শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-১২

0
132

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_১২

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলো আকাশে। বাহিরে তুমুল বেগে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে, ফারিশের গাড়ি এসে থামে ছোট একটা গ্যারেজের সামনে। ফারিশ পার্কিং লটে গাড়ি রেখে রাস্তায় এসে দাড়ায়, তার আর শরীরে শক্তি নেই গাড়ি ড্রাইভ করার মত। সে অসহায় ভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ফারিশ আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠে,

“কোথায় তুমি নিধি! আমার যে দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার ফুল টা কে ছাড়া! কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি?”

ফারিশের চোখ দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ে, কিন্তু বৃষ্টির কারণে বুঝা যাচ্ছে না সে যে কাঁদছে। ফারিশ মাথায় হাত দিয়ে রাস্তায় বসে ডুকরে কেঁদে উঠে।
**
ইকরার মুখ থেকে সব ঘটনা শুনে হতভম্ব হয়ে যায় পিয়াস, নিধির জন্য তার বুকটা ধক করে উঠে। যতোই নিধি ফারিশের বউ হোক না কেনো, নিধি তো তার প্রথম ভালোবাসা ছিল। হয়তো সে নিধি কে কখনো নিজের করে পাবে না, কিন্তু সে ভালোবাসে তো। আর সে মানে ভালোবাসলেই তো নিজের করে পেতে হবে এমন কোনো নিয়ম নয়। বরং ভালোবাসা দূর থেকেই সুন্দর।
পিয়াস কে এভাবে গভীর ভাবনার দেশে পাড়ি জমাতে দেখে ইকরা হতাশ হয়। সে পিয়াস কে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলল,

“কি হলো, কিছু বলছেন না কেনো?”

ইকরার কথা শুনে হুশ ফিরে পিয়াসের, সে তড়িঘড়ি করে পকেট থেকে ফোন বের করে ফারিশ কে ফোন দেয়। বেশ কয়েকবার কল দেওয়ার পরও কল রিসিভ করে না ফারিশ। এবার পিয়াস বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।

“ফারিশ তো কলও ধরছে না।”

পিয়াসের কথা শুনে ইকরা কিছু একটা ভেবে বলল,

“এককাজ করুণ, ভাইয়ার ফোন নাম্বার স্ট্রেস করে লোকেশন ট্রাক করুন।”

প্রথমবারের মত ইকরার কথা শুনে বিরক্ত হয় পিয়াস। সে কপাল কুঁচকে রেখেই বলল,

“আপনার কথা আপনার মতোই যুক্তিহীন। আমি কিভাবে ওর লোকেশন ট্রাক করবো? এসব কি আমার কাজ?”

পিয়াসের কথা শুনে ইকরার মুখটা চুপসে যায়। সে আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ অন্যদিকে হাঁটা শুরু করে। তা দেখে পিয়াস ঘাবড়ে যায় কিছুটা। পিয়াস দৌড়ে ইকরার পিছু নিয়ে বলল,

“আরে কোথায় যাচ্ছেন?”

পিয়াসের কথা কানে গেলেও জবাব দেয় না ইকরা, সে নিজের মত করে হাঁটতে ব্যাস্ত। ইকরা কে থামানোর আর কোনো উপায় না পেয়ে পিয়াস দৌড়ে ইকরার সামনে গিয়ে তার হাত চেপে ধরে বলল,

“এভাবে ছেড়ে গেলো পাবো কি করে?”

পিয়াসের কথা শুনে ইকরা তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই পিয়াস নিজের মাথা চুলকে মিনমিন করে বলল,

“আই মিন, ফারিশ আর নিধিকে পাবো কিভাবে সেটাই বলেছি।”

“হাত ছাড়ুন।”

ইকরার কথা শুনে হুশ ফিরে পিয়াসের, সে ইকরার হাত ছেড়ে দিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলল,

“স্যরি।”

“ইটস ওকে।”

দুজনেই চুপচাপ রাস্তার এককোনায় দাড়ায়, কিছুক্ষণের মধ্যে পিয়াস একটা রিক্সা দাঁড় করায়।

“চলুন।”

বলেই পিয়াস রিক্সায় উঠে বসে, ইকরা এখনো বুঝতে পারছে না পিয়াসের মতলবটা ঠিক কি? তাই সে আগের ন্যায় রাস্তায় দাড়িয়ে আছে।

“আরে আসুন না, ওদের খুঁজতেই তো যাচ্ছি।”

“ আপনার গাড়ি থাকতে এই রিক্সাতে কেনো?”

“কেনো? একসাথে রিক্সায় বসতে সমস্যা আছে নাকি?”

“সমস্যা নেই, তবে লোকে কি বলবে?”

ইকরার কথা শুনে পিয়াস বোকা চোখে ইকরার দিকে তাকিয়ে আছে।

“লোকে কি বলবে? আমরা কি প্রেমিক-প্রেমিকা নাকি যে লোকজনে কিছু বলবে? আর কত হাজার হাজার ছেলেমেয়ে রিক্সায় করে দিব্যি চলছে, সাথে রিক্সায় বসে চুমুও খায়৷ কই তাদের তো লজ্জা লাগে না।”

পিয়াসের কথা শুনে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যায় ইকরা। সে আর কোনোকিছু না বলে রিক্সায় উঠে বসে।

“পড়ে যাবেন তো, সুন্দর করে বসুন। আরে মেয়েটা কত ভয় পায়, আমরা তো ভাইবোনের মত, তাই না?”

পিয়াসের কথা শুনে হোঁচট খায় ইকরা। তারা ভাই বোন?
★★
অয়ন নিধিকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিতেই নিধি ভয় পেয়ে যায়। সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না, নিধি ভয়ার্ত চোখে চারিদিকে তাকায়। বিছানার পাশেই একটা ছোট ভেনেটি আছে, তার উপরে কয়েকটা পারফিউম,আর সাজার জন্য কয়েকটা মেক-আপ আইটেম। নিধি আর কোনোকিছু না ভেবেই ভেনেটির উপর থেকে পারফিউম নিয়ে অয়ন এর চোখে স্প্রে করে। মূহুর্তের মধ্যেই অয়ন যন্ত্রনায় চিৎকার দিয়ে উঠে। এই সুযোগে নিধি দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে রাস্তায় চলে আসে। রাস্তায় বের হতেই নিধি বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে যায়। তবুও সে আর দাড়িয়ে না থেকে অন্ধকারের মধ্যে দিয়েই দৌড়াতে থাকে। দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ নিধি বলিষ্ঠ দেহের কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে যায় নিচে। তীব্র ভয়ে হাত পা কাঁপছে নিধির। হঠাৎ তার চোখে আলো পড়তেই চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে সে।

“নিধি!”

হঠাৎ পরিচিত কন্ঠে উচ্চস্বরে নিজের নাম শুনে চমকে যায় নিধি, সে চোখ খুলে তাকাতেই হতভম্ব হয়ে যায়। নিজের সামনে চিরচেনা পরিচত ব্যাক্তিটিকে দেখে নিধি উঠে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। ফারিশ নিধি কে নিজের সাথে আগলে নেয় সাবধানে। সে নিধির চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলল,

“কান্না করে না বোকা মেয়ে, তোমার বর চলে এসেছে তো। আর কাঁদতে হবে না তোমাকে।”

ফারিশের কথা শুনেও কান্না থামে না নিধির, সে ফারিশের শার্ট খামচে ধরে ফোপাঁতে থাকে। ফারিশ নিধি কে নিজের কাছে পেয়ে যেনো নিজের শরীরের শক্তি ফিরে পেয়েছে। নিধি কে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখে ফারিশ তার চুলে মুখ গুঁজে বলল,

“মেহরাব ফারিশ শিকদারের বউ কান্না করবে না, প্রতিবাদ করবে। কি হয়েছে খুলো বলো আমাকে?”

নিধি আগের ন্যায় ফোঁপাতে ফোপাঁতে বলল,

“অয়ন ভাই আমার সাথে…. ”

আর কিছু বলতো পারলো না নিধি, তার গলা ভেঙে আসছে। মুখ দিয়ে যেনো কথা বের হচ্ছে না তার। এদিকে অয়নের নাম শুনেই ফারিশের মেজাজ বিগড়ে যায়। সে শক্ত হাতে নিধি কে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিধির হাত চেপে ধরে বলল,

“চলো।”

“ককোথায়?”

নিধির কথার জবাব দেয় না ফারিশ, সে নিধির হাত চেপে ধরে সামনে হাটতে থাকে। অজানা ভয়ে নিধি আড়ষ্ট হয়ে যায়। কে জানে কি হবে এখন, অয়ন আর ফারিশ সামনাসামনি এলে যেকোনো একজনের যে র’ক্ত জড়বে সেটা নিধির খুব ভালো করেই জানা আছে। হঠাৎ তাদের সামনে অয়ন এসে দাড়ায়। অয়নকে নিজের সামনে দেখে ফারিশের নিজের মধ্যে থাকা সমস্ত রাগ ক্ষোভ গুলো যেনো জাগ্রত হয়ে উঠেছে। সে নিধির হাত ছেড়ে দিয়ে অয়নের কলার চেপে ধরে বলল,

“তোর সাহস হয় কি করে আমার ফুলকে কষ্ট দেওয়ার? তোর জন্য আমার ফুল কেঁদেছে আজ, তোকে তো আমি খু’নই করে ফেলবো আজ।”

বলেই ফারিশ অয়নের গালে সজোরে একটা ঘু’ষি মারে। তবুও শান্ত হয়নি ফারিশ, সে অয়ন কে টেনে নিয়ে তার বুকের ওপর লা’থি দেয়, এতে টাল সামলাতে না পেরে অয়ন নিচে ছিটকে পড়ে যায়। এতকিছুর পরেও ফারিশ শান্ত হতে পারলো না, সে অয়নের দিকে এগিয়ে যাবে তার আগেই অয়ন নিচে থেকে উঠে হো হো করে হাসতে থাকে। এতে ফারিশের মেজাজ আরো খারাপ হয়ে যায়। সে অয়নের কলার চেপে ধরে হুঙ্কার দিয়ে বলল,

“তোর সাহস হয় কি করে আমার ফুল কে ছোঁয়ার? তুই যে হাতে আমার ফুল কে স্পর্শ করেছিস, সেই হাত কে’টে আমি নদীতে ভাসিয়ে দিবো।”

ফারিশের কথা শুনে অয়ন নিজের কলার থেকে ফারিশের হাত ছিটকে সরিয়ে দেয়।

“ব্যাস অনেক হয়েছে, এটা আমার এলাকা। এখানে তোর রাজত্ব চলবে না। এখানে অয়ন মির্জার রাজত্ব চলবে।”

বলেই অয়ন হো হো করে হাসতে থাকে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ১৫-২০ জন লোক এসে অয়নের পাশে এসে দাড়ায়। সেখানের একটা লোক নিজের হলদে দাঁত কেলিয়ে অয়ন কে উদ্দেশ্য করে বলল,

“স্যার, এইডারে কি মাইরা মাটিতে পুঁতে রাখবো নাকি লাশ নদীতে ভাসায়ে দিবো?”

লোকটার কথা শুনে নিধির বুক ধক করে উঠে, সে ফারিশের হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,

“চলুন এখান থেকে, ওরা মে’রে ফেলবে আপনাকে।”

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে