#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_১৪
নার্সের কথা শুনে বেশ ঘাবড়ে যায় পিয়াস। সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে নার্স কে আবারো জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে বলুন না প্লিজ।”
“আম সো স্যরি স্যার, সি ইজ নো মোর।”
নার্স এর কথা শুনে পিয়াসের বুক কেঁপে ওঠে। সে কি বলবো ভেবে পাচ্ছে না।
“কি বলছেন এসব! ফারিশের কিছু হতে পারে না৷”
পিয়াসের কথা শুনে নার্স কপাল কুঁচকে তাকায় তার দিকে।
“ফারিশ তো একজন ছেলের নাম, ওয়েট ওয়েট। আপনাদের রুগী কোন ওটি তে আছে সেটা আগে ঠিক করে বলুন তো।”
নার্সের কথা শুনে হুস ফিরে পিয়াসের। সে চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে তব্দা খেয়ে যায়। পায়চারি করতে করতে সে অন্য একটা ওটির সামনে এসে দাড়ায়।
“স্যরি স্যরি, মিস্টেক হয়ে গেছে।”
পিয়াসের কথা শুনে নার্সটা অদ্ভুত ভাবে পিয়াসের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এতবড় ছেলে, অথচ হি আর সি এর মধ্যের তফাত জানে না।”
বলেই নার্সটা চলে যায়। এদিকে নার্সটার কথা শুনে পিয়াস লজ্জা পেয়ে যায় খানিকটা। তার আগেই বুঝা উচিত ছিল যে নার্স কেনো ❝সি ইজ নো মোর❞ বলেছে। নিজের করা বোকামির জন্য নিজেই লজ্জায় নুইয়ে পড়ে।
***
রাত প্রায় দশটা বাজে, ইকরা আর তার বাবা হতদন্ত পায়ে হেঁটে হাসপাতালে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর ইকরা পিয়াসের দেখা পায়। সে পিয়াস কে ইশারায় ডাক দিতেই সে এসে হাজির হয়।
“নিধির কি হয়েছে? ও ঠিক আছে তো?”
ইকরা কে দেখে পিয়াসের বিকালের ঘটনাটা মনে পড়ে যায়।
“চলুন।”
বলেই পিয়াস হাঁটা শুরু করলো, পিয়াসের এমন আচরণে ভড়কে যায় সে। তবুও কিছু না বলে পিয়াসের পিছন পিছন হাঁটা শুরু করল সে। পিয়াস হাসপাতালের একটা কেবিনের সামনে এসে দাড়ায়। ইকরার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে নিধি ভিতরেই আছে, তাই সে আর দেরি না করে তড়িঘড়ি করে কেবিনের ভিতরে ডুকে তব্দা খেয়ে যায়। হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে ফারিশ, তারপাশেই নিধি বসে আছে। নিধিকে দেখে ইকরা আঁতকে উঠে, মেয়েটার মুখটা শুকিয়ে কি অবস্থা হয়ে গেছে! ইকরা নিধির কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে।
“কোথায় ছিলি নিধু? কত্তো ভয় পেয়েছি জানিস? এভাবে হুট করে কোথায় উধাও হলি তুই?”
ইকরা কে এভাবে কাঁদতে দেখে নিধির চোখেও পানি চলে আসে। সে কিছু বলতে পারল না। হঠাৎ কেবিনে একজন নার্স প্রবেশ করে সবাই কে ধমকের সুরে বলল,
“এখানে এতো মানুষ কেনো? সর্বোচ্চ একজন থাকতে পারবেন রুগীর সাথে। বাকি সবাই বের হোন, রুগী এখন ঘুমাচ্ছে, কেঁদে কেটে তাকে ডিস্টার্ব করবেন না।”
নার্সের ধমক শুনে ইকরার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। সত্যি তারা অনেকজন আছে এখানে, পিয়াস সে তার বাবা আর নিধি। এতজন থাকলে ফারিশের তো ডিস্টার্ব হবেই। তাই নিধি কেবিনে থাকে, আর বাকিরা বের হয়ে যায়। পিয়াস করিডরে এসে একটা চেয়ার টেনে বসে। তা দেখে ইকরার আব্বু ইকরা কে ফিসফিস করে বলল,
“দেখ কেমন অভদ্র ছেলে, মুরব্বি দাড়িয়ে আছে। অথচ ওই ছেলে কি সুন্দর নাচতে নাচতে চেয়ার টেনে বসে পড়ল।”
ইকরা তার বাবার কথা শুনে বিরক্ত হয় প্রচুর, সে বিরক্তিভরা কন্ঠে বলল,
“বাবা, আরো কত চেয়ার পড়ে আছে, তুমি বসো না। কে বারণ করেছে তোমাকে? শুধু শুধু দোষ খুঁজছো কেনো? আমরা এখানে রুগী দেখতে এসেছি, পাত্র দেখতে আসিনি।”
ইকরার কথা শুনে তার বাবার মুখটা ছোট হয়ে আসে। তিনি আর কিছু না বলে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল। তিনি পিয়াস কে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বলল,
“তা ছেলে, কি করো তুমি?”
ইকরার বাবা ফয়সাল মির্জার মুখে হঠাৎ এই প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে যায় পিয়াস।
“জ..জি জব করি।”
“তা তো জানি, কিন্তু কি জব করো?”
“জি শিকদার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর ম্যানেজার।”
“ভালো ভালো। তা কয় ভাই বোন?”
ফয়সাল মির্জার একের পর এক প্রশ্ন শুনে বিরক্ত হয়ে যায় পিয়াস। সে বিরক্তিভরা কন্ঠে বললো,
“এক বোন, আর আমি।”
“বাসা কোথায়?”
পিয়াস আর ধৈর্য ধরে রাখতে না পেরে বলেই ফেললো,
“কি করবেন আঙ্কেল? আপনার প্রশ্ন করার ভাব দেখে মনে হচ্ছে পাত্র দেখতে এসেছেন আপনি!”
পিয়াসের কথা শুনে কিছুটা অপমানিত বোধ করে ফয়সাল মির্জা। তিনি থমথমে কন্ঠে বললেন,
“আমার কোনো ইচ্ছে নেই আমার মেয়েকে তোমার সাথে বিয়ে দেওয়ার। অভদ্র ছেলে কোথাকার।”
বলেই ফয়সাল মির্জা উঠে অন্যদিকে চলে যায়। এদিকে তার বলা কথা শুনে তব্দা খেয়ে যায় পিয়াস। সে নিজের মনে বিড়বিড় করে বললো,
“আজব! আমি কখন বললাম তার মেয়ে কে আমি বিয়ে করবো! যেমন বাপ তার তেমনই মেয়ে। দুই লাইন বেশি বুঝা পাবলিক।”
★★
রাত প্রায় একটা বাজে,
ফারিশের ঘুম ভাঙতেই নিজের পাশে নিধিকে হেলান দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখে অবাক হয় সে। তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মনে পড়তেই অয়নের প্রতি ক্রোধে ফেটে পড়ে সে। এদিকে ফারিশের নড়েচড়ে উঠার শব্দ শুনে নিধির ঘুম ভেঙে যায়। ফারিশ কে জেগে যেতে দেখে সে ব্যাস্ত গলায় বললো,
“ঠিক আছেন আপনি? কিছু লাগবে? বলুন আমাকে?”
নিধির কথা কানে যায় না ফারিশের, সে একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে নিধির পানে চেয়ে আছে।
“দুনিয়াতে খুব কম মানুষই আমাকে নির্স্বার্থ ভাবে ভালোবেসেছে। সেই খুব কম মানুষের মধ্যে মনে হচ্ছে তুমিও আছো। তোমার চোখ বলছে তুমি আমাকে ভালোবাসো। এই ভালোবাসার মধ্যে কোনো স্বার্থ দেখছি না আমি।”
ফারিশের কথা শুনে নিধি তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, সে কি বলবে খুজে পাচ্ছে না। তাই ফারিশ ফের বলল,
“আ’ম সো স্যরি বউ, তোমাকে এভাবে একা রেখে যাওয়া উচিত হয়নি আমার। এই পাগল টা কে ক্ষমা করে দিয়ো প্লিজ।”
গম্ভীর শক্ত মনের মানুষ কে হুট করে এতটা নরম কন্ঠে কথা বলতে দেখে কিছুটা অবাক হয় নিধি।
“এসব বলবেন না প্লিজ, আপনি আমার জন্য যা করেছেন তা আমি কখনো ভুলতে পারবো না। আমার কোনো আত্মীয় এগিয়ে আসেনি আমাকে একটু স্বান্তনা দেওয়ার জন্য। সেখানে আপনি দিনরাত আমার সঙ্গ দিয়েছেন, আমাকে আগলে রেখেছেন।”
“আমার দায়িত্ব তোমাকে আগলে রাখা, যত্ন নেওয়া। সে জায়গায় তো আমি কিছুই করতে পারিনি তোমার জন্য। আজ যদি আমি মরে যেতাম তাহলে কতটা আক্ষেপ নিয়ে মরতে হতো আমাকে যে, আমি আমার বউ কে আগলে রাখতে পারিনি শত্রুদের থেকে।”
ফারিশের কথা শুনে নিধি তার মুখে আঙ্গুল দিয়ে বলল,
“চুপ, এসব অলুক্ষণে কথা আর বলবেন না। আপনাকে হারাতে পারবো না আমি। আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটা হারিয়ে ফেলেছি আমি, কিন্তু আপনাকে হারাতে পারবো না আমি।”
নিধির করা কাজে ফারিশ মুগ্ধ নয়নে অপলক নয়নে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সেটা বুঝতে পেরে নিধি বলল,
“তাকিয়ে আছেন কেনো?”
নিধির কথা শুনে ফারিশ ইশারায় বুঝায় তার মুখ থেকে হাত সরাতে। নিধি তা বুঝতে পেরে কিছুটা লজ্জা পেয়ে হাত সরিয়ে ফেলে।
“স্যরি।”
“লজ্জা পেলে তো তোমার মুখটা একদম লাল টমেটোর মত হয়ে যায়। ইচ্ছে করছে টুপ করে খেয়ে ফেলি।”
ফারিশের মুখে হুট করে এমন কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায় নিধি। সে অবাক চিত্তে ফারিশের দিকে তাকিয়ে আছে।
“এভাবে তাকিও না জান, মরেই তো যাবো আমি।”
“কে বলবে যে আপনি অসুস্থ, এই অবস্থায় কেউ এসব বলে? অদ্ভুত!”
নিধির কথা শুনে ফারিশ নিজের বুকের বাঁ পাশে হাত দিয়ে বলল,
“আহ্, বুকে বড্ড ব্যথা গো জান।”
ফারিশের কথা শুনে নিধি ব্যাস্ত হয়ে তার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“কই কোথায় ব্যথা? ডক্টর ডাকবো?”
নিধির কথা শেষ হওয়ার আগেই ফারিশ নিধির গালে টুপ করে চু’মু খায়। এত নিধি পুরো থমকে যায়। নিধি কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফারিশ ফের বলল,
“আমার দেওয়া প্রথম চু’মু, এখন অসুস্থ দেখে ছাড় দিলাম। সুস্থ হতে দাও, তারপর বুঝবে মেহরাব ফারিশ শিকদার কতটা….. থাক আর বললাম না, তুমি লজ্জা পাবে।”
চলবে?