শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-০৫

0
167

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_৫

সন্ধ্যার বিষন্ন পথ পাড়ি দিয়ে যাচ্ছে ফারিশের গাড়ি। তার পাশেই চটপটে নিধি নিরব হয়ে বসে আছে। ফারিশ গম্ভীর মুখে ড্রাইভ করছে। কারো মধ্যেই কোনো কথা নেই। নিধিদের বাসার সামনে এসে ফারিশ গাড়ি থামায়। ফারিশ গাড়িতে বসে থেকেই নিধিকে আদেশ দিয়ে বলল,

“বাসায় যাও।”

ফারিশের কথা শুনে নিধির হুশ ফিরে, সে তাড়াহুড়ো করে গাড়ির দরজা খুলে বের হয়ে যায়। নিধি বাসার দিকে গিয়ে আবার থেমে যায়, সে পিছনে ফিরে দেখে ফারিশের গাড়িটা এখনো আছে। তাই নিধি আবার আগের জায়গায় এসে ফারিশকে বলল,

“বাসায় চলুন।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ গাড়ি থেকে বের হয়ে এসে নিধির পাশে দাড়ায়। ফারিশ আগের ন্যায় মুখ গম্ভীর করে বলল,

“বাসায় যাও।”

“আম্মু যদি জানতে পারে আপনি বাড়ির সামনে এসেও বাসায় আসেননি তাহলে আমার উপর রেগে যাবে।”

নিধির কথাকে পাত্তা না দিয়ে ফারিশ বলল,

“আন্টিকে বলতে হবে না তাহলে, বাসায় যাও। এক কথা বার বার বলতে হয় কেনো?”

ফারিশের কথা শুনে নিধির মন খারাপ হয়ে যায়। রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়েছে ফারিশ, তার পাশে একটা গাছ আছে। নিধি ঠিক সেখানেই দাড়িয়ে আছে এখনো। ছোট কাঁটা যুক্ত একটা গাছের ডালের সাথে নিধির গায়ের ওড়না আঁটকে আছে। নিধির সেদিকে খেয়াল নেই। সেটা ফারিশ লক্ষ্য করে নিধির দিকে এগিয়ে যায়। নিধি ভেবেছে ফারিশ তাকে বকা দিতে আসছে। তাই সে তৎক্ষনাৎ সরে যেতে চাইলে ফারিশ নিধির এক হাত চেপে ধরে ক্ষিপ্ত সুরে বলে,

“মন কোথায় থাকে, এখনই তো ওড়নাটা কাঁটার সাথে লেগে ছিঁড়ে যেতো।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি তার ওড়নার দিকে তাকায়, সে তাড়াতাড়ি করে ওড়না কাঁটা যুক্ত গাছ থেকে ছাড়িয়ে নিতে যেতেই নিধির আঙুলে কাঁটা ডুকে যায়, নিধি ব্যথা পেয়ে মৃদু চিৎকার করে উঠে। ফারিশ নিধির সামনেই ছিল, সে যখন বুঝতে পারলো নিধির আঙুলে কাঁটা ফুটেছে, তখন সে নিধি কে ধমক দিয়ে বলল,

“এতক্ষণ ধরে বলছি বাসায় যাও, আমার কথা কানেই যায় না তার! ব্যথা পেয়েছে?”

“না, সামান্য কাঁটার আঘাতে কারো ব্যথা লাগে না।”

নিধির কথা শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ফারিশ।

“শুনো, তোমার বেখেয়ালি ভাবটা আমার সহ্য হচ্ছে না। এত্তো বড় একটা মেয়ে অথচ নিজের খেয়াল রাখতে পারছো না! নিজের ওড়নাটা পর্যন্ত সামলাতে পারো না তুমি!”

ফারিশের কথার জবাব দেয় না নিধি, সে চুপচাপ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। নিধিকে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ফারিশ নিজের গাড়িতে গিয়ে বসে। নিধি বাহিরে আর দাড়িয়ে না থেকে বাসায় চলে যায়। নিধি আঁধারে হারিয়ে যেতেই ফারিশ গাড়ি স্টার্ট দেয় নিজের গন্তব্যের দিকে যাওয়ার জন্য।
★★
নিধি ঘরে ডুকতেই দেখে তার মা তার জন্য খাবার টেবিলে বসে আছে। নিধি কে দেখতেই মলি বেগম এগিয়ে এসে বললেন,

“এতো দেরি হলো কেনো?”

নিধি তার মায়ের কথার জবাব না দিয়ে রুমে চলে যায়। মলি বেগম ও তার পিছন পিছন আসে।

“কিছু হয়েছে?”

“উফস মা, ভালো লাগছে না। একটু একা থাকতে দাও তো। এসেছি থেকে শুধু একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছো!”

নিধিকে এমন করে কথা বলতে দেখে মলি বেগম থমকে যান।

“যখন থাকবো না, তখন বুঝবি মা কি জিনিস।”

বলেই মলি বেগম চলে যান, নিধির তীব্র মাথা যন্ত্রণা করছে। কিছুই ভালো লাগছে না তার৷ নিধি কিছুক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু ঘুম এলো না। তাই সে উঠে তার মায়ের রুমে যায়। রুমের লাইট অন করে দেখে তার মা নামাজ পড়ছে। তাই সে বিছানায় বসে অপেক্ষা করছে নামাজ শেষ হওয়ার। মলি বেগম নামাজ পড়া শেষ করে জায়নামাজ গুছিয়ে রাখে টেবিলের উপর। নিধিকে নিজের রুমে দেখে তিনি অভিমানে অন্যদিকে তাকিয়ে যান। নিধি এসে মলি বেগম কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“অফিসে অনেক কাজের চাপ ছিলো, মাথা ঠিক ছিল না।”

মলি বেগম নিধির দিকে তাকিয়ে ভাঙা কন্ঠে বলল,

“সেটা বললেই হতো, খেয়ে নিবি চল।”

বলেই মলি বেগম নিধিকে টেনে নিয়ে খাবার টেবিলে বসিয়ে দেয়। মলি বেগম খাবারের প্লেট নিধির দিকে এগিয়ে দিতেই নিধি বলল,

“খাইয়ে দাও।”

মেয়ের আবদার ফেলতে পারলেন না মলি বেগম। তিনি সযত্নে মেয়ের মুখে খাবার তুলে দেন। খাবার খাওয়া শেষ করে নিধি তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলল,

“অনেকদিন পর মনে হলো আবার সেই ছোটবেলায় হারিয়ে গিয়েছি।”

মেয়ের কথা শুনে হাসেন মলি বেগম। তিনি নিধির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,

“যা ঘুমা, সকালে আবার অফিসে যেতে হবে।”

নিধি তার মায়ের কথা শুনে নিরস গলায় বলল,

“ঘুমানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু ঘুম আসছে না।”

“আমার রুমে আয়, মাথায় হাত বুলিয়ে দিবো। তাহলে ঘুম চলে আসবে।”

“আচ্ছা।”
**
অন্ধকার রুমে শুনশান নীরবতা। নিধি তার মায়ের মায়ের পাশে শুয়ে আছে। মলি বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

“আমাকে ছাড়া একা থাকতে পারবি নিধু?”

হঠাৎ মলি বেগমের একথা শুনে এক মূহুর্তের জন্য হৃদয় থমকে যায় নিধির। সে শোয়া থেকে উঠে বসে বলল,

“আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় মা, এসব কথা বোলো না। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। আমার পুরো পৃথিবী জুড়ে একমাত্র তুমিই তো রয়েছো।”

নিধির কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন মলি বেগম। তিনি মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“এসব বলতে নেই মা, চাইলেই কি সবাই সারাজীবন পাশে থাকতে পারে?”

মলি বেগমের কথা শুনে নিধি কান্না করে দেয়। সে ফোঁপাতে ফোপাঁতে বলল,

“আর একদম এসব বলবে না বলে দিলাম। বললাম তো এসব চিন্তাও করতে পারবো না আমি। তোমাকে একটু সুন্দর করে বাচিয়ে রাখার জন্য আমি এতো স্ট্রাগল করছি, সেই তুমি কিনা আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবছো!”

নিধির কথা শুনে হেসে ফেলল মলি বেগম। তিনি ঠোঁটের কোণে হাসি বজায় রেখে বলল,

“আরে পাগলী, আমি তো মজা করেছি। ঘুমা তো তুই।”

মায়ের কথা শুনে শান্ত হতে পারল না নিধি, সে ফোঁপাতে ফোপাঁতে তার মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। মলি বেগম মলিন চোখে মেয়ের কান্নাভেজা মুখের দিকে চেয়ে আছেন। কেনো যেনো তার মনে হচ্ছে আর বেশিক্ষণ তিনি টিকে থাকতে পারবেন না এখানে। তার বুকে তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে ।
★★
সকাল প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে, নিধি এখনো অফিসে এসে পৌছায়নি। এটা শুনে ফারিশের মেজাজ তুঙ্গে উঠে যায়। সে নিজের কেবিনে পায়চারি করছে, মনে মনে নিধির জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছে সে। সে ভেবে রেখেছে কালকে নিধি অফিসে আসলে তাকে বলে দিবে যেনো আর কোনোদিন অফিসে না আসে সে। তার চাকরি এখানেই সমাপ্ত।
এসব ভেবেও শান্তি পাচ্ছে না ফারিশ, মনে মনে অজানা কোনো দুশ্চিন্তার জন্য সে কাজে মন বসাতে পারছে না। মনে হচ্ছে তার খুব কাছের কেউ অনেক কষ্টে আছে। ফারিশ এসব আর ভাবতে পারল না, সে সব চিন্তা কে একপাশে রেখে মলি বেগমের নাম্বারে কল দেন। কয়েকবার ফোন দেওয়ার পরেও ফোন রিসিভ করল না কেউ। ফারিশ এবার বেশ চিন্তায় পড়ে যায়, মলি বেগম তো কোনোদিন এরকম করে না। সে ফোন করার সাথে সাথে কল রিসিভ করে তিনি। তাহলে এখন কি হয়েছে যে কল রিসিভ করছে না!
ফারিশ নিজের ফোনে তন্নতন্ন করে নিধির নাম্বার খুজে, কিন্তু পায় না। পরে সে নিধির কেবিনে গিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করার পর নিধির নাম্বার পায়। ফারিশ আর দেরি না করে নিধির নাম্বারে কল দেয়। কয়েকবার কল দেওয়ার পরও রিসিভ হয় না। ফারিশ এবার বেশ ধৈর্যহীন হয়ে পড়েছে। শেষ বারের মত নিধির নাম্বারে কল দিতেই অপর পাশ হতে কল রিসিভ হয়, কিন্তু ফোনের অপর পাশ হতে নিধির বদলে অন্য একটা মেয়ের কান্নাভেজা কন্ঠস্বর ভেসে আসে। মেয়েটার কথা শুনে ফারিশ পুরো হতভম্ব হয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। অজানা টেনশনে ফারিশের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে, সে আর দাড়িয়ে থাকতে পারলো না। তাড়াতাড়ি টেবিলের উপর থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে ফারিশ অফিস থেকে বের হয়ে যায়।

চলবে?

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে