#আরোহী_ইসলাম
#শেষ_বেলা
#পর্ব:দুই
” হুরের শাশুড়ি ঠা’স করে চায়ের কাপ ফেলে দিয়ে হুংকার দিয়ে বললো
‘ তোমাকে বলেছি না আমি চা খাই না তারপরও কেনো চা বানিয়েছো?
হুর চুপ করে আছে। হুরের শাশুড়ি বললো যাও কফি বানিয়ে আনো। হুর আচ্ছা বলে কফি বানাতে গেলো।হুরের পিছনে পিছনে চাচি শাশুড়িও গেলো। হুর কফি বানিয়ে শাশুড়িকে দিয়ে উপরে চলে গেলো। হুর রুমে এসে দেখে ফারহাজ কাজ করতেছে”
হুর ফারহাজকে বললো
‘ আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।’
‘ হুম বলো কি?
ফারহাজ বললো।
‘ আপনার মা আমাদের বাড়ি থেকে তিন লক্ষ টাকা যৌতুক এনেছে। আপনি যানেন যে আমার পরিবারের অবস্থা কেমন ভাইয়ার চাকরির জন্য অনেক টাকা লাগবে। আব্বু এতো টাকা পাবে কোথায়?
মলিন কন্ঠে বললো হুর।’
হুরের কথা শুনে ফারহাজও বেশ অবাক হলো। ফারহাজ হুরকে বললো আমি মায়ের সাথে কথা বলতেছি দাড়াও। তারপর ফারহাজ ড্রয়িং রুমে গেলেন। ফারহাজ যেতেই হঠাৎ কল বেজে উঠলো হুর বিছানায় ফারহাজের ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করে কানে নিতেই অপর পাশ থেকে কেউ বলে উঠলো
‘ আজ সন্ধ্যায় ** এই জায়গাই দেখা করবে ঠিক আছে বলেই কল কেটে দিলো। হুর চমকে গিয়ে বললো কে এই মেয়ে? আর সন্ধ্যায় দেখা করবে মানে?
হুর এইগুলো ভাবতেছে নিচ থেকে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ শুনে ফোন রেখে নিচে এসে দেখে ফারহাজ তার মাকে বলছে
‘ আম্মু তুমি হুরদের বাড়ি থেকে টাকা এনেছো কেনো?
‘ আমরা টাকা আনিনি তাড়া তাদের মেয়েকে টাকা দিয়েছে। আর তুই বিয়ে হতে না হতেই ওই মেয়ের কথায় আমার সাথে ঝগড়া করতে এসেছিস।’
শাশুড়ি তেতে উঠে বললো।
‘ মা আমি কিন্তু ঝগড়া করছি না। তোমাকে শুধু বললাম।’
ফারহাজ বললো।
ফারহাজের মা মুখ বাকা করে বললো
‘ জানি জানি কি বলতে চেয়েছিস তুই।’
কথার মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠলো। ফারহাজ হুরকে বললো
‘ দেখো তো কে আসলো।’
ফারহাজের কথায় হুর দরজা খুলতেই অবাক হলো সাথে খুশিও। সাইমা খুশি হয়ে বললো মা তোমরা? কেমন আছো?
হুরের মা মেয়েকে দেখে খুশিতে কেদেঁ দিলো। যে মেয়ে কিনা তার হাতের ভাত মাখানো ছাড়া খাই না। সেই মেয়ের এখন বিয়ে হয়ে গেছে ভাবতেই অবাক লাগছে। হুরের মা মুচকি হেসে বললো আলহামদুলিল্লাহ্। তুই?
‘ আলহামদুলিল্লাহ্।
তারপর হুর তার মা আর ভাইকে ভিতরে নিয়ে আসলো। সিফাত হুরের ভাইকে দেখে হুরের ভাইয়ের কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বললো আরে শালাবাবু কেমন আছো?
‘ আলহামদুলিল্লাহ্। আপনি?
‘ আলহামদুলিল্লাহ্।
তারপর হুর তার শাশুড়িকে ডেকে আনলো। এইভাবেই কেটে গেলো বেশ কিছুক্ষন। হুরের মা আর ভাইয়া যায়নি আগামীকাল যাবে। হুর রুমে তার মায়ের সাথে বসে আছে। হুরের মা বললো হুর তুই ঠিক আছিস তো?
‘ হ্যাঁ,কেনো?
অবাক হয়ে বললো হুর।
হুরের মা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো মায়ের মন তো সব সময় তোকে নিয়ে দুশ্চিন্তা হয়।
‘ মা সব ঠিক আছে।’
মুচকি হেসে বললো হুর। হুরের বলতে ইচ্ছা করতেছে ফারহাজ তাকে ভালোবাসে না। তাকে ঠকানো হচ্ছে কিন্তু হুর চুপ করে রইলো। হুরের চোখে পানি এসে পরলো। হুরের মা হুরের চোখে পানি দেখে বললো কি হয়েছে হুর? চোখে পানি কেনো তোর
‘ কই তুমি হয়তো ভুল দেখতেছো।’
হুর বললো।
অন্যদিকে
” হুরের শাশুড়ি রুমে বসে আছে। রাগে তার শরীর জ্বলতেছে। হুরের শাশুড়ি রিনাকে বললো রিনা এই মেয়েকে তো এখন আর বেশি কাজ করানো যাবে না তাহলে হুরের মা,ভাই ভাববে তার বোনকে অনেক কষ্ট দিচ্ছে। যদি তাড়া টাকা চাই তাহলে…
‘ মা ওনারা কালকেই চলে যাবে। তুমি না হয় একটু ভাবির কাজে সাহায্য করো।’
লিনা বললো।
‘ হুম। কবে যে এই মেয়েকে বাড়ি ছাড়া করবো। তোর বাবাকে তো আগেই বশ করে নিয়েছে এখন আমার ছেলেটাকেও বশ করে নিচ্ছে।’
রিনার মা বললো।
‘ আম্মু একটু তো অপেক্ষা করো এই মেয়েকে খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি ছাড়া করবো।’
রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো রিনা।
‘ কাকে বাড়ি ছাড়া করবে তোমরা?
