#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_০২
নিধি গুটিগুটি পায়ে হেঁটে ফারিশের কেবিনের সামনে আসে। কেবিনের দরজা খোলাই ছিলো, তাই নিধি আর সাত-পাঁচ না ভেবেই রুমে ডুকে পড়ে। নিধিকে অনুমতি না নিয়ে তার কেবিনে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায় ফারিশ। সে কিছুটা রুষ্ট সুরে বলল,
“বিয়ে হতে না হতেই সব নিয়ম-কানুন ভুলে গিয়েছো নাকি? এটা বাড়ি নয় অফিস তোমার জানা নেই?”
ফারিশের কথা বুঝতে না পেরে নিধি তার দিকে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে। নিধিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফারিশ আবারো আগের ন্যায় বলল,
“এটা কি তোমার বেডরুম পেয়েছো নাকি? যে অনুমতি না নিয়েই ডুকে গিয়েছো?”
নিজের করা ভুল বুঝতে পেরে নিধি নিচের দিকে তাকিয়ে নিভু সুরে বলল,
“স্যরি স্যার, আর এমন ভুল হবে না।”
“স্যরি মাই ফুট! স্যরি বললেই কি সব অপরাধ ক্ষমা করে দিবো নাকি? ষ্টুপিড কোথাকার, কোনো কমনসেন্স নেই! বসের সাথে কেমন করে চলতে হয় সেটা আবার নতুন করে শিখাতে হবে!”
ফারিশের ধমক খেয়ে ভয়ে কেঁপে ওঠে নিধি, সে আগের ন্যায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
“বসো এখানে।”
ফারিশের কথা শুনে চমকে যায় নিধি, দ্বিধাদ্বন্দ্ব তার চেহারায় মিশে আছে। নিধি তো ভেবেছে এখন ফারিশ রেগেমেগে তাকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করে দেওয়ার হুমকি দিবে, তা না করে এতো আপ্যায়ন করছে কেনো সেটাই ভাবছে নিধি!
“কি হলো বসতে বলেছি তো, কানে শুনো না নাকি?”
ফারিশের ধমক শুনে নিধি তাড়াতাড়ি চেয়ার টেনে ফারিশের মুখোমুখি বসে। ফারিশ হাতে কলম নিয়ে ভাবুক ভঙ্গিতে বলল,
“এতো লেট হয়েছে কেনো অফিসে আসতে?”
“স্যার আপনি জানেন না কেনো লেট হয়েছে?”
নিধির কথা শুনে ফারিশ ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার জানার কথা বুঝি? এতো প্রশ্ন না করে যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটার উত্তর দাও।”
ফারিশের কথা শুনে নিধি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে, তারপর মুখে দুষ্টু হাসি বজায় রেখে বলল,
“জানেন স্যার, আজকে আমি বাসা থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে কোত্থেকে একটা শয়তান লোকের গাড়ি এসে হাজির হয় আমার সাথে, কিছু বুঝে উঠার আগেই বখাটেটা তার গাড়ি এত্তো জোরে চালিয়ে চলে গেছে যে, রাস্তার সব কাদা পানি আমার গায়ে এসে পড়ে, এতে আমার জামাটা পুরো নষ্ট হয়ে গেছে।”
নিধির কথা শুনে ফারিশ অবাক চিত্তে তার দিকে তাকায়, মেয়েটা তাকে বখাটে বলল! এত বড় সাহস তার!
“কন্ট্রোল ফারিশ, কন্ট্রোল। মেয়েটা তো আর তোকে শয়তান, বখাটে বলেনি। আর মেয়েটা তো জানে না তুই গাড়ির ভিতরে চিলি।”
ফারিশ কে নিজের মনে বিড়বিড় করতে দেখে নিধি ঠোঁট টিপে হাসে। নিধিকে হাসতে দেখে ফারিশ তাকে জোর গলায় শুধালো,
“লজ্জা করছে না বসের সামনে দাঁত বের করে হাসছো যে?”
