শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-২২ এবং শেষ পর্ব

0
74

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#হালিমা_চৌধুরী
#সিজন_২
#অন্তিম_পর্ব

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য ইকরাদের বাসার ছাদটা পুরো সাজানো হয়৷ ইকরা বেশ হাসিমুখে সেসব পর্যবেক্ষণ করছে। ইকরা কে এত স্বাভাবিক আচরণ করতে দেখে ফয়সাল মির্জা একটু অবাক হয়েছিলেন প্রথমে। পরক্ষণে তিনি সেসব ভাবনা বাদ দিয়ে কাজে মন দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিধি আর ফারিশ এসে উপস্থিত হয় সেখানে। তাদের কে মূলত ফয়সাল মির্জায় ইনভাইট করেছেন৷ শত হলেও নিধি তার মেয়ের একমাত্র বন্ধু বলে কথা! গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হতে হতে প্রায় ১২ টা বেজে যায়। সবাই হাসিমুখে ইকরার গালে হলুদ ছুঁয়ে দিচ্ছে।
**
রাত প্রায় ২ টা বাজে, ইকরার হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ হবে। সব রিলেটিভ যে যার মত ঘুমানোর জন্য রুমে চলে যায়। ফয়সাল মির্জা মেয়ের রুমের সামনে এসে দরজার কড়া নাড়ে। ইকরা তার বাবা কে দেখে হাসিমুখে ভেতরে আসতে বলে। রুমের মধ্যে নিধি,ফারিশ আর ইকরা আছে। ফয়সাল মির্জা তাদেরকে একবার ভালো করে পরখ করে বলল,

“ঘুমাচ্ছিস না যে?”

“এইতো ঘুমাবো, অনেকদিন পর নিধিকে কাছে পেয়েছি। বিয়ের পর আবার কোনদিন কাছে পাবো জানি না, তাই ইচ্ছেমতো আড্ডা দিয়ে নিচ্ছি আজকে।”

ইকরা কে বেশ হাসিখুশি দেখাচ্ছে। তা দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ল ফয়সাল মির্জা। তিনি মেয়ের রুম ছেড়ে যেতে নিতেই নিধি শুধালো,

“আঙ্কেল, কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম।”

নিধির কথা শুনে ফয়সাল মির্জা হাসিমুখে বলল,

”হ্যাঁ মা বলো।”

“আজকে ইকুর হলুদ ছিল, অথচ ছেলের বাড়ি থেকে কেউ আসেনি। ছেলের কোনো বন্ধুও তো আসেনি।”

নিধির কথা শুনে ফয়সাল মির্জা কিছুটা হকচকিয়ে যান।

”ছেলে এসে আর কি হবে? ছেলের বাড়ির লোকজন তো কালকে আসবে।”

নিধি ফের শুধালো,

”ছেলের বাবা মায়ের সাথে কথা হয়েছে?”

“ছেলের বাবা মা কেউ বেঁচে নেই, এই শহরে ছেলেটার কেউই নেই। ছেলেটা এতিম।”

ফয়সাল মির্জার কথা শুনে নিধি ক্ষিপ্ত গলায় শুধালো,

“ভুল আঙ্কেল, কয়দিন আগে যে ফারিশকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন। ফারিশের এই অবস্থা কে করেছে জানেন?”

”এসবের সাথে অয়নের কি কানেকশন?”

ফয়সাল মির্জার কথা শেষ হতেই ইকরা বলল,

“ওই অয়নই তো ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল এসব কিছুর সাথে। বাবা আমি অন্য একটা ছেলেকে ভালোবাসি। আমি ওই খু’নী অয়নকে বিয়ে করতে পারবো না।”

মেয়ের কথা শুনে ফয়সাল মির্জা থমকে যায়৷ বিষ্ময়ে তিনি কিছু বলতে পারলেন না আর। এর মধ্যেই নিধির ফোনটা বেজে ওঠে। নিধি ফোন হাতে নিয়ে দেখে একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। প্রথম বার নিধি কলটা রিসিভ করে না। দ্বিতীয় বার ফোন বেজে উঠতেই নিধি কল রিসিভ করে। নিধি কল রিসিভ করতেই অপাশ হতে ভেসে আসে অয়নের অসহায় কন্ঠস্বর,

“শুন নিধি, পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস। আমি আসলে ক্ষমা পাওয়ার যোগ্যই না। না জেনে আব্বার কথা শুনে তোর কতটা ক্ষতি করেছি আমি।”

কথাগুলো একদমে বলে থামে অয়ন। নিধির ফোনটা লাউডস্পিকারে দেওয়া ছিল। তাই উপস্থিত সবাই বেশ অবাক হয়ে যায় অয়নের বলা কথা গুলো শুনে। নিধি কিছু বলতে যাবে তার আগেই অয়ন ফের বলল,

“নিজের ভুলটা যখন বুঝতে পেরেছি তখন তা শুধরে নেওয়ার জন্য ভেবেছি আর তোর কোনো ক্ষতি করবো না। তোর আশেপাশেও যাবো না কোনোদিন। ইকরা কে আমার প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে গেছে। তাই ভেবেছি ওকে বিয়ে করে একটু সুখে থাকার চেষ্টা করবো। কিন্তু কথায় আছে না, পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না। তাই হয়েছে আমার সাথে। ইকরা আমাকে ফোন দিয়ে সব বলেছে, ও আমাকে বিয়ে করতে চায় না। অবশ্য বিয়ে করতে চাইবে কেনোই বা? ও তো অন্য কাউকে ভালোবাসে। তাছাড়া আমার মত একটা মাস্তান কে ও কেনোই বা বিয়ে করবে! যাইহোক, আমি দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস। আমার পরিবারও আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, ইচ্ছে করছে মরে যাই। ক্ষমা করে দিস আমায়৷ আর ইকরা কে দেখে রাখিস, ওকে সত্যিই বিয়ে করতে চেয়েছিলাম৷”

বলেই কল কেটে দেয় অয়ন। উপস্থিত সবাই অয়নের কথা শুনে থমকে যায়। অয়নের কথা শুনে ফয়সাল মির্জার মাথায় হাত। তিনি অসহায় কন্ঠে বলে উঠল,

“এ কি হয়ে গেলো! কালকে বিয়ে টা না হলে আমার যে মান সম্মান কিছুই থাকবে না। আমি কি করে মেয়ের জামাই নির্বাচন করতে এতবড় ভুল করে বসলাম!”

নিধির চোখের কোনে অশ্রুরা এসে ভীড় জমায়। শত হলেও তো অয়ন তাদেরই রক্তের। তাই অয়নের জন্য একটু খারাপ লাগছে তার। ফারিশ তা বুঝতে পেরে নিধির কাঁধে হাত রেখে তাকে ইশারায় বুঝায় মন খারাপ না করতে।

“মান সম্মান যাবে কেনো বাবা? তুমি যদি বলো আমি এই মূহুর্তে তোমার জামাই কে তুলে নিয়ে আসবো?”

ইকরার কথা শুনে ফয়সাল মির্জা তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। নিধি ইকরার কথার সাথে সায় মিলিয়ে বলল,

”আঙ্কেল, ইকরা যাকে ভালোবাসে আপনি চাইলে তার সাথেই ওর বিয়ে দিতে পারেন।”

”ছেলেটা কে? কি করে?”

ফারিশ বলল,

“ছেলেটা অনেক ভালো। আমার অফিসের ম্যানেজার ও। আপনি হাসপাতালে দেখেছেন ওকে, ওর নাম পিয়াস।”

ফয়সাল মির্জা কিছুক্ষণ ভেবে বললেন,

“মেয়ে সুখে থাকলে আমার কোনো আপত্তি নেই।”

ইকরার বাবার কথা শুনে সবাই জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে খুশিতে।
★★
শুক্রবার, বিকাল ৪ টা বাজে,
ইকরা-পিয়াসের বিয়ে সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। পিয়াস বউ নিয়ে নিজের ফ্ল্যাটেই উঠেছে। আর নিধিরা অনুষ্ঠান শেষ করে নিজেদের বাসায় চলে আসে। নিধি ভেনিটির সামনে দাড়িয়ে চুল বাঁধছিল। হুট করে ফারিশ এসে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“মাথা ব্যথা করছে বউ।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি চিন্তিত গলায় শুধায়,

“একি, মাথা ব্যথা করছে কেনো? মেডিসিন খেয়েছেন?”

নিধিকে এত চিন্তিত হতে দেখে ফারিশ তাকে আরো নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলল,

“বাড়ির পাশে একটা ছোট লেক আছে, চলো না ওখানে যাই। সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে ওখানে গেলে।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি হেসে ফেলল।

“ওহ তাহলে মাথা ব্যথার কারণ এটাই? চলুন তাহলে।”
.

ঘাসের উপর বসে লেকের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে নিধি। বিকেলের শেষ সময়, সূর্য প্রায় ডুবুডুবু অবস্থায়। নিধির কোলে মাথা রেখে ফারিশ ঘাসের উপর পা মেলে শুয়ে আছে। নিধি ফারিশের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

“ফারিশ।”

ফারিশ অকপটে জবাব দিলে,

“হু।”

“আপনি না শেষ বিকেলের মতোই সুন্দর। বিকেলের শেষ সময়টা এত্তো সুন্দর কেনো? আপনি পাশে আছেন বলে?”

ফারিশ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,

“তোমার আমার প্রেম টা শেষ বিকেলের মতোই সুন্দর। এটার নাম দেওয়া যায় #শেষ_বিকেলের_প্রণয়। আমার জীবনের বাকিটা পথ আমি তোমার সঙ্গেই পাড়ি দিতে চাই।নিধি, কখনো চেয়ে যেও না আমাকে। তোমাকে কাছে পেয়ে আমি নিজেকে আবার নতুন করে গড়ে তুলতে পেরেছি। তুমি যদি কখনো আমাকে ছেড়ে চলে যাও তো আমি মরেই যাবো।”

“এমন কথা কক্ষনও বলবেন না। আর একবার একথা বললে কিন্তু নিজের হাতেই খু’ন করে ফেলবো আপনাকে। বিয়ে করেছি কি আপনাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য নাকি? আপনি ছেড়ে চলে যেতে চাইলেও আমি জোর করে রেখে দিবো আপনাকে। সারাজীবন আপনার সাথে কাটাতে চাই আমি।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ হেসে ফেলে। সে নিধির কোল থেকে মাথা তুলে উঠে বসে নিধির কপালে চুমু খায়। নিধিও পরম আবেশে ফারিশকে জড়িয়ে ধরে।

❝সমাপ্ত❞

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে