#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_১০
আজকে নিধির মায়ের মৃত্যুর ৫ম দিন চলে, নিধি এখন আগের থেকে কিছুটা স্বাভাবিক আছে। বাস্তবতার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে সে। নিধি রান্নাঘরে নাস্তা বানাচ্ছে সকালের। ফারিশ ঘুম থেকে উঠে নিজের পাশে নিধি কে না দেখে ঘুম জড়ানো চোখে ঢুলতে ঢুলতে নিধি কে খুঁজতে থাকে। নিধি কে রান্নাঘরে পায় ফারিশ।
“এত্তো সকাল সকাল রান্নাঘরে কি করছো?”
হঠাৎ পুরুষালি গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে চমকে তাকায় নিধি। অতঃপর ফারিশ কে নিজের পাশে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিধি।
“এখন এগারোটা বাজে, কম বেলা হয়নি।”
নিধির কথা শুনে ফারিশ মোবাইলে টাইম দেখে নেয়, তারপর নিধি কে তাড়া দিয়ে বলল,
“আমি কিন্তু আজকে বাসায় চলে যাচ্ছি।”
ফারিশের কথা শুনে নিধির একটু খারাপ লাগে, পরক্ষণে নিজেকে সামলে বলে,
“আচ্ছা, কখন যাবেন?”
“এইতো, এখনই বের হবো। কয়েকদিন অফিসের দিকে নজর দেওয়া হয়নি। কে জানে কি অবস্থা এখন অফিসের।”
ফারিশের কথা শুনে নিধি আর কিছু বলেনি। সে নিজের মনে নাস্তা বানাতে ব্যাস্ত। তা দেখে ফারিশ আর দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে চলে যায় রেডি হতে।
**
ফারিশ তৈরি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে, নিধি তখন টেবিলে খাবার এনে রাখতে ব্যাস্ত। ফারিশ কে দেখে নিধি তাকে ইশারা দিয়ে টেবিলে বসতে বলে। ফারিশ বাধ্য ছেলের মত খাবার টেবিলে এসে বসে। নিধি এসে ফারিশের প্লেটে খাবার তুলে দেয়। ফারিশকে খাবার বেড়ে দিতে দিতে নিধির চোখ ছলছল করে উঠে, ফারিশ দেখার আগেই নিধি নিজের রুমে চলে যায়। নিধি কে এভাবে হুট করে রুমে চলে যেতে দেখে কিছুটা বোকা বনে যায় ফারিশ। সে খাবার টেবিলে বসেই জোরে বলল,
“নিধি, এসো খাবার খাবে।”
ফারিশের কথা শুনে নিধি নিজের চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক ভাবে রুম থেকে বের হয়ে এসে খাবার টেবিলে বসে। দুজনেই চুপচাপ খাবার খাওয়া শেষ করে।
“খাবারটা মজা হয়েছে, কালকে থেকে তোমার হাতের রান্না মিস করবো।”
ফারিশের কথা শুনে নিধি মলিন কন্ঠে বলল,
“যখন মন চাইবে তখন চলে আসবেন, তাহলে আর মিস করবেন না আমার হাতের রান্না।”
নিধির কথা শুনে ফারিশ তাকে হেসে বিদায় দিয়ে চলে যায়। নিধি বাসার দরজায় দাঁড়িয়ে ফারিশের চলে যাওয়া দেখছে। ফারিশের দিকে তাকিয়ে নিধি তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
“আমার হাতের রান্না মিস করবে, কিন্তু আমাকে মিস করবে না।”
বলেই দরজা আঁটকে দেয় নিধি।
★★
ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঘেরা রুমে কয়েকজন ছেলে বসে আছে। কারো মুখে সিগারেট তো কারো হাতে মদ রয়েছে। তারমধ্যে একটা ছেলে হাতে ড্রিংকস নিয়ে দাড়িয়ে আছে, চোখমুখ তার রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। ছেলেটা হঠাৎ তার হাতে থাকা ড্রিংকস এর গ্লাস নিচে ছুড়ে মেরে রুমে থাকা সকলকে কঠিন কন্ঠে শুধালো,
“ ওই ফারিশ কু*ত্তারবাচ্চা কে বুঝি মারতে তোদের এতদিন লাগে? টাকা কি কম দিই আমি তোদের? একটা দুই টাকার কোম্পানির মালিক কে মারতে তোদের এত সময় লাগে?”
অয়নের কথা শুনে রুমে থাকা সকলে ঘাবড়ে যায়, তারমধ্যে রুমে থাকা একটা ছেলে ভয়ে ভয়ে বলে উঠল,
“দুই টাকার কোম্পানি না স্যার, ওনার বাপ যখন কোম্পানির দেখাশোনা করতো তখন এখানের সবচেয়ে জনপ্রিয় কোম্পানি ছিল ফারিশদের কোম্পানি।”
ছেলেটার কথা শুনে অয়ন রেগে গিয়ে বলল,
“ফারিশ, ফারিশ, ফারিশ! ফারিশ মাই ফুট। তুই আমার লোক হয়ে কিভাবে ওই ফারিশের সুনাম করছিস?”
বলেই অয়ন পকেট থেকে পি’স্তল বের করে ছেলেটাকে গু’লি করে। মুহূর্তের মধ্যে ছেলেটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অয়নের কাজে ভয়ে জবুথবু হয়ে যায় রুমে থাকা অন্য ছেলেরা। তা দেখে অয়ন ফের আগের কন্ঠে শুধালো,
“এই আবর্জনা কে কোথায় গায়েব করবি এটা তোদের ব্যাপার৷ তবে একটা কথা মাথায় রাখবি, এই রুমের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনা যদি লোক জানাজানি হয় তবে তোদের অবস্থাও এই ছেলের মতোই হবে, মাইন্ড ইট।”
বলেই রুম থেকে বের হয়ে যায় অয়ন। অয়নের পিছন পিছন একটা ছেলে রুম থেকে বের হয়ে এসে তার সামনে দাড়ায়। তা দেখে অয়ন তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়, ছেলেটা নিচু গলায় বলল,
“একটা খবর আছে স্যার।”
“কি খবর?”
“দীর্ঘ পাঁচদিন পর ফারিশ শিকদার অফিসে গিয়েছেন আজকে।”
ছেলেটার কথা শুনে অয়নের চোখ চকচক করে উঠে আনন্দে। অয়ন বাঁকা হেসে বিড়বিড় করে বলল,
“তারমানে নিধু পাখি বাড়িতে একাই আছে। আমার তো গিয়ে তাকে সঙ্গ দেওয়া উচিত!”
*****
অফিসে এসে ফারিশের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। বারোটা বেজে গেছে, অথচ এখনো অনেকে অফিসে আসেনি। তা দেখে ফারিশ পিয়াস কে ডেকে নিজের কেবিনে চলে যায়।
“আসবো?”
চেয়ারে বসে ফারিশ একটা ফাইল চেক করছিল, হঠাৎ দরজায় কারো আগমন টের পেয়ে সেদিকে তাকায় সে। পিয়াস কে দেখে ইশারায় আসতে বলে ফারিশ। পিয়াস এসে চেয়ার টেনে বসে ফারিশের সামনে।
“ড্যাড অফিসে থাকা অবস্থায় কিভাবে সবকিছু পরিচালনা করেছে সেটা আমার থেকে তুই ভালো করে জানিস। আমি সবে জয়েন করেছি কয়েকদিন হবে। সবাই আমাকে ভয় ফেলেও সুযোগ ফেলে আমার অগোচরে অফিসের নিয়ম না মানার চেষ্টা করছে। এভাবে চললে তো দুদিনও টিকবে না আমাদের কোম্পানিটা। তাই আমাদের সকলকে আরো সচেতন হতে হবে। অফিসের ম্যানেজার টা বুড়ে হয়ে গেছে, তাই হয়তো এসব দিকে নজর দিতে পারছে না। কালকে থেকে ওই বুড়ো কে বলে দিস অফিসে না আসতে। আর ম্যানেজারের দায়িত্ব টা তুই পালন করবি, ড্যাড কিভাবে সবকিছু সামলাতো সেটা তো তুই জানিস। তাই আমি আশা করি তুই এই দায়িত্ব টা পালন করতে পারবি। আর যারা অফিসে অনিয়ম করছে, তাদের বাদ দিয়ে নতুন কর্মী নিয়োগ দে। অনেক বেখেয়ালি ভাবে অফিস সামলিয়েছি, এবার সিরিয়াস হতে হবে। ড্যাডের যত্নের কোম্পানিটা কে আমি এভাবে ডুবে যেতে দিতে পারবো না আর।”
ফারিশের সব কথা পিয়াসের মাথার উপর দিয়ে যায়। তবে সে এটা বুঝতে পেরেছে যে তার পদোন্নতি হয়েছে। আর ফারিশ অবশেষে তার কোম্পানি টা কে নিয়ে সিরিয়াস হয়েছে। সে নিজেকে সামলিয়ে বলল,
“এ সবকিছু করতে মাসখানেক সময় লেগে যাবে, নতুন কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া, ইন্টারভিউ নেওয়া। এসব অনেক সময়ের কাজ। তুই ভরসা করতে পারিস আমাকে, এসব সামলানোর চেষ্টা করবো আমি।”
“ভরসা করি বলেই তো তোকে দায়িত্ব টা দিলাম। যাই হোক, এখন যা। কাজে মন দে।”
ফারিশের কথায় সায় দিয়ে পিয়াস উঠে দাড়ায় যাওয়ার জন্য। সে কিছু একটা ভেবে আবার পিছন ঘুরে বলল,
“নিধির কি খবর? এখন আগের থেকে ঠিক আছে তো ও?”
“হ্যাঁ, এখন ঠিক আছে।”
“ওহ, তা নিধি কে তোর বাড়িতে নিয়ে গেছিস নাকি? ওর বাড়িতে তো এখন আর একা থাকতে পারবে না তাই বলেছি আরকি!”
পিয়াসের কথা শুনে ফারিশ থমকে যায়, নিধি কে যে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া উচিত সেটা সে ভুলেই গিয়েছে। সে তড়িঘড়ি করে নিজের ফোন বের করে নিধিকে কল দেওয়ার জন্য।
“কি রে, ও নিজের বাড়িতে একা নাকি? শুনেছি ওর ওই ভাইটা নাকি এখনো এখানেই আছে, যদি জানতে পারে নিধি বাসায় একা তাহলে কোনো কুবুদ্ধি খাটাবে নিশ্চয়।”
পিয়াসের কথা শুনে চিন্তায় ফারিশের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। সে নিধির নাম্বার ডায়াল করে কল দেয় তাকে, কিন্তু কয়েকবার কল দেওয়ার পরেও কল রিসিভ করে না নিধি।
***
তীব্র মাথা যন্ত্রণা করছে নিধির, সে ড্রয়িং রুমে সোফায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ শুনে চমকে যায় নিধি। ফারিশ এসেছে ভেবে নিধির চোখ খুশিতে চকচক করে উঠে। সে তড়িঘড়ি করে উঠে নিজের চোখের পানি মুছে ছুটে যায় দরজা খুলে দিতে। দরজা খুলে হতভম্ব হয়ে যায় নিধি, দরজায় অয়ন কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নিধি আহাম্মক বনে যায়। অজানা ভয় এসে গ্রাস করে তাকে। এদিকে অয়ন নিধিকে এভাবে ভয় পেতে দেখে দাঁত কেলিয়ে বলল,
“তোকে সঙ্গ দিতে চলে এলাম আমি নিধু পাখি।”
বলেই অয়ন এগিয়ে আসে নিধির দিকে।
চলবে?