শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-০৩

0
82

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_০৩

মুখোমুখি দাড়িয়ে আছে নিধি আর ফারিশ, অনাকাঙ্ক্ষিত ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে ফারিশের সামনে থেকে সরে দাঁড়াল নিধি। ফারিশ একদৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে, তার প্রশ্নের জবাবের আশায়।

“কি হলো, কিছু জিজ্ঞেস করেছি তো নাকি?”

ফারিশের কথা শুনে মৃদু কেঁপে ওঠে নিধি, সে ইনিয়েবিনিয়ে বলল,

“একজনকে পছন্দ হয়েছে, তাকেই ভালোবেসে কালসাপ ডেকেছি আমি, তাতে আপনার সমস্যা কি?”

নিধির কথা শুনে মনটা বিষিয়ে উঠল নিমিষে। সে নিধির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

“ভালো হতো যদি তুমি নাটকে অভিনয় করতে, ষ্টুপিড কোথাকার। শুনো আমার একটা ফাইল তোমার কেবিনে রেখেছে পিয়াস, তাড়াতাড়ি খুজে দাও।”

ফারিশের কথা শেষ হতেই নিধি কাজে লেগে পড়ল ফারিশের ফাইলটা খোঁজার জন্য। ফারিশ এক ধ্যানে তাকিয়ে দেখছে নিজের সামনে থাকা চটপটে মেয়েটাকে।

“এই বোরিং মেয়েটা নাকি ড্যাডের পছন্দের পাত্রী, উফস! এই আনস্মার্ট মেয়েটা কে নাকি সারাজীবন সহ্য করতে হবে আমাকে! তবে মেয়েটার মধ্যে কিছু একটা আছে, যার জন্য মেয়েটা এখনো আমার সামনে টিকে আছে।”

কথাগুলো বিড়বিড় করে বলে চোখ বন্ধ করে ফারিশ।

“স্যার, এই নিন আপনার ফাইল।”

সবে চোখ বন্ধ করেছে ফারিশ, হঠাৎ নিধির কথা শুনে ভয় পেয়ে যায় ফারিশ, সে হকচকিয়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি নিধির হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে নিজের কেবিনের দিকে পা বাড়ায়।

বাহিরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে, পিয়াস একপ্রকার বৃষ্টির সাথে যুদ্ধ করে অফিসে এসে পৌঁছায়। অফিসে এসেই সে আর কোনোদিকে না তাকিয়ে ফারিশের কেবিনের দিকে ছুটে যায়। পিয়াস দরজা নক করে বলল,

“মে আই কাম ইন স্যার?”

দরজার সামনে পিয়াস কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ফারিশ অবাক হয়। সে ইশারায় পিয়াস কে ভিতরে আসতে বলে। পিয়াস ভিতরে এসেই উতলা হয়ে বলল,

“স্যরি স্যার, আসলে আমি ইচ্ছে করে লেট করিনি। বৃষ্টির কারণে দেরি হয়ে গেছে আমার।”

পিয়াসের কথা শুনে আশ্চর্য বনে যায় ফারিশ। পিয়াস কোনোদিন লেট করে আসে না, একদিন লেট করেছে বলে কি তাকে সে মেরে ফেলবে? সে তো শুধু নিধির সাথেই এটা নিয়ে রাগারাগি করে, কারণ নিধি সব সময় দেরি করে অফিসে আসে। ফারিশ পিয়াসের দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল,

“বোস এখানে, পানি খা।”

ফারিশের কথা শুনে পিয়াস পানির গ্লাস নিয়ে পানি খেয়ে চেয়ার টেনে বসে। পিয়াস উতলা হয়ে ফের বলল,

“আমার কি শাস্তি মাফ?”

পিয়াসের কথা শুনে ফারিশ এবার কিছুটা রেগে গিয়ে বলল,

“শা’লা ভীতুর ডিম, আমি কি তোকে খেয়ে ফেলবো নাকি? মেয়েদের মত ফ্যানফ্যান শুরু করে দিয়েছে কানের কাছে।”

ফারিশের কথা শুনে চুপসে যায় পিয়াস, গুরুগম্ভীর স্বভাবের বন্ধুর আচমকা এত নম্র গলায় কথা শুনে অবাক হয় পিয়াস। পিয়াস একবার ফারিশকে ভালো করে পরখ করে নেয়, যে ছেলেটার কাজের প্রতি অনীহা ছাড়া কিছুই দেখতো না পিয়াস, সেই ছেলেটার টেবিলের উপর নাকি এত্তোগুলো ফাইল পড়ে আছে। ফারিশ মনোযোগ দিয়ে ফাইলগুলো পর্যবেক্ষণ করতে ব্যাস্ত। প্রতিদিনকার মত অগোছালো ভাবে আজ অফিসে আসেনি সে, ফারিশকে আজকে অফিসের ড্রেস পরে আসতে দেখে অবাক হয় পিয়াস। অন্যদিনের মত বখাটেদের মত লাগছে না ফারিশকে, বরং আজ তাকে বেশ সুদর্শন লাগছে। হঠাৎ ফারিশ খেয়াল করল পিয়াস তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

“আজ পর্যন্ত কোনো মেয়েও আমার দিকে এত রোমান্টিক চোখে তাকায়নি, যতটা তুই ছেলে হয়ে তাকিয়ে আছিস! ব্যাপার কি বল তো, আমার মধ্যে আবার তোর কোনো প্রেমিকা টেমিকাকে দেখছিস না তো?”

ফারিশের কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় পিয়াস। সে ফারিশের থেকে চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকাতেই তার চোখের সামনে নিধির মুখটা বেসে উঠে।

“হায় আল্লাহ্, কি হচ্ছে কি আমার সাথে?”

পিয়াস কে আনমনে বিড়বিড় করতে দেখে ফারিশ তাকে ধমক দিয়ে বলল,

“তোকে ভূতে ধরছে মনে হচ্ছে, যা তো চোখের সামনে থেকে।”

ফারিশের কথা শুনে পিয়াস উঠে নিজের ডেস্কের দিকে চলে যায়। পিয়াস নিজের ডেস্কে গিয়ে বসে, কাজে মন বসছে না তার। বারবার শুধু নিধির কথা ভাবছে সে, কি অদ্ভুত ঝামেলায় পড়লো সে! এ কোন অনুভূতির বেড়াজালে আঁটকে যাচ্ছে সে? কেনো নিধির কথা ভাবছে সে? পিয়াস আর কিছু ভাবতে পারলো না, তীব্র মাথাব্যথা ঘিরে ধরে তাকে!
**
একটা ফাইল নিয়ে বসে আছে নিধি, ফাইলটার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না সে, এদিকে আবার সবগুলো কাজ আজকের মধ্যেই শেষ করতে হবে। ফাইলটা কি ফারিশ কে দেখাবে সে? ভাবতে ভাবতে আবার পিছিয়ে গেল নিধি, সে নানাবিধ ভাবনায় বিভোর হয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো পিয়াসের ডেস্কের দিকে, নিধিকে নিজের ডেস্কের সামনে দেখে চোখ তুলে তাকালো পিয়াস। নিজেকে সামলিয়ে পিয়াস বলল,

“কিছু হয়েছে নিধি? চিন্তিত লাগছে কেনো?”

পিয়াসের কথা শুনে নিধি নিরস গলায় বলল,

“এই ফাইলের মধ্যে থাকা কিছুই আমার মাথায় ডুকছে না, কিভাবে যে চেক করবো বুঝতে পারছি না৷ স্যারও রেগে আছে, তার জন্য আপনার কাছে এসেছি। যদি একটু বুঝিয়ে দিতেন!”

নিধির কথা শুনে মৃদু হাসে পিয়াস, সে নিধির হাত থেকে ফাইল নিয়ে বলল,

“কি বুঝছো না, বলো তো।”

নিধি পিয়াসের পাশে গিয়ে তাকে দেখাচ্ছে কোথায় তার সমস্যা হচ্ছে ফাইলটা চেক করতে। এদিকে পিয়াস সেদিকে না তাকিয়ে একদৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ পিয়াসের ডেস্কের সামনে ফারিশের আগমন ঘটে, পিয়াসের ডেস্কের সামনে দিয়ে বাহিরে যাচ্ছিল ফারিশ, নিধিকে পিয়াসের সাথে দেখে থেমে যায় সে। এদিকে পিয়াস দেখেনি ফারিশ যে তার ডেস্কের সামনে দাড়িয়ে আছে, সে তো নিধির দিকেই তাকিয়ে আছে। হঠাৎ নিধি অনুভব করল তার পাশে কেউ এসে দাড়িয়েছে। সে মাথা তুলে তাকাতেই হঠাৎ ফারিশকে দেখে ভয়ে শিউরে উঠে। নিধি ফারিশ কে দেখে তার হাতে থাকা ফাইল দেখিয়ে চট করে বলে বসল,

“আসলে আমি উনার কাছে এসেছি এটা একটু বুঝে নিতে।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ ভ্রু কুঁচকে তাকায় তার দিকে। সে চোখে সানগ্লাস পরতে পরতে বলল,

“কৈফিয়ত চেয়েছি আমি?”

ফারিশের কথা শুনে নিধিকে কিছু না বলতে দিয়ে পিয়াস দাঁত কেলিয়ে বলল,

“আরে নিধি, তুমি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছো স্যারকে।”

পিয়াসের কথা শুনে নিধি প্রাণহীন চোখে ফারিশের দিকে তাকায়। ফারিশ নিধির দিকে তাকিয়ে নরম গলায় শুধালো,

“আরে মিস নিধি, ছোটখাটো ব্যাপারে আপনার উনাকে কেনো বিরক্ত করতে হবে? আমি তো আছি, তাই আপনার উনাকে বিরক্ত না করে আমার কেবিনে আসুন। আমি আপনাকে A টু Z সবকিছু বুঝিয়ে দিবো।”

ফারিশের কথা শুনে চুপসে যায় নিধি, ফারিশ যে প্রতিটা কথা ঠেস মেরে মেরে বলেছে সেটা বুঝতে আর বাকি রইলো না নিধির, কিন্তু পিয়াস ছেলেটা বুঝতে পারলে না। সে তো আর জানে না নিধি আর ফারিশের মধ্যে একটা বন্ধন রয়েছে। ফারিশ আর বাহিরের দিকে না গিয়ে নিজের কেবিনের দিকে চলে যায়। এদিকে নিধি পড়লো মহা ঝামেলায়। বসের আদেশ অমান্য করতে না পেরে সেও ফারিশের পিছন পিছন তার কেবিনে যায়। ফারিশ নিধির হাত থেকে ফাইল টা কেড়ে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“অফিসে এসে দেখছি অনেকের সাথেই ভাব জমেছে!”

ফারিশের কথাটি শুনতেই চোখ তুলে তাকালো নিধি, ফারিশের দৃষ্টি গাঢ়, নির্নিমেষ। ফারিশ যে তাকে অপমান করেই এই কথা বলেছে সেটা আর বুঝতে বাকি রইল না নিধির, মনের অজান্তে তার চোখে অশ্রু রা এসে ভীড় জমায়। তার চোখ বেড়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ে, ফারিশের দৃষ্টি সেদিকে যেতেই সে নিধির হাত চেপে ধরে তাকে একদম নিজের কাছে নিয়ে এসে বলল,

“ন্যাকামির শেষ নেই আর। কিছু হলেই চোখে সমুদ্র তৈরি হয়ে যায়।”

বলেই ফারিশ একহাত বাড়িয়ে নিধির গাল স্পর্শ করে চোখের পানি মুছে দেয়। ফারিশের কাজে হৃৎস্পন্দন থমকে গেল নিধির।

চলবে?

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে