শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-০৪

0
72

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_০৪

ফারিশ নিধির সামনে ফাইল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, এতে নিধি তীব্র অস্বস্তিতে পড়ে যায়। ফারিশ সেটা বুঝতে পেরেও একদৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে।

“স্যার, আজকের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে হবে বলেছিলেন। তাহলে এখানে আমাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন কেনো?”

নিধির কথা শুনে ফারিশের টনক নড়ে, সে কিছুটা ক্ষিপ্ত সুরে বলল,

“স্বামী তাকিয়ে আছে বলে অস্বস্তি লাগছে নাকি?”

ফারিশের কথা শুনে নিধি চমকে তার দিকে তাকায়! সে অবিশ্বাস্য চোখে ফারিশের পানে চেয়ে আছে। নিধি কে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফারিশ ফের বলল,

“বিয়ের আগে কার সাথে কথা বলেছো, নাকি বলোনি, কারো সাথে মিশেছো নাকি এড়িয়ে চলেছো সেটা তোমার ব্যাপার। কিন্তু এখন তোমার বিয়ে হয়েছে, এখন থেকে নিজের সীমার মধ্যে থাকবে।”

ফারিশের কথার মানে বুঝতে পারলো না নিধি, সে মলিন কন্ঠে বলল,

“আমি আবার কি করেছি? বিয়ের আগে কারো সাথে কোনো সম্পর্কে জড়াইনি, সেখানে কি করে বললেন বিয়ের পরে আমি কারো সাথে সম্পর্কে জড়াবো?”

নিধির কথা শুনে ফারিশ তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়, ফারিশ মুখে গাম্ভীর্য ধরে রেখে বলল,

“কথার মানে না বুঝে কথার জবাব দিবে না, ষ্টুপিড! যাও তো এখান থেকে।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল, পরক্ষণে ফারিশের কাছ থেকে ফাইল নিয়ে নিজের কেবিনে চলে যায় সে।
**
বৃষ্টিতে কাক ভেজা হয়ে বাড়িতে ফিরে ইকরা। সে রুমে এসে ভেজা কাপড় পরিবর্তন করে বেলকনিতে এসে দাড়ায়। বাহিরে এখনো বৃষ্টি হচ্ছে, ইকরা গ্রিলের ফাঁক দিয়ে দুই হাত বের করে বৃষ্টির পানি ছোঁয়ার চেষ্টা করে। ইকরার হাতে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ার সাথে সাথে সে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির দৃশ্যটাকে অনুভব করছে। সে চোখ বন্ধ করতেই তার চোখের সামনে সকালের সেই আগন্তুক যুবকটার চেহারা বেসে উঠে। ইকরা চমকে তাড়াতাড়ি চোখ মেলে ফেলে। ইকরার মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠল। ইকরা দুই হাতে তার মাথা চেপে মেঝেতে বসে পড়ল। হঠাৎ বেলকনিতে ইকরার ছোটবোন ইরা প্রবেশ করে। ইকরাকে এভাবে মাথা চেপে মেঝেতে বসে থাকতে দেখে ইরা দুষ্টু হেসে বলল,

“আরে শাঁকচুন্নি, নিচে বসে আছিস কেনো রে?”

এমনিতেই ইকরার মাথা যন্ত্রণা করছে, তার উপর আবার ইরার এসব কথা শুনে মেজাজ বিগড়ে যায় তার। সে মেঝে থেকে উঠে ইরার গালে চ’ড় বসিয়ে দিয়ে বলল,

“বে’য়াদব, তোর বড় হই না আমি? অ’সভ্য কোথাকার! বড়দের সম্মান করতে জানে না!”

বলেই ইকরা রেগে বেলকনি থেকে চলে যায়, এদিকে ইরা গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। মুহুর্তের মধ্যে কি ঘটে গেলো সেটাই বুঝার চেষ্টা করছে সে। ইরা বুঝতে পারল তার বোনের নিশ্চয় মন খারাপ, তাই সে আর বেলকনিতে না দাড়িয়ে থেকে তার বোনের কাছে চলে যায়।
**
বিকেল প্রায় সাড়ে চারটা বাজে, অফিসের সবাই বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, অথচ নিধির টেবিলের উপর এখনো একগাদা ফাইল জমা হয়ে আছে। সে বিরতিহীন ভাবে একনাগাড়ে ফাইল চেক করে যাচ্ছে। হঠাৎ করে নিধির ফোনটা বেজে উঠে, সে প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে তার বেস্টফ্রেন্ড ফোন করেছে তাকে। নিধি একবার টেবিলের উপর থাকা ফাইল গুলোকে পর্যবেক্ষণ করে নেয়, পরক্ষণে নিধি কল কেটে আবারো কাজে মন দেয়। ঠিক দুমিনিট না যেতেই ইকরা আবারো নিধি কে ভিডিও কল দেয়। নিধি এবার আর কল কেটে না দিয়ে কল রিসিভ করে পিছনের ক্যামেরা অন করে কয়েকটা ফাইলের সাথে হেলান দিয়ে মোবাইল রাখে। কল রিসিভ করতেই অপর পাশ হতে ইকরার অভিমানী কন্ঠস্বর বেসে আসে।

“অফিস তো ছুটি, এখন তো অন্তত কলটা না কাটলে পারতি!”

নিধি ফাইল পর্যবেক্ষণ করতে করতে বলল,

“আমি এখনো অফিসেই আছি, অফিসে কাজের চাপ অনেক। তাই কল কেটে দিয়েছি।”

“ওহ।”

ইকরার কথার জবাবে আর কিছু বলে না নিধি, দুজনেই চুপ করে আছে। হঠাৎ নিধি কে অবাক করে দিয়ে তার কেবিনে পিয়াসের আগমন ঘটে। ফোনে পিছনের ক্যামেরা অন থাকায় পিয়াস কে সবার আগে ইকরা দেখে। পিয়াস কে দেখে ইকরা ভেবেছে এটা হয়তো তার ভ্রম হতে পারে তাই সে আর এসবকে পাত্তা না দিয়ে বলল,

“তোকে কিছু বলার ছিল নিধু!”

নিধি ইকরার কথার জবাব না দিয়ে বলল,

“একটু লাইনে থাক তো।”

নিধির কথা শুনে চুপ করে যায় ইকরা। এদিকে নিধি পিয়াস কে দেখে বলল,

“কোনো দরকার আছে ভাইয়া?”

নিধির কথার কোনো জবাব দিতে পারলো না পিয়াস, সে কি ভেবে নিধির কেবিনে এসেছে সেটা সে ভুলে বসেছে। কিছু বলতে গিয়েও এলোমেলো কথাকে আর সাজাতে পারে না পিয়াস। পিয়াস কে চুপ করে থাকতে দেখে নিধি ফের বলল,

“কোনো সমস্যা হয়েছে ভাইয়া?”

নিধির কথা শুনে পিয়াস হাসার চেষ্টা করে বলল,

“না মানে, সবাই তো বাড়ি চলে গিয়েছে। তুমি যাবে না?”

পিয়াসের কথা শুনে নিধি নিরস গলায় মিনমিন করে বলল,

“আমার তো আর সেই সুযোগ নেই।”

নিধিকে বিড়বিড় করতে দেখে পিয়াস ফের বলল,

“যাবে না বাড়িতে?”

নিধি তার টেবিলের উপর থাকা ফাইল গুলো পিয়াস কে দেখিয়ে বলল,

“এই সব কাজ আজকের মধ্যে শেষ করতে হবে, কাজগুলো শেষ করেই যাবো।”

নিধির কথা শুনে পিয়াস অবাক হয়ে বলল,

“তুমি আজকের মধ্যে কিভাবে এতোগুলো কাজ করে শেষ করবে? এই কাজ করতে নিম্নে দুদিন লেগে যাবে।”

বলে থামল পিয়াস, নিধি অসহায় দৃষ্টিতে পিয়াসের দিকে তাকিয়ে বলল,

“স্যারের আদেশ বলে কথা, অমান্য করার সাধ্য কি আর আমার আছে?”

নিধির কথা শুনে চুপ করে যায় পিয়াস, সে কিছুক্ষণ ভেবে বলল,

“তুমি চাইলে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি।”

পিয়াসের কথা শুনে চমকে যায় নিধি, দুপুরে ফারিশের রাগারাগি যে পিয়াসকে নিয়েই ছিল সেটা নিধি বুঝতে পেরেছে পরে। তাই সে আর উটকো ঝামেলাতে না জড়ানোর জন্য বলল,

“সমস্যা নেই, আমি করে ফেলবো। আপনি বরং চলে যান।”
**
পুরো অফিস ছুটি হয়ে গিয়েছে, কয়েকজন কর্মচারী ছাড়া কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। পুরো অফিস জুড়ে শুনশান নীরবতা। ফারিশ নিজের ব্যাগ গুছিয়ে বের হয়ে যায় বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে। হঠাৎ করে নিধির কথা মনে পড়ে যায় তার, সে তো নিধি কে অনেকগুলো কাজ দিয়ে এসেছে! এসব কাজ করতে করতে তো রাত পার হবে যাবে! একা একটা মেয়ে কিভাবে রাতে বাড়িতে যাবে? এসব ভেবেই ফারিশের মনে নিধির জন্য অল্প একটু মায়া জন্মায়। সে আর বাহিরের দিকে না গিয়ে, নিধির কেবিনের দিকে যায়। ফারিশ দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতেই হতভম্ব হয়ে যায়। নিধি বসে বসে ফাইল চেক করছে, আর পিয়াস কেবিনের এককোনায় দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ ফারিশ কে নিধির কেবিনে দেখে ভড়কে যায় পিয়াস।

“অফিস ছুটি হয়েছে একঘন্টা হয়ে গেছে, তুই এখনো এখানে দাড়িয়ে কি করিস?”

ফারিশের কথার কি জবাব দিবে ভেবে পাচ্ছে না পিয়াস, সে ইনিয়েবিনিয়ে বলল,

“ নিধিকে দেখলাম এখনো বাড়ি যায়নি। তাই জিজ্ঞেস করতে এলাম বাড়িতে যাবে নাকি? তুই বাড়িতে যাবি না?”

পিয়াসের কথা শেষ হতেই পিয়াস গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“ জিজ্ঞেস করা শেষ হলে বাড়িতে যা।”

ফারিশের কথা শুনে পিয়াস যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে আবার দাঁড়িয়ে পড়ল। পিয়াস নিধির দিকে তাকিয়ে বলল,

“নিধি, তোমার যেতে তো মনে হচ্ছে রাত হবে। যেতে পারবে একা?”

পিয়াসের কথা শুনে চুপসে যায় নিধি, সে মনে মনে দোয়া করছে যেনো পিয়াস নামের ছেলেটা একটু চুপ করুক। এদিকে পিয়াসের কথা শুনে ফারিশের মেজাজ বিগড়ে যায়। সে নিজের রাগ কে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে শান্ত গলায় বলল,

“নিধি কে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ওর বর রয়েছে। তোকে এত টেনশন করতে হবে না।”

ফারিশের কথা শুনে হতভম্ব পিয়াস, নিধির হাসবেন্ড আছে? কিন্তু কি করে? মনে মনে ভাবছে পিয়াস। সে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে বলল,

“কিন্তু ওর তো বিয়ে হয়নি, বর কোত্থেকে আসবে? ওর বর কে?”

পিয়াসের কথা শুনে ফারিশ এবার আর নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। সে হুঙ্কার দিয়ে বলল,

“মেহরাব ফারিশ শিকদারের একমাত্র বউ মানহা ইসলাম নিধি। তাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তার বরই যথেষ্ট, বরের বন্ধুর কোনো প্রয়োজন নেই। আমার বউ অফিস থেকে দিনে যাবে নাকি মাঝরাতে যাবে সেটা আমার ব্যাপার!”

ফারিশের কথা শুনে পুরো হতভম্ব পিয়াস। ফারিশের বউ নিধি? কিন্তু কি করে? এসব নানান ভাবনার বেড়াজালে আঁটকে যাচ্ছে পিয়াস। এদিকে নিধি পুরো মূর্তির ন্যায় দাড়িয়ে আছে। তার কানে ফারিশের ❝আমার বউ❞ বলা কথাটা বারবার বাজছে শুধু!

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে