শেষ পরিণতি পর্ব-২০

0
1265

#শেষ_পরিণতি
[[সিজন ২ পর্ব ১১]]

শ্বাশুড়িমার কথা শুনে আমি শিওর হয়ে গেলাম। আমার ধারণাই সঠিক। তিনি পরে যাননি, এ দূর্ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে।
কিন্তু কারণটা জানার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
.
.
.
গভীর চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে আছেন মাজেদা বেগম।
বাসার সবকিছু কিভাবে ঠিক করবেন বুঝতে পারছেন না তিনি।
তুবা যদি কখনো তার ছেলের এমন নোংরা কর্মকাণ্ডের কথা জানতে পারে, তখন কি হবে সেটা তিনি কল্পনাও করতে পারছেন না। তুবাকে হারাতে চান না মাজেদা বেগম।
দু’চোখ বন্ধ করে ভাবছেন তিনি, তুবাকে না জানিয়ে কিভাবে নীলিমা নামক অভিশাপকে বাসা থেকে তাড়ানো যায়।অথচ তুবা যে সবটা জেনে গেছে সেটা জানেন না মাজেদা বেগম। তার
মাথায় আচমকা চমৎকার একটা বুদ্ধি আসে ।

,”প্রতিটা মেয়েরইতো একদিন না একদিন বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি যেতে হয়।
নীলিমাকেও যদি বিয়ে দিয়ে দিই তাহলে তো কোনো ঝামেলাই থাকবে না। আমার ছেলের সংসারও বাঁচবে, ওই নষ্ট মেয়ের থেকেও মুক্তি মিলবে।
বিয়ের কথা শুনলে তুবাও খুশি হবে।
বাকি রইলো রাজন! ওকে রাজি করানোর অনেক উপায় আছে। একান্ত রাজি না হলে, কোনো কাজের উদ্দেশ্যে ঢাকার বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে,এদিকের কাজ শেষ করে ফেলবো।
বিষয়টা মনে মনে ভাবতেই মাজেদা বেগম খুব খুশি হয়ে গেলেন।
নীলিমাকে তাড়ানোর উপযুক্ত উপায় তিনি পেয়ে গেছেন। এখন শুধু পাত্র খোঁজার অপেক্ষা।
.
.
.
আজ আমার মনটা একটু খারাপ।
কিছুক্ষণ আগে আমার মা বাড়িতে চলে গেছেন।
এছাড়াও সকাল থেকে মাথাটা খুব ব্যথা করছে। তাই বিছানায় গিয়ে চুপচাপ শুয়ে পরি আমি।
নীলিমাকে ডেকে একটু মাথা টিপে বলি। নীলিমা আমার পাশে বসে মাথা টিপে দিতে থাকে।
ও যে খুব বিরক্তি নিয়ে মাথা টিপছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। আমি সেদিকে মাথা না ঘামিয়ে বিষয়টা উপভোগ করতে লাগলাম।

নীলিমা বেশ কিছুক্ষণ ধরে মাথা টিপে দেওয়ার পর, আমি নীলিমাকে আমার পা দুটোও টিপে দিতে বললাম।
ও কিছু না বলে চুপচাপ পা টিপতে থাকে।
সত্যি বলতে আমার পা একদমই ব্যথা করছে না। শুধু শুধুই ওকে টিপতে বললাম। আমার মা নীলিমাকে পছন্দ করতো না।
তাই মা চলে যাওয়াতে নীলিমা বেশ খুশি হয়েছে। এই আনন্দ স্থায়ী হতে দিতে তো আমি পারি না। শোয়া থেকে উঠে
নীলিমাকে বলি,
-পা টিপে দিতে হবে না।
একটা কাজ কর বোন।
ওয়ারড্রবের দ্বিতীয় ড্রয়ারে কিছু জামাকাপড় রাখা আছে। ধোয়ার জন্য রেখেছিলাম কিন্তু আর ধোয়া হয়নি। ওগুলো একটু সুন্দর করে ধুয়ে ফেল। সাদা ড্রেসগুলো আলাদা ধুবি।
নীলিমা আমার কথার প্রতিত্তোরে কিছু বলে না।
বিছানা থেকে উঠে, ওয়ারড্রব থেকে কাপড়গুলো নিয়ে সোজা আমার রুম সংলগ্ন বাথরুমে চলে যায়। ওর কি ই বা বলার আছে। আমার বাসায় থাকে আমার বাসায় খায়৷ কথা তো চুপচাপ শুনতেই হবে।
নীলিমা বাথরুমে চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আমিও শোয়া থেকে উঠে আমার শ্বাশুড়িমার কাছে চলে যাই।