অবাক হয়ে বললো রিনার কাকি।
‘ কাকে করবো কাউকে না।’
কিছুটা তোতলাতে তোতলাতে বললো ফারহাজের আম্মু।
হুরের চাচি শাশুড়ি বললো
‘ একটু আগে যে বললে বাড়ি ছাড়া করবে।’
‘ তোমাকে অতো যানতে হবে না। তুমি এইখানে কেনো এসেছো?
রিনা রাগী চেহারা করে বললো।
রিনার কাকি মিসেস রাহিমা বললো
‘ নিচে ডাকে তোমাদের সেই জন্য বলতে এসেছি। তারপর তিনি চলে গেলেন। মিসেস রাহামির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রিনার মা বললো সব শুনে নিলো নাতো?
‘কিছু শুনেনি তুমি টেনশন করো না।’
রিনা বললো।
তারপর রিনার মা নিচে আসলো।
———–
মিসেস রাহিমা ড্রয়িংরুমে এসে হুরকে বললো হুর তোমাকে কিছু বলার আছে
হুর কিচেনে কাজ করতেছে চাচি শাশুড়ির কথা শুনে বললো কি কথা?
চাচি শাশুড়ি হুরকে বললো
‘ সব সময় চোখ কান খুলা রাখবে। যা তুমি দেখছো তা মোটেও এই রকম না খুব ভয়ানক। কাউকে বেশি আপন ভাববে না। সবাই আপন হয়ে পিছনে ছুড়ি মা’রে। সরল হতে যাবে না তাহলে তোমাকে সবাই সরল ভেবে ঠকাবে, মনে থাকে যেনো এই বলে তিনি দ্রুতগতিতে চলে গেলো। হুর চুপ করে আছে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। হুর বললো এইগুলো কি বললো কাকি মনি। এই কথাগুলোর মানে কি?
হুর এইগুলো ভাবতেছে ঠিক সে সময় ফারহাজ এসে পিছন থেকে হুরকে জড়িয়ে ধরে হুরের চুলে মুখ ডোবালো। হুর কেপে উঠলো। হুর চোখ বন্ধ করে বললো ছাড়ুন কেউ দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।
‘ না ছাড়বো না। আমি আমার বউকে জড়িয়ে ধরেছি তাতে তোমার কি?
ফারহাজ বললো।
‘ আসলেই তো আমার কি? আমি তো মানুষ না রোবট আমাকে যেভাবে ইচ্ছা সেই ভাবে আপনারা চালান।’
হালকা হেসে বললো।
‘ মানে? আচ্ছা শুনে আমি বাহিরে যাবো আসতে একটু দেরি হবে। তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে পরিও।’
এই বলে ফারহাজ হুরের কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলো।
হুর ফারহাজের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিজেও পিছু পিছু বাসা থেকে বের হলো। সে দেখতে চাই কে এই মেয়ে আর দেখা করতে যাচ্ছে কেনো? কিসের জন্য?
ফারহাজ গাড়ি চালাচ্ছে আর হুর রিকশায় উঠে তাকে ফারহাজের গাড়ি ফলো করতে বলছে। কিছুক্ষন পর ফারহাজ গাড়ি থেকে নেমে হাটা ধরলো। হুর রিকশা থামিয়ে তাকে টাকা দিয়ে ফারহাজের পিছনে যেতে লাগলো।
এদিকে
ফারহাজ হাটতেছে কিন্তু তার মনে হচ্ছে পিছনে কেউ তাকে ফলো করতেছে ফারহাজ পিছনে তাকাতে দেখে কেউ নেই। ফারহাজ নিজের মনের ভুল ভেবে আবার হাটতে লাগলো।
ফারহাজকে পিছনে তাকাতে দেখে হুর তাড়াতাড়ি করে আড়াল হয়ে গেছে। হুর আবার পিছনের নিতে লাগলো। কিছুক্ষন পর ফারহাজ একটা বড়ো বাড়িতে আসলো। হুর তা দেখে মনে মনে বললো ফারহাজ এই বাড়িতে কেনো ও ওই মেয়েটার সাথে দেখা করতে আসছে। তারপর হুর ফারহাজার পিছু পিছু আসলো। ফারহাজ বাড়িটার ভিতরে প্রবেশ করে বাড়ির বাহিরে দোলনা আছে এবং বসার যায়গা আছে ফারহাজ চেয়ারে বসলো। হুর বাড়িটার মধ্যে এক গাছের পিছনে দাঁড়িয়ে রইলো।
ফারহাজ বসে আছে হঠাৎ একটি মেয়ে এসে বললো,,,
#চলবে….