#শেষ_বিকেলের_আলো🌅
#সূচনা_পর্ব
#লেখক_দিগন্ত
স্বামীর মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তারই খু নিকে বিয়ে করছে বৈশাখী। ব্যাপারটা অনেকের কাছে অদ্ভুত আবার হাস্যকর লাগতে পারে কিন্তু বৈশাখী তার লক্ষ্যে স্থির।
কাজী সাহেব যখন কবুল বলতে বললেন তখন বৈশাখী অন্য মেয়েদের মতো অপেক্ষা করল না। চটজলদি বলে দিল, “কবুল”
বিপরীত পার্শ্বে বসে থাকা আরাভ খুব অবাক হয় বৈশাখীর এমন ব্যবহারে। তার মনে পড়ে একদিন আগে এই মেয়েটাই আরাভকে বলেছিল,
-“আমি তোমাকে শে*ষ করে দেবো আরাভ। তুমি আমার শুভকে মে*রে ফেলেছ আমি এর প্রতিশোধ অবশ্যই নেব।”
বৈশাখীর এই আমুল পরিবর্তনে খুশি হয় তার বাবা বিশাল হোসাইন। কারণ তিনি কখনোই শুভকে নিজের মেয়ের স্বামী হিসেবে মেনে নেননি, শুভ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে ছিল এইজন্য। যেখানে আরাভ অনেক কম বয়সেই বিজনেস টাইকুন হয়েছে তাও আবার নিজের চেষ্টায়।
বিশাল হোসাইন আরাভের হাতে বৈশাখীকে তুলে দিয়ে বলেন,
-“আমার মেয়েটাকে তুমি দেখে রেখ আরাভ। অনেক আদরের মেয়ে আমার। জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করেছে আর যেন ওর জীবনে কোন কষ্ট না আসে।”
আরাভ বিশাল হোসাইনকে কথা দেয়, -“আমি বেঁচে থাকতে বৈশাখীকে কোন কষ্ট পেতে দেবো না। আপনার চিন্তা করার দরকার নেই আঙ্কেল।”
বিশাল হোসাইন ভরসা পান আরাভের কথায়। নিশ্চিন্তে নিজের একমাত্র সন্তানকে তুলে দেন আরাভের হাতে। শুভর মৃত্যুর পর থেকে বৈশাখীকে কষ্টে থাকতে দেখেছেন বিশাল হোসাইন। তাই এখন তার আশা আরাভ তার মেয়ের সব কষ্ট দূর করে দিক।
আরাভের দামী গাড়িতে উঠে বৈশাখীর অস্বস্তি হচ্ছিল। সে তো কখনও এত ভালো লাইফস্টাইল চায়নি। শুভর সাথে রিক্সাতে করে ঘুরে বেড়িয়ে যে সুখ সে পেত আরাভের দামী গাড়িতে সেই সুখ নেই।
আরাভ বৈশাখীর অস্বস্তিটা বুঝতে পেরে ভ্রু কুচকে তাকায় তার দিকে। বৈশাখী আরাভের এরকম তাকানো দেখে বলে,
-“আমায় এভাবে দেখার কিছু হয়নি। কি ভেবেছিলে তুমি শুভকে মে*রে ফেললেই আমাকে পেয়ে যাবে? ভুল ভেবেছ তুমি মিস্টার আরাভ চৌধুরী। আমাকে কখনো তুমি নিজের করে পাবেনা। আমাকে নিজের অন্ধকার জিবনে আলো হিসেবে পেতে চেয়েছিলে তাইনা? হ্যাঁ আমি এসেছি শেষ বিকেলের আলো নিয়ে। শেষ বিকেলের আলো মানে বোঝো? সেই আলো যার তেজ থাকে সবথেকে বেশি। আর সেই তেজেই তুমি ঝলসে যাবে।”
বৈশাখীর কথা শুনে আরাভ হাসে। সে তো এমন কিছুই আন্দাজ করছিল। আরাভকে এভাবে হাসতে দেখে বৈশাখী মোটেও খুশি হয়না। এই হাসিটা কেড়ে নেওয়ার জন্যই তো সে আরাভকে বিয়ে করেছে। বৈশাখীকে টেনে গাড়িতে তোলে আরাভ। গাড়ি চালিয়ে কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে তারপর গাড়ি থামিয়ে আবার হাসতে থাকে।
হাসতে হাসতেই আরাভের চোখ লাল হয়ে যায়। বৈশাখী সেই চোখের দিকে তাকিয়ে শিউরে ওঠে। আরাভও ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে বৈশাখীর দিকে৷ ফিসফিসিয়ে বলে,
-“আমি আরাভ নই, আমি রেইন। ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের কিং। আমার সাথে লাগতে এসোনা। এর ফল একদম ভালো হবে না।”
বৈশাখী অবাক হয় আরাভের কথা শুনে। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
-“এসব কি তোমার নতুন নাটক আরাভ?”
বৈশাখীর কথায় প্রচণ্ড রেগে যায় রেইন। রেগে বৈশাখীর গ*লা টি*পে ধরে। বৈশাখী অবাক হয়ে যায়। রেইন চিৎকার করে বলে,
-“আমি কোন আরাভ নই। আরাভের শরীর এখন আমার দখলে। আমি শেষ বিকেলের তীক্ষ্ণ আলো সহ্য করতে পারি না। তাই শুধু ঐ সময়টুকু আরাভের শরীর আরাভকে ফিরিয়ে দেই। তাছাড়া এই শরীরে পুরোটা সময় জুড়ে রয়েছি আমি।”
-“কি উদ্দ্যেশ্য তোমার? কেন আরাভের শরীর দখল করে আছ?”
-“সেটা তোদের মতো সাধারণ মানুষ বুঝবি না। আরাভই আমায় এখানে নিয়ে এসেছে। তাই এখন আরাভকে তো ভুগতেই হবে।”
রেইনের কথা শুনে বৈশাখী ব্যাপারটা কিছুটা আন্দাজ করতে পারে। আসলে আরাভ একটা গোপন মিশনের সাথে যুক্ত ছিল। সেই মিশনটা ছিল ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের সাথে কোনভাবে যোগাযোগ করা। আরাভ ছোটবেলায় একবার ভ্যাম্পায়ার দেখেছিল। তখন থেকেই তার ইচ্ছে একদিন ভ্যাম্পায়ারদের রাজ্যে যাবে।
আর এই মিশনেই আরাভের সাথে কাজ করত শুভ। এটা একটা গোপন মিশন ছিল তাই কেউ জানতো না। বৈশাখী শুভর মৃত্যুর পর তার ডায়েরি ঘেটে এসব জানতে পারে।
বৈশাখী রেইনকে প্রশ্ন করে,
-“তুমি শুভকে মে*রে ফেলেছ তাইনা?”
-“কে শুভ? আরাভের ঐ চ্যালাটা? হ্যাঁ ওকে আমিই মে*রেছি।”
এটুকু শোনাই যথেষ্ট ছিল বৈশাখীর জন্য। সে শপথ করে নেয়,
-“এই রেইনকে আমি উচিৎ শিক্ষা দেব। আমার শুভকে ঐ মে*রে ফেলেছে আর আমি এতদিন আরাভকে দোষী ভেবেছি। এখন আমার উদ্দ্যেশ্য যে করেই হোক রেইনকে মে*রে আরাভকে ফিরিয়ে আনা।”
রেইন হঠাৎ করে গাড়ি থেকে নেমে যায়। বৈশাখী কিছু বুঝতে পারে না। কিছুক্ষণ পর রেইন ফিরে আসে। তার চেহারা অনেক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল৷ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল রেইনের চোখ এখন আগের থেকে আরো বেশি রক্তিম হয়ে গেছে। অনেক দূর্বল লাগছিল তাকে। বৈশাখী মনে সাহসের সঞ্চার করে বসে ছিল। সে শুনেছিল ভ্যাম্পায়াররা যখন রক্তপিপাসু হয়ে ওঠে তখন তাদের অবস্থা এমন হয়ে যায়। তাহলে কি রেইন এখন রক্তপিপাসু হয়ে গেছে? বৈশাখী ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যায়।
রেইনকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে বৈশাখীর আত্মারাম খাচাছাড়া হওয়ার জোগাড়। তখনই বৈশাখীকে ভুল প্রমাণ করে একটা জুসের বোতল নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নেয় রেইন। জুসটা খাওয়ার পর রেইনের অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে আসে।
বৈশাখী ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে দেখে এটা কিসের জুস। বৈশাখী অবাক হয় দেখে যে এটা তো প্রাণ ফ্রুটো। জুসটা দেখে শুভর কথা মনে পড়ে যায় বৈশাখীর। তারও খুব প্রিয় ছিল এই জুসটা।
রেইন পুনরায় গাড়ি চালাতে শুরু করে। বৈশাখী নিশ্চুপ থাকে গোটা রাস্তায়। আরাভদের বাড়িতে পৌছে গাড়ি থামায়। রেইন বৈশাখীকে সাবধান করে বলে,
-“মনে রাখবি তুই যেটা জানিস সেটা যেন আর কেউ না জানে। আমাকে সবসময় আরাভ বলে ডাকবি। আমার নাম রেইন সেটা শুধু যখন আমরা একসাথে থাকব তখন। বাকি সময় আমি আরাভ।”
বৈশাখী বিনাবাক্যে মেনে নেয় রেইনের চাপানো সব শর্ত। রেইন হাত বাড়িয়ে দেয় বৈশাখীর দিকে। বৈশাখী রেইনের হাতটা ধরে নেয়। একসাথে বাড়ি প্রবেশ করে। আরাভের মা শাবানা খাতুন বের হয়ে আসেন। আরাভ আর বৈশাখীকে একসাথে দেখে হাসিমুখে বলে,
-“অবশেষে আমার ছেলের এতদিনের ইচ্ছেটা পূরণ হলো। বৈশাখীকে নিজের বউ হিসাবে চেয়েছিল সবসময়। এসো ভেতরে এসো তোমরা।”
রেইন শক্ত করে বৈশাখীর হাতটা ধরে তাকে ভেতরে নিয়ে আসে। আরাভের দুই বোন আলিসা এবং আলিয়াও চলে এসেছে তাদের ভাবিকে দেখার জন্য। আলিয়া বৈশাখীর বান্ধবী সেই কলেজ থেকে। আলিয়ার মাধ্যমেই বৈশাখীর সাথে আরাভের পরিচয়। নিজের বান্ধবীকে সবসময় ভাইয়ের বউ হিসেবে দেখতে চেয়েছিল সে। তাই আজ আলিয়া খুব খুশি।
অপরদিকে আলিসা একটুও খুশি নয়। আলিসা সবেমাত্র ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছে। বইপোকা গম্ভীর মেয়ে সে। কিন্তু নিজের ভাইকে অনেক ভালোবাসে। আলিসার মনে হয় বৈশাখীর মতো একটা বিধবা মেয়ের সাথে তার ভাইকে মানায় না।
বৈশাখী অবাক হয় রেইনের অভিনয় দেখে। আলিয়া এবং আলিসার সাথে কিরকম ভাইবোনের সাথে মিশে গেছে। আলিয়া বলে,
-“আমার কিন্তু ট্রিট চাই ভাইয়া। তুমি বিয়ে করে নিয়েছ তাও আবার নিজের পছন্দের মেয়েকে। এখন নিজের বোনের দিকটাও একটু দেখ।”
রেইন আলিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
-“অবশ্যই বল তোর কি লাগবে। আলিসা তুইও বল।”
-“আমার কিছু চাই না।”(আলিসা)
শাবানা এগিয়ে এসে বৈশাখীকে বলে,
-“চলো বৈশাখী তোমার রুমে চলো।'”
-“আমার রুম মানে?”
-“আরাভের রুমই তো এখন তোমার রুম।”
-“মাফ করবেন কিন্তু আমি ওনার সাথে একরুমে থাকতে পারবো না। আমার জন্য অন্য রুমের ব্যবস্থা করুন।”
-“এটা কেমন কথা? তোমরা তো স্বামী স্ত্রী। একরুমে থাকাই তো নিয়ম। আলাদা থাকবে কেন?”
রেইন বলে ওঠে,
-“ও যা বলছে তাই করো মা।”
আলিসা খুব রেগে গিয়ে বলে,
-“আমার ভাইকে একদিনেই বশ করে নিল এই মেয়ে।”
-“আমাকে বশ করা এত সহজ নয়।”
কথাটা বলে বৈশাখীর দিকে তাকায় রেইন। তার চোখ লালবর্ণ ধারণ করে। বৈশাখী ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।
শাবানা বৈশাখীকে নিয়ে অন্য একটা রুমে রেখে আসে। রুমে এসেই পরনের বেনারসি পরিবর্তন করে লাল রংয়ের একটা সালোয়ার কামিজ পড়ে নেয় বৈশাখী।
খুব ক্লান্তি লাগছিল তাই বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই য়ার চোখে এসে রাজ্যের ঘুম ধরা দেয়।
আরামসে ঘুমানোর পর যখন ঘুম ভাঙে তখন চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে পড়ে বৈশাখী। চোখ মেলে তাকেই এমন কিছু দেখে যাতে তার পিলে চমকে যায়!
চলবে।