শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-১৭

0
144

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_১৭

সকালের মিষ্টি আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় নিধির। নিধি চোখ মেলতেই তার সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠল একটি মায়াবী মুখ। সুঠাম দেহের শ্যামবর্ণ পুরুষের মুখের দিকে তাকাতেই একরাশ মুগ্ধতা এসে ঘিরে ধরে তাকে। অকস্মাৎ ফারিশ চোখ মেলে নিধির দিকে তাকাতেই সে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। নিধিকে এভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফারিশ প্রশস্ত হেসে বলল,

“এভাবে তাকিও না বউ, প্রেমে পড়ে যাবে।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি চোখ বুজে একটা নিশ্বাস ছাড়ল। তারপর বলল,

“ছাড়ুন।”

বলে নিধি উঠতে নিতেই ফারিশ তার একবাহু চেপে ধরল। ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি টেনে ফারিশ বলল,

“এত পালাই পালাই করো কেনো বউ? একটু ভালোবাসলে কি হয়?”

ফারিশের কথা শুনে নিধি তার দিকে অবাক চিত্তে তাকায়। সে আমতা আমতা করে ফারিশ কে বলল,

“ছাড়ুন এখন।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ গম্ভীর চোখে নিধির দিকে তাকায়, কিন্তু কন্ঠ স্বাভাবিক করে বলল,

“যাও।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি বিছানা থেকে নামতে উদ্যত হয়েও থেমে গেল। সে পিছন ঘুরে ফারিশের গালে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছুয়ে দেয়। নিধির কাজে চমকে উঠল ফারিশ। সে থরথর করে কাঁপতে থাকে। ফারিশের এই অবস্থা দেখে নিধি খিলখিল করে হাসতে থাকে। সে বলল,

“এখনই এই অবস্থা, আর বাকি… থাক বললাম না।”

বলেই নিধি বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হতে চলে যায়। আর ফারিশ আশ্চর্য চোখে নিধির যাওয়ার পানে চেয়ে আছে।
**
সকাল এগারোটা,
বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে, ইকরা কফি হাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিমুখর দৃশ্যটা উপভোগ করছে। সে বাহিরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
ইকরাদের ফ্ল্যাট ছয়তলাতে, আশেপাশে সব ছোট-বড় বিল্ডিং দেখা যাচ্ছে বেলকনি থেকে। তারমধ্যে অদূরে একটা ছাদের দৃশ্য তার নজর কাড়ে। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে ছাদে বৃষ্টি বিলাস করছে। হঠাৎ জোরে বিদ্যুৎ চমকাতেই মেয়েটা ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে। নিজের অজান্তেই ইকরা ওই দুজন ছেলে-মেয়ের জায়গায় তাকে আর পিয়াশ কে কল্পনা করে।

পিয়াস তার সামনেই দাড়িয়ে, দুজন একে অপরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। বৃষ্টিতে ভিজে পিয়াসের চুল থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে। ইকরা সেই দৃশ্য গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। হঠাৎ পিয়াস ইকরা কে নিজের কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে। ইকরা পিয়াস কে কিছু বলার আগেই কেউ একজন বলে উঠল,

“এমন মূর্তির মত দাড়িয়ে আছিস কেন! আমি তো ভয় পেয়ে গেছি একদম।”

ফয়সাল মির্জার কথা শুনে হুশ ফিরে ইকরার। নিজের কল্পনায় পিয়াস কে নিয়ে এতটা মগ্ন ছিল যে আশেপাশের সবকিছু ভুলে বসেছে সে।

“কিরে, কথা বলছিস না কেনো?”

ফয়সাল মির্জার কথা শুনে ইকরা অপ্রস্তুত কন্ঠে বলল,

“হু? হ্যাঁ বলো শুনছি তো।”

ফয়সাল মির্জা মেয়ের দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বললেন,

“ডাল মে কুচ কালা হে।”

ফয়সাল মির্জার কথা শুনে বিরক্ত হয় ইকরা। সে কিছুটা উগ্র কন্ঠে বলল,

“কিসব উল্টাপাল্টা বকছো তুমি!”

“এই যে এতক্ষণ মুচকি মুচকি হাসছিলি, তারপর ডাকার পরেও সাড়া দিচ্ছিলি না। এসবের মানে কি হু?”

ফয়সাল মির্জার কথার জবাব দিতে পারে না সে। ইকরা কে অস্বস্তিতে পড়ে যেতে দেখে ফয়সাল মির্জা ফের বলল,

“আচ্ছা যাই আমি। থাক তাহলে।”

বলেই ফয়সাল মির্জা বেলকনি ত্যাগ করে চলে যায়। ইকরার বাবা চলে যেতেই হাঁপ ছেড়ে বাঁচে সে। তার বাবা যদি জানে তার মেয়ে পিয়াসের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে তাহলে তো পিয়াস কে টুকরো টুকরো করে নদীতে বাসিয়ে দিবেন তিনি।
ইকরা বুঝতে পেরেছে পিয়াস যে তার উপর রেগে আছে কোনো একটা ব্যাপার নিয়ে। তাই সে ঠিক করেছে আজকেই পিয়াসের কাছে ক্ষমা চাইবে সে। তাই ইকরা কাবার্ড থেকে একটা জামদানী শাড়ি বের করে পরে, আর হালকা একটু সেজে নেয় সে। বাহিরে বৃষ্টি থেমেছে, তাই ইকরা রাস্তায় এসে দাড়ায়। কিন্তু কোথায় যাবে সেটাই ভাবছে সে। পিয়াস এই মূহুর্ত কোথায় আছে ভাবতে ভাবতেই ওদের অফিসের কথা মনে পড়ে ইকরার। তাই ইকরা আর দেরি না করে একটা রিক্সা ডেকে তাতে উঠে পড়ে পিয়াসের অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্য।

নিধি রান্নাঘরে, সকালের নাস্তা বানাতে ব্যাস্ত। নিধি কে অবাক করে দিয়ে রান্নাঘরে ফারিশের আগমন ঘটে। ফারিশ কে দেখে নিধির তখনকার ঘটনাটা মনে পড়ে যায়। সে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে যায়। নিধিকে লজ্জা পেতে দেখে ফারিশ ঠোঁটে শয়তানির হাসি ফুটিয়ে বলল,

“উফস লজ্জা পাবে না তো তুমি! আমাকে খু’ন তো করেই ফেলেছো, এখন আর কি চাই তোমার?”

ফারিশের কথা শুনে নিধি তার দিকে অবাক চিত্তে তাকায়। সে বোকার মত ফারিশকে প্রশ্ন করে বসল,

“আমি আপনাকে কখন খু’ন করলাম?”

নিধির কথা শুনে ফারিশ নিজের আঙুল নিধির চোখের দিকে তাক করে নেশালো কন্ঠে বলল,

“তোমার ওই আঁখিদুটি খু’ন করেছে আমায়। এর শাস্তি তো পেতেই হবে তোমাকে।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি কিছুটা পিছিয়ে যায়। সে থেমে থেমে বলল,

“ক..কি শাস্তি?”

“আমাকে আমরণ ভালোবাসতে হবে। কখনো ছেড়ে যেতে পারবে না। আমার প্রণয়ের হাতকড়া পরিয়ে তোমাকে আমার ব্যাক্তিগত জেলে ঠায় দিতে চাই৷”

শেষ কথাটা ফারিশ নিজের বুকে হাত চেপে বলল। নিধি নিস্পৃহ, কোনো কথা নেই তার মুখে। তাই ফারিশ ফের বলল,

“এটাই তোমার শাস্তি। এতে তুমি রাজি না থাকলেও তোমাকে শাস্তি পেতেই হবে। তোমাকে জোর করে হলেও আমি রাখবো। তবুও অন্য কারো হতে দিবো না।”

বলেই ফারিশ একটা গহনার বাক্স এগিয়ে দেয় নিধির দিকে। নিধি অবাক চিত্তে ফারিশের দিকে তাকাতেই সে ইশারায় বাক্সটা খুলতে বলে তাকে। নিধি বাক্সটা খুলতেই দেখতে পায় তাতে একজোড়া সোনার বালা চকচক করছে। ফারিশ নিধির হাত থেকে বালা জোড়া নিয়ে সযত্নে তাকে পরিয়ে দেয়। তারপর নিধির কপালে নিজের ঠোঁট ছুয়ে দেয় সে৷ এতে নিধি লজ্জায় ফারিশের বুকে মুখ গুঁজে বলল,

“জেল টা যদি হয় আপনার বুক, তাহলে সেখানে আজীবন আমার ঠায় হোক। আমি সারাজীবন এই শাস্তিটা পেতে চাই।”

**
আকাশে মেঘেরা গুড়ুম গুড়ুম করছে। পুরো শহরটা অন্ধকার হয়ে গেছে। যেকোনো সময় জোরে বৃষ্টি নামতে পারে এই শহরের বুকে।
ইকরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। সে এখন ঠিক কোথায় যাবে ভেবে পাচ্ছে না। এদিকে বৃষ্টিও শুরু হবে বলে। চারিদকে প্রচন্ড বাতাস হচ্ছে, ইকরার বুকের দিকের শাড়ির আঁচলের পিনটাও কোথায় যেনো খুঁলে পড়ে গেছে। তীব্র বাতাসে শরীরে শাড়ির আঁচল জড়িয়ে রাখতে কষ্ট হচ্ছে ইকরার। হঠাৎ জোরে বাতাস বইতেই তার শাড়ির আঁচল সরে যেতে নিতেই কেউ একজন তা সযত্নে ধরে ফেলে। ইকরার সামনে থাকা ব্যক্তিটি তাকে ক্ষিপ্ত গলায় শুধালো,

“আঁচলে পিন লাগাতে পারেন না? আর এরকম ওয়েদারে কেউ বাসা থেকে বের হয়? তাও আবার সে যদি হয় আপনার মত কেয়ারলেস শাড়ি পরিহিতা রমনী।”

নিজের সামনে পিয়াস কে দেখে থমকে যায় ইকরা। তার বুকে তোলপাড় শুরু হয় পিয়াস কে নিজের এত কাছে দেখে। ইকরা কে চুপ করে থাকতে দেখে পিয়াস ইকরার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল,

“আরে বাপের আদরের রাজকন্যা কই হারায়ে গেলেন আপনি?”

পিয়াসের কথা শুনে হুঁশ ফিরে ইকরার। সে কিছু বলতে নিবে তার আগেই জোরে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। পিয়াস ইকরা কে আর কিছু বলতে না দিয়ে তার এক হাত চেপে ধরে বলল,

“চলুন, নাহলে পুরো ভিজে যাবেন।”

বলেই পিয়াস সামনের দিকে এগোতে নেয় ইকরার হাত ধরে। হঠাৎ পিয়াসের হাঁটার গতির কাছে টাল সামলাতে না পেরে ইকরা নিচে পড়ে যায়। পিয়াস ইকরার হাত ধরে ছিল সেজন্য পিয়াসও গিয়ে ইকরার উপরে পড়ে।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে