#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_২০
মসজিদের ইমাম, অয়ন সহ তারা ইকরাদের বাসায় বসে আছে। ফয়সাল মির্জা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন সোফায়। মসজিদের ইমাম মূলত ইকরার নামে নালিশ দিতে এসেছে তাদের বাসায়।
“ফয়সাল সাহেব, আপনার মেয়ে রাস্তাঘাটে ন’ষ্টামি করে বেড়ায়। আপনি কি নিজের মেয়ের একটু খোঁজও রাখতে পারেন না নাকি?”
ইমামের কথা শুনে ফয়সাল সাহেব লজ্জায় মাথা নোয়াল। তিনি মাথা নিচু করেই বললেন,
“দেখুন ছোট মানুষ, ওর ভুল হয়ে গেছে। আমি ওকে সাবধান করে দিবো এসব যাতে আর কখনো না করে। আপনি প্লিজ ওকে মাফ করে দিন।”
ফয়সাল মির্জার কথা শুনে ইমাম সাহেব কিছুক্ষণ ভাবলেন। তিনি ছোট শ্বাস ফেলে বলল,
“এরকম মেয়েকে এলাকাতে রাখলে আমাদেরই ক্ষতি। আজ ও করেছে ওসব। কাল আরেকজন করবে। এরকম করে আমাদের বাচ্চা রা কি শিখবে? আপনি যতদ্রুত সম্ভব আপনার মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিন।”
ইমাম সাহেবের কথা শুনে নিধি হতবুদ্ধি হয়ে কপাল কুঁচকালো। সে কিছু বলবে তার আগেই অয়ন চট করে বলে বসল,
“আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন প্লিজ। আসলে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি। আমরা খুব শিগগিরই বিয়ে করবো।”
অয়নের কথা শুনে ইকরা হতভম্ব হয়ে যায়। সে কিছু বলতে নিবে তার আগেই তার বাবা তাকে ইশারায় চুপ করতে বলেন।
“তাহলে তো হলোই, ফয়সাল সাহেব, আপনি দ্রুত আপনার মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করুন। আমরা দাড়িয়ে থেকে আপনার মেয়ের বিয়ে দিবো।”
ইমাম সাহেবের কথা শুনে অয়ন মুচকি হেসে বলল,
“আপনি যা বলবেন তাই হবে।”
অয়নের কথা শুনে মুচকি হেসে তাদের কে বিদায় দিয়ে চলে যায় ইমাম সাহেব। ইমাম চলে যেতেই ইকরা ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। তা দেখে অয়ন তাকে সামলাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।
“উনার কথায় তুমি কিছু মনে কোরো না ইকরা। যেভাবেই হোক না কেনো, আমাদের বিয়ে টা তো ঠিক হয়ে গেছে। তুমি আপাতত আমাদের বিয়ে নিয়ে ভাবো।”
অয়নের সাথে ফয়সাল মির্জাও সায় দিয়ে বলল,
“হ্যাঁ মা, অনেক হয়েছে। তুই এবার বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নে।”
ফয়সাল মির্জার কথা শুনে ইকরা অবাক চিত্তে তার দিকে তাকায়।
“তুমি একটা ছেলে কে চিনো না, কোথাকার কে কি বললো না বললো তুমি সেসব বিশ্বাস করে এখন তার সাথে আমার বিয়ে দিবে?”
ইকরার কথা শুনে হাসেন ফয়সাল মির্জা।
“তোকে কে বলেছে আমি অয়ন কে চিনি না? তোর থেকেও আমি ভালো করে অয়নকে চিনি। ওর সঙ্গে আমার আগেই কথা হয়ে গেছে। যাকগে সেসব তোকে ভাবতে হবে না।”
ইকরা তার বাবার কথা শুনে চেঁচিয়ে বলল,
“কিন্তু বাবা, আমি বিয়ে করতে চাই না।”
“আমি কি তোর মতামত জানতে চেয়েছি?”
বলে ফয়সাল মির্জা অয়নের দিকে তাকিয়ে ফের শুধালো,
“তুমি নিশ্চিন্তে বিয়ের আয়োজন করতে পারো। বিয়ে শুক্রবারেই হচ্ছে।”
ফয়সাল মির্জার কথা শুনে অয়ন হাসিমুখে তাদের বিদায় দিয়ে চলে যায়। ইকরা রেগে কান্না করতে করতে রুমে চলে যায়।
**
রাত প্রায় ১০ টা বাজে,
নিধি গুটিগুটি পায়ে হেঁটে ছাদে প্রবেশ করে। ছাদে এসে নিধি ভয়ে আঁতকে উঠে। পুরো ছাদ অন্ধকার হয়ে আছে। সন্ধ্যায় ফারিশ নিধির হাতে একটা নীল রঙের শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল রাত দশটায় ছাদে চলে আসতে৷ নিধি আর কি করবে, ফারিশের কথামত শাড়ি পরে ছাদে চলে এসেছে। কিন্তু কোথাও ফারিশ কে দেখতে পাচ্ছে না সে। হঠাৎ একটা অবয়বের শীতল একজোড়া হাত এসে নিধির কোমর জড়িয়ে ধরে তাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। অকস্মাৎ আক্রমণে নিধি ভয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে। ফারিশ আগের ন্যায় নিধিকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে তার ঘাড়ে নিজের মুখ গুঁজে বলল,
“ভয় পাচ্ছো কেনো জান?”
নিধি এখনো ভয়ে কাঁপছে। সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
“ভেবেছিলাম ভূত এসেছে।”
নিধির ভয়ার্ত চেহারা আর তার বোকা বোকা কথা শুনে ফারিশ হো হো করে হাসতে থাকে৷ সে নিজের হাসি থামিয়ে বলল,
“মেহরাব ফারিশ শিকদার তার বউ এর আশেপাশে ভূত কেনো একটা মশাকেও ঘেঁষতে দিবে না। মেহরাব নিধি শিকদারের সবটা জুড়ে শুধু এই বখাটে বাউণ্ডুলেটারই অস্তিত্ব থাকুক। আর কারো নয়।”
“অথচ একটু আগেও একটা মশা এসে আমাকে কামড়ে গেছে৷”
নিধির কথা শুনে ফারিশ অসহায় কন্ঠে বলল,
“তুমি তো আমাকে সুযোগ দেও না তোমাকে কিস করার জন্য। তাই দূর থেকে মশাকে দিয়ে উড়ন্ত চুমু পাঠিয়েছি তোমার জন্য। তাই আমার কথামতো মশাটা এসে তোমাকে কিস করে গেছে।”
ফারিশের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায় নিধি। সে ফারিশের কথা শুনে হাসবে নাকি কাঁদবে তা ভুলে গেছে।
“আপনাকে সুযোগ দেওয়া লাগে? হুটহাট এসেই তো চুমু খান, অসভ্যের মত।”
“তুমি আমাকে অসভ্য বলতে পারলে বউ?”
“বলতে পারবো না কেনো? আপনি সব করতে পারবেন, আর আমি বললেই দো..”
নিধি পুরো কথাটা সমাপ্ত করতে পারে না, তার আগেই ফারিশ নিধির ঠোঁটজোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেয়। হঠাৎ ফারিশের করা কাজে নিধি থমকে যায়। পরক্ষণে ফারিশের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকে সে। ফারিশ নিধি কে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে আসে। ফারিশের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে নিধি হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। সে কিছুটা চেঁচিয়ে বলল,
“আপনি, আপনি একটা অভদ্র।”
নিধির কথা শুনে ফারিশ ঠোঁটে বাঁকা হাসি বজায় রেখে বলল,
“অসভ্য বলবে, আর অসভ্যর মত কাজ করলেই দোষ? এ কোন দুনিয়ায় বসবাস করছি আমি!”
“চুপ থাকুন আপনি, ড্রামা কুইন কোথাকার।”
”কুইন হবে না বউ, ড্রামা কিং হবে।”
“ওই একই তো।”
“এক নয় বউ, এখানে আমার ইজ্জতের উপর প্রশ্ন তুলেছো তুমি। এটা আমি কিভাবে মেনে নিবো?”
“আচ্ছা ভাই৷ ড্রামা কিং, হয়েছে?”
বলেই নিধি অভিমানে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়। ফারিশের আর বুঝতে বাকি নেই তার বউজান যে তার উপর রেগে গিয়েছে। ফারিশ ছাদের লাইট অন করে নিধির সামনে এসে দাড়ায়। সে হাতে একটা রিং নিয়ে নিধির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
“বউ, হুটহাট তোমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়ার মত স্বাধীনতা চাই আমি। তীব্র মন খারাপের সময় তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই৷ জ্বরের ঘোরে তোমার উষ্ণতায় নিজেকে মুড়িয়ে নিতে চাই আমি। এসব মেনে কি তুমি এই অভদ্র কে নিজের করে নিবে? ভালোবাসবে আমায়?”
ফারিশের প্রপোজ করার স্টাইল দেখে ফিক করে হেসে ফেলল নিধি। সে ফারিশের দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“বিয়ে যখন হয়েই গেলো, তখন অভদ্রটা কে তো মেনে নিতেই হবে।”
নিধির কথা শুনে ফারিশ মুচকি হাসে। সে নিধির আঙুলে রিং পরিয়ে চুমু খায় তাতে।
“শাড়িতে প্রথম দেখলাম তোমাকে। একদম বউ বউ লাগছে তোমাকে। ইচ্ছে করছে…..। ”
বাকিটা বলে না ফারিশ, সে থেমে যায়। তা দেখে নিধি বলল,
“থেমে গেলেন যে?”
“বলবো না, তুমি লজ্জা পাবে।”
ফারিশের কথার প্রতিত্তোরে নিধি আর কিছু বলে না। সে ফারিশের একবাহু জড়িয়ে ধরে আকাশের পানে চেয়ে বলল,
“আজকে আকাশের চাঁদটা একটু বেশিই সুন্দর তাই না?”
“আকাশের চাঁদের চেয়ে আমার ব্যাক্তিগত চাঁদ টা বেশি সুন্দরী। তোমার সৌন্দর্যের কাছে ওই দূর আকাশের চাঁদ টা তো কিছুই না।”
বলেই ফারিশ নিধিকে নিজের কাছে টেনে নেয়। ফারিশ নিধির কপালে নিজের ঠোঁট ছোঁয়াতে নিতেই তার পকেটে থাকা ফোনটা বেজে ওঠে।
“রোমান্টিক মূহুর্তে কোন শালা রে কল দিলো! ওর নামে তো মামলা করতে হবে।”
বলতে বলতে ফারিশ নিজের পকেট হাতড়ে ফোন বের করে। পিয়াস কল করেছে দেখে ফারিশ একটু অবাক হয়। তাই সে আর দেরি না করে কল রিসিভ করে বলল,
“আপনাকে মেডেল দেওয়া উচিত মিস্টার পিয়াস।”
ফোনের অপর পাশ হতে পিয়াস শান্ত কন্ঠে বলল,
“কেনো? কি দোষ করলাম আমি?”
“বিয়ের পর বুঝবি, যাই হোক কল করেছিস কেনো?”
“ শুক্রবারে ইকরার বিয়ে।”
অয়নের অসহায় কন্ঠে বলা কথাটি শুনে ফারিশ হতভম্ব কন্ঠে বলল,
“হোয়াট!”
চলবে?