#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_২১
বৃহস্পতিবার। পাখির কিচিরমিচির ডাক শুনে ঘুম ভেঙে যায় নিধির। নিধি চোখ মেলে তাকাতেই তার সামনে ফারিশের ঘুমন্ত চেহারাটা স্পষ্ট হয়ে উঠে। সে একদৃষ্টিতে ফারিশের ঘুমন্ত চেহারাটার দিকে চেয়ে আছে। ফারিশের এলোমেলো চুলগুলো কপালে এসে লুটোপুটি খাচ্ছে। নিধি নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে ফারিশের চুলগুলো ঠিক করে দেয়। সে ফারিশের কপালে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে বিছানা থেকে নামে। নিধি যেতে নিতেই ফারিশ তার হাত ধরে টান দিয়ে তাকে আবার বিছানায় ফেলে দেয়। ফারিশের কাজে নিধি হতভম্ব হয়ে যায়। নিধি কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারিশ তার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলল,
”হুসস, এখন বোলো না যে তুমি আমাকে ইচ্ছে করে চুমু খাওনি,আমি সব জানি। তুমি আমার সাথে এমনটা করতে পারলে বউ? আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে তুমি আমাকে চুমু খেতে পারলে?”
ফারিশের কথা শুনে নিধি বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে ফারিশ কে ইশারায় নিজের ঠোঁট থেকে আঙুল সরাতে বলে। ফারিশ তা বুঝতে পেরে সরে আসে। এতে যেনো নিধি হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। সে বিছানা থেকে উঠে বসে বিস্তর শ্বাস ঝেড়ে বলল,
“আপনি আসলে একটা অভদ্র! আমার বর কে আমি চুমু দিয়েছি, তাতে আপনার কি? আজব!”
বলেই নিধি রুম ছেড়ে চলে যায়। আর ফারিশ নিধির কথা শুনে মিটমিট করে হাসতে থাকে।
**
ইকরা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে পিয়াস কে একের পর এক কল দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কল রিসিভ করার কোনো নামগন্ধ নেই পিয়াসের। ইকরা শেষে অধৈর্য হয়ে নিধি কে কল দেয়। কয়েকবার রিং হওয়ার পর কল রিসিভ করে নিধি। কল রিসিভ করতেই অপাশ হতে ভেসে আসে নিধির হুঙ্কার,
“এই তুই পিয়াস ভাইকে পছন্দ করিস, আমাকে তা বললে আমি কি তোরে মে’রে ফেলতাম? ছিহহহ, তুই আমারে বন্ধুই ভাবিস না। কি পাপ করলাম জীবনে যে তোর মতো একটা শয়তান বন্ধু পেলাম জীবনে। আমার তো মরে যাওয়া উচিত রে!”
একদমে কথাগুলো বলে থামে নিধি। সে থামতেই ইকরা কান্নাভেজা কন্ঠে বলল,
“কিছু শুরু হওয়ার আগেই সবকিছু শেষ রে নিধু। আমি আর এসব নিতে পারছি না। ইচ্ছে করছে ম’রে যাই। বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। আর ওইদিকে যেই জনাব কে আমি পছন্দ করি তার কোনো হদিসও নেই।”
ইকরার কথা শুনে নিধি একটু চুপ থেকে বলল,
“কে বলেছে পিয়াস ভাই এর খবর নেই? উনি তোর জন্য আরো বেশি চিন্তা করছে। ছেলেদের কখনো কাঁদতে দেখেছিস? দেখিসনি জানি, কিন্তু কালকে পিয়াস ভাই উনাকে ফোন দিয়ে কেঁদে কেঁদে বলেছিল তোর যে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। বিশ্বাস কর পিয়াস ভাইয়ের এই অবস্থা দেখে খুব হাসি পাচ্ছিল আমাদের।”
নিধির কথা শুনে কান্না থেমে যায় ইকরার। সে একটু অবাক হয়ে বলল,
“কি বলিস? ও কাঁদছিল আমার জন্য? কিন্তু কেনো? ও তো আমাকে আর পছন্দ করে না? আর তোরা এসব নিয়ে মজা নিচ্ছিস?”
নিধি হৃষ্ট চিত্তে শুধালো,
”হয়তো ভালোবেসে ফেলেছে। এত ভাবছিস কেনো?”
নিধির কথা শুনে ইকরা অসহায় কন্ঠে বলল,
”অবশ্য এখন ভালোবেসেই বা কি লাভ! আমার বাপ তো ওই অয়নের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে। অথচ ছেলেটা কে আমি ভালো করে চিনিও না। ওকে যদি আমার সত্যিই বিয়ে করতে হয় না তাহলে আমি সু”ইসাইড করবো বলে দিলাম।”
ইকরার কথা শুনে নিধি আঁতকে উঠে। সে বলল,
“এসব উল্টাপাল্টা কথা বললে থা’প্পড় দিয়ে গালের সবকটা দাঁত ফেলে দিবো৷ তোর বন্ধু এখনো মরে যায়নি যে তোকে এখন নিজের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে৷ আর শুন ছেলেটার নাম কি বলেছিস যেনো? ওহ হ্যাঁ, অয়ন! ওর একটা পিক পাঠিয়ে দে৷ আর তোদের বাড়িতে কি কি ইভেন্ট হচ্ছে তা বলে দিস। আর শুন, একদম মুখ গোমড়া করে বসে থাকবি না। ইন্জয় কর অনুষ্ঠান টা,আর আমার উপর বিশ্বাস রাখ।”
একদমে কথাগুলো বলে থামে নিধি। নিধির কথা শুনে ইকরা একটু ভরসা খুঁজে পেলো। সে কল কেটে অয়নের একটা পিক নিধির হোয়াটসঅ্যাপে সেন্ড করে দেয়।
★★
নিধি, ফারিশ আর পিয়াস ড্রয়িং রুমে বসে আছে। ফারিশ রাগে গজগজ করছে সোফার এককোনে বসে। ফারিশের রাগের কারণ জানে না পিয়াস। তাই সে ভয়ে ভয়ে নিধি কে জিজ্ঞেস করল,
“ও এমন অজগরের মতো গজগজ করছে কেনো নিধি?”
পিয়াসের কথা শুনে নিধি তার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“ইকরা তার বরের পিক পাঠিয়েছে। দেখবেন?”
“হ্যাঁ নিশ্চয় দেখবো, যে কোন হতভাগা ছেলে এরকম বকবকে একটা মেয়েকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে আছে। কিন্তু ফারিশের রাগের কারণ কি?”
পিয়াসের কথার উত্তর না দিয়ে নিধি নিজের ফোন পিয়াসের দিকে দিয়ে বলল,
”দেখুন।”
পিয়াস নিধির ফোনের স্কিনের দিকে তাকায়। সে মুখে কিছুটা হাসি এনে বলল,
“আরে এ তো ওইদিনের ইকরার সাথের ছেলেটা। তাহলে এর সাথেই তোমার বন্ধুর বিয়ে হচ্ছে!”
পিয়াসের কথা শুনে নিধি তার কপাল চাপড়ে শুধালো,
“আরে আমার কাজিন অয়ন। ওই তো ইকুর হবু বর।”
নিধির কথা শুনে পিয়াস চেঁচিয়ে বলল,
“কিহহহহ্!”
পিয়াস থেমে ফের শুধায়,
“কিন্তু নিধি, তোমার বন্ধুর হবু বর তো আমি। তুমি কিভাবে ওই অয়ন শ্লা কে তোমার বন্ধুর হবু বর বলতে পারলে?”
পিয়াসের কথা শুনে এই সিচুয়েশনেও নিধি হো হো করে হেসে দেয়। ফারিশ এতক্ষণে মুখ খুলল,
“তুই যদি সত্যিকারে আমার বন্ধু পিয়াস হয়ে থাকিস তাহলে ওই কুলাঙ্গারের সামনে থেকে নিজের হবু বউ কে তুলে নিয়ে আয়। যা, এবার অন্তত আমার মানসম্মান টা রাখ ভাই, ওরে আমি সামনে পেলে খু’ন করবো। আমার বউয়ের পিছনে ঘুরা বাদ দিয়ে এখন আমার শালির পিছনে পড়েছে এই ব্যাটা!”
ফারিশের কথা শুনে পিয়াস ভয়ে চুপসে গিয়ে বলল,
”আমি একা কিভাবে পারবো? তোদেরও তো হেল্প চাই।”
পিয়াসের কথা শুনে ফারিশ নিজের দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“শ্লা, ভীতুর ডিম কোথাকার! তুই সত্যি মেহরাব ফারিশ শিকদারের বেস্টফ্রেন্ড? আমার তো এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, আমার বন্ধু তো এতটাও ভীতু ছিল না কখনো!”
পিয়াস ফারিশের করা অপমান গুলো অসহায় চোখে হজম করে বলল,
“এসব মেয়েলি ব্যাপার স্যাপার আমি বুঝি না বাপু। যদি বলতিস, যা অমুক মা’স্তান কে তুলে আন, তমুক কে গিয়ে খু’ন করে আয় তাহলে আমি সাথে সাথে তা করে ফেলতাম। এসব মেয়েলি ব্যাপারে আমার প্রচন্ড ভয় জানিস না?”
পিয়াসের কথা শুনে ফারিশ চোখ রাঙিয়ে বলল,
“কিহ্! তুই মেয়েদের ভয় পাস?”
“তা নয়তো কি? মেয়ে প্রেমিকা রুপে ডাইনি, আর বউ রুপে দজ্জাল, শাঁকচুন্নি, দানবী সবকিছু।”
পিয়াসের ভীতু কথা বার্তা শুনে ফারিশ তাকে ধমক দিয়ে বলল,
“চুপ থাক, মেয়েদের কে ভয় পায়? ওরা কি বাঘ নাকি ভাল্লুক? আমি কি তোর ভাবি কে ভয় পাই? এই নিধি আমি কি তোমাকে ভয় পাই বলো তো?”
শেষের কথা টা ফারিশ নিধির দিকে চেয়ে বলল। কিন্তু নিধি তার সব আশার মধ্যে জল ঢেলে দিয়ে তাকে ধমক দিয়ে বলল,
“আপনি চুপ করবেন ফারিশ? সেই কখন থেকে পিয়াস ভাই এর পিছনে পড়েছেন। বেচারা এমনিতেই কষ্টে আছে। আমাদের এখন সবকিছু একসাথে করতে হবে।”
নিধির ধমক খেয়ে ফারিশ নিজের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বুঝায়, সে আর কিছু বলবে না। তা দেখে নিধি হেসে বললো,
“শুনুন সবাই, ওই অয়ন কে তো একটা শিক্ষা দিতেই হবে। তার আগে আমাদের ইকরা কে রক্ষা করতে হবে। আমি একটা প্ল্যান করেছি, যার নাম ❝বউ চুরি❞।”
নিধির কথা শুনে পিয়াস আর ফারিশ দুজনেই তার দিকে অবাক চিত্তে তাকায়। পিয়াস আর ফারিশের রিয়াকশন দেখে নিধি হেসে বলল,
“ আজ্ঞে হ্যাঁ, আপনারা যা ভাবছেন তাই। এখন হাত মিলান সবাই।”
বলেই নিধি নিজের একহাত সামনে বাড়িয়ে দেয়। ফারিশ আর পিয়াসও হাসিমুখে নিজেদের হাত বাড়িয়ে দেয়।
চলবে?