শেষ_পর্যন্ত
পার্ট: ১৩
আলিফার হাত বুকে জরিয়ে ধরে কাঁদছি, মনে হচ্ছে ওর হাত ছাড়লেই ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আলিফা ওর আচল দিয়ে আমার দুচোখের পানি মুছে দিলো তারপর আমাকে জরিয়ে ধরলো…
রিফাত তাড়াতাড়ি আয় বাবা (হঠাৎ ছোটমার ডাকে আলিফা তাড়াতাড়ি আমাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। ইসস ছোটমা আসার আর সময় পেলো না)
ছোটমা: কিরে তুই শুয়ে আছিস যাবি না
আমি: হ্যাঁ যাবো তো তুমি যাও আমি রেডি হয়ে আসছি
ছোটমা: তাড়াতাড়ি আয়।
ছোটমা চলে গেলো, আমি ফ্রেশ হতে যাবো আলিফার দিকে তাকাতেই ওর চোখে আমার চোখ পড়লো। কিছুক্ষণ এভাবেই তাকিয়ে রইলাম। হঠাৎ আলিফা জোরে হেসে উঠলো।
আমি: হাসছ কেন
আলিফা: যেভাবে তাকিয়েছ আজ আর ছোটমাদের নিয়ে যাওয়া হবে না হিহিহি।
আমি: তোমার হাসিটা খুব সুন্দর (আলিফার কানের কাছে আস্তে বললাম)
আলিফা আমার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে, আমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
ফ্রেশ হয়ে এসে তো আমি অবাক। আলিফা আয়নার সামনে বসে বসে সাজছে, এইটুকু সময়ের মধ্যে শাড়িও চেঞ্জ করে নিয়েছে। কিন্তু এই সময়ে আলিফা সাজছে কেন বুঝতে পারছি না। আস্তে আস্তে গিয়ে আলিফার পিছনে দাঁড়ালাম, ও আয়নায় আমাকে দেখে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।
আমি: বাব্বাহ্ লজ্জা পেলে তো আমার বউটাকে অনেক সুন্দর লাগে
আলিফা: তাই বুঝি
আমি: জ্বী
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: হঠাৎ করে সাজছ যে কোথায় যাবে
আলিফা: তোমার সাথে ছোটমাদের দিয়ে আসতে, যেমন করে নিলা যেতো আজ আমি যাবো (আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো, নিলার কথা বলাতে মনে পড়েছে নিলা এভাবে সাজলেই ওকে জরিয়ে ধরতাম আলিফাকে জরিয়ে ধরার ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু ভয় হচ্ছে যদি রেগে যায়)
আলিফা: কি ভাবছ (যা হবার হবে ওকে টান দিয়ে বুকের সাথে জরিয়ে ধরলাম, চোখের উপরের চুলগুলো সরিয়ে দিলাম)
আমি: এটাই ভাবছিলাম যে তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে (আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম)
আলিফা: একটু ছাড়ো তো
আমি: কেন
আলিফা: ছাড়ো না।
আমি ওকে ছাড়তেই আলিফা আমার বুকে কয়েকটা কিল দিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, পাগলী একটা।
রেডি হয়ে নিচে এসে দেখি আলিফা সবার কাছে বসে আছে আর সবাই ওর কতো প্রশংসা করছে।
প্রিতি: ভাবি তোমাকে আজ একদম পরীর মতো লাগছে
আব্বু: হ্যাঁ আমার বউমাকে দেখতে একদম লক্ষী মেয়ের মতো লাগছে অবশ্য আমার বউমা তো লক্ষীই
আমি: তোমরা যার এতো প্রশংসা করছ আমার চোখে তো তাকে দেখতে একদম পেত্নীর মতো লাগছে
আলিফা: কি আমি পেত্নী
আমি: একদম
আলিফা: আব্বু দেখেছ তোমার ছেলে কেমন মিথ্যেবাদী, রুমে বলে এসেছে আমাকে সুন্দর লাগছে তাও আমাকে জরিয়ে ধরে আর এখানে এসে পেত্নী বলছে (কেমন বোকা মেয়েরে বাবা এসব কেউ শশুড়কে বলে)
রিয়ান: ভাবি দিলে তো ভাইয়ার মান ইজ্জত নষ্ট করে
ছোটমা: মান ইজ্জত নষ্ট হবার কি আছে বউমা সত্যি কথা বলেছে আমিও তো…
আমি: ছোটমা যাবে তোমরা
ছোটমা: হাহাহা ছেলে লজ্জা পাইছে।
এখানে থাকলে আরো লজ্জা পেতে হবে তাই তাড়াতাড়ি গাড়িতে এসে বসলাম।
আলিফা এসে আমার পাশে বসলো, বাব্বাহ আজ বলতেও হলো না। ছোটমা আর চাচ্চু পিছনে বসলেন।
ছোটমা: সাবধানে চালাস
আমি: অসাবধানে চালাবো
চাচ্চু: এই ছেলেটা সবসময় উল্টো কথা বলে
আমি: চাচ্চু আবার কবে আসবে
চাচ্চু: খুব তাড়াতাড়ি আসবো
আমি: সত্যি তো
ছোটমা: হ্যাঁ কিন্তু তোর জন্য আসবো না
আমি: মানে কার জন্য আসবে তাহলে
চাচ্চু: আমাদের বউমার জন্য
আমি: দুদিনেই আমি পর হয়ে গেলাম আর ও আপন হয়ে গেলো
ছোটমা: নারে পাগল ছেলে তোরা দুইটাই তো আমাদের সন্তান।
হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো আলিফার আব্বু ফোন দিয়েছেন।
আমি: আলিফা তোমার ফোন কোথায়
আলিফা: বাসায় রেখে এসেছি
আমি: হুম নাও তোমার আব্বু ফোন দিয়েছেন।
আলিফা কথা বলে ফোন নিজেই আমার পকেটে রাখলো, এই মেয়ে যে আজ আমাকে আর কতোবার অবাক করাবে আল্লাহ্ জানেন। ড্রাইভ করছি আর আড়চোখে আলিফাকে দেখছি, আলিফাও আমাকে আড়চোখে দেখছে হঠাৎ দুজন দুজনের দিকে একসাথে তাকালাম আলিফা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। ওকে ইশারা দিয়ে আমার কাধে মাথা রাখতে বললাম, ও লক্ষী মেয়ের মতো তাই করলো। আলিফা কাধে মাথা রাখতেই ফিসফিস করে বললাম…
আমি: এই পাগলী রুমে কি করেছি না করেছি এসব কি সবার সামনে বলতে হয়
আলিফা: সরি (লজ্জায় আমার বুকে মুখ লুকালো)
আলিফাকে কখনো এভাবে কাছে পাবো ভাবতেই পারিনি। আজ তো মনে হচ্ছে আলিফা আমাকে ভালোবাসে কিন্তু রাতুল…? মাথায় কিছুই ঢুকছে না আলিফাকে সব জিজ্ঞেস করতে হবে।
আলিফাকে গাড়ির কাছে রেখে চাচ্চু আর ছোটমাকে ট্রেনে তুলে দিতে আসলাম।
ছোটমা: রিফাত আমার মনে হচ্ছে সবকিছু ঠিক হতে চলেছে তাই আর কান্নাকাটি করিস না
আমি: আলিফার ব্যবহারে তো তাই মনে হচ্ছে কিন্তু ছোটমা রাতুল
চাচ্চু: হয়তো আলিফা তোকে ভালোবাসতে শুরু করেছে
আমি: বুঝলাম কিন্তু রাতুলের দোষটা কোথায় ও যখন দেশে ফিরে আসবে তখন কি হবে
ছোটমা: মানুষের মন বড়ই অদ্ভুদ কখন কিভাবে কাকে ভালোবেসে পেলে মানুষ তা নিজেও বুঝতে পারে না তাই রাতুলের বিষয়টা আলিফার উপর ছেড়ে দে
আমি: আলিফা তো পরে কষ্ট পাবে
চাচ্চু: ভালোবাসার জন্য কিছু কষ্ট পাওয়া প্রয়োজন নাহলে ভালোবাসার গভীরতা উপলব্ধি করা যায় না
আমি: কিন্তু আমি ওকে কষ্ট দিতে চাই না
ছোটমা: জানি কিন্তু কিছু তো করার নেই এখন তুই কি করবি যা করার আলিফাকে করতে হবে, ওর মন যা চাইবে ওকে সেটাই করতে দে
আমি: আলিফা পারবে তো সবটা সামাল দিতে
ছোটমা: সিদ্ধান্ত এখন আলিফার ও যাকে ভালোবাসে তার কাছেই যাবে এতে তোর কোনো হাত নেই। আর হ্যাঁ আলিফা যদি রাতুলের কাছে যেতে চায় তুই বাধা দিবি না
আমি: কিন্তু
ছোটমা: যেভাবে ভালোবাসছিস সেভাবেই ভালোবেসে যা নিজের ভালোবাসার উপর বিশ্বাস রাখ
চাচ্চু: ভালোবেসে যা কিন্তু ভালোবাসার মানুষের উপর অন্যায় কোনো জোর কাটাবি না এতে তোর ভালোবাসা ছোট হবে
আমি: হুম
ছোটমা: সবশেষ কথা নিজের ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস কখনো হারাবি না
আমি: হুম
চাচ্চু: সাবধানে বাসায় ফিরিস আসছি।
চাচ্চু আর ছোটমাকে বিদায় দিয়ে আলিফার কাছে আসলাম। কি করবো বুঝতে পারছি না, আলিফা আমাকে ভালোবাসলে রাতুল কষ্ট পাবে কিন্তু আমি তো চাইনা আমার জন্য কেউ কষ্ট পাক। ছোটমা ঠিকি বলেছে এখন সব সিদ্ধান্ত আলিফার, ও যা চাইবে তাই হবে।
আলিফা: কি ভাবছ
আমি: কিছুনা
আলিফা: তুমি কি কোনো কিছু নিয়ে টেনশনে আছ
আমি: আলিফা তুমি কি আমায় ভালোবাস (কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবলো)
আলিফা: রিফাত আজ প্রথম তোমার সাথে ঘুরতে এসেছি তুমি কি এখন এসব নিয়ে কথা বলবে এসব তো বাসাতেই জিজ্ঞেস করতে পারো
আমি: হুম
আলিফা: প্লিজ মন খারাপ করে থেকো না
আমি: আমার রাগিণীকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি আমি কি মন খারাপ করে থাকতে পারি
আলিফা: একদম না
আমি: রাগিণী ডাকলাম রাগ করছ না যে
আলিফা: জানিনা।
আলিফার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলাম বিনিময়ে পাগলীটাও হাসলো।
আলিফাকে নিয়ে পার্কের মধ্যে হাটছি হঠাৎ ও ফুচকা ফুচকা বলে লাফাতে শুরু করলো। সামনে তাকিয়ে দেখি ফুচকাওয়ালা, পার্কের সবাই ওর লাফানো দেখে তাকিয়ে আছে। ওর বাচ্চামি দেখে আর ধমক দিতে ইচ্ছে হলো না, ওর কাছে গিয়ে আস্তে বললাম
আমি: যেভাবে ফুচকা দেখে লাফাচ্ছ সবাই তো ভাববে আমি আমার বউকে ফুচকা খাওয়াতে কিপটামি করি
আলিফা: যার যা খুশি ভাবুক আগে ফুচকা খাবো
আমি: ওকে
আলিফা: বেশি করে জ্বাল দিয়েন (ফুচকাওয়ালাকে বললো, আমি তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ও কি সত্যি আলিফা নাকি আমার নিলা ফিরে এসেছে সবকিছু মিলে যাচ্ছে কিভাবে)
আলিফা: রিফাত তুমি খাবে না
আমি: আমি তো জ্বাল কম খাই
আলিফা: দূর তুমি পিচ্ছি নাকি বেশি জ্বাল খেয়ে দেখো ভালো লাগবে।
কি আর করার ওর কথা রাখতে গিয়ে খেলাম।
আলিফা: রিফাত তুমি তো কান্না করে দিয়েছ।(অসহায়ের মতো ওর দিকে তাকালাম, ও আমাকে অবাক করে দিয়ে ঠিক নিলার মতো আমার চোখের পানি মুছে দিলো)
আলিফা: চলো বাসায় যাই আর ঘুরতে ইচ্ছে হচ্ছে না
আমি: ওকে।
গাড়িতে এসে বসেই আলিফা আমার একদম কাছে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো, আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাতেই মিষ্টি একটা হাসি দিলো। এই মেয়ে এসব কি করছে মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
বাসায় এসেও আলিফার ব্যবহার দেখে আমি বার বার অবাক হচ্ছি, ওর প্রতিটা কাজে মনে হচ্ছে ও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু ভালো বাসলে নিজের মুখে বলছে না কেন।
আলিফা: এইযে বসে বসে কি ভাবছ খাবে না
আমি: আলিফা একটা কথা বলবো
আলিফা: বলো
আমি: যদি সত্যি আমাকে ভালোবেসে থাকো প্লিজ বলে দাও আমি না আর পারছি না আমি কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি তোমার ব্যবহারে
আলিফা: সবাই বসে আছে একসাথে লাঞ্চ করার জন্য চলো তো।
আলিফা আমার হাত ধরে টেনে নিচে নিয়ে আসলো। বুঝতে পারছি না কিছুই ও ব্যবহারে বুঝাচ্ছে আমাকে ভালোবাসে কিন্তু এসব নিয়ে কোনো প্রশ্ন করলেই এড়িয়ে যাচ্ছে।
খাবার খেতে বসেও আলিফা বার বার আমাকে আড়চোখে দেখছে, আমি খাবার খাবো কি ওর এমন আচরণে হা করে বসে আছি।
রিয়ান: ভাইয়া খাবারটা খাও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে
প্রিতি: হিহিহি
আমি: পেত্নীর মতো হাসছিস কেন
প্রিতি: যেভাবে ভাবির দিকে তাকিয়ে ছিলে খাওয়া বাদ দিয়ে….
আব্বু: প্রিতি চুপ কর তো, রিফাত তোরা হানিমোনে যাওয়া নিয়ে কিছু ভেবেছিস
আমি: না আব্বু
আব্বু: যাওয়ার কি ইচ্ছে নেই নাকি (আমার তো অনেক ইচ্ছে আলিফার সাথে একা সময় কাটানোর কিন্তু আলিফা চায় তো…? ওর দিকে তাকালাম খাবার না খেয়ে প্লেটে আঙ্গুল ঘোরাচ্ছে আর কি যেন ভাবছে)
আমি: আব্বু আলিফার সাথে কথা বলে তোমাকে জানাবো
আব্বু: ঠিক আছে
রিয়ান: ভাইয়া একটু অফিসে যেতে হবে তোমাকে
আমি: কেন
রিয়ান: একটু কাজ আছে আমি একা পারছি না, আব্বু তো এখন অফিসে যান না আর এখন আব্বুর না যাওয়াই ভালো
আমি: এখন যেতে হবে
রিয়ান: হ্যাঁ বেশি সময় লাগবে না
আমি: ওকে।
রুমে এসে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি, আলিফা এসে পিছনে দাঁড়ালো।
আমি: কিছু বলবে
আলিফা: তাড়াতাড়ি এসো
আমি: ওকে রাগিণী।
আলিফার কপালে একটা চুমু দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম, আশ্চর্যের বিষয় রাগিণী আজ কোনো রাগ দেখালো না।
অফিসের জামেলা শেষ করে একেবারে ডিনার করে অনেক রাতে বাসায় ফিরলাম। রুমে এসে দেখি আলিফা নেই বারান্দার দরজা খুলা, বারান্দায় এসে আলিফার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই মুখ ফিরিয়ে নিলো। ভালোই রাগ করেছে দেখছি, ওকে গিয়ে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম।
আমি: আমার রাগিণীটা রাগ করেছে বুঝি
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: অনেক জামেলা ছিল অফিসে বুঝই তো রিয়ান একা এসব পারবে কিভাবে আর ও ব্যবসা তেমন বুঝে না তাই আ….
আলিফা: হইছে আর বলতে হবে না
আমি: আর কখনো এতো দেরি হবে না এবার হাসো
আলিফা: কান ধরো
আমি: হুম ধরলাম
আলিফা: আর যেন এমন না হয়
আমি: ওকে, ঘুমাবে না
আলিফা: না আজ তোমার সাথে এখানে বসে সারারাত চাঁদ দেখে কাটাবো
আমি: তাই
আলিফা: হুম।
আলিফা চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে, আমি ওর শাড়ির নিচ দিয়ে ওর পেটে হাত রাখলাম, আলিফা কেঁপে উঠে আমার হাতের উপর ওর হাত রাখলো। আমি ওর কানের কাছে আস্তে করে বললাম “ভালোবাসি” তারপর ওর কানে একটা কামর বসিয়ে দিলাম….
চলবে?