#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_১৫
সকাল সকাল ইকরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল হাসপাতালে যাওয়ার উদ্দেশ্য। কালকে রাতে নিধির সাথে কথা না বলেই চলে আসতে হয়েছে তাদের। তাই আজকে আবার হাসপাতালে যাচ্ছে প্রিয় বন্ধুর বিপদে তাকে একটু সঙ্গ দেওয়ার জন্য। হাসপাতালের নিচে এসে দাড়াতেই পিয়াসের সাথে দেখা হয় ইকরার। সে পিয়াস কে দেখেই হাসিমুখে ডাক দেয় তাকে। ইকরার ডাক শুনে থেমে যায় পিয়াস, সে বাসা থেকে সরাসরি হাসপাতালে এসেছে ফারিশকে একবার দেখে যাবে বলে। কিন্তু এখানেও যে ইকরা চলে আসবে ভাবেনি সে।
“কি ব্যাপার, চুপ করে আছেন যে?”
ইকরার কথা শুনে হুশ ফিরে পিয়াসের। সে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে একবার ইকরা কে ভালো করে পরখ করে নেয়।
“চুপ করে থাকবো না তো কি আপনার মত অযথা উল্টাপাল্টা বকবক করে যাবো নাকি?”
বলে আর এক মুহূর্তও দাড়ায় না পিয়াস, সে হনহন করে হাসপাতালের ভিতরে চলে যায়। আর ইকরা বোকার মত পিয়াসের যাওয়ার পানে চেয়ে থাকে শুধু,সে কিছুই বুঝতে পারলো না পিয়াসের এমন ব্যবহার করার কারণ।
**
ফারিশ ঘুমাচ্ছে, তারপাশেই নিধি বসে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পিয়াস প্রবেশ করে কেবিনে। পিয়াস কে দেখে নড়েচড়ে বসে নিধি।
“কিছু লাগবে নিধি? ফারিশ এখন কেমন আছে? কবে রিলিজ দিবে ওকে?”
পিয়াসের একটানা এতগুলো প্রশ্নের জবাব দিতে হিমশিম খেয়ে যায় নিধি। পিয়াসের কথার মাঝেই ইকরাও এসে পৌছায় সেখানে। ইকরাকে একবার দেখে তার থেকে চোখ সরিয়ে নেয় পিয়াস।
“ফারিশ ঘুমাচ্ছে, বাহিরে গিয়ে কথা বলি চলো।”
পিয়াসের সঙ্গে সায় দিয়ে নিধি আর ইকরা কেবিন থেকে বাহিরে বের হয়ে আসে।
“ফারিশ এখন ঠিক আছে তো নিধি?”
“মোটামুটি ঠিক আছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে বেশ কয়েকটা দিন তো লাগবে।”
পিয়াসের কথা থামতেই ইকরা প্রশ্ন করে বসে,
“কে করেছে এসব? কি হয়েছে কেউ আমাকে একটু বল না প্লিজ!”
ইকরার কথা শুনে নিধি তার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“সে অনেক কাহিনী, আমার কাজিন… যাইহোক, তোকে পরে সময় করে সবকিছু বলবো।”
নিধির কথা শুনে চুপ করে যায় ইকরা, সে আর কিছু বলে না। পিয়াস আর নিধি কথা বলতে ব্যাস্ত তাদের মত। তা দেখে ইকরা বলল,
“আচ্ছা যাই আমি, নিজের খেয়াল রাখিস তুই।”
ইকরার কথা শুনে নিধি তার দিকে ভ্রু কুঁচকে বলল,
“চলে যাবি? আঙ্কেল আসেনি? একাই যাবি?”
“হু, একাই যাবো৷ ড্যাড অফিসে।”
“একা যেতে হবে না, পিয়াস ভাইয়াও তো অফিসে যাবে। তুই বরং উনার সাথে চলে যা।”
নিধির কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায় পিয়াস, সে কিছুতেই আর এই মেয়ের সাথে কোথাও যাবে না বলে ঠিক করেছে! অথচ নিধি আবার এই মেয়ে কে তার ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে! এটা ঠিক সে হজম করতে পারল না।
“কি হলো ভাইয়া, দিয়ে আসতে পারবেন ওকে?”
নিধির কথা শুনে হুশ ফিরে পিয়াসের। সে মুখে জোরপূর্বক হাসি বজায় রেখে বলল,
“হ্যাঁ হ্যাঁ, পারবো না কেনো? আমি তো সরকারি ড্রাইভার, যে বলবে তাকেই সাহায্য করবো।”
শেষের কথা টা বিড়বিড় করে বলে পিয়াস, যার কারণে ইকরা বা নিধি কেউ শুনেনি কথাটা। তাই নিধি বলল,
“আচ্ছা যা তাহলে, বাসায় গিয়ে ফোন দিস।”
নিধিকে বিদায় দিয়ে চলে যায় ইকরা আর পিয়াস।
★
রাস্তায় এসে ইকরা আর পিয়াসের মধ্যে তুমুল ঝগড়া লেগে যায়। ঝগড়ার মূল কারণ হলো ইকরা।
“আপনি এভাবে কথা বলছেন কেনো একটা মেয়ের সাথে?”
“তো কিভাবে কথা বলবো? আপনারা বাবা মেয়ে একটু বেশিই বুঝেন। কালকে অযথা আপনি আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলেছেন। আপনার সাথে কথা বলতেই তো আমার রুচিতে বাঁধছে।”
প্রথম সবগুলো কথা মেনে নিলেও শেষ কথা টা শুনে ইকরার চোখ ছলছল করে উঠে। তার সাথে কথা বলতে রুচিতে বাঁধছে, এটা ভাবতেই গা শিউরে উঠে তার। সে নিজের চোখের পানি মুছে বলল,
“আপনাকে কি আমি বাধ্য করেছি আমার সাথে কথা বলতে? যাই হোক, ভালো থাকবেন।”
বলেই ইকরা পিয়াস কে রেখেই হাঁটা ধরলো। পিয়াসও সেদিকে মাথা না ঘামিয়ে একটা রিকশা ডেকে তাতে উঠে পড়ল অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্য।
**
ফারিশের ঘুম ভাঙতেই সে আশেপাশে নিধি কে খুঁজে, কিন্তু কোথাও সে নিধির দেখা পায় না। বেডে শুয়েই কয়েকবার সে নিধি কে ডাকে, কিন্তু নিধির কোনো সাড়াশব্দ পায় না সে। নিধিকে কেবিনের কোথাও না দেখে ফারিশ নিজে নিজে উঠে বসে। সে বেড থেকে নামতে যেতেই পড়ে যেতে নেয়, কিন্তু সে পড়ে যাওয়ার আগেই একজোড়া হাত তাকে সযত্নে আগলে নেয়। ফারিশ কে সুন্দর করে বেডে বসিয়ে নিধি তাকে ধমকের সুরে বলল,
“এই আপনাকে না বলেছি একা না উঠতে। আর আপনি কি সুন্দর একা তো উঠে বসেছেনই আবার নামতেও গিয়েছেন, দিন দিন সাহস দেখছি বেড়েই যাচ্ছে আপনার। এখন যদি আমি না আসতাম তাহলে কি হতো বলুন তো, কেয়ারলেস কোথাকার।”
একদমে কথাগুলো বলে থামে নিধি। আর ফারিশ পুরোটা সময় নিধির দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল৷ নিধি কে থেমে যেতে দেখে ফারিশ শান্ত চোখে নিধির দিকে তাকিয়ে বলল,
“কি হলো, থেমে গেলে যে? আর কিছু বলার নেই?”
ফারিশের কথা শুনে ভড়কে যায় নিধি, রাগের মাথায় কতকিছু বলে ফেলেছে এই রাগী মানব কে তা ভাবতেই ভয় পেয়ে যায় নিধি। তাই সে মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে বলল,
“না মানে, আপনি একা কোথায় যাচ্ছিলেন?”
“বউকে খুঁজতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সে তো চলে এসেছে।”
ফারিশের কথা শুনে নিধি নিজের হাতে থাকা ঔষধ দেখিয়ে বলল,
“ঔষধ আনতে গিয়েছিলাম।”
নিধির কথা কানে নেয় না ফারিশ, সে নিধির দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমাকে বাড়ি যেতে দিবে কখন?”
ফারিশের কথা শুনে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায় নিধি।
“বাড়ি গিয়ে কি করবেন?”
“বাড়ি গিয়ে কি করবো মানে? আমার হানিমুন, বাসর সবকিছুই তো বাকি আছে এখনো।”
ফারিশের কথা শুনে নিধি লজ্জায় মিইয়ে যায়।
“আপনার মুখে যে লাগাম নেই তা জানা ছিল না।”
নিধির কথা শুনে ফারিশ মুচকি হেসে বলল,
“এতদিন তো বাউণ্ডুলে বস মেহরাব ফারিশ শিকদার কে দেখে এসেছো, এখন তুমি বর মেহরাব ফারিশ শিকদার কে দেখবে।”
______________
ইকরা রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে আছে রিক্সার জন্য, কিন্তু অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পরও সে কোনো খালি রিক্সা পায় না। ইকরা আর কোনো উপায় না পেয়ে হাঁটা শুরু করল। হঠাৎ তার সামনে একটা বাইক এসে জোরে ব্রেক কষে। ইকরা ভয় পেয়ে পিছিয়ে যেতেই ছেলেটা বাইক থেকে নেমে এসে হাসিমুখে বলল,
“আরে তুমি সেই না, আমাকে যে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলে?”
নিজের চোখের সামনে অয়ন কে দেখে কিছুটা অবাক হয় ইকরা। সে মুচকি হেসে বলল,
“আরেহ্, কেমন আছেন আপনি? পৃথিবীটা গোল আবারো প্রমানিত হলো, এতবড় একটা শহর, অথচ আমাদের আবারো দেখা হয়ে গেলো!”
ইকরার কথা শুনে হাসে অয়ন।
“তা হেঁটে হেঁটে কোথায় যাচ্ছেন?”
অয়নের কথা শুনে ইকরা অসহায় কন্ঠে বলল,
“আরে আর বলবেন না, একটা রিক্সাও খুঁজে পাচ্ছি না যে বাসায় যাবো। তাই হেঁটে একটু সামনে যাচ্ছি যদি একটা রিক্সা পাই আরকি!”
ইকরার কথা শুনে অয়ন বললো,
“আমার সাথে চলো, আমি তোমাকে বাসায় দিয়ে আসছি।”
অয়নের কথা শুনে ভড়কে যায় ইকরা, সে ব্যাস্ত গলায় বলল,
“আরে লাগবে না, আমি রিক্সা পেয়ে যাবো।”
“আরে চলো, সেদিন তুমি আমার এত বড় একটা উপকার করেছো। তোমার জন্য তো আমি এটুকু করতেই পারি।”
“না প্লিজ পরে…। ”
ইকরার কথার মাঝপথেই তাকে অয়ন থামিয়ে বলল,
“না করতে পারবে না, তুমি সেদিন না থাকলে আমি হয়তো মরেই যেতাম। প্লিজ, তোমাকে সাহায্য করার একটা সুযোগ তো দাও আমাকে!”
অয়নের এত জোরাজুরি ফেলতো পারলো না ইকরা। সে রাজি হয় অয়নের সাথে যেতে। তাই সে বাইকে উঠে বসে। তা দেখে অয়ন বাঁকা হেসে বাইক স্টার্ট দেয়।
চলবে?