#শেষ_বিকেলের_আলো(ভ্যাম্পায়ার)
#পর্ব_৮
#লেখক_দিগন্ত
বৈশাখী আর রেইন একে অপরের দিকে অবাক হয়ে তাকায়। এক সপ্তাহ ভবিষ্যতে এসে গেছে তারা৷ এরমধ্যে বদলে গেছে অনেক কিছু। ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে এখন চলছে বিয়ের ধুম। যুবরাজ ফরেস্টের সাথে মন্ত্রীকন্যা হেলেনার!
এই বিয়ের খবর শুনে বৈশাখী খুবই অবাক হয় কারণ ফরেস্ট তো সুজিকে ভালোবাসে। বৈশাখী দৌড়ে বাড়িতে ছুটে যায় সুজির কাছে। সুজির ভালোবাসার মানুষটা অন্য কারো হয়ে যাচ্ছে অথচ এই নিয়ে তার মনে কোন দুঃখ নেই। এটা বৈশাখীর ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না। বৈশাখী জানে না এই এক সপ্তাহে কি এমন হয়েছে যে সব এমন বদলে গেল। তাই বৈশাখী সরাসরি সুজিকে জিজ্ঞাসা করে,
-“কি হয়েছে আপু? এমন কেন হলো? যুবরাজ ফরেস্টের বিয়ে হেলেনা আপুর সাথে। কিন্তু তোমরা তো একে অপরকে ভালোবাসো।”
-“আমরা নই শুধু আমি। ফরেস্ট কখনো আমাকে ভালোবাসেনি। ও শুধু ক্ষমতাকে ভালোবেসেছিল। তাই তো রাজা হওয়ার জন্য হেলেনাকে বিয়ে করছে।”
-“মানে?”
-“তুই তো জানিস বৈশাখী যে আমাদের ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে রাণী কে হবে সেটা তার ভাগ্য দেখে নিশ্চিত করা হয়৷ রাজ জ্যোতিষী গণণা করে যাকে রাণী হিসেবে নিযুক্ত করে তাকেই রাজাকে বিয়ে করতে হয়। যেমনভাবে রাজা লিন রাণী ফুলকে বিয়ে করেছিল। রাজার প্রথম দায়িত্ব এমন মেয়েকে বিয়ে করা, রাজা লিন সেটা না করে প্রথমে রিনেই নামে এক মৎস কন্যাকে বিয়ে করেছিল। যার ফলে তার ছোট ভাইকে রাজার আসন থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। তার ছোট ভাই পিনের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল রাণী ফুলের। কিন্তু ফুল স্বেচ্ছায় এতকিছুর পরেও লিনকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল। যার কারণে লিন রাজা হতে পেরেছিল।”
-“তারমানে হেলেন সেই বিশেষ নারী?”
-“হ্যাঁ। আর তুই তো জানিস দুই বোন কখনো সতীন হতে পারে না। তাই যদি ফরেস্ট হেলেনাকে বিয়ে করছে তাহলে ওকে আমায় ভুলে যেতে হবে৷ আর ও ঠিক এটাই করেছে।”
-“এটা কিভাবে সম্ভব?”
-“আমি জানি না। আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না। যা হচ্ছে হোক। ফরেস্টের কাছে যদি রাজা হওয়াটাই সব হয় তাহলে তাই হোক। ও হেলেনাকে বিয়ে করে রাজা হয়ে যাক। আমি আর ভাববো না ওর কথা।”
______
ফরেস্ট একদিন থেকে নিজেকে ঘরে বন্দি করে রেখেছে। তার একটাই কথা কখনো এই বিয়ে করবে না। কিন্তু রাণী ফুল বলেছেন সে এই বিয়েটা না করলে তার মরা মুখ দেখতে হবে। এই কারণে বাধ্য হয়ে ফরেস্ট রাজি হয়েছে বিয়েতে।
রেইন বৈশাখীর কথাই ভাবছে। না জানি কেন সে মেয়েটার কথা এত ভাবছে। রেইন বেরিয়ে পড়ে বাইরে। বৈশাখী রাজমহলের দিকে আসছিল। রেইন তাকে আটকে বলে,
-“এদিকে কোথায় যাচ্ছ?”
-“রাজপুত্র অনেক কথা আছে।”
-“কি কথা?”
-“না আসলে আপনি এভাবে আমায় কি দেখছেন?”
-“দেখছি ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের সবথেকে সুন্দরীকে।”
-“এরকম কথা বলবেন না আমার লজ্জা করছে।”
-“আমার প্রেমিকা হবে তুমি?”
বৈশাখী পুরো অবাক হয়ে যায় রেইনের কথা শুনে। রেইন বলতে থাকে,
-“অনেক আগে থেকেই আমি তোমাকে পছন্দ করি। যেদিন তোমায় প্রথম দেখেছিলাম সেদিন থেকেই। কিন্তু কখনো বলতে পারি নি৷ তোমার সাথে ঝগড়া করতেও আমার ভালো লাগে জানো। তুমি ভালোবাসো আমায়?”
বৈশাখী লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
রেইন বলে,
-“কি হলো চুপ করে আছো কেন বল।”
বৈশাখী হ্যাঁ বলে দৌড়ে রাজমহলে ঢুকে যায়। রেইন হাসতে থাকে।
আজই হেলেনা আর ফরেস্টের বিয়ের দিন। এই বিয়ে নিয়েই এত উৎসব এত আয়োজন। বৈশাখী সরাসরি ফরেস্টের কাছে যায়। ফরেস্ট নিশ্চুপ হয়ে ছিল। বৈশাখী রেইনকে গিয়ে বলে,
-“আপনি তো সুজি আপুকে ভালোবাসেন যুবরাজ। তাহলে হেলেনা আপুকে কেন বিয়ে করছেন?”
-“আমি একজন যুবরাজ। আমার কাছে সবার আগে আমার রাজ্য। আর কিছু বলতে আমি বাধ্য নই। চলে যাও আমার সামনে থেকে।”
বৈশাখী কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায়। চুপচাপ চলে আসে। হয়তো আর কিছু আটকানো যাবে না।
হেলেনাও এই বিয়েতে খুব খুশি। রাণী হতে পারবে সে এর থেকে বেশি আনন্দের আর কি হতে পারে? হেলেনার খুশি আজ লাগামহীন।
নিজের খুশিতে সুজির চোখের জল তার চোখের আড়াল হয়ে গেছে। তারও বা দোষ কি? হেলেনা তো আর জানত না সুজি ফরেস্টকে ভালোবাসে। সুজিও এটা তাকে বলেনি। বলেও বা কি লাভ রাণী ফুল, রাজা লিন, সুজির মা বাবা সবাই এই বিয়েয়া চায়। সেখানে হেলেনা-ফরেস্টের চাওয়া না চাওয়ার কোন মূল্য নেই।
অবশেষে তাদের বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়। হেলেনা আর ফরেস্টের বিয়ে হয়ে যায়। সুজি চোখের জলে বিদায় জানায় তার ভালোবাসাকে।
ফরেস্টের বুক ফেটে যাচ্ছে, কিন্তু সে কিছু করতেও পারছে না। এবার ফুল মনে মনে অন্য পরিকল্পনা আটছে। সেদিনের বৈশাখীর উপর রাগ মেটানোর উপায় তিনি পেয়ে গেছেন। বৈশাখী যে রেইনকে বাচিয়েছিল এই জন্য তিনি রেগে আছেন।
ফুল জেনে গেছে বৈশাখী একজন মানুষ। বিয়েটা হয়ে যাওয়ার পর সব প্রমাণ সবার সামনে দেখায় যে বৈশাখী মানুষ। কারণ বৈশাখী উড়তে পারে না, এছাড়া তার শরীর চেক করে মানুষের রক্ত পাওয়া যায়।
রাজা লিন খুব রেগে যায়। তিনি আদেশ দেন,
-“এর শাস্তি পেতে হবে মন্ত্রী জিয়ান এবং তার স্ত্রীকে। এই মেয়েটার কোন দোষ নেই তাই এই মেয়েটাকে কিছু বলা হবে না। ও তো ইচ্ছে করে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে আসে নি। ওকে রাজ্য থেকে বের করে দিলে হবে। কিন্তু মন্ত্রী জিয়ান আর তার স্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ডর আদেশ দিলাম। এটাই বিশ্বাসঘাতকতার ফল।”
রাজার আদেশমতো সব হয়। বৈশাখীকে টেনে টেনে রাজ্য থেকে বের করে দেওয়া হয়৷ বৈশাখী বারবার চিৎকার করে বলছিল তার মা বাবাকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়। সুজি,হেলেনাও কাদছিল। সবার সামনে মন্ত্রী জিয়ান আর তার স্ত্রী হৃদিকে আনা হয়। হৃদি জিয়ানকে বলে,
-“দেখলে তো আমার কথাই সত্য হল। ঐ মেয়েটার জন্য আজ আমাদের এই পরিণতি।”
রাজা লিনের আদেশে সাথে সাথে দুজনের বুকে ছু*রি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। মুহুর্তেই দুজনে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সুজি জোরে শব্দ করে কাঁদছিল। হেলেনা,ফরেস্ট,রেইন চাইলেও কিছু করতে পারে না।
বৈশাখীকে ভ্যাম্পায়ার রাজ্য থেকে বাইরে এনে ফেলা হয়। বৈশাখী এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না যে তার মা-বাবাকে এভাবে ম*রে যেতে হলো শুধুমাত্র তাকে পালন করার জন্য।
বৈশাখীর কানে আসে কারো গলা। বৈশাখীকে কেউ বলে,
-“তুমি প্রতিশোধ নিতে চাওনা?”
বৈশাখী বলে,
-“চাই।”
-“তাহলে চলে এসো শয়তানের দলে।”
-“না আমি যাবো না।”
-“যারা তোমাকে ছোট থেকে মানুষ করার বিনিময়ে জীবন দিয়ে দিল তাদের প্রতি কোন কর্তব্য নেই তোমার? তাদের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে চাওনা?”
-“না চাই না।”
-“তাহলে তোমার মা-বাবার আত্মা শান্তি পাবে না।”
শয়তানের মায়া বৈশাখী দেখে জিয়ান ও হৃদি তাকে এসে বলছে প্রতিশোধ নিতে। এতে বৈশাখী প্রভাবিত হয়। বলে,
-“হ্যাঁ আমি প্রতিশোধ নেব। আমি শয়তানের পক্ষ বেছে নিলাম।”
শয়তান খুশি হয়। একটি বাঁশি তুলে দেয় বৈশাখীর হাতে আর বলে,
-“ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে গিয়ে এই বাঁশি বাজাও।”
বৈশাখী ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের কাছে গিয়ে বাঁশি বাজাতে শুরু করে। যার ফলে রাজ্যের বাইরে পাহারারত সৈনিকেরা শয়তানের বসে চলে আসে। এভাবে চলতে চলতে বৈশাখী রাজমহলে চলে যায়।
রিনেই তখন এসে বলে,
-“বৈশাখী এমন করো না। তুমি শয়তানের বসে চলে গেছ। তুমি সঠিক পথে ফিরে এসো।”
বৈশাখী সেই কথা অগ্রাহ্য করে রাজপ্রাসাদে ঢুকে যায়। গিয়ে রাজা লিনের মুখোমুখি হয়ে বলে,
-“আমি আজ প্রতিশোধ নেবোই। আপনি আমার মা-বাবাকে মে*রে ফেলেছেন। এবার আপনার পালা।”
বলে বাঁশি বাজাতে শুরু করে। রেইন এসে বলে,
-“থামো বৈশাখী তুমি ভুল করছ।”
-“আমি কোন ভুল করছি না। আমাকে প্রতিশোধ নিতে হবে৷ নাহলে আমার মা-বাবা শান্তি পাবে না।”
লিনের আদেশে একজন সৈনিক এসে বৈশখীকে ছু*রিকাঘাত করতে চায়। কিন্তু সুজি সামনে চলে আসে। যার ফলে সুজির বুকে ছু*রি ঢুকে যায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সুজি। বৈশাখী সুজিকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে। সুজি বলে,
-“তুই শয়তানের বশ থেকে বেরিয়ে আয় বোন।”
কথাটা বলেই সুজি মারা যায়। বৈশাখীর রাগ এবার আরো বেড়ে যায়। সুজির বুক থেকে ছু*রি বের করে রাজা লিনের বুকে চালিয়ে দেয়। মারা যান তিনি।
বৈশাখীকে রেইন এসে থা*প্পড় দেয়। বৈশাখীর ধ্যান ভাঙে সে বোঝে সে শয়তানের বশে। এখন সে বেঁচে থাকলে আরো খারাপ কিছু হতে পারে তাই আর বেশি কিছু না ভেবে দৌড় লাগায়। দৌড়ে একটি পাহাড়ের কাছে আসে। পাহাড়ে এসে লাফ দেয়। রেইন দৌড়ে এসে তার হাত ধরে নেয়। বৈশাখী বলে,
-“আমায় ছেড়ে দিন নাহলে শয়তান জিতে যাবে।”
রেইন কিছুতেই ছাড়তে চায়না। বৈশাখী জোরপূর্বক ছাড়িয়ে নেয়। তারপর পড়ে যায় পাহাড় থেকে।
এই ঘটনার পর থেকেই যারা শয়তানের বসে চলে গিয়েছিল তারা খারাপ ভ্যাম্পায়ার হয়ে যায়।
(চলবে)