#শেষ_পরিণতি
[[সিজন ২ পর্ব ১০]]
কেমন হবে যখন আমার সাথে করা তোমার রোমান্টিক ভিডিও গুলো তুবা, আত্মীয় স্বজন এবং তোমার অফিসের সবার কাছে পৌঁছে যাবে?
তখন সবটা সামলাতে পারবে তো?
নীলিমার কথা শুনে রাজন থমকে দাঁড়ায়।
দরদরিয়ে ঘামতে শুরু করেছে সে।
পেছনে না ফিরেই অস্ফুট কন্ঠে বলে,
-তুমি এসব কিছুই করতে পারো না নীলিমা।
রাজনের কথার প্রতিত্তোরে নীলিমা বলে,
-আমি সব করতে পারি। তুমি যদি আমার কথা না শোনো তাহলে তোমার নামে ধর্ষণ মামলাও করতে পারি। মামলা করলে তোমার বাঁচার কোনো উপায় নেই রাজন। আমার ডিএনএ পরিক্ষা করলেই প্রমাণ হয়ে যাবে তোমার সাথে আমার ফিজিক্যাল রিলেশন হয়েছে। এখন সেটা ইচ্ছাকৃত নাকি অনিচ্ছাকৃত সেটাতো আমার কথার উপরেই নির্ভর করে।
আর মনে রেখো, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি কিন্তু মৃত্যুদন্ড।
নীলিমার কথা শুনে রাজন এবার কাঁপতে শুরু করে।
কম্পিত কন্ঠে নীলিমাকে বলে,
-কি চাও তুমি?
নীলিমা একটু শয়তানি হাসি হেঁসে বলে,
-এবার লাইনে এসেছো। আমি চাই তুমি আমাকে বিয়ে করে স্ত্রীর সম্মান দাও, নয়তো তোমার সব সম্পত্তির অর্ধেক আমার নামে লিখে দাও।
রাজন বললো..
-তোমার থেকে এটাই এক্সপেক্ট করা যায়।
-আমার কথা বাদদাও রাজন। এখন সময় তোমার নিজেকে নিয়ে ভাবা। কি করবে?
আমাকে বিয়ে করবে, আমাকে নামে তোমার সম্পত্তি লিখে দিবে নাকি নিজের বাকি জীবনটা অপমান ও লাঞ্ছনায় কাটিয়ে দেবে?
-আমার ভাবার জন্য কিছু সময় চাই।
নীলিমা উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
-আচ্ছা সময় নাও, তবে তাড়াতাড়ি ফাইনাল সিদ্ধান্ত জানাবে আমাকে
রাজন কিছু না বলে হাঁটা দেয়।
পেছন থেকে আবার নীলিমা বলে,
“মনে রাখবে, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি কিন্তু মৃত্যুদন্ড। ”
নীলিমার কথা শুনে রাজন দ্রুত পায়ে নিচে চলে যায়।
.
.
.
.
শ্বাশুড়িমা ঘুমিয়ে গেলে আমি নিজের রুমে এসে দেখি রাজন রুম সংলগ্ন বেলকনিতে পায়চারি করছে।
দেখে মনে হচ্ছে অনেক দুশ্চিন্তায় আছে।
থাকুক তাতে আমার কি। দুশ্চিন্তা হওয়ার মতো কাজ করলেতো দুশ্চিন্তা করতে হবেই।
আমি কিছু না বলে খাটে এসে শুয়ে পরি।
কিছুক্ষণ পরে রাজন এসেও আমার পাশে শুয়ে পরে।
রাজনের পাশে শুতে আমার খুব ঘৃণা হচ্ছিল।
কিন্তু ওদের তো শিক্ষা দিতে হবে।
রাজনের নাক ডাকার শব্দ শুনে আমি বুঝতে পারলাম, রাজন গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে।
আমি শোয়া থেকে উঠে বসে, রাজনকে ডাকলাম।
আমার ডাকে রাজন ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো।
আমি একটু বায়নার স্বরে বললাম,
-সন্ধ্যার পরে অনেক ঘুমিয়েছি। এখন ঘুম আসছে না। সময়টা কাটছেও না। কিছু একটা করো না।
রাজন ঘুমজড়িত কন্ঠে বললো,
-বলো কি করতে হবে?
আমি একটু চিন্তা করে বললাম,
-আমাকে একটা উপন্যাস পড়ে শুনাও।
রাজন আমার কথা শুনে “হু” বলে আবার ঝিমাতে লাগলো।
আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে বললাম,
-কেমন স্বামী তুমি? বউয়ের জন্য এইটুকুও করতে পারবে না?
রাজন চোখ মুছতে মুছতে বললো,
-হ্যা অবশ্যই পারবো।
ওয়াশরুমে গিয়ে মুখমন্ডলে পানি দিয়ে, রাজন মিসির আলী সমগ্র নিয়ে বসলো আমার পাশে।
সেখান থেকে পুফী গল্পটা পড়ে শুনাতে শুরু করলো ও।
ওর কন্ঠে গল্পটা বেমানান লাগছে। গল্প পড়া শুনে মনে হচ্ছে, কোনো প্রফেসর লেকচার শুনিয়ে যাচ্ছে। আমার মত একজন বইপ্রেমীর কাছে এমন ভাবে গল্প পড়া মানে হচ্ছে গল্পটার অপমান।খুবই বোরিং হচ্ছি আমি। কিন্তু ওকে বই পড়া বন্ধ করতে বলা যাবে না। ওকে কোনোভাবেই ঘুমাতে দেবো না। ও যদি সারারাত জেগে নীলিমার সাথে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতে পারে, তাহলে জেগে জেগে আমাকে বই পড়ে শোনাতে সমস্যা কি!
আফটার অল আমি ওর স্ত্রী।
পড়তে পড়তে রাজন একটু ঘুমিয়ে পড়লেই আমি ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে দিচ্ছি৷ পুফীর পরে রাজন তন্দ্রাবিলাস, কহেন কবি কালীদাস, আমি ই মিসির আলী, দেবী, নিশীথিনী একটার পর একটা গল্প পড়তে লাগলো৷ পড়তে লাগলো মানে আমি পড়তে বাধ্য করলাম আরকি৷
বই পড়তে পড়তে ফজরের আজানই দিয়ে দিয়েছে। এরমাঝে রাজনকে একটুও ঘুমাতে দেইনি।
সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে নেওয়ার কারণে আমারও একেবারেই ঘুম পায়নি। আর ওর ক্যাটকেটে গলায় পড়া শুনে ঘুম সেই কোথায় পালিয়ে গেছে!
ফজরের আযানের পর ওকে বইটা রাখতে বলে আমি ওযু করে নামায পড়ে নেই।
.
.
.
.
নামায শেষে একটু হাঁটাহাঁটি করে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই চোখ লেগে আসে আমার।
খুটখাট শব্দে ঘুম ভেঙে যায় আমার। তাকিয়ে দেখি রাজন রেডি হচ্ছে।
ঘড়িতে তখন ৮ টা বাজে।
এতো সকাল সকাল রেডি হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে রাজন উত্তর দেয়,
“সকালে জরুরী একটা মিটিং আছে। তাই তাকে এখনই বের হতে হবে। ”
আমি আর কিছু বলিনা। তবে মনে মনে খুব আনন্দ পাই।
সারারাত না ঘুমিয়ে সকাল সকাল মিটিং!
বেচারার আজ নাজেহাল অবস্থা হবে ।
.
.
.
বাসা থেকে বের হতেই রাজনের মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে।
কেমন যেন মাতাল মাতাল লাগছে ওর।
রাজন বুঝতে পারে, এটা সিফিলিস রোগের ঔষধের রিয়্যাকশন।
ডাক্তার বলেছিলেন,
“ঔষধটা খুব পাওয়ারফুল।
এটা খেলে শরীরে বেশকিছু ইফেক্ট পড়বে। ঔষধ সেবনকালীন রেস্টে থাকতে হবে”
সারারাত জেগে থেকে, সকাল সকাল খালি পেটে ঔষধটা খাওয়াতেই রাজনের এমন সমস্যা হচ্ছে।
এ অবস্থায় তার পক্ষে গাড়ি ড্রাইভ করা অসম্ভব। ড্রাইভারও দু’দিনের ছুটিতে আছে। ট্যাক্সির জন্য, রাজন রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করে।
ভালোভাবে চোখ মেলে তাকাতেও পারছে না সে
চোখে সবকিছু কেমন যেন ঝাপসা লাগছে তার।
এভাবেই রাস্তায় ঢুলতে ঢুলতে হাঁটার সময় একজন পেপারওয়ালার সাইকেলের সাথে ধাক্কা লাগে রাজনের।
সাইকেল নিয়ে পেপারওয়ালা ছেলেটা রাস্তায় পরে যায়।
রাজনের হাঁটুতে বেশ ব্যাথা পাওয়ায় ক্ষেপে যায় সে।
রাজন ছেলেটাকে রাস্তা থেকে তুলে মুখে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা থাপ্পড় দেয়।
শুধু থাপ্পড় দিয়েই যে ক্ষান্ত হয় এমন না, সাথে খুব বাজে বাজে গালিগালাজ করতে থাকে।
বিষয়টা আশেপাশে থাকা কারোরই চোখ এড়ায় না।
ছেলেটার পাশ থেকে যাওয়ার সময় একজন পথচারী বিষয়টা লক্ষ্য করে রাজনকে এমন করার কারণ জিজ্ঞেস করে।
রাজন এতে আরও রেগে গিয়ে ওই লোকটাকেও থাপ্পড় দিয়ে বসে।না ঘুমানোর কারণে আর ঔষধের রিয়েকশনে পুরো মাথাই যেন নষ্ট হয়ে গেছে ওর।
আশেপাশের মানুষ এবার সিরিয়াস হয়ে যায়।
সবাই মিলে এগিয়ে এসে রাজনকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে।
রাজন সমানে তর্ক করেই যাচ্ছে সবার সাথে।এক পর্যায়ে একজন মুরুব্বী এসে রাজনের গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
তারপর শুরু হয় হুলুস্থুল কান্ড। জমায়েত সবাই মিলে রাজনকে উরু ধুরুম মারতে শুরু করে। চড়,থাপ্পড়,লাথি, যে যেভাবে পারছে সেভাবে আঘাত করতে শুরু করে।
রাজনের জামাকাপড় সব ছিড়ে যায়৷ তার জামা ছিড়ে স্যান্ডো গেঞ্জি বের হয়ে আসে।
.
.
.
শরীরটায় কেমন জড়তা কাজ করছে।
ফ্রেশ ভাব আনতে হলে এক কাপ চা খুব প্রয়োজন।
আমি নীলিমাকে এক কাপ এলাচি চা বানাতে বলে ডাইনিং রুমের সোফায় বসলাম।
তখনই হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো।
আমি উঠে দরজা খুলে দিয়ে দেখি রাজন দাঁড়িয়ে আছে।
আমি রাজনের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
আমি দেখলাম, রাজনের শার্টের একপাশের পুরোটা নেই।
প্যান্টের নিচ থেকেও অনেকখানি ছেড়া। ঠোঁট কেটে রক্ত পরছে। গালের একপাশ ফুলে কালো হয়ে গেছে।
হাতেও আঁচড়ের দাগ স্পষ্ট।
কিছুক্ষণ আগেইতো ও ঠিকঠাক হয়ে বের হলো। কিন্তু এতোটুকু সময়ের মধ্যে ওর এমন অবস্থা কিভাবে হলো।যেন ঝড় বয়ে গেছে ওর উপর থেকে চুলগুলো এলোমেলো।
আমি ওকে প্রশ্ন করলাম,
“কি হয়েছে তোমার?”
ও আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে, আমাকে হাত দিয়ে সরিয়ে ঢুলতে ঢুলতে রুমে চলে গেলো। এ কি মদ টদ খেয়ে এসেছে নাকি! আজব!
.
.
দুপুর ২ টা বাজে।
খাটের উপর টানটান হয়ে ঘুমাচ্ছে রাজন।
আমিও আর ওকে ডাকাডাকি করিনি।
সকালে রাজনের সাথে কি ঘটেছে তার সবটাই শুনেছি রহীম আংকেলের কাছ থেকে।
বাজারে নাকি এসব নিয়েই আলোচনা হচ্ছিল।
শুনে মনেমনে খুশি হয়েছি।
আমার মনের ইচ্ছেটা পথচারীরা একটু হলেও পুরণ করেছে।
আজ ওর সাথে যা হয়েছে আগামী দুই দিনের জন্য তা যথেষ্ট।
রাজনকে ঘুমুতে দিয়ে আমি ডাইনিং রুমে চলে আসলাম।
নীলিমা রান্নাঘরের কাজে ব্যস্ত আমি ওকে ডাক দিয়ে বললাম এক গ্লাস কমলার জুস দিতে।
যদিও আমার জুস খেতে একটুও ইচ্ছা করছিলো না।
কিছুক্ষণ পর নীলিমা জুসভর্তী গ্লাস এনে আমার হাতে দিলো।
জুসটা হাতে দিয়ে ও চলে যেতেই আমি জুসটা ফ্লোরে ফেলে দিলাম।
ফেলে দিয়ে নীলিমাকে আবারও ডাক দিই।
নীলিমা আসলে আমি ওকে বললাম,
-লক্ষী বোন আমার। দেখ না জুসটা হাত থেকে পরে গেলো।
একটু ক্লিন করে দে না।
আর শোন, তুই কিভাবে ঘর পরিষ্কার করিস জানি না। একদমই পরিষ্কার হয় না। আজ একটু সুন্দর করে ঘরটা মুছিস। একবার হুইল পাউডার দিয়ে মুছে আবার, শুধু পানি দিয়ে মুছিস কেমন?
আর মুছবিই যখন ডাইনিং রুমের সাথে সাথে, আমার রুম আর শ্বাশুড়িমার রুমটাও মুছে ফেলিস।
নীলিমা মুখটা কালো করে “আচ্ছা ” বলে চলে গেলো।ওকে এভাবেই আমি কাজ করাতে থাকলাম ইচ্ছেমত।
এরপর কেটে গেলো আরও দু’দিন। এই দু’দিনে ওদের সাথে খেলাটা খুব জমে উঠেছে।
তবে আজ আমি খুব খুশি। সকাল থেকে আমার শ্বাশুড়িমা আগের থেকে অনেকটা সুস্থ।
এখন তিনি কথা বলতে পারেন, হাত পা একটু একটু নাড়াতে পারেন।
সকাল থেকেই শ্বাশুড়ি মাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম আমি।
কি খাবে না খাবে, কি করবে, কখন কি চায় সবদিকে খেয়াল রেখেছি। শ্বাশুড়ি মাও কথা বলতে পেরে অনেকদিন পরে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন।
দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পরে আমার শ্বাশুড়িমা আমাকে ডেকে গল্প শুরু করে দিলেন।
এতোদিনে জমানো কথা সব বলতে শুরু করলেন তিনি।যদিও তার মুখ বাঁকিয়ে যাচ্ছিলো। শব্দগুলো স্পষ্ট না। তাও তিনি অধীর আগ্রহে কথা বলছেন।
কথা বলার এক পর্যায়ে আমি বললাম,
-আপনি যদি কিছু মনে না করেন একটা প্রশ্ন করবো মা?
তিনি হ্যাঁ সুচক জবাব দিলে আমি বললাম,
-ছাঁদে রেলিং থাকা স্বত্তেও আপনি পরে গেলেন কি করে?
আমার প্রশ্ন শুনে মা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন।
তারপর বললেন,
– সবাই একই প্রশ্ন করছে। সত্যিটা বলার সময় এখনো আসেনি।
সময় আসলে সবটা জানতে পারবে।
শ্বাশুড়ি মার কথা শুনে আমি শিওর হয়ে গেলাম। আমার ভাবনাই সঠিক। মা পরে যায়নি, দূর্ঘটনার পেছনে হয়ত অন্য কোনো কারণ আছে।
কিন্তু সেটা জানার জন্য আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে।
চলবে
– Tuba Binte Rauf
[ N.B This content is only a Fictionalized story. No real character or incident is related with this content ]