#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_১৯
বিকেল বেলা,
নিধি ফারিশদের বাসার সামনের বাগানটা ঘুরে ঘুরে দেখছে।
“তোমার সাথে কিছু কথা ছিল নিধি।”
হঠাৎ পুরুষালি কন্ঠস্বর শুনে নিধি চমকে পিছনে ঘুরে তাকায়। নিধি নিজের সামনে পিয়াস কে দেখে একটু অবাক হয়।
“কি কথা? বলুন।”
“এখানেই বলবো? ফারিশও থাকলে হতো আরকি।”
পিয়াসের কথা বুঝতে পেরে নিধি তাকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে যায়। পিয়াসকে ড্রয়িং রুমে বসতে বলে নিধি রুমে যায় ফারিশ কে ডাকতে।
নিধি রুমে এসে দেখে ফারিশ ঘুমাচ্ছে। নিধি কয়েকবার ডাকার পরেও তার ঘুম ভাঙে না। শেষে নিধি আর কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে পাশে থাকা টি-টেবিলের উপর থেকে পানি নিয়ে কিছুটা পানি ফারিশের মুখে ছুঁড়ে মারে সে। নিধির করা কাজে ফারিশের ঘুম মূহুর্তের মধ্যেই পালিয়ে যায়। সে নিজের মাথা থেকে পানি মুছতে মুছতে নিধিকে ধমক দিয়ে বলল,
“কি হচ্ছে টা কি?”
ফারিশের কথা শুনে নিধি সিরিয়াস হওয়ার ভাণ করে বলল,
“অনেক কিছু হয়ে গেছে বর।”
ফারিশ বুঝে গেছে নিধি যে তার সাথে মজা করেছে। তাই সে বিছানার পাশে থাকা টি-টেবিলের ওপর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে নিধির মাথায় ঢেলে দেয় পুরো গ্লাসেে পানি। ফারিশের কাজে নিধি পুরো হতভম্ব হয়ে যায়। সে চেঁচিয়ে বলল,
“আরে বিছানা পুরো ভিজে গেছে। আপনি কি পাগল নাকি ফারিশ? এখন রাতে আমি ঘুমাবো কি করে?”
ফারিশ নিধির দিকে কিছুটা ঝুঁকে গিয়ে বলল,
“নারী-পুরুষের সমান অধিকার এটা কি তুমি ভুলে গেছো বউজান?”
ফারিশের কথা শুনে নিধি গাল ফুলিয়ে বলল,
“এই ক্ষেত্রে সমান অধিকারের কথা আসছে কেনো?”
“আমি মনে করি সবদিক দিয়েই নারী পুরুষের সমান অধিকার হওয়া উচিত। প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষেত্রেও।”
ফারিশের কথা শুনে নিধি ঠোঁট বাকিয়ে বলল,
“ আপনি যদি কোনো স্কুলের টিচার হতেন তাহলে আপনার স্টুডেন্টদের ভবিষ্যৎ ব্ল্যাক কালার হতো। ভাঙ্গ্যিস টিচার না হয়ে আমার বর হয়েছেন। নাহলে দেশের স্টুডেন্ট গুলোর যে কি হতো কে জানে!”
নিধির কথা শুনে ফারিশ হো হো করে হাসতে থাকে। তা দেখে নিধি ফের বলল,
“পিয়াস ভাইয়া এসেছে, কিছু কথা বলার আছে নাকি। তাই ডাকতে এসেছি আপনাকে। নাহলে আমার অতো ইচ্ছে ছিল না আপনাকে ডাকতে আসার।”
নিধির কথা শুনে ফারিশের হাসি থেমে যায়। ফারিশ নিধির কাছে কিছুটা এগিয়ে আসতে নিতেই নিধি আচমকা ছুট লাগালো। নিধির কাজে ফারিশ হতভম্ব হয়ে যায়। সে চেঁচিয়ে বলল,
“কোথায় আর যাবে তুমি বউজান, রাতে তো সেই আমার বুকেই তোমাকে ফিরতে হবে। যেমনটা পাখিরা তার নীড়ে ফিরে সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বেই।”
কিন্তু কে শুনে কার কথা, নিধি তো মুহূর্তের মধ্যেই ছুটে পালিয়ে গেছে। তাকে আর ভাগে পায় কে!
***
পিয়াস ড্রয়িং রুমে বসে বসে ফোন টিপছে। ফারিশ কে সেখানে আসতে দেখে সে কিছুটা নড়েচড়ে বসে। ফারিশ পিয়াসের কাছে এগিয়ে এসে তার পিঠে আলতো থাপ্পড় দিয়ে বলল,
”কিরে, ভুলেই তো গিয়েছিস। হুট করে এলি বললি না তো।”
ফারিশের কথা শুনে পিয়াস হেসে বলল,
“তোকে ভুলি কি করে, জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত টা নেওয়ার আগে তোর বাড়ি এলাম চলে এলাম।”
পিয়াসের কথা শুনে ফারিশের পূর্ণ দুষ্টি ঘুরে এলো তার উপর। সে বেশ আগ্রহ নিয়ে বলল,
”কি হয়েছে বল, আমি তো শুনার জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছি না।”
ফারিশের কথা শুনে পিয়াস অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলতে শুরু করল,
“একটা মেয়ে, যে কি না আমাকে ভালোবাসে। সে সোজা বিয়ে করতে চায়। সে আমাকে প্রপোজ করেছে। এখন কি করা উচিত আমার?”
”কি আর করবি? রাজি হয়ে যা, বিয়ের দাওয়াত পাই না অনেকদিন হলো।”
ফারিশদের কথার মাঝে নিধি এসে উপস্থিত হয় সেখানে। সেও যোগ দেয় তাদের কথার মধ্যে।
“ফারিশ আমি মজা করছি না, সিরিয়াসলি বলছি। কি করবো আমি?”
পিয়াসের কথা শুনে ফারিশ সিরিয়াস হয় এবার। সে পিয়াস কে ভালো করে একবার পরখ করে নিয়ে বলল,
”নিজের মনের কথা শুন এক্ষেত্রে। জীবনসঙ্গী বানাতে অন্যের মতামত কে গুরত্ব না দিয়ে নিজের মন কি বলে সেটাকে গুরত্ব দেওয়া উচিত। ওই মেয়েটার ক্ষেত্রে তোর মন কি বলছে?”
ফারিশের কথা শুনে পিয়াস চট করে বলে বসল,
”মেয়েটা ভালো, কিন্তু আমি কি তার যোগ্য?”
”মেয়েটার বাড়ি কোথায়?”
ফারিশের প্রশ্নে পিয়াস নিধির দিকে কিছুটা ভয়ে তাকিয়ে বলল,
“তুই চিনিস ওকে, নিধির ফ্রেন্ড ইকরা।”
পিয়াসের কথা শুনে নিধি চেঁচিয়ে বলল,
“কিইইই? ইকরা আপনাকে প্রপোজ করেছে! কই ওই হারামি তো আমাকে কিছু বলেনি।”
নিধিকে এত স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে দেখে পিয়াস কিছুটা অবাক হয়।
“আমি ঠিক করেছি হ্যাঁ বলে দিবো উনাকে। আর কতকাল একা থাকবো আমি। কিন্তু সমস্যা হলো, আমার বাবা মা কেউ নেই, বোনেরও বিয়ে হয়ে গেছে। এমন একটা পরিবারে কে মেয়ে বিয়ে দিবে?”
পিয়াসের কথা শুনে ফারিশ তার মাথায় গাট্টা দিয়ে বলল,
“দিবে না কেনো রে? আমার বন্ধুর কি কম যোগ্যতা নাকি? দেখতে হ্যান্ডসাম, কোনোদিক দিয়ে কেউ তোকে হারাতে পারবে না।”
ফারিশের কথা শুনে পিয়াস মাথা চুলকে বলল,
”বেশি হয়ে যাচ্ছে না?”
নিধি পিয়াস কে থামিয়ে বলল,
“কিচ্ছু বেশি হচ্ছে না, আমরা যাবো ইকরার বাড়িতে আপনার বিয়ের সম্মন্ধ নিয়ে।”
এসব নানারকম কথা নিয়ে ❝সুখনিবাসে❞ আড্ডা চলতে থাকে তাদের।
★★
সূর্য প্রায় ডুবুডুবু অবস্থা। চারিদিকে মাগরিবের আজানের কলধ্বনি শোনা যাচ্ছে। ইকরা বিষন্ন হৃদয় নিয়ে বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়। সে ছটফট করছে পিয়াসের কথা ভেবে। সে কি আদৌও রাজি হবে নাকি তাকে রিজেক্ট করবে এসব ভেবে। হঠাৎ তার নজর পড়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটা বাইকের উপর। বাইকে বসে ছেলেটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ইকরা সেদিকে তাকাতেই ছেলেটা তাকে ইশারায় হাই দেয়। ইকরা ভ্রু কুঁচকে ছেলেটার দিকে ভালো করে তাকাতেই আঁতকে উঠে সে। বাইকের ছেলেটা আর কেউ নয় স্বয়ং অয়ন দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। সে অয়নের দিকে আবারো তাকায়, অয়ন তাকে ইশারায় বাসার নিচে আসতে বলে। ইকরা কি করবে ভেবে না পেয়ে বাসার নিচে যায়। ইকরা কে আসতে দেখে অয়ন তার দিকে এগিয়ে এসে হাসি মুখে বলল,
“কেমন আছো ইকরা?”
ইকরা তেজী কন্ঠে শুধালো,
”কি চাই এখানে? কেনো এসেছেন এখানে?”
ইকরার কথা শুনে অয়ন মুচকি হেসে বলল,
“যদি বলি তোমাকে চাই, তবে তুমি হবে কি আমার?”
অয়নের কথা শুনে ইকরা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কিসব আবোলতাবোল বকছেন? ঠিক করে বলবেন কি হয়েছে?”
ইকরার কথা শুনে অয়ন তার দিকে নেশালো চোখে তাকিয়ে বলল,
“ পৃথিবীর সবকিছু বুঝে নারী, কিন্তু পুরুষের মনের কথা বুঝতে পারে না এরা।”
“কোন কবি বলেছে এটা ভাই? আমি তো সারাজীবন শুনে এসেছি ছেলেদের মনে কি আছে না আছে এসব মেয়েরা তাদের চোখের দিকে তাকালেই বুঝে যায়।”
ইকরার কথা শুনে অয়ন নিজের মাথা চুলকে বলল,
“অতো কিছু জানি না, আমার ক্ষেত্রে এটা ভিন্ন এটা জানি।”
”আপনার সাথে কথা বলে কাজ নেই। এই ভরসন্ধ্যা বেলা এখানে কি করছেন আপনি?”
অয়নের সোজাসাপটা স্বীকারোক্তি,
“চাঁদ দেখতে এসেছি।”
অয়নের কথা শুনে ইকরা তার দিকে বোকা চোখে তাকিয়ে বলল,
“আপনাদের আকাশে কি চাঁদ উঠে না নাকি? কি সব অদ্ভুত কথা বলছেন এসব!”
ইকরা ফের বলল,
“যাইহোক, এই ভরসন্ধ্যা বেলায় আমাকে কেউ এখানে দেখলে সমস্যা হয়ে যাবে। আপনি চাঁদ দেখেন, আমি গেলাম।”
বলে ইকরা চলে যেতে নিতেই অয়ন পিছন থেকে তার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে ইকরাকে। এতে ইকরা অপ্রস্তুত হয়ে যায় কিছুটা। পরক্ষণে কি হয়েছে তা বুঝতে পেরে অয়নের থেকে ছুটার চেষ্টা করে সে। ইকরা কিছু বলবে তার আগেই কেউ একজন বলে উঠল,
“ভরসন্ধ্যা বেলায় যুবক-যুবতী মেয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছো। বাসায় গিয়ে করতে পারো না এসব। নাকি বাসার কেউ জানে না এসব নষ্টামির কথা?”
আকস্মিক কারো মুখে এসব কড়া কথা গুলো শুনে হতভম্ব চোখে সামনে তাকায় ইকরা। মসজিদের ইমাম দাঁড়িয়ে আছে তাদের সামনে। অজানা এক ভয় এসে ঘিরে ধরে ইকরাকে।
চলবে?