ফারিশের কথা শুনে নিধির মুখ থেকে হাসি গায়েব হয়ে যায়। নিধি আর বসে না থেকে চেয়ার থেকে উঠে বলল,
“স্যার, অনেকক্ষণ হয়েছে ডেকেছেন, কিন্তু কোনো কাজের কথাই তো বলছেন না!”
**
মাঝরাস্তায় ঝড়ো বর্ষণের মুখে পড়ল ইকরা, সে ভিজে পুরো টইটম্বুর হয়ে গেছে। আশেপাশে কোনো বাড়ি বা দোকানও নেই যে একটু দাড়াবে সে। হঠাৎ একটা যুবক এসে ইকরার মাথার উপর ছাতা মেলে ধরে। আচমকা এমন কান্ডে হতভম্ব হয়ে যায় ইকরা। অচেনা একটা ছেলের সাথে একই ছাতার নিচে দাড়িয়ে থাকতে ইকরা অসস্থিবোধ করছে। ইকরা চোখ তুলে ছেলেটার দিকে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়। ইকরা তাড়াতাড়ি নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আরে চিনি না জানি না, হুট করে কোত্থেকে উদয় হলেন আপনি?”
ইকরার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায় পিয়াস, সে তো শুধু মেয়েটাকে সাহায্যই করতে চেয়েছে।
“আপনি তো ভিজে যাচ্ছেন, তাই আপনাকে একটু সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। ভিজে গেলে তো অসুস্থ হয়ে যাবেন আপনি, তারজন্য আরকি!”
পিয়াসের কথা শুনে ইকরা তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়,
“অচেনা মেয়ের জন্য এত মায়া কেনো ভাই? আমার এমন সাহায্য লাগবে না।”
ইকরার কথা শুনে পিয়াস হাসার চেষ্টা করে বলল,
“ওহ, সাহায্য লাগবে না আপনার, আগে বলবেন তো। আচ্ছা যাই তাহলে আমি।”
বলেই পিয়াস ছাতা নিয়ে নিজের গন্তব্যের দিকে রওনা হয়। এদিকে ইকরা পুরো বোকা বনে যায় ছেলেটার কাজে, সে তো একটু ভাব নিতে চাচ্ছিল। আর এতেই ছেলেটা চলে গেলো!
“উফস, ইকরা তুই যে কেনো এত ভাব নিতে যাস কে জানে! এখন ভিজ আবার বসে বসে!”
ইকরা নিজের মনে বিড়বিড় করতে করতে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে দৌড়ে সামনে যেতে লাগল।
★★
“কাজের কথা বলবো নাকি প্রেমালাপ করবো সেটা কি এখন তোমার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে করতে হবে নাকি?”
ফারিশের কথা শুনে নিধি চট করে বলে বসল,
“আমাকে বলবেন কেনো? আপনি তো কোনোদিন কাজের ব্যাপারে কথা ছাড়া অন্যকিছু বলতেন না, তাই বললাম আরকি, স্যরি।”
নিধির কথা শুনে ফারিশ চোখ বন্ধ করে শ্বাস নেয়, এই মেয়েটা সামনে থাকলে কেমন এলোমেলো হয়ে যায় সে। আগে থেকে ভেবে রাখে কত কথা শুনাবে, কিন্তু নিধি সামনে এলে মুখ থেকে আর কোনো কঠিন কথা বের হতে চায় না তার।
“আজকের মত ক্ষমা করলাম, আর কোনোদিন যদি লেট হয় তোমার, তাহলে একদম চাকরি থেকে বের করে দিবো বলে দিলাম।”
ফারিশের কথা শুনে নিধি মুখ ভেঙচিয়ে বলল,
“শয়তান, পারেই তো শুধু হুমকি দিতে।”
“কিছু বলেছো?”
“স্যরি স্যার, আর কিছু বলবো না।”
নিধির কথার আগামাথা বুঝতে না পেরে ফারিশ বলল,
“পাগল হয়ে গেছো নাকি? সকাল থেকে স্যরি কয়বার বলেছো হিসেব আছে?”
“স্যরি স্য.. না মানে, সকালে ওই বাউণ্ডুলে ছেলেটাকে দেখে দিন শুরু হয়েছে তো, তাই দিনটাই খারাপ যাচ্ছে আমার।”
নিধির কথা শুনে ফারিশ কিছুটা রেগে গিয়ে বলল,
“ছেলেটা তোমার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছে যে তুমি তাকে এত বকছো! ষ্টুপিড, যাও তো এখান থেকে।”
ফারিশের কথা শুনে ঠোঁট টিপে হাসে নিধি, সে আর দাড়িয়ে না থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
“এই শুনো।”
ফারিশের কথা শুনে থেমে যায় নিধি, মনে পড়ে যায় সকালে ফারিশের বলা ❝চু’মু খাবো, তাই ডেকেছি❞ কথাটা। তার মানে ফারিশ এখন তাকে…। আর কিছু ভাবতে পারলো না নিধি, লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যায় সে।
“কি হলো মিস স্যরি? ডেকেছি আমি, এভাবে মূর্তির মত দাড়িয়ে থাকতে বলিনি।”
ফারিশের কথা শুনে ধ্যান ভাঙ্গে নিধির, সে ফারিশের দিকে তাকিয়ে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে তার সামনে গিয়ে দাড়ায়।
“আমার নাম স্যরি কে বলেছে আপনাকে?”
ফারিশ নিধির কথার জবাব না দিয়ে বলল,
“কালকে অফিসে আসোনি, কালকের সব ফাইল জমা হয়ে আছে তোমার টেবিলে, আজকের সব ফাইলও পড়ে আছে। সব আজকের মধ্যে কমপ্লিট করে ফেলবে, নাহলে চাকরি থেকে বের করে দিবো বলে দিলাম।”
ফারিশের কথা শুনে নিধি চট করে বলে বসল,
“একদিনের মধ্যে কিভাবে এতোগুলা ফাইল দেখবো আমি? সব ফাইল দেখতে নিম্নে দুইদিন লাগবে!”
নিধির কথা শুনে ফারিশ তাকে একটা ধমক দিয়ে বলে,
“যা করতে বলেছি তাই করো। ষ্টুপিড।”
ফারিশের কথা শুনে মন খারাপ হয়ে যায় নিধির, কোথায় ভেবেছে ফারিশ তাকে…। আর কিছু ভাবতে পারলো না নিধি, নিজের ভাবনার কাছে নিজেই লজ্জা পায় সে। সে কিভাবে ফারিশের কাছ থেকে এসব আশা করেছে! সে ফারিশ কে বকতে বকতে তার কেবিন থেকে বের হয়ে নিজের কেবিনে এসে বসে। নিধি একবার টেবিলের উপর থাকা ফাইল গুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে নেয়।
“শা’লার শয়তান লোক, চু’মু দিবে বলে তার কাছে নিয়ে কত্তো গুলো কাজ ধরিয়ে দিলো। দুনিয়াতে মানবতা বলতে কিছু বেঁচে নেই রে নিধি, কিছু বেঁচে নেই। চারদিকে সব শুধু কালসাপের আনাগোনা, কিছু বললেই ছোবল মারবে এমন ভাবে ফোঁস করে উঠে খ’চ্চরটা।”
“কালসাপটা দেখতে কি আমার মত মিস স্যরি?”
হঠাৎ পুরুষালি কন্ঠস্বর শুনে নিধি হতভম্ব হয়ে যায়। সে পিছনে তাকিয়ে দেখে ফারিশ দাঁড়িয়ে আছে। মুহুর্তের মধ্যেই নিজের বলা প্রথম কথাগুলো মনে করে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যায় নিধি। একি বলে ফেলেছে সে, এখন লোকটা তাকে কি ভাববে! ছি ছি! ভাবতে ভাবতে নিধির ইচ্ছে করছে মাটি খুঁড়ে মাটির তলায় পালিয়ে যেতে। কিন্তু আফসোস, অফিসে তো আর মাটি নেই!
চলবে?