শেষ বেলা পর্ব-০১

0
1186

#শেষ_বেলা
#আরোহী_ইসলাম
#সূচনা_পর্ব

বিয়ের এক সাপ্তাহ পর হুর জানতে পারলেন তার বাড়ি থেকে শাশুড়ি আর তার স্বামী তিন লক্ষ টাকা যৌতুক এনেছে কথাটা শুনে অবাক হয়ে গেলো হুর কারন তার শাশুড়ি বিয়ের আগে তার বাবাকে বলেছে আমরা শুধু মেয়ে চাই আর কিছু আমাদের চাই না। কিন্তু তাড়া যে এই রকম করবে ভাবতে পারিনি হুর। হুর রুমে এসে বড়ো ভাইকে কল দিলো কয়েকবার রিং হওয়ার পর সে ধরতেই হুর শান্ত কন্ঠে বললো

‘ভাইয়া বাবার কাছ থেকে আমার শাশুড়ি তিন লক্ষ টাকা যৌতুক এনেছে? সত্যি বল।’

‘যৌতুক না বোন আমরা তোকে দিয়েছি তোরা ওইটাকা দিয়ে ফার্নিচার কিনিস।’
থমথমে গলায় বললো হুরের ভাই।

‘ আচ্ছা তুমি রাখো, বলে হুর কল রেখে ড্রয়িং রুমে এসে শাশুড়ি কে বললো মা আপনি জানেন যে আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা বেশি ভালো না। আমাকে বিয়ে দিতেই বাবাকে অনেক ধার করতে হয়েছে তারপরও কেনো আপনি তিন লক্ষ টাকা যৌতুক এনেছেন?

‘ আহা বউমা টাকা গুলো তো তোমার জন্যই এনেছি আর আজকাল এর থেকে লাখ লাখ টাকা বাপের বাড়ি থেকে দেয় আমরা তাও তো কম এনেছি।’
থতমত খেয়ে বললো শাশুড়ি।

‘ মা আপনারা টাকাগুলো না আনলেও পারতেন।’
নিচু সুরে বললো হুর।

‘ আমরা যা করেছি বেশ করেছি। তোর ভাগ্য ভালো যে আমার ছেলের বউ তোকে করে এনেছি।
ফোড়ন কেটে বললো শাশুড়ি।

হুর আর কিছু না বলে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দ্রুততার সঙ্গে স্থান ত‍্যাগ করলো কারন এই নিয়ে শাশুড়ির সাথে ঝগড়া করতে চায় না ফারহাজ আসুক বাড়িতে তারপর তাকে বলবে।

কিছুক্ষন পর
হুর রুমে বসে আছে হঠাৎ নিচ থেকে ননদের ডাক শুনে রুম থেকে বের হয়ে নিচে এসে বললো
‘ কি হয়েছে রিনা?

‘ তোমাকে বলেছিলাম না আমার রুমটা মুছে দিতে তারপরও কেনো দাওনি। তোমাকে এই বাড়িতে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ার জন্য আনা হয়নি।’
রাগে ফোস ফোস করতে করতে বললো রিনা।

‘ আমার মনে ছিলো না আমি এখনই মুছে দিচ্ছি।’
মলিন কন্ঠে বললো হুর।

‘ এক ঘন্টার মধ্যে যেনো আমার রুম মুছা হয়ে যায়।’
রুঢ় কন্ঠে বললো রিনা।

হুর মাথা নিচু করে আচ্ছা বলে রুম মুছতে গেলো। হুর গ্রামের মেয়ে হওয়ায় অতো প‍্যাচ বুঝে না। কারো উপরে কথাও বলে না।অনেক নরম মনের মেয়ে। হুর রুম মুছতেছে হঠাৎ ফ্লোরে পরে থাকা কাচে হুরের হাত কেটে যায় হুর ব‍্যাথায় আহ্ করে উঠে। হুর ফ্লোরে তাকিয়ে দেখে গ্লাস ভাঙার কাচ পরে আছে।

‘ হলো তোমার নাকি আজকে আমার রুমেই আর যাওয়া যাবে না।’
জোরে চেচিয়ে বলে উঠলো রিনা।

হুর রক্ত মুছে আবার রুম মুছতে লাগলো। হুরের চোখ দিয়ে পানি পরতেছে কারন হাতটা অনেকটাই কেটে গেছে। হুর কাপড়ের আচল দিয়ে চোখ মুছে আবার রুম মুছতে শুরু করলো।


‘ আম্মু এই রকম গাইয়া ক্ষেত মেয়েকে ভাইয়ার বউ করে এনেছো কি দেখে? আমাদের পরিবার আর ওদের পরিবার তো এক নয়।’
লিনা বললো।

‘ আমি এই মেয়েকে পছন্দ করেছি নাকি তোর বাবা পছন্দ করেছে যার জন্য অনিচ্ছা সত্যেও হুরকে আমাদের বাড়িতে বউ করে এনেছি। আমার তো ইচ্ছা ছিলো অনেক বড়লোক পরিবারে ছেলে বিয়ে করাবো কিন্তু সব শেষ হয়ে গেলো।’
বিরক্ত হয়ে বললো।

‘ আম্মু তোমাকে একটা কথা বলি,
তারপর রিনা তার মাকে বললেন লিনার মা কথাটা শুনে পৈশাচিক হাসি দিলেন।

‘ রুম মুছা শেষ করে হুর ড্রয়িং রুমে এসে বসলেন। গরমে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। হুর সোফায় বসতে যাবে ঠিক সে সময় রিনা বললো ভাবি ফ্লোরে বসো সোফা তো নোংরা হয়ে যাবে।’

হুর তপ্ত দীর্ঘ শ্বাস আড়াল করে নিচে বসলেন। এই রিনা মেয়েটা বিয়ের আগে থেকেই হুরকে দেখতে পারে না সেটা হুর বেশ বুঝতে পারছে। ফারহাজের পরিবার যখন প্রথম হুরকে দেখতে এসেছে সেইদিনই হুরকে অনেক অপমান করেছে রিনা, হুর শুধু মুখ বুঝে সহ‍্য করেছে। হুরকে নিচে বসা দেখে হুরের চাচি শাশুড়ি বললো হুর নিচে বসেছো কেনো? সোফায় বসো।’

‘ ছোট মা আমার সাথে ধুলোবালি লেগে আছে।’ আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।’
মলিন কন্ঠে বলে হুর রুমে চলে গেলো। হুরের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চাচি শাশুড়ি স্বাভাবিক সুরে হুরের শাশুড়িকে বললো বড় আপা ও কিন্তু নতুন বউ।’

‘ চুপ কর আমার ছেলের বউকে আমি কি করবো সেটা আমিই ঠিক করবো তোকে এতো নাক গালাতে হবে না। ‘
কিছুটা রেগে বললো।

‘তুমিও যেমন ভাবিও তেমন সেই জন্যই তোমাদের আমাদের সহ‍্য হয়না।’
মুখ বাকা করে বললো রিনা।

‘ মুখ সামলে কথা বল রিনা ভুলে যাস না আমি তোর কাকি হয়।’
কিছুটা রেগে বললো চাচি শাশুড়ি তারপর তিনি রুমে চলে গেলেন।

————
” হুর রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে আয়নায় নিজের
প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসতেছে আজ সে ভেবেছে রাতে হুর নীল শাড়ি, নীল চুড়ি, নীল টিপ, কাজল এইগুলো পরবে ফারহাজের নীল শাড়ি অনেক পছন্দ হুর এইগুলো ভাবতেছে হঠাৎ ফোনে মেসেজ আসার শব্দে হুর ভ্রু কুচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে মেসেজ অন করতেই চমকে যায় কারন অচেনা নাম্বার থেকে কেউ ভিডিও পাঠিয়েছে।

হুর ভিডিও চালু করতেই দেখে তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ফারহাজ আর একটা মেয়ের আপত্তি কর ভিডিও। হুর যেনো পাথর হয়ে গেলো। হুরের চোখ দিয়ে অঝোর ধারাই পানি পরতে লাগলো। বুকে তিব্র যন্ত্রণা করতে লাগলো।আজ নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে। যে মানুষটার সাথে সারাজীবন কাটানোর প্রতিশ্রুতি নিয়েছে আজ সেই মানুষটা তাকে ঠকালো সেটা হুর কল্পণাও করতে পারেনি,

হুর তাড়াতাড়ি করে অচেনা নাম্বারে কল দিলো কিন্তু সে ধরলো না। হুর মনেমনে বিরবির করতে লাগলো কে এই লোক আর ফারহাজই বা অন্য মেয়ের সাথে কিভাবে ওনি তো অফিসে,
হুরের সব যেনো ধোয়াশা মনে হচ্ছে হুর দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে মনে মনে বলতেছে কি হচ্ছে আমার সাথে এই সব ফারহাজ তো আমাকে ভালোবাসে আমি তো ওনার স্ত্রী তারপরও ওনি অন্য কারো সাথে ছিহ্,

‘হুর তাড়াতাড়ি করে ফারহাজকে কল দিলো কিন্তু ফারহাজ ধরলো না হুর কান্না করে দিলো। হুরের চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করতেছে, এই কথা যদি নিজের বাড়ির লোক জানে তাহলে তাড়া সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না সবাই তো মেয়েটারই দোষ দিবে কেউ ভাববে না তার স্বামীরো দোষ আছে। হুর কান্না করে দিলো এই সমাজের মানুষ যে বড্ড খারাপ হুর এইগুলো ভাবতেছে ঠিক সে সময় ফারহাজ এসে হুরকে এইভাবে বসে থাকতে দেখে বললো
‘ কি হয়েছে হুরপরি?

‘ কিছু না।’
স্বাভাবিক কন্ঠে বললো হুর।

ফারহাজ হাতের ঘড়ি টেবিলে রেখে হুরের কাছে এসে হুরকে জড়িয়ে ধরে হুরের মুখে চুমু দিলো। হুর কেপে উঠলো। আজ ফারহাজের স্পর্শ কেনো জানি হুরের কাছে বিষাক্ত মনে হচ্ছে। হুরের বারবার ওই ভিডিওটার কথা মনে পরছে। হুরের চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো।হুর ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু কান্নাগুলো বাধহীন ভাবে ঝড়ে পরতে লাগলো। হুর কোনো কিছু না ভেবেই দাড়িয়ে বললো আমাকে নিচে ডাকতেছে হয়তো।’

ফারহাজ কিছুটা রেগে বললো
‘এমন করতেছো কেনো? কিছু কি হয়েছে

‘ আপনার ছোয়া আমার কাছে বিশের থেকেও বিষাক্ত মনে হচ্ছে।’
আস্তে করে বললো হুর।

‘ কিছু বললে?
ফারহাজ বললো।

‘ না তারপর হুর ড্রয়িং রুম এসে সবার জন্য চা বানাতে লাগলো। হুর চা বানিয়ে এনে সবাইকে দিয়ে
শাশুড়ির দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিতেই শাশুড়ি ঠা’স করে চায়ের কাপ ফ্লোরে ফেলে হুংকার দিয়ে বললো,,

#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে