#শেষ_পরিণতি
(সিজন ২ – পর্ব ৯)
মন ভাঙ্গার শাস্তি/ বিশ্বাস ভাঙ্গার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়ে দিলে খুব কম পরে যাবে। ওদের এমন শাস্তি দিবো!! এমন শাস্তি!!! বলে তুবা তার হাতে থাকা পানির গ্লাসে জোরে চাপ দেয়। গ্লাসটি ভেংগে তুবার হাত কেটে রক্ত ঝড়তে শুরু করে। ওর চোখের রাগ ওঠা অশুরের মত টকটকে লাল বর্ণ ধারণ করে।
তুবা অস্ফুট স্বরে বলে..
এর শেষ পরিনতি কি হয়?
যাস্ট ওয়েট এন্ড সি…
.
.
.
আমি আজ সকাল সকাল আমার শ্বশুর মশাইকে আবারও কল দিলাম।
শ্বশুরকে কল দিয়ে বললাম, এসে শ্বাশুড়িমায়ের অবস্থা দেখে যেতে।
আমি বাবাকে বললাম সাথে করে তাদেরও নিয়ে আসতে।
বাবার সাথে কথা বলার মাঝে আমার রুমের দরজায় কেউ নক করলো।
দেখলাম দরজা খোলা থাকা সত্তেও রাজন রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে দরজায় কড়া নাড়ছে।
রাজনকে বললাম,
-নক করে আসা শুরু করলে কবে থেকে?
তবে যাই হোক, এটা ভালো অভ্যাস।
আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে রাজন ভেতরে ঢুকলো। রাজনের হাতে বেশ কয়েকটা ব্যাগ দেখতে পেলাম।
রাজন সেগুলো টেবিলের উপর রেখে সরু গলায় বললো,
-তোমার জন্য কিছু ফল এনেছি। মাদার হরলিক্স ও আছে। নিয়মিত খাবে। ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করলাম, তিনি বললেন গর্ভবতীদের জন্য এটা নাকি খুব ভালো। এতে মা ও বেবি উভয়ে সমান ভাবে পুষ্টি পায়।
আর হ্যা, আগামীকাল ডাক্তার এসে তোমার চেকআপ করে যাবে।
রাজনের কথা শুনে ইচ্ছে করছিলো ফলগুলো একটা একটা করে ওর মুখের ভেতরে ঢুকিয়ে, মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে বলি, তোর ফল তুই খা কাপুরুষ। যখন তোর প্রেমিকার সাথে ঝগড়া লেগেছে, তখন মনে হলো তোর বউ গর্ভবতী!
কিন্তু এমন কিছুই করা যাবে না এখন। রাজনকে বিন্দুমাত্র বুঝতে দেওয়া যাবে না যে ওর ব্যাপারে আমি সবকিছু জানতে পেরেছি।
যেকোনো কিছুর আসল সমস্যাটা ধরা পড়লে তার সমাধানও তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। আর আমি চাই না যে, এতো জঘন্য কৃতকর্মের শাস্তি ওরা এতো অল্পতে পেয়ে যাক।
ওদের তো আমি তিলে তিলে শাস্তি দেবো। তাই মনের ইচ্ছেটা দমিয়ে রেখে রাজনকে বললাম,
-এতোদিন পরে মনে হলো আমি প্রেগন্যান্ট! আমার যত্নের দরকার?
রাজন নিচু কন্ঠেই বললো,
-এমন করে কেন বলছো? জানোইতো ক’দিন ধরে বাসার কি অবস্থা। বিজনেস নিয়েও বেশ ঝামেলা চলছে, তাই তোমার এক্সট্রা কেয়ার নিতে পারিনি।
কিন্তু এখন থেকে সব কিছু দূরে রেখে শুধু তোমাকে সময় দেবো।
আমি ওর কথা শুনে নিঃশব্দে তিরস্কারের হাসি হাসলাম।
মিথ্যাটা খুব ভালো লাগে, যখন সত্যিটা জানা থাকে।
আমারও ওর এসব কথা শুনে ভালো লাগছে। নতুন একটা অভিজ্ঞতা হচ্ছে। অমানুষ চেনার অভিজ্ঞতা।
রাজনকে বললাম,
-আমি জানি তো রাজন। কিছুদিন ধরে তোমার উপর দিয়ে কি বয়ে যাচ্ছে। তবে যাইহোক, তুমি যে সবসময় আমাকে নিয়ে আর বেবিকে নিয়ে ভেবেছো সেটা আমি জানি।
আমার কথা শুনে রাজন একটু মিথ্যা হাসি হেসে দরজার দিকে পা বাড়ালো।
রাজন যখন দরজার কাছে পৌঁছালো, পেছন থেকে ডাক দিয়ে আমি বললাম,
-আমিতো এখন মোটামুটি সুস্থ। মাকে প্রয়োজন হবে বলে মনে হয় না। আজ থেকে তোