জন্য এতোক্ষণ ড্রয়িংরুমে বসেছিলাম
আমি: তোমার রাগ এখনো কমেনি
আলিফা: কখনো কমবেও না আমি তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম আর তুমি কিনা আমাকে নিয়ে এসব বাজে চিন্তাধারা করো
আমি: ভুল হয়ে গেছে সরি, আসলে তোমাকে ওখানে দেখে খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম তাই মুখে যা এসেছে তাই বলেছি প্লিজ ক্ষমা করে দাও
আলিফা: তুমি কথা গুলো ভয় পেয়ে না রেগে গিয়ে বলেছ আর মানুষ রাগের মাথায় সত্যি কথা গুলো বলে
আমি: কি বলো এসব আমার বউ কি খারাপ মেয়ে হতে পারে
আলিফা: হয়তো আমি খারাপ না কিন্তু তুমি সবসময় আমাকে খারাপ ভাবতে তাই রাগের মাথায় মনের কথা গুলো বলে দিয়েছ
আমি: বিশ্বাস করো আমি এসব কখনো আমার ভাবনাতেও আনিনি। আমার বউ কতো লক্ষী তাকে আমি খারাপ বলতে পারি
আলিফা: অনেক পাম দেওয়া হয়েছে এবার যাও আমি ঘুমাবো
আমি: ঠিক আছে আমি কানে ধরে উঠবস করছি তাহলে তো খুশি হবে (অন্যায় করেছি যখন কান তো ধরতেই হবে তাই কানে ধরে উঠবস করছি। আলিফা আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে)
আমি: তোমার মন পাথরের মতো যে জানতাম না, তোমার জামাই এতোক্ষণ ধরে কান ধরছে তাও তোমার মায়া লাগছে না
আলিফা: না লাগছে না, যাও তো আমি ঘুমাবো
আমি: ছাড়াচ্ছি তোমার ঘুম
আলিফা: এখানে আসছ কেন
আমি: ঘুমাবো।
সোফা থেকে বালিশটা এনে খাটে আলিফার পাশে শুয়ে পড়লাম। আজ রাগিণী যাই বলুক আমি ওর পাশেই ঘুমাবো।
আলিফা: রিফাত কি হচ্ছে কি
আমি: ঘুমাবো এতো বকবক করো না তো
আলিফা: ওকে ঘুমাও আমি সোফায় চলে যাচ্ছি
আমি: যেতে হবে না যাওয়ার চেষ্টা করলেই জরিয়ে ধরবো
আলিফা: আমি তো যাবোই
আমি: যেতে চাইলেই আমি ধরে নিবো যে তুমি মন থেকে চাইছ আমি তোমাকে জরিয়ে ধরি
আলিফা: রিফাত ভালো হচ্ছে না কিন্তু
আমি: খারাপ কিছুই হচ্ছে না
আলিফা: ওকে দাঁড়াও।
আলিফা মধ্যে কোলবালিশ এনে দিয়ে দিলো এইটা কিছু হলো।
আলিফা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে আমি আস্তে কোলবালিশটা সরিয়ে দিয়ে আলিফার কাছে গিয়ে ওকে মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকলাম। হঠাৎ আলিফা চোখ খুলে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
আলিফা: কি
আমি: ভালোই যখন বাসো এতো লুকাও কেন
আলিফা: আমি কাউকে ভালোবাসি না
আমি: তাহলে আমি খাটে আসার পরও রাগ দেখালে না কেন
আলিফা: রাগ দেখালেও দোষ না দেখালেও দোষ
আমি: হুম সবকিছুতে দোষ শুধু আমাকে ভালোবাসায় দোষ নেই। প্লিজ শুধু একবার বলো আমাকে ভালোবাস। (আলিফাকে জরিয়ে ধরে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম, ও আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)
আমি: আলিফা প্লিজ শুধু একটা বার বলো।
আলিফাকে জরিয়ে ধরে ওর চুলে হাত বুলাচ্ছি, ও কিছু না বলে নিশ্চুপ হয়ে চোখ দুটু বন্ধ করে শুয়ে আছে, ওকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে কপালে আলতো করে একটা চুমু দিলাম….
চলবে?