রুমে গিয়ে দেখি মা নার্স ঝুমার সাথে গল্প করছেন। আমি গিয়ে তাদের আড্ডায় সামিল হই।
ঝুমা আমাদের সাথে তার জীবনের অনেক কথা শেয়ার করে।
মেয়েটার জীবন গল্প শুনে মনটা বিষন্নতায় ভরে ওঠে।
আজ চার বছর তার একটা বিশেষ রোগ ধরা পরেছে। রোগটার কারণে তার অপারেশন করতে হয়েছে। যার দরুন সে কখনো মা হতে পারবে না। এমনকি স্বামীর সাথে ঘনিষ্ঠ সময় কাটানোও সম্পূর্ণ নিষেধ।
তবে ভালো লাগলো একটা কথা শুনে। এই চার বছরে ঝুমার স্বামী তাকে ছেড়ে যায়নি। আর না তো দ্বিতীয় কোনো সম্পর্কে জড়িয়েছে। কেউ কেউ নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসে আজীবন পাশে থেকে যায়। কেউ কেউ শত ভালোবাসা পাওয়া সত্যেও সাময়ীক সুখের জন্য মিথ্যা মরিচিকার পিছে ছুটে।
কি অদ্ভুত পৃথিবী। কতো অদ্ভুত পৃথিবীর সম্পর্কগুলো।
কথাগুলো মনে করে চোখের কোণে পানি জমে যায় আমার।
“ম্যাম আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি ” বলে ঝুমা উঠে দাঁড়ায়।
ঝুমার কথায় আমার ঘোর কাটে।
আমি শ্বাশুড়িমার দিকে তাকিয়ে দেখি মা মুখটা গম্ভীর করে বসে আছেন।
মনে হচ্ছে কোনো বিষয় নিয়ে খুব চিন্তা করছেন তিনি।
আমি চেয়ার থেকে উঠে শ্বাশুড়ি মার হাত ধরে বলি,
-কি হয়েছে মা? কোনোকিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন?
আমার কথা শুনে তিনি একটু হেঁসে দিয়ে বলেন,
-না না, তেমন কিছু না। মেয়েটার কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেছে।
এরপর আমরা অন্য বিষয়ে কথা বলতে শুরু করি।
.

দুই বালতি কাপড় ধুয়ে নীলিমার সোজা হয়ে দাঁড়ানো মুশকিল হয়ে গেছে।
কাপড় ধৌত করতে করতে নীলিমা তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তা করে৷ কি করা উচিৎ তার! রাজন যদি তাকে বিয়েও করে রাজনের কাছে তুবা এবং তুবার সন্তান ই বেশি প্রিয় হয়ে উঠবে। নিজের রক্তের সাথে কেউ বেইমানি করেনা৷ রাজন তুবার সাথে বেইমানি করলেও তার সন্তানের সাথে কিছুতেই বেইমানি করবেনা৷ সবার আগে থাকবে তার সন্তান। তাই যে করেই হোক তুবার গর্ভের সন্তান যাতে পৃথিবীর আলো না দেখে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
নীলিমা মনে মনে ভাবে,
” কয়েকদিন পর যে বাড়ির মালিক হবো আমি, সে বাড়িতেই আজ চাকরের মতো খাটতে হচ্ছে।নীলিমা কাঁপড় ধোঁয়া কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রেখে তুবার রুমে চলে যায়৷ তুবার রুমের এটাচড বাথরুমের ফ্লোর হাতে থাকা সাবান দিয়ে ঘষে পিচ্ছিল করে রাখে৷
.
.
.
আমি আর শ্বাশুড়িমা কথা বলার মাঝে
হঠাৎ জোরে একটা শব্দ ভেসে আসে কানে।
আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরি।
শব্দটা আমার রুম থেকে আসছে। আমি মাকে অপেক্ষা করতে বলে রুমের দিকে এগিয়ে যাই। বাথরুম থেকে ঝুমার মৃদু আর্তনাদ ভেসে আসছে।আমার বাথরুমের ফ্লোরে নার্স ঝুমা পরে আছে। বাথরুমের বেসিনটাও ভেঙে গেছে।
আমি ঝুমাকে টেনে তোলার জন্য বাথরুমে ঢুকতে গেলে, সে আমাকে সামনে আগাতে নিষেধ করে।
ঝুমা জানায়, ফ্লোর অনেক পিছলা হয়ে আছে।
ভেতরে ঢুকলেই পরে যেতে পারি।
মেয়েটা অনেক জায়গায় ব্যথা পেয়েছে।
আঘাতের জায়গাগুলোতে আমি মুভ স্প্রে করে দিই।
“তুবা কি হয়েছে? পড়ে গেলি কিভাবে,আমি বাথরুম থেকে শব্দ শুনতে পেলাম, একটু সাবধানে বাথরুমে যাবি না ” বলে হন্তদন্ত হয়ে নীলিমা প্রবেশ করে ।
আমি ভ্রু কুঁচকে বলি,
-আমি যে পড়ে গেছি সেটা তোকে কে বললো?
পরেছে তো ঝুমা।
নীলিমা বিছানায় ঝুমাকে শুয়ে থাকতে দেখে থমকে গেলো। আমতা আমতা করে বললো,
-শব্দটা তোর রুম থেকে হয়েছিলো তো!তোর রুমে তুই ছাড়া কে থাকবে। তাই ভাবলাম তুই পরে গেছিস।
আমি আবারও প্রশ্ন করলাম,
-আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু আমি যে বাথরুমেই পরেছি এটা কেন মনে হবে?
আমার রুমে যেকোনো জায়গায় পরতে পারতাম।
আমার প্রশ্ন শুনে নীলিমা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরলো।
তারপর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে উত্তর দিলো,
-মনে হলো তাই বললাম। এখানে এতো প্রশ্ন করার কি আছে। দেখি তুই সর, আমি দেখছি কি হয়েছে ঝুমার।
কথাটা বলে নীলিমা এগিয়ে আসে।
আমিও উঠে চেয়ারে গিয়ে বসি।
নীলিমা আবার প্রশ্ন করে,
-ও তোর বাথরুমে কি করতে এসেছিলো?
আমি কিছু বলার আগেই ঝুমা উত্তর দেয়,
– কমন রুমের বাথরুমে আপনি কাপড় ধুচ্ছিলেন তাই এখানেরটায় এসেছিলাম।
নীলিমা আর কিছু বলে না।
এই মুহূর্তে ইচ্ছে করছে নীলিমাকে আমি পুলিশের হাতে তুলে দিই।
আমি নিশ্চিত, নীলিমা ইচ্ছে করে আমার আর আমার বেবির ক্ষতির জন্য ফ্লোর পিচ্ছিল করে রেখেছিল।
নইলে,কি হয়েছে সেটা না দেখেই হুট করে ওই কথাটা বলতো না।
কি হতো যদি ঝুমার জায়গায় আমি ওয়াশরুমে যেতাম!
এতক্ষণে হয়তো আমার সবকিছু শেষ হয়ে যেতো।
কথাটা ভাবতেই আমি শিউরে উঠলাম।
পরম মমতায় পেটের উপর হাত বুলালাম আমি।
নীলিমার দিকে তাকিয়ে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম,
এর শাস্তি আমি ওকে দিয়েই ছাড়বো।
দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে গেছে।
উদাস মনে বসে আছি বেলকনিতে। মনে অনেক অশান্তি কাজ করছে।
দুশ্চিন্তায় দুপুরের খাবারও খেতে ইচ্ছে করেনি। আজকের মতো, পরে যদি নীলিমা আবারও কিছু করে?
এবারের মতো তো বেঁচে গেলাম, তখনও যে নিজেকে রক্ষা করতে পারবো তার গ্যারান্টি কি!
নীলিমা পরবর্তীতে এমন কিছু করতে পারে তার আগেই আমার কিছু করতে হবে।
তবে নীলিমাকে এই মুহুর্তে একটা কঠিন শাস্তি দেয়া দরকার।
কিছুক্ষণ ভাবতেই আমার মাথায় দারুণ একটা আইডিয়া চলে এলো।
মনে পরে গেলো “ক্যালসিয়াম অক্সালেট” এর কথা।
এটা একটা বিষাক্ত রাসায়নিক। নীলিমাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট।
তাছাড়া রাসায়নিকটা পেতে আমার কষ্ট করতে হবে না। আমার শ্বশুর মশাইতো একজন সাইনটিস্ট। তার কাছে এগুলো খুব সহজলভ্য।
আমি আর সময় নষ্ট করলাম না।
ফোন থেকে শ্বশুরের নাম্বারটা খুঁজে কল দিলাম।
ওপাশ থেকে কল রিসিভ হলে টুকটাক কথা বলে, একপর্যায় শ্বশুর মশাই কে
“ক্যালসিয়াম অক্সালেট আছে কিনা জানতে চাইলাম।
তিনি প্রশ্ন করলেন কেনো?
উত্তরে জানালাম- একজন দুষ্টু লোকের লঘু শাস্তি দিতে হবে৷ তিনি আর কথা বাড়ালেন না৷ বললেন
ড্রাইভারকে সময় করে পাঠিয়ে দিতে। ড্রাইভার গেলেই তার কাছে দিয়ে দিবেন।
প্লান অনুযায়ী ড্রাইভারকে বাবার কাছে পাঠিয়ে দিলাম।
মনে মনে বললাম..
তোমার জন্য একটা অদ্ভুত শাস্তির ব্যবস্থা করেছি নীলিমা।..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে