#শেষ_বিকেলের_আলো(ভ্যাম্পায়ার)
#পর্ব_৯(অন্তিম পর্ব)
#লেখক_দিগন্ত
অতীতের ঘটনাগুলো মনে পড়তেই অনুশোচনা হয় বৈশাখীর। চাইনিজ মহিলার দিকে তাকায়। চাইনিজ মহিলাটি বলে,
-“আমায় চিনতে পারছো বৈশাখী? আমি রিনেই।”
-“হ্যাঁ চিনতে পেরেছি।”
-“অতীত নিয়ে কষ্ট পেওয়া। তুমি আরেকবার সুযোগ পেয়েছ। সেদিন পাহাড় থেকে পড়ে তোমার মৃত্যু হয়নি।তোমাকে যে বেঁচে থাকতে হতো অশুভ শক্তির বিনাশ করার জন্য। তাই তুমি আরেকবার সুযোগ পেয়েছ।”
-“এখন আমার কি করণীয়?”
-“বলছি। সব বলছি। তার আগে তোমার আরো কিংবা কথা জানা উচিৎ।”
-“কি কথা?”
-“তুমি কি জানো যে শুভ আসলে রেইন ছিল।”
-“হ্যাঁ জানি। অতীতে গিয়ে রেইনের চেহারা দেখেই সেটা বুঝে গেছি। কিন্তু আমি এটা বুঝতে পারছি না রেইন আরাভের শরীরে কিভাবে গেল।”
-“আমি তোমাকে সব বলছি। তাহলেই তুমি বুঝতে পারবে। আমার কথা মন দিয়ে শোন, রেইন যখন জানতে পারে তুমি আবার ফিরে নিয়েছ পৃথিবীতে তখন থেকেই তোমাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। কিন্তু আমি ওকে আটকে রেখেছিলাম সঠিক সময়ের জন্য। যখন তোমার ২০ বছর পূর্ণ হয় তখন আমি ওকে তোমার সাথে দেখা করার অনুমতি দেই। কিন্তু নিজের পরিচয়ে নয় কোন মানুষের পরিচয়ে। সেই কারণে রেইন শুভর পরিচয়ে তোমার সামনে আসে। তোমরা আবার একে অপরের প্রেমে পড়ো অতঃপর বিয়ে করে নেও। এই অব্দি সব ঠিক ছিল। কিন্তু শয়তানের নজর পড়ে যায়। শয়তান খারাপ ভ্যাম্পায়ারদের দিয়ে পৃথিবীতে মানুষদের উপর আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। যেই ভাবা সেই কাজ। কিন্তু সেই পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ভালো ভ্যাম্পায়াররা। তুমি হয়তো জানো না হেলেনা, ফরেস্ট ওরা সবাই খারাপ ভ্যাম্পায়ার হয়ে গেছে। যার কারণে রেইন ভালো ভ্যাম্পায়ার আর ফরেস্ট খারাপ ভ্যাম্পায়ারদের কিং হয়। ফরেস্ট রেইনের জন্য কিছু করতে পারছিল না৷ তাই একদিন যখন রেইন শুভ রূপে সাধারণ মানুষ হিসেবে ছিল তখন কৌশলে তাকে মে*রে ফেলার চেষ্টা করে। যদিও সে সফল হয়না কিন্তু শুভর শরীর থেকে তার আত্মা আলাদা হয়ে যায়। আমি শুভর(রেইনের) শরীরটা যত্ন করে রাখি। এদিকে রেইনের অনুপস্থিতিতে ভালো ভ্যাম্পায়াররা নেতৃত্বহীন ও দূর্বল হয়ে যায়। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগায় খারাপ ভ্যাম্পায়াররা। তারা আক্রমণ করে দখল করে গোটা ভ্যাম্পায়ার রাজ্য। অনেক ভালো ভ্যাম্পায়ার তখন খারাপ ভ্যাম্পারের দলে চলে যায়। যারা রাজি ছিল না তাদের হয় মে*রে ফেলা হচ্ছিল আর নাহয় বন্দি করা হচ্ছিল। উপায়ন্তর না দেখে আমি রেইনকে বলি কোন মানুষের শরীর দখল করতে। কারণ রেইনের নিজের শরীরে ফিরতে আরো কিছু সময় লাগত। আর সেইসময় মানুষদের মধ্যে শয়তানের হয়ে কাজ করত আরাভ। শুভ(রেইন) আরাভের সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করে এসব জানতে পেরেছিল। যেই কারণ রেইন সিদ্ধান্ত নিল সে আরাভের শরীরে আশ্রয় নেবে। এর ফলে একদিকে যেমন সে একটা শরীর পাবে অন্যদিকে শয়তানের কাজকেও বাধাগ্রস্ত করতে পারবে।”
-“এবার আমি সব বুঝতে পারছি। কিন্তু রেইন আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছিল কেন?”
-“তোমাকে বাঁচানোর জন্য। কারণ শ*য়তান যদি একবার বুঝে যেত তুমি রেইনের দূর্বলতা তাহলে তোমার ক্ষতি করত। কিন্তু এতকিছু করেও সে শয়তানকে আটকাতে পারল না। সেদিন যখন তুমি জোম্বিদের হাতে ম*রতে বসেছিল সেদিনই রেইন তার নিজের শরীর ফিরে পায়। আর তখন সে গিয়ে তোমাকে রক্ষা করে আনে। এই কারণে শয়তান বুঝতে পারে সবকিছু। শয়তানের পরবর্তী নিশানা হও তুমি। এই কারণে রেইন আবার ফিরে যায় আরাভের শরীরে যাতে শয়তান আরাভের মাধ্যমে তোমার কোন ক্ষতি করতে না পারে। কিন্তু এখন রেইনের নিজের শরীর ফিল আসায় সে আর আরাভের শরীরে একবারের বেশি ফিরতে পারবে না। এখন রেইন ও আরাভের সম্মুখযুদ্ধ হবে৷ আরাভের পাশে রয়েছে শয়তান, ফরেস্ট, খারাপ ভ্যাম্পায়ার ও জোম্বিরা। আর রেইনের পক্ষে আছে সকল ধরনের শুভশক্তি। দেখা যাক কার জয় হয়।”
-“আমি চাই রেইন জিতুক। নাহলে যে আমার করা কৃতকাজের কোন প্রায়চিত্ত হবে না। আমার কারণে শয়তান এত সুযোগ পেয়েছে। এখন শয়তানকে হারাতেও আমাকে কিছু করতে হবে। আচ্ছা কোন কি উপায় নেই শয়তানকে হারানোর?”
-“আছে। আর সেই উপায় হচ্ছো তুমি। তুমি যদি শয়তানকে হারাতে পারো তাহলে পৃথিবীর সব অস্থিরতা দূর হবে। তুমি কি পারবে বৈশাখী?”
-“পারব। আমাকে পারতে হবেই।”
-“ঠিক আছে যাও। শয়তানকে হারিয়ে যুদ্ধে জয়ী হয়ে ফিরে এসো।”
বৈশাখী চলে আসে। সাংহাই শহরে জোম্বি, খারাপ ভ্যাম্পায়ার, আরাভ সবাই পৌছে গেছে। ফরেস্ট খারাপ ভ্যাম্পায়ারদের এবং আরাভ জোম্বিদের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।
জোম্বি ও খারাপ ভ্যাম্পায়ারদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ভালো ভ্যাম্পায়ারদের অনেক বেগ পেতে হচ্ছিল। একসময় তারা যেতার আশা ছেড়েই দেয়।
বৈশাখী তখন যেন আশা হয়ে আসে। বৈশাখী এসেই শয়তানকে আহ্বান করে বলে,
-“কোথায় তুমি শয়তান? এসো আমার সামনে। এর আগে তুমি আমাকে নিজের কথা দ্বারা প্রভাবিত করে আমায় পথভ্রষ্ট করেছিলে। তোমার জন্য আমি ভুল পথে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু এবার আর সেই একই ভুল করব না। পৃথিবী থেকে সকল অশুভ ছায়া দূর করে দেব আমি।”
-“পারবে না, পারবে না তুমি। আমাকে হারাতে তুমি কোনভাবেই সক্ষম হবে না।”
শয়তানের কথায় বৈশাখী হাসে। বলে,
-“কি ভাবে হারাবে আমায়? আগেরবারের মতো আমাকে বশ করতে আর পারবে না তুমি শয়তান। এবার আমি এই পৃথিবী থেকে শয়তানের সব অস্তিত্ব ধ্বংস করে দেব।”
-“দেখি তুমি কি করতে পারো বৈশাখী।”
ফরেস্ট, আরাভ সবাই রেইনের দিকে ছুটে যায়। রেইনকে তারা মা*রতে চায়। বৈশাখী রেইনকে বাঁচাতে যাবে তখনই রিনেই এসে বলে,
-“এখন ঐদিকে যেওনা। এই নাও এই মুক্তা। চিনতে পারছ এটা? তোমাকে এই মুক্তার ভেতর থেকে জ্যোতি বের করে আনতে হবে। তবেই শুধুমাত্র শয়তান হেরে যাবে।”
-“এটা কিভাবে সম্ভব?”
-“তোমায় ধৈর্য ধরতে হবে। জাগতিক সব চিন্তা ভাবনা বাদ দিতে হবে। একমনে প্রার্থনা করতে হবে যেন এই মুক্তাটা থেকে জ্যোতি বের হয়ে আসে। মনে রাখবে শয়তানকে হারানোর এই একটাই শেষ উপায়। কোনভাবেই ধৈর্যহীন হলে চলবে না। ধৈর্য সাহস দুটোই রাখতে হবে মনে। একধ্যানে এই মুক্তার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। শয়তান অনেক চেষ্টা করবে তোমাকে বিচ্যুত করার জন্য কিন্তু তোমার অন্য কোন দিকে খেয়াল করলে চলবে না। যত যাই হোক এই মুক্তা থেকে জ্যোতি বের করার প্রার্থনা করে যেতে হবে।”
বৈশাখী বলে,
-“আমি তাই করব।”
রিনেই বৈশাখীর হাতে মুক্তাটি দেয়। বৈশাখী প্রার্থনা করা শুরু করে। আরাভ, ফরেস্ট রেইনকে নৃশংস ভাবে প্রহার করেছিল। শয়তান বারবার বৈশাখীকে বলছিল, তাকাও সামনে দেখো তোমার রেইবের কি অবস্থা। এই ভালোবাসো তুমি ওকে যে ওর মৃত্যু নিজের চোখে দেখেও কিছু করবে না।
বৈশাখী শয়তানের কোন কথায় আর কান দেয়না। একবার যেই ভুল করেছিল আর সেটার পুনরাবৃত্তি করবে না বৈশাখী। শয়তানও যেন চায় বৈশাখীর ধ্যান ভাঙতে। তাই এবার ফরেস্টকে দিয়ে রেইনের পে-টে ছু*রি ঢুকিয়ে দেয়। বৈশাখীর ধ্যান ভঙ্গ হয়ে যায়।
সে ছুটে যায় রেইনের কাছে। রিনেই বলে,
-“এটা কি করলে তুমি বৈশাখী? শয়তানের ফাদে পা দিয়ে দিলে?”
শয়তান হাসে। বলে,
-“শয়তানকে কেউ হারাতে পারবে না কেউ না।”
তখনই মুক্তা থেকে জ্যোতি বের হয়। বৈশাখী হাসে। বলে,
-“কি ভেবেছিলে শয়তান? বারবার আমি একই ভুল করব। মুক্তা থেকে অল্প অল্প জ্যোতির আভা দেখেই আমি গিয়েছিলাম ছুটে।”
শয়তান জোরে চিৎকার করে। মূহুর্তেই সব খারাপ ভ্যাম্পায়ার ভালো ভ্যাম্পায়ারে পরিণত হয়। সব জোম্বি পুনরায় মানুষে পরিণত হয়। আরাভের উপর থেকেও শয়তানের প্রভাব দূর হয়। শয়তান আবার হেরে যায় শুভ শক্তির কাছে।
এরমধ্যে রেইনের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। রেইন বৈশাখীকে বলে,
-“ভালো থেকো। আমার সময় বুঝি শেষ।”
-“না রেইন আমি তোমার কিছু হতে দেবো না। রিনেই কিছু করো।”
রিনেই একটি বিশেষ ওষুধ দিয়ে রেইনকে সারিয়ে তোলে। রেইন বৈশাখী একে অপরকে আলিঙন করে। রিনেই তাদের বলে,
-“এখন তোমাদের নতুন জীবন শুরু হোক। শয়তানকে হারিয়ে সবাই সুখী হও তোমরা। যুগ যুগ ধরে এভাবেই হারিয়ে দেওয়া হোক শয়তানদের।”
সমাপ্ত