শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-১৩

0
166

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_১৩

নিধিকে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে ফারিশের পিছনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অয়নের দলের সবাই হো হো করে হাসতে থাকে। তা দেখে ফারিশের মেজাজ বিগড়ে যায়।

“এইডা রে দুনিয়া থেকে ওপারে পাঠাতে তো মাত্র দুমিনিট লাগবে আমার।”

বলেই একটা লোক নিজের শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে ফারিশের দিকে এগিয়ে আসে। তা দেখে ফারিশ নিধি কে নিজের কাছে টেনে নিয়ে চাপা কন্ঠে বলল,

“নিধি, তুমি চলে যাও এখান থেকে। আমি দেখছি এদের।”

“আমি যাবো না, চলুন না একসাথে পালাই। এরা অনেক সাংঘাতিক লোক। আমার ভয় লাগছে, চলুন না যাই আমরা।”

“আরে, ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। ওরা আমার কিছু করতে পারবে না। আমার তো তোমাকে নিয়ে ভয়, ওরা তোমার না কোনো ক্ষতি করে পেলে! তাই প্লিজ আমার কথা শুনো, যাও এখান থেকে।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি অসহায় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ফারিশ কে এদের মধ্যে একা ছেড়ে যাওয়ার কথা সে কল্পনাও করতে পারবে না। নিধি কে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফারিশ তাকে মৃদু ধমক দিয়ে বলল,

“যা বলছি তাই করো, নাহলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম। যাও এখান থেকে।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি বাধ্য হয়ে হাঁটা ধরলো। নিধি কে চলে যেতে দেখে অয়ন দুষ্ট হেসে বলল,

“আরে পাখি, তুই যাচ্ছিস কোথায়? তোর সাথে যে এখনো আমার অনেক হিসাব বাকি আছে, এভাবে আমাকে একা রেখে চলে গেলে হবে?”

অয়নের কথা শুনে ফারিশ রক্তিম চোখে তার দিকে তাকায়। সে আর রাগ সহ্য করতে না পেরে অয়নের দিকে এগিয়ে গিয়ে তাকে সজোরে একটা ঘু’ষি দিয়ে বলল,

“কি চাই তোর? আর একবার যদি আমার বউ এর দিকে তোকে কুনজর দিতে দেখি তো তোর চোখ খুলে আমি মারবেল খেলবো বলে দিলাম।”

ফারিশের কথাকে কানে না নিয়ে অয়ন অট্টহাসিতে মেতে ওঠে।

“মারবেল খেলার বয়স আছে এখনো তোর?”

বলেই অয়ন নিধির দিকে এগিয়ে গিয়ে তার হাত চেপে ধরে তাকে নিয়ে যেতে যেতে নিজের দলের অন্য সব লোকদের বলল,

“ওকে মেরে লা’শটার এমন বিভৎস অবস্থা করবি যে একটা কুকুরও ওর লা’শ দেখে যেনো ভয়ে কেঁপে ওঠে।”

বলেই অয়ন নিধির হাত ধরে তাকে জোর করে নিয়ে যেতে নেয়। ফারিশ নিধির অন্য হাত ধরে অয়ন কে বলল,

“ওর হাত ছাড়, নাহলে কিন্তু খারাপ হবে বলে দিলাম। এতক্ষণ চুপ করে ছিলাম বলে ভাবিস না আমি ভিতু।”

ফারিশের কথা শুনে অয়ন ভয় পেয়েছে এমন ভাব করে বলল,

“হায়, কি বলিস এসব। আমি তো ভয় পেয়ে গেছি।”

বলেই অয়ন অট্টহাসিতে মেতে ওঠে। সে হাসি থামিয়ে ফের বলল,

“কি করবি তুই আমার? শা’লা আসছে আমার এলাকাতে মাতব্বরি করতে! চল হুট এখান থেকে।”

অয়নের কথা শেষ হতে না হতেই সে ছিটকে নিচে গিয়ে পড়ে, ফারিশ নিধির হাত শক্ত করে ধরে বলল,

“মেহরাব ফারিশ শিকদার যেহেতু এই ফুলের হাত একবার ধরে ফেলেছে তাহলে সেই হাত আর কক্ষনও ছাড়বে না সে। আর এই ফুলের গায়ে যে আঁচড় দিতে আসবে তাকে খু’ন করে ফেলবো আমি। মাইন্ড ইট!”
***
শহর জুড়ে অন্ধকার নেমে এসেছে, চারিদিকে মাগরিবের আজানের কলধ্বনি শোনা যাচ্ছে। পিয়াস আর ইকরা নিরবে রিক্সায় বসে আছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। নিরবতা ভেঙে ইকরা বলল,

“আমরা কোথায় যাচ্ছি?”

“জানি না।”

পিয়াসের হেয়ালি কন্ঠস্বর শুনে ইকরার মেজাজ বিগড়ে যায়। সে পিয়াস কে শাসিয়ে বলল,

“অ্যাই,কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে এই রাতের বেলা? কি হচ্ছে টা কি?”

ইকরার কথা শুনে বিরক্ত হয় পিয়াস। সে বিড়বিড় করে বলল,

“এই অশান্ত মেয়ের বান্ধবী কি করে যে নিধি হলো কে জানে!”

“কিছু বলেছেন?”

ইকরার কথা শুনে পিয়াস কিছুটা চেঁচিয়ে বলল,

“হ্যাঁ বলেছি তো, পাশেই একটা পার্ক আছে। সেখানে যাচ্ছি আপনার সাথে প্রাইভেট সময় কাটানোর জন্য।”

পিয়াসের কথা শুনে ইকরার ভিষণ রকম ভয় পায়। তবুও নিজের দাপট বজায় রেখে কিছুটা রেগে বলল,

“সুন্দরী মেয়ে দেখলেই তোদের শরীরের জ্বালা ধরে যায়? অসভ্য কোথাকার।”

কথাগুলো বলে থামে ইকরা, সে দম নিয়ে ফের বলল,

“এই মামা, রিক্সা থামান তো।”

ইকরার কথা শুনে রিক্সা থামায় চালক। ইকরা আর রিক্সায় বসে না থেকে হনহন করে নেমে পড়ে রিক্সা থেকে। আর পিয়াস হতভম্ব হয়ে ইকরার কান্ড গুলো দেখলো শুধু। ”আমরা দুজন তো এসেছি ফারিশদের খুঁজতে, তাহলে এই মেয়ে এত্তোগুলো কথা বলেছে কেনো আমাকে? নিশ্চয় মাথার তাঁর ছিঁড়া আছে।”

কথাগুলো নিজের মনে আওড়াল পিয়াস। ইকরার কথাগুলোতে সে কষ্ট পেয়েছে কিছুটা। হুট করে ইকরার প্রতি একরাশ অভিমান এসে জমা হয় তার মনে। তীব্র মনে কষ্ট নিয়েই সে রিক্সাওয়ালাকে বলল,

“এই মামা, চলুন তো আপনি। ওই মেয়ে জাহান্নামে যাক। আমার কি?”
***
অয়ন কে আঘাত করাতে তার দলের সবাই এসে ফারিশ কে ঘিরে ধরে। ফারিশ আর নিধি সবার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই একসাথে ফারিশ কে আক্রমণ করতে থাকে, নিধি একপাশে জড়োসড়ো হয়ে দাড়িয়ে আছে। সবার একসাথে করা আক্রমণ সামলাতে না পেরে ফারিশ মারাত্মক ভাবে আহত হয়। রাস্তায় মারামারি দেখে পুলিশের গাড়ি এসে থামে সেখানে। পুলিশ কে দেখে সবাই এদিক ওদিক পালাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। পুলিশের লোকেরা অয়নের লোকদের চাড় না দিয়ে গ্রেফতার করে, তা দেখে অয়ন ঘাবড়ে যায়। পুলিশের নজর এখনো তার দিকে আসেনি। সে সুযোগ বুঝে নিজের পকেট থেকে পি’স্তল বের করে ফারিশের দিকে তাক করে। সবার নজর যখন অন্য মা’স্তান দের দিকে, সেই সুযোগে অয়ন ফারিশের দিকে গু’লি ছুড়ে। গু’লিটা সোজা গিয়ে ফারিশের বুকে লাগে। মূহুর্তের মধ্যেই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তা দেখে নিধি দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরে ফেলে। আর পুলিশ অয়নের পিছু নেয় তাকে ধরার জন্য। কিছুক্ষণের মধ্যেই পিয়াস এসে পৌঁছায় ঘটনা স্থানে। সে এসে ফারিশের এই অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। নিধি পিয়াসের সাহায্যে ফারিশকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
**
ফারিশকে OT তে নেওয়া হয়েছে, পিয়াস করিডোরে পায়চারি করছে। নিধি কান্নায় ভেঙে পড়েছে। নিধির কান্না দেখে পিয়াসের বড্ড খারাপ লাগছে। মেয়েটা কয়েকদিন আগে মা কে হারিয়েছে, এখন আবার তার জীবনসঙ্গীর এই অবস্থা। সে কিভাবে নিধিকে সামলাবে ভেবে পাচ্ছে না। সে নিজের মনে বিড়বিড় করে বলল,

“ওই অশান্ত মেয়েটা থাকলেও তো নিধি কে সামলাতে পারতো। ইশ, মেয়েটা এত কাঁদছে কেনো! আমার যে ওর কান্না সহ্য হয় না।”

কথাগুলো বলে পিয়াস নিধির দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে। সে আর সাতপাঁচ না ভেবে নিজের ফোন বের করে ইকরা কে কল দেয়। কয়েকবার রিং হওয়ার পর কল রিসিভ করে ইকরা। সে থমথমে গলায় বলল,

“কে বলছেন?”

ইকরার কথা শুনে পিয়াস নিজের ভয়েস কিছুটা থমথমে করে বলল,

“চিনবেন না, আপনার বান্ধবী ****** এই হাসপাতালে আছে। তার অবস্থা অনেক খারাপ। আপনি তাকে দেখতে চাইলে চলে আসুন।”

বলেই কল কেটে দেয় পিয়াস। পিয়াস ফোন পকেটে রেখে আবারো পায়চারি করছে করিডোরে, কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন নার্স বের হয়ে আসে ওটি থেকে, পিয়াস দৌড়ে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল,

“আ..আমার বন্ধুর কি খবর এখন? সব ঠিকঠাক আছে তো?”

পিয়াসের কথা শুনে নার্সটা তার দিকে নিষ্প্রাণ চোখে তাকিয়ে বললে,

“আ’ম সো স্যরি স্যার।”

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে