#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_০৭
নিস্তব্ধ রাত, রাস্তায় কারো কোনো আনাগোনা দেখা যাচ্ছে না। নিস্তব্ধ পথ বেরিয়ে পিয়াসের গাড়ি ছুটে যাচ্ছে গন্তব্যের দিকে। পিয়াস গাড়ি ড্রাইভ করছে, পাশেই ইকরা ঘাপটি মেরে বসে আছে। তা দেখে পিয়াস দুষ্ট হাসি হেসে বলল,
“আপনি না কারো সাহায্য নেন না, এখন দেখছি সেই ঘুরে ফিরে আবার আমার সাহায্যই নিচ্ছেন!”
পিয়াসের কথা শুনে ইকরা তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। সে কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
“আপনি কি আমাকে খোঁটা দিচ্ছেন নাকি?”
“আরে খোঁটা দিলাম কোথায়? আপনিই তো সেদিন বলেছেন যে কারো সাহায্য নেন না, তাই বলেছি আরকি!”
পিয়াসের কথা শুনে ইকরা জোরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠল,।
“গাড়ি থামান।”
ইকরার চিৎকার শুনে পিয়াস গাড়ি থামায়, ইকরা গাড়িতে আর বসে না থেকে নিচে নেমে পড়ে। তা থেকে পিয়াস হতভম্ব হয়ে যায়। সেও গাড়ি থেকে বের হয়ে ইকরার পাশে গিয়ে দাড়ায়।
“আরে কি হয়েছে? নেমে গেলেন কেনো?”
পিয়াসের কথা শুনে ইকরা রেগে বলল,
“আপনি যান তো এখান থেকে, এসব খোঁটা দেওয়া লোকের সাহায্য আমি নিই না, আর এটা সাহায্যই বা কই হলো? জিজু বলেছে আপনার সাথে আসতে, তাই তার কথা রাখতে আপনার সাথে এসেছি আমি।”
ইকরার কথা শুনে পিয়াস মহা বিপাকে পড়লো। সে কিভাবে এখন ইকরাকে সামলাবে সেটাই ভাবছে, ফারিশ যদি জানতে পারে সে ইকরা কে মাঝরাস্তায় একা ছেড়ে বাড়িতে চলে গেছে তাহলে তার কপালে দুঃখ আছে।
“আরে চলুন তো, লেট হয়ে যাচ্ছে।”
ইকরা মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিয়ে বলল,
“ইকরা একবার যা বলে ফেলে তাই করে, আপনার লেট হচ্ছে আপনি যান। আমি একাই যেতে পারি।”
বলেই ইকরা আর কোনো কথা না বলে হাঁটা শুরু করে। পিয়াস হতভম্ব হয়ে শুধু ইকরার যাওয়ার পানে চেয়ে আছে।
***
তীব্র মাথা যন্ত্রণা আর মায়ের শোকে নিধি কাতর হয়ে গেছে। নিরবে তার চোখ বেড়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে। কি সুন্দর কালকে রাতেও সে মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে! একদিনের ব্যবধানে কি থেকে কি হয়ে গেলো তার সাথে! কে আর তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিবে? কেই বা তাকে খাবার খাইয়ে দিবে? কার কাছেই বা সে তার সকল আবদার করবে? এসব ভাবতে ভাবতেই নিধির চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
ফারিশ রুমে এসে দেখে নিধি বিছানার একপাশে গুটিশুটি মেরে বসে আছে। তীব্র গরম পড়ছে, সে রুমের চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো রুমে এসি আছে কি না! রুমের পরিস্থিতি দেখে ফারিশ বুঝে ফেলল এসি রাখার মত উপযুক্ত রুম এটা এখনো হয়ে উঠেনি। সে অসহায় দৃষ্টিতে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে, এই ফ্যানই তার শেষ ভরসা। সে সুইচবোর্ডের দিকে গিয়ে ফ্যান অন করে। ফ্যান চালু করতেই ফারিশ ভয় পেয়ে যায়, ফ্যান চলছে ঠিকই। কিন্তু সাথে বিকট আওয়াজ ফ্রী! সে নিধির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, সে তো অল্প কিছু ঘন্টা এই বাসায় থেকেই পাগল হয়ে গেছে। আর এরা কিভাবে এতোদিন এই বাসায় ছিলো? সে আর কিছু ভাবতে পারলো না। সোজা গিয়ে বিছানায় বসে সে।
“ঘুমাবে না?”
ফারিশের কথা কানে যায় না নিধির। ফারিশ ফের বলল,
“কি হলো?”
ফারিশের কথা শুনে হুশ ফিরে নিধির। সে কান্নাভেজা কন্ঠে বলল,
“আপনি বরং এই রুমে থাকেন, আমি আম্মুর রুমে গিয়ে থাকি।”
নিধির কথা শুনে ফারিশ তাকে বাঁধা দিয়ে বলল,
“একা কোনো রুমে থাকতে হবে না তোমাকে। তুমি আমার সাথে এই রুমেই থাকবে!”
ফারিশের কথা শুনে বিরক্ত হয় নিধি। সে বিরক্ত মাখা কন্ঠে বলল,
“একা রুমে গিয়ে নিজেকে শেষ করে দিবো না, চিন্তা নেই।”
নিধির কথা শুনে ফারিশের মেজাজ বিগড়ে যায়। তবুও সে কিছু বলতে পারলো না নিধি কে, কারণ সে নিজেও নিধির মত একই রকম পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছে, তখন তাকে কেউ সামলাতে এগিয়ে আসেনি। বাবা তার অফিস নিয়েই ব্যাস্ত ছিলো। তারপর আবার যখন তার বাবা তাকে ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমায় তখন তো কেউ ছিলো না তাকে একটু ভরসা দেওয়ার জন্য। এমন পরিস্থিতিতে যে নিজেকে কেমন অসহায় লাগে সেটা ফারিশ অনুভব করেছে। তাই আর নিধির সাথে রাগারাগি করতে পারলো না সে।
“তোমার যদি এক বিছানায় থাকতে কোনো অসুবিধা হয় তাহলে তুমি বিছানায় ঘুমাও, আমি রুমের অন্য কোথাও ঘুমিয়ে যাবো। তবুও অন্য রুমে যেতে হবে না তোমাকে।”
ফারিশের কথা শুনে নিধি তাকে বাঁধা দিয়ে বলল,
“আমি একদম স্ট্রং আছি, আমার তেমন কোনো আত্মীয় স্বজন নেই এই শহরে, বাবার সম্পর্কে আত্মীয় যারা ছিল তারা বাবা বেঁচে থাকা পর্যন্তই আত্মীয় ছিলো। এরপর আমাকে আর আমার মা কে তারা নিজেদের আপন ভাবে নি কখনো। মায়ের চলে যাওয়াতে রক্তের কেউ এগিয়ে আসেনি, সে জায়গায় আপনি একা এগিয়ে এসেছেন। সকাল থেকে এতোকিছু করেছেন আমার জন্য, এতে আমি কৃতজ্ঞ স্যার! আমি জানি আমার সাথে আপনার একই রুমে থাকতে অস্বস্তি হবে, তারপরও আমার পরিস্থিতির কথা ভেবে এসব বলেছেন। আমি একদম ঠিক আছি, আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না আর আপনাকে স্যার!”
নিধির কথা শুনে ফারিশ তার দিকে এগিয়ে এসে তাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
“ঘরের বরকে স্যার বলার কোনো মানে হয় না মিসেস ফারিশ শিকদার। বর তার স্ত্রীর পাশে থাকবে না তো কে থাকবে? আমাকে কি এতোই স্বার্থপর মনে করো তুমি? অফিসের সেই বাউণ্ডুলে বসটারও যে মন বলে একটা জিনিস আছে সেটা তো তোমরা ভুলতে বসেছো। আর বউয়ের সাথে একই রুমে থাকতে আমার কিসের অস্বস্তি লাগবে? চলো ঘুমাবে, অনেক রাত হয়েছে।”
বলেই ফারিশ নিধিকে বিছানায় বসিয়ে দেয়। নিধি শুধু অবাক হয়ে ফারিশ কে দেখছে, যত দিন যাচ্ছে সে যেনো ফারিশ কে তত নতুন করে চিনছে!
★★
ইকরা রাস্তায় সিএনজির জন্য দাড়িয়ে আছে, রাগে থরথর করে কাঁপছে সে। কিছুতেই নিজের রাগ কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সে। বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেলেও কোনো রিক্সা বা সিএনজি পায় না সে। পাবেই বা কি করে? রাত যে অনেক হলো! তবুও হাল ছাড়লো না ইকরা। সে হেঁটে যাবে ভেবে ঠিক করলো। ইকরা হাঁটার জন্য দুইপা বাড়াতেই তার সামনে তিনটা ছেলে এসে দাড়ায়। ছেলে তিনটি ইকরার দিকে নেশালো চোখে তাকিয়ে বলল,
“সঙ্গী লাগবে নাকি ম্যাডাম?”
ছেলগুলোর কথা শুনে ইকরা ভয় পেয়ে যায়। সে ভয়ে পিছিয়ে যেতেই ছেলেগুলো আরো তার দিকে এগিয়ে আসে।
“পালাচ্ছেন কেনো ম্যাডাম?”
একদিকে পিয়াসের উপর রাগে ফুঁসতে থাকে ইকরা। আরেকদিকে এদের আজাইরা কথা শুনে ইকরার মেজাজ আরো বিগড়ে যায়। সে একটা ছেলের গালে সজোরে একটা থা’প্পড় দিয়ে বলল,
“মেয়ে দেখলেই তোদের নাটক শুরু হয়ে যায় কেনো?”
ইকরার কথা কানে যায় না ছেলেগুলোর। তারা রেগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,
“খুব ভুল করেছিস তুই।”
বলেই একটা ছেলে ইকরার গলা থেকে টান দিয়ে ওড়না নিয়ে নেয়। ওড়না টেনে নিয়েই ছেলেগুলো হো হো করে হাসতে থাকে। ছেলেগুলোর কাজে ইকরা পুরো থমকে যায়। সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। হঠাৎ করে তাকে ভরসা দেওয়ার জন্য একজন উদয় হলো, পিয়াস ইকরার হাত চেপে ধরে বলল,
“এদের হাত থেকে বাঁচার একটাই উপায়, পিছনে ঘুরেন। আর পালান।”
বলেই পিয়াস ইকরাকে নিয়ে দৌড় দেয়। ছেলেগুলো হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছে পিয়াস আর ইকরার যাওয়ার পানে।
চলবে?
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]