শেষ পরিণতি পর্ব-২১ এবং শেষ পর্ব

0
1963

#শেষ_পরিণতি
সিজন ২
#শেষ_পর্ব

প্লান অনুযায়ী ড্রাইভারকে বাবার কাছে পাঠিয়ে দিলাম।
মনে মনে বললাম..
তোমার জন্য একটা অদ্ভুত শাস্তির ব্যবস্থা করেছি নীলিমা।
.
.
.
ঘন্টা দুয়েক পরই রাসায়নিক আমার চলে আসে।
আমিও সুযোগের অপেক্ষা করতে থাকি ।
সন্ধ্যার পর আমি নীলিমাকে হালকা চা নাস্তা বানাতে বলি।
ও যখন কিচেনে চলে যায় তখন আমি রাসায়নিকটা সঙ্গে নিয়ে চুপিচুপি নীলিমার রুমে চলে যাই।
ছোট থেকেই নীলিমা রাতে গেঞ্জি পরে ঘুমায়, গেঞ্জির নিচে আর কিছুই পরে না।
তাই কি করা উচিৎ তা নিয়ে বেশি ভাবতে হয়নি আমার।
নীলিমার রুমে গিয়ে আমি রাসায়নিকটা ওর গেঞ্জিতে ভালো করে মিশিয়ে ঝটপট চলে আসি নিজের রুমে।
রুমে এসে শান্তিতে দু’চোখ বন্ধ করি।
তবে পূর্ণ শান্তি আমি ততক্ষণ পাচ্ছি না, যতক্ষণ না আমার উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে।
.
.
পরদিন সকাল।
আমি আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গিয়েছি। নীলিমার অবস্থা দেখার জন্য আর তর সইছে না।
কিন্তু সকাল ৯ টা বেজে গেছে এখনো নীলিমার কোনো খোঁজ নেই।
ধৈর্য্য ধরে বসে থাকতে না পেরে আমি নীলিমার রুমের সামনে চলে গেলাম।
দরজায় কয়েকবার নক করতেই নীলিমা দরজা খুলে দিলো।
নীলিমার দিকে তাকিয়ে আমার মনটা পৈশাচিক আনন্দে নেচে উঠলো।
আমি দেখলাম ওর হাত মুখ অনেক ফুলে উঠেছে।
গাল জুড়ে আঁচড়ের দাগ।
জায়গায় জায়গায় রক্ত জমে কালো হয়ে গেছে।
আমি আনন্দটা মনের ভেতরেই চেপে রেখে নীলিমাকে বললাম,
-কি রে বোন কি অবস্থা তোর! এমন হলো কি করে।
প্রতিত্তোরে নীলিমা বললো,
-জানিনা। কাল রাত থেকেই এই অবস্থা। চুলকাতে চুলকাতে আমি শেষ।প্রথমে পুরো গা চুলকালো। এরপর আমার হাত যেখানে লেগেছে সেখানেই চুলকানি শুরু হয়েছে। ল হঠাৎ করে এমন কেন হলো বুঝতে পারছি না।
-এলার্জির কোনো খাবার খেয়েছিলি হয়তো।
– না তুবা। রাতে আমি তেমন কিছুই খাইনি। আর এগুলো এলার্জি না। দেখ না আমার সমস্ত শরীরে কালো হয়ে গেছে চুলকাতে চুলকাতে। আর দেখ, কাঁধ থেকে তো রীতিমতো রক্ত পরা শুরু হয়েছে। এটা বলে নীলিমা পেছন থেকে ওর চুলগুলো সরিয়ে আমার দিকে পিঠ ঘুরিয়ে দাঁড়ায়। ওর পিঠের দিকে তাকিয়ে আমি চমকে উঠি।
কাঁধের কাছে অনেকগুলো ফোস্কা পড়েছে।
চুলকাতে চুলকাতে সেখানের মাংস কিছুটা উঠেও গেছে।
যার কারণে রক্ত বের হচ্ছে।
কিন্তু ক্যালসিয়াম অক্সালেটে তো ফোস্কা পরার কথা না। রাসায়নিকটা লাগলে অসহ্য মাত্রায় চুলকায় কিন্তু ফোস্কা পরে না।
তাছাড়া আমি সেদিন রাজনের হাতেও এমন ফোস্কা দেখেছি।
যদিও সে ব্যাপারে রাজনকে কিছু জিজ্ঞেস করা হয়নি।
আমি চিন্তিত কন্ঠে নীলিমাকে বললাম,
– তোর কাঁধে এমন ফোস্কা পড়লো কিভাবে?
-কোথায় ফোস্কা?
-এইযে তোর কাঁধে। ফোস্কাগুলো থেকেই রক্ত বের হচ্ছে। চুলকিয়ে একদম মাংস উঠিয়ে ফেলেছিস।
নীলিমা বলে,
-কাল রাতেই মনে হয় হয়েছে। চুলকাতে চুলকাতে ফোস্কাও পরেছে।
আমি আর নীলিমাকে কিছু বললাম না।
” ইনফেকশন হওয়ার আগে তুই একজন ভালো ডাক্তার দেখা” বলে আমি বের হয়ে আসি।
.
.
রুমে এসে আমি ল্যাপটপ বের করে গুগলে ঢুকি।
রাজন এবং নীলিমার একই ধরনের সমস্যা আমার স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। তাই বিস্তারিত গুগল থেকে সার্চ করে জেনে নেওয়াই ভালো।

আমি বেশ কিছুক্ষণ গুগলে রিসার্চ করে “সিফিলিস ” রোগ সম্পর্কে জানতে পারলাম।
এখন বুঝলাম, হঠাৎ রাজনের এতো ভালো হয়ে ওঠার কারণ। নীলিমার হাবভাব দেখে মনে হলো, ও তার এমন ভয়াবহ রোগ সম্পর্কে নিজেই জানেনা।
আল্লাহ পাপীদের শাস্তি দিয়ে দিয়েছেন। ভয়াবহ শাস্তি।
তবে আমি চাই নীলিমা তার রোগ সম্পর্কে জানুক।
রোগের দ্বারা হলেও, নিজের করা পাপের উপর সে অনুতপ্ত হোক। রোগটার কথা জানার পরেই শুরু হবে তার আসল শাস্তি।
আমি ল্যাপটপ টা বন্ধ করে ডাইনিং রুমে এসে বসলাম।
কিছুক্ষণ পরে নীলিমা হিজাব দিয়ে মুখটুখ একদম ঢেকে বের হলো।
কোথায় যাচ্ছে জিজ্ঞেস করলে নীলিমা জানালো সে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে।
নীলিমা যাওয়ার পরে আমি সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে লাগলাম।
আমার বেবির উছিলায় আল্লাহ এ যাত্রায় আমাকে এমন কঠিন রোগ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।
কন্সিভ করার পর থেকে রাজনের সাথে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হইনি আমি। তখনই এ বাসায় নীলিমার আগমন।
রোগটা নীলিমার থেকেই রাজনের হয়েছে।
উফফ ভাবতেই শরীরটা শিউরে উঠলো।
.
.
.
রান্নাঘরের সবকিছু নতুন বুয়াকে বুঝিয়ে দিলাম।
নীলিমার বানানো যেকোনো খাবার আমার জন্য বিপদজনক । ও এখন পদে পদে আমাকে বিপদে ফেলতে চেষ্টা করবে। আমি আর কোনো রিস্ক নিতে চাইনি তাই কাল বিকালেই রান্নার জন্য আমি নতুন একজন বুয়া ঠিক করে ফেলেছিলাম।
দুপুরে কি কি রান্না করতে হবে বুয়াকে জানিয়ে আমি আমার শ্বাশুড়িমার কাছে গিয়ে বসলাম।
মা এখন আগের মতো কথা বলতে পারেন।
হাঁটতে একটু সমস্যা হয় তবে ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।
আমি শ্বাশুড়িমার সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে তার হাত ধরে বললাম,
-যদি কিছু মনে না করেন, একটা প্রশ্ন করবো মা?
মা হ্যাসূচক জবাব দিলে আমি বলি,
-যদি কখনো এমন সময় আছে আপনার খুব কাছের কেউ, কোন প্রিয় কারো- ধরুন আপনার ছেলের জন্য থাকবে কঠিন অপরাধের শাস্তি, আপনি কি করবেন?
আমার প্রশ্ন শুনে তার মুখটা নিমিষেই কালো হয়ে গেলো।
আমি হেঁসে দিয়ে বললাম,
-মা এতো চিন্তা করার কিছু হয়নি আমি
এমনিতেই প্রশ্নটা করলাম।
আমার এ কথায় মার চেহারার মাঝে কোনো পরিবর্তন আনলো না। তাকে দেখে মনে হচ্ছে কোনোকিছু নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছে।
মাকে চুপ করে থাকতে দেখে আমি আবারও কিছু বলতে যাবো ঠিক তখন কলিংবেলটা বেজে উঠলো।
কলিংবেলের শব্দ শুনে বুয়া দরজা খুলে দিতেই হন্তদন্ত হয়ে আমার শ্বশুর ভেতরে প্রবেশ করলেন।
বাবাকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি খুব রেগে আছেন।
.
.
.
এদিকে ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে নীলিমা।
ডাক্তার রিপোর্ট হাতে নিয়ে নীলিমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
– আপনি কি বিবাহিত?
নীলিমা মাথা নেড়ে না-সূচক জবাব দেয়।
-তাহলে আপানার কোনো সঙ্গী আছে?
ডাক্তারের প্রশ্নে নীলিমা একটু রাগ হয়ে বলে,
-পারসোনাল বিষয় নিয়ে প্রশ্ন কেন করছেন ডাক্তার? আমার রোগ সম্পর্কে বলুন।
নীলিমার কথা শুনে রিপোর্টটা তার হাতে দিয়ে ডাক্তার বলেন,
-কারণ আপনার রোগটাই এমন।
আপনার সিফিলিস রোগ ধরা পরেছে। এটা এক ধরনের যৌন রোগ। একাধিক পুরুষের সাথে ফিজিক্যালি মিলিত হলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আপনার সঙ্গী হয়ত এই রোগে আক্রান্ত, তাই আপনিও ইফেক্টেড।
এটা ধীরে ধীরে মারাত্মক রুপ ধারণ করে।
ডাক্তারের কথা শুনে নীলিমা দুশ্চিন্তায় পরে যায়।
ডাক্তার কিছু ঔষধ লিখে দেন, এবং কি কি করণীয় সেটাও বলে দেন।
প্রেসক্রিপশন নিয়ে উদাস মনে নীলিমা বেরিয়ে যায় হসপিটাল থেকে।
.
.
.
আমি, শ্বশুরআব্বা, আর আমার শ্বাশুড়িমা বসে আছি সোফায়।
আমার শ্বশুর মশাইয়ের বলা কথাগুলো বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
একটা মানুষ কিভাবে এতো খারাপ হতে পারে আমার জানা নেই।
আমাদের আলোচনার মাঝে কলিংবেল বেজে ওঠে। বুঝতে পারি নীলিমা এসে গেছে।
বুয়া দরজা খুলে দিলে নীলিমা মাথানিচু করে ধীরপায়ে ওর রুমের দিকে এগিয়ে যায়।
আমাদের অতিক্রম করে যাওয়ার সময় আমার শ্বশুর মশাই বলে ওঠেন,
-ডাক্তার আজিজকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে নীলিমা।
বাবার কথা শুনে নীলিমা থমকে দাঁড়ায়।
বাবা আবারও বলেন,
-খুব ভয় পেলে গেলে তাই না? ভাবছো পালাতে এতো সাহায্য করার পরেও ডাক্তার ধরা পরলো কিভাবে?
নীলিমা কাঁপতে কাঁপতে আমাদের দিকে ফিরে দাঁড়ায়, তারপর কম্পিত কন্ঠে বলে,
-ডাক্তার ধরা পরেছে সেটাতো ভালো কথা। কিন্তু আমাকে এভাবে বলছেন কেন? আমি কেন ডাক্তারকে পালাতে সাহায্য করবো?
-ডাক্তার পুলিশের কাছে তার জবানবন্দি দিয়েছেন। মাজেদাকে অসুস্থ করে রাখার পেছনে যে তোমার হাত সেটা তিনি স্বীকার করেছেন।
নীলিমা এবার রীতিমতো ঘামতে শুরু করলো।
হিজাব দিয়ে কপাল মুছে তোতলাতে তোতলাতে বললো,
-ডাক্তার যে সত্যি বলেছে তার প্রমাণ কি? সে তো আমাকে কারও কথায় ফাঁসাতেও পারে।
আগে প্রমাণ আনুন তারপর আমাকে দোষারোপ করবেন।
নীলিমার কথা শেষ হতেই আমার শ্বাশুড়িমা বলে ওঠেন,
-একদম চালাকি করবে না। তুমি শুধু আমাকে ভুল ঔষধ খাইয়েছো সেটা নয়, আমার এক্সিডেন্টের জন্যও তুমি দায়ী, সেটা আর কেউ না জানুক আমি জানি।
আমি নিজেই নিজের সাক্ষী।
মার কথা শুনে আমি বাবা দু’জনেই অবাক হয়ে গেলাম।
আমি মাকে প্রশ্ন করলাম,
-আপনার এক্সিডেন্টের জন্য নীলিমা দায়ী মানে?
মা আমার প্রশ্নের উত্তরে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলেন।
নীলিমা ঘাবড়ে আছে অনেক।
ভীতু দৃষ্টিতে মার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার ধারণা যদি সঠিক হয়, নীলিমাই মাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।
বাবা নীলিমাকে প্রচন্ড বকাবকি করে যাচ্ছেন।
আমি বাবাকে থামিয়ে বললাম,
-শুধু ডাক্তারের কথা যদি পুলিশ মেনে না নেয়, আমিও আছি সাক্ষী হিসেবে।
ডাক্তারকে যেই টাকা দেওয়া হয়েছিলো, সেটা নীলিমা আমার আলমারি থেকেই চুরি করেছিলো।
কথাটা বলে আমি উঠে রুমে চলে যাই।
.
.
রুমে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছি আমি।
বাইরে নীলিমার কান্নাকাটির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
বাবা মার পা ধরে ক্ষমা চাচ্ছে। শেষবারের মতো সে একটা সুযোগ চায়।
আমি দুচোখ বন্ধ করে অনেককিছু ভাবতে থাকি।
তখনই রুমে প্রবেশ করে নীলিমা।
এসেই আমার পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
-আমাকে ক্ষমা করে দে তুবা।
আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। কি করবো বল! তুই তো জানিস আমার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই । আর তোর শ্বাশুড়িও আমাকে বার বার বলতেন বাসা ছেড়ে চলে যেতে। তাই সেদিন তোর শ্বাশুড়ি এক্সিডেন্ট হওয়ার পরে ভেবেছিলাম এখানে থাকার এই একটাই সুযোগ।
আমাকে মাফ করে দে তুবা। আমি নিজেকে শুধরে নেবো।তুইতো আমার বোন। তোর কোনো ক্ষতিতো আমি করিনি, বরং সবসময় তোর খেয়াল রেখেছি।তোকে আমি খুব ভালোবাসি তুবা। তোর বোনকে কি তুই মাফ করবি না?
নীলিমার কথার উত্তরে আমি চোখ বন্ধ করেই বললাম,
– রাজনের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিওটা যে তুই পাঠিয়েছিলি সেটা আমি জানি। এমনকি ভিডিওটার মেয়েটাও যে তুই সেটাও আমার অজানা নয়।
আমার কথা শুনে নীলিমা একদম চুপ হয়ে গেলো।
তারপর কিছু না বলে চুপচাপ করে বসে রইলো অনেক্ষন
এরপর উঠে আমার রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
.
.
পুরো ঘরে থমথমে অবস্থা। শ্বশুরআব্বা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সকালে নীলিমাকে পুলিশে হস্তান্তর করে দিবেন। আমিও সেদিন না খেয়ে ঘুমিয়ে পরি। রাজন কারো সামনে মুখ দেখানোর জায়গা পাচ্ছিলো না।
সেদিন রাত তিনটার সময় একটা ফোনকলের শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেলো।
ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম রহীম আংকেল কল দিয়েছেন।
এতো রাতে রহীম আংকেলের কল দেখে মনটা কেমন যেন করে উঠলো।
আমি ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সে বলে উঠলো,
-আপামনি পুলিশ এসেছে। বলছে আপনাদের খুব দরকার।
পুলিশের কথা শুনে আমি বেশ চিন্তায় পরে গেলাম।
এতো রাতে পুলিশ আসলো কেন?
নীলিমাকে এরেস্ট করার জন্য নয়তো?
যদি তাই হয় তাহলে এতো কষ্ট করে রাতে আসবে কেন?
বাবাতো নীলিমার নামে এখনো মামলা করেনি।
আমি ফোন লাইনে রেখেই রাজনকে ডাক দিলাম।
রাজনকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে পুলিশের কথা জানালাম। আমার মতো রাজনও বেশ অবাক হয়েছে।
ফোনটা কেটে দিয়ে আমি মেইন দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম।
লুকিং গ্লাস দিয়ে উঁকি মেরে দেখলাম সত্যিই পুলিশ এসেছে।
নিশ্চিত হয়ে আমি বাবাকে কল দিলাম।
বাবাকে সবকিছু জানিয়ে আমি আর রাজন মিলে দরজা খুলে দিলাম।
দরজা খুলে দিতেই ৬ জন পুলিশ ভেতরে প্রবেশ করলেন।
সবার মধ্য থেকে একজন বলে উঠলেন,
-আমি এখানকার থানার ওসি। এটা কি মিস্টার রাজনের বাড়ি? আমরা কি ঠিক জায়গায় এসেছি?
রাজন জ্বী বলে উত্তর দিলে তিনি আবার প্রশ্ন করেন,
-আপনাদের মধ্যে রাজন কে?
রাজন আবারও উত্তর দেয়,
-জ্বী আমিই রাজন।
রাজনের কথা শুনে তিনি অন্য পুলিশদের বলেন,
– এরেস্ট হিম।
অর্ডারের সাথে সাথে একজন পুলিশ এসে রাজনের হাতে হ্যান্ডক্যাপ পড়িয়ে দেয়।
এসব কান্ড দেখে আমি অবাক হয়ে বলি,
-রাজনকে এরেস্ট করবেন মানে! তার অপরাধ কি?
ওসি সাহেব বলেন,
-মিস্টার রাজনের উপরে রেপ কেস করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, ভিক্টিমের স্টেটমেন্ট মিস্টার রাজন তাকে ব্ল্যাকমেইল ও করেছে। দূর্ভাগ্যবশত কেস ফাইল করার কিছুক্ষণ পরে ভিক্টিম চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাপ দিয়ে নিজের প্রাণ দিয়েছেন। তার খণ্ডিত ডেড বডি মর্গে রাখা হয়েছে।
ডি এন এ টেস্ট এর জন্য স্যাম্পল পাঠানো হয়েছে। ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে রাজনকে কঠিনতম শাস্তি দেয়া হবে।
ওসির কথা শুনে আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো।
আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে প্রশ্ন করলাম,
-মেয়েটার নাম কি?
তিনি উত্তর দিলেন,
-মেয়েটার নাম নীলিমা।
নীলিমার নাম শুনে আমার পার নিচ থেকে মাটি সরে গেলো। আমি বললাম,
– না না। আপনাদের কোনো ভুল হচ্ছে । আপনি যার কথা বলছেন সে তো আমার বোন। ও নিজের রুমেই আছে ১ মিনিট।
কথাটা বলে আমি দ্রুতপায়ে নীলিমার রুমে গেলাম। কিন্তু রুমে নীলিমাকে পেলাম না।
পুরো বাসা খুঁজেও নীলিমাকে না পেয়ে আমি ধপাস করে সোফায় বসে পরি।
রহীম আংকেলকে জিজ্ঞেস করলে তিনিও নীলিমাকে বাইরে যেতে দেখেননি জানান।
মাথাটা ভনভন করে ঘুরছে। ইতিমধ্যে বাবাও চলে এসেছেন।
বাবা পুলিশেকে রাজনকে নামে মামলা উঠিয়ে নেওয়ার রাজি করানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা মামলা তুলতে নারাজ। মৃত্যুবরণ করা কারো শেষ স্টেটমেন্ট খুবই শক্ত হয়। কোনো আলাদা সাক্ষ্য প্রমানের দরকার পরে না। নীলিমার মৃত্যু আর রাজনকে আটক করা! আমার দুটো পৃথিবী ছিলো যারা তাদের এ অবস্থায় আমার ভেতরটা ভেঙ্গেচুরে গেলো। না চাইতেও চোখ থেকে পানি পড়ছে অনবরত।
কিন্তু ওরা পাপ করেছে। আমার সাথে, আমার বেবির সাথে অন্যায় করেছে, এর শাস্তিতো ওদের পেতেই হবে।
খারাপ কাজের শেষ পরিণতি কখনোই ভালো হয় না।
যেমনটা নীলিমার বেলায় হয়নি, তেমনটা রাজনের জন্যও হবে না।
অপরাধতো দু’জনেরই সমান।
এটা শুধু রাজন,নীলিমার শাস্তি নয়, এসবকিছু প্রতিটা সমাজে লুকিয়ে থাকা চরিত্রহীনদের শাস্তি।
চোখের সামনে দিয়ে রাজনকে নিয়ে যাচ্ছে। রাজন একটা কথাও বলছে না। মাথা নিচু করে পুলিশের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। সে জানে তার শাস্তি অবধারিত। কারণ নীলিমার ডি এন এ টেস্ট করলে রাজনের অপরাধ লুকানোর কোন রাস্তা থাকবেনা।
আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি সবাই কাঁদতে শুরু করেছেন।
আমি নিশ্চুপ হয়ে সোফায় বসে আছি।
নীলিমার মৃতদেহটার কি একটা সৎকার করা উচিৎ হবে? ওর বাবা মা তো কেউ ওর লাশ আনতেও যাবেনা। আমারো যাওয়ার ইচ্ছে নেই৷ ওর লাশের একটা সৎকারের অধিকারও নেই৷ এটাই ওর শেষ পরিণতি। দু টুকরো হয়ে মর্গেই পরে থাকুক আজীবন৷
.
.
.
.
দুই বছর পর।

প্লেটে করে খাবার নিয়ে রিতুর পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে আমি ক্লান্ত। খাওয়া নিয়ে ওর যতো হেয়ালি।
ছোট ছোট পায়ে রিতু দৌড়ে আশ্রয় নেয় ওর দাদা-দাদীর কাছে।
আমার শ্বাশুড়িমা আমাকে বলেন,
-ওকে খাওয়ানোর জন্য এতো জোর করতে হবে না।
খাবারটা আমাকে দাও দেখো আমি কিভাবে খাওয়াই।
আমি প্লেটটা মার হাতে তুলে দিলাম।
আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি মিলে ওকে নানা কৌশলে খাওয়াতে লাগলো।
সবাইকে এমন হাসিখুশি দেখে মনটা খুশিতে ভরে ওঠে আমার।
সংসারটাকে এই পর্যায়ে আনতে কম কষ্ট করতে হয়নি আমার।
রাজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণা হওয়ার পর মা অনেক ভেঙে পরেছিলেন।
তাকে ধীরে ধীরে আমি এবং আমার শ্বশুর মিলে সামলেছি। ভেঙে পরা সংসারটা অনেক কষ্টে সবল করেছি।
আলহামদুলিল্লাহ এখন অনেক ভালো আছি আমরা।
তবে মাঝে মাঝে ভাবি, রিতু যখন বড় হয়ে আমাকে ওর বাবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, কি বলবো তাকে?
পরমুহূর্তে আবার ভাবি, ভবিষ্যতে কি হবে সেটা ভেবে বর্তমান কেন নষ্ট করবো।
যখন রিতু জিজ্ঞেস করবে তার বাবার কথা, পরিস্থিতি বুঝে বলে দেবো কিছু একটা।
এখন আমার অনেক দায়িত্ব। উপযুক্ত মা হয়ে উঠতে হবে। আমি না হয় সেদিকেই মনোযোগী হই।
.
.
.
[সমাপ্ত ]
– Tuba Binte Rauf

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে