শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-১৬

0
72

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_১৬

বেলা নয়টা,
অয়নের বাইক এসে থামে একটা কফিশপের সামনে এসে। এতে ইকরা ভয় পেয়ে যায় কিছুটা। সে নিজেকে সামলে নিয়ে বাইক থেকে নেমে অয়নকে ভয়ে ভয়ে বললো,

“আমরা এখানে এসেছি কেনো?”

ইকরার কথা শুনে মুচকি হাসে অয়ন। সে কিছুটা নরম গলায় বলল,

“তুমি আমার প্রান বাঁচিয়েছ, তাই তোমাকে তো ছোটখাটো একটা ট্রিট দেওয়াই যায় তাই না?”

অয়নের কথা শুনে ইকরা হাসার চেষ্টা করে বললো,

“না মানে আগে বলবেন তো, আসলে আমার একটা কাজ ছিল৷ হুট করে না বলে এখানে নিয়ে এলেন!”

ইকরার কথা শুনে অয়নের মুখটা ছোট হয়ে যায়, তবুও সে মুখে জোর করে হাসি আনার চেষ্টা করে বলল,

“স্যরি, এখন যখন চলেই এসেছি তখন এক কাপ কফি অন্তত খেতে পারি তাই না?”

অয়নের কথার জবাব দেয় না ইকরা, তার প্রচন্ড রাগ হয় পিয়াসের উপর। কারণ পিয়াস যদি তাকে রেখে না যেতো তাহলে তো আর অয়নের মুখ দেখতে হতো না তাকে। তাই তার সমস্ত রাগ গিয়ে পিয়াসের উপর পড়ে।

“নিরবতাই সম্মতির লক্ষণ, চলুন তাহলে।”

বলেই অয়ন কফিশপের ভিতরে চলে যায়। ইকরাও বাধ্য হয়ে অয়নের পিছুপিছু কফিশপের ভিতরে যায়।
***
নিজের কেবিনে বসে বসে ফাইল চেক করছিল পিয়াস, হুট করে তার ফোনটা বেজে উঠে। এই অসময় ফোন বেজে উঠাতে প্রচন্ড বিরক্ত হয় সে। চরম বিরক্তি নিয়ে ফোন হাতে নিয়ে পিয়াসের সমস্ত বিরক্তির রেশ কেটে গেলো। অভ্র কল দিয়েছে, যে কিনা তার কাজিন মহলের সবচেয়ে কাছের বন্ধু /ভাই। তাই সে আর দেরি না করে কলটা রিসিভ করল। কল রিসিভ করতেই অপর পাশ হতে বেসে আসে অভ্রর গলা,

“কিরে ভাই, কল ধরতে এতক্ষণ লাগে তোর? মাইয়া লইয়া বিজি নাকি মামা?”

অভ্রর কথা শুনে হেসে ফেলে পিয়াস, সে নিজের কন্ঠ কিছুটা গম্ভীর করে বলল,

“তোর মত আমার কি সেই সুযোগ আছে নাকি যে মাইয়া লইয়া রঙ্গ করবো৷ তুই উড়তাছোস, তুইই উড়। আমার পিঠে আর জোর করে ডানা লাগানো লাগবে না তোর। আমার উড়ার ইচ্ছে নেই মামা।”

পিয়াসের কথা শুনে অভ্র কিছুটা মজার সুরে বলল,

“তা তুমি ছ্যাঁকা খেয়ে কি বাঁকা হয়ে গেছো নাকি?”

অভ্রর কথা শুনে পিযাসের নিধির কথা মনে পড়ে যায়। আদৌও সে কি সত্যিই ছ্যাঁকা খেয়েছে নাকি? সে তো নিধি কে কখনো বলতেই পারেনি, সে যে নিধিকে ভালোবাসে।

“কিরে চুপ করে আছিস যে?”

অভ্রর কথা শুনে হুশ ফিরে পিয়াসের। সে অসচেতন কন্ঠে বলল,

“হু? হ্যাঁ বল শুনছি তো।”

পিয়াসের কথা শুনে অভ্র কড়া কন্ঠে তাকে আদেশ দিয়ে বলল,

“হু হা বাদ দিয়ে কফিশপে চলে আয়। জমিয়ে আড্ডা দিবো সবাই মিলে। অনেক পালিয়ে থেকেছিস আমাদের থেকে, আজকে আর তোকে ছাড় দিতে পারবো না৷ সো নো এক্সকিউজ। সোজা কফিশপে চলে আয়, আমি তোকে লোকেশন টা টেক্সট করে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

একদমে কথাগুলো বলে কল কেটে দেয় অভ্র। আর পিয়াস অসহায়ের মত টেবিলের উপর জমা ফাইলগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।
**
কফিশপে পৌঁছে পিয়াস অভ্রকে কল করে। সে কল কানে নিয়ে অভ্রর সাথে কথা বলতে বলতে ভিতরে ডুকছিল। কিন্তু বিপত্তি সৃষ্টি হয় তখনই, যখন সে একটা মেয়ের সাথে ধা’ক্কা খায়। মেয়েটার সাথে ধা’ক্কা খেতেই পিয়াসের হাত থেকে ফোন নিচে পড়ে যায়। ইকরা পিয়াস কে না দেখেই তাড়াতাড়ি নিচ থেকে ফোন উঠিয়ে পিয়াসের দিকে ফোন বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

“স্যরি স্যরি, আসলে আমি দেখিনি।”

বলেই পিয়াসের দিকে তাকাতেই সে থতমত খেয়ে যায়। পিয়াস ও একটু অবাক হয় ইকরা কে এই মূহুর্তে কফিশপে দেখে। তাকে আরো অবাক করে দিয়ে ইকরার পাশে এসে অয়ন দাড়ায়। সে অদ্ভুত চোখে ইকরা আর তার পাশে দাড়িয়ে থাকা অয়ন কে ভালো করে পরখ করে বললো,

“ভালো মানিয়েছে।”

পিয়াসের কথা ইকরা বুঝতে না পারলেও অয়ন মিটমিট করে হাসে। তা দেখে পিয়াস বিরক্ত হয় প্রচুর, সে ইকরার হাত থেকে নিজের ফোন টা নিয়ে ওদের পাশ কাটিয়ে ভিতরে চলে যায়।
**
রাত ৮ টা বাজে, ফারিশের হাসপাতালের আজকে তৃতীয় দিন। আজকে তাকে রিলিজ দেওয়া হবে,তাই সে প্রচুর খুশি। পিয়াস গাড়ি নিয়ে এসেছে তাদেরকে নেওয়ার জন্য। সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে তারা ফারিশের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়। এক ঘন্টার মধ্যেই পিয়াসদের গাড়ি এসে থামে একটা বিলাসবহুল বাড়ির সামনে। বাড়ির নাম ❝সুখনিবাস❞। গাড়ির মধ্যে থেকেই বাড়ির নামটা দেখে নজর কাড়ে নিধির। সে নিজের মনে একবার বাড়ির নামটা উচ্চারণ করলো। পিয়াস গাড়ি থামায়, ফারিশ গাড়ি থেকে নেমে অপরপাশে এসে গাড়ির দরজা খুলে দেয় নিধির জন্য। নিধি বাধ্য মেয়ের মত গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। নিধি গাড়ি থেকে নেমে পুরো বাড়িটা একবার পরখ করে নেয় ভালো করে। দোতলা একটা বাড়ি, বাড়ির সামনের একপাশে একটা ফুলের বাগান করা। নানান রঙের ফুল ফুটে আছে সেখানে। নিধির ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে বাগান থেকে একটা ফুল ছিঁড়ে কানে গুঁজতে। কিন্তু নিজের ইচ্ছে কে সেখানেই মাটিচাপা দিয়ে দেয় সে। নিধি পিয়াস আর ফারিশের পিছুপিছু হেঁটে বাড়ির ভিতরের দিকে যায়। ফারিশ বাড়ির ভিতরে ডুকে সদর দরজার সামনে এসে দাড়ায়। নিধি বাহিরে দাড়িয়ে। ফারিশ নিধির দিকে তাকিয়ে মাথা টা একটু নিচু করে বললো,

“সুখনিবাসে স্বাগতম তোমাকে।”

ফারিশের করা কাজে হেসে ফেলে নিধি।

“নতুন বউকে কোলে করে রুমে নিয়ে যা ফারিশ, এটাও কি আমাকে শিখিয়ে দিতে হবে নাকি আজব!”

পিয়াসের কথা শুনে ফারিশ লাজুক হেসে বলল,

“তবে তাই হোক।”

“এই না না, আমাকে কোলে নিতে হবে না। আপনি এখনো পুরোপুরি সুস্থ না স্যার।”

নিধির কথা শুনে পিয়াস বিষ্ময়কর নজরে তার দিকে তাকিয়ে বলল,

“স্যার!”

পিয়াসের কথা শুনে ফারিশ অসহায় কন্ঠে বলল,

“কি আর করবো ভাই, অন্যদের বউরা তাদের বরকে ভালোবেসে বাবু, জান, কলিজা, ফুসফুস বলে ডাকে। আর আমার বউয়ের মুখে স্যার ডাক শুনতে শুনতেই মনে হয় জীবন শেষ হয়ে যাবে আমার। এই দুঃখ আমি কাকে বলি বল তো!”

ফারিশের সাথে পিয়াসও সায় দিয়ে বলল,

“হ্যাঁ নিধি, এটা মানা যাচ্ছে না। বরকে স্যার ডাকা যাবে না।”

দুজনের কথা শুনে নিধি ছোট করে জবাব দেয়,

“আচ্ছা।”

নিধির কথা শেষ হতে দেরি ফারিশ তাকে কোলে তুলে নিতে দেরি হয় না। সে নিধিকে কোলে তুলে নিয়ে পিয়াস কে বলল,

“যা যা বলেছি সবকিছু কি ডান?”

পিয়াস ফারিশ আর নিধি কে একবার দেখে নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

“হু, আচ্ছা যাই আমি।”

বলেই পিয়াস চলে যায়। ফারিশ নিধি কে কোলে করে নিজের রুমে আসে, পুরো রুমটা অন্ধকার। নিধি ভয় পেয়ে ফারিশের শার্ট খামচে ধরে রেখেছে। ফারিশ নিধিকে কোলে করে বিছানায় এনে বসিয়ে দিয়ে সে রুমের লাইট অন করে দেয়। রুমের লাইট অন করতেই অবাক হয়ে যায় নিধি। পুরো রুমটা খুব সুন্দর করে ফুলে সজ্জিত। সে অবাক হয়ে ফারিশের দিকে তাকাতেই সে এসে নিধির পাশে বসে। নিধির গলা থেকে তার ওড়নাটা ছোঁ মেরে নিয়ে নেয় ফারিশ। সে সযত্নে ওড়নাটা দিয়ে নিধির মাথায় ঘোমটা দিয়ে দেয়। সে নিধির কপালে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায়। ফারিশের করা কাজে নিধি লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে যেতেই ফারিশ হেসে ফেলে।

“তোমাকে একদম লজ্জাবতী বউ এর মত লাগছে ফুল! ইচ্ছে করছে নিজের বুকপকেটে সাজিয়ে রাখি এই ফুলটা কে।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি লাজুক হেসে বলল,

“আপনি চাইলে এই ফুলকে আপনার মনে সাজিয়ে রাখতে পারেন। এই ফুলটা শুধু আপনার জন্যই জন্ম নিয়েছে, অন্য কারো সাধ্য নেই এই ফুলকে ছোঁয়ার।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ তাকে নিজের সাথে আগলে নেয়।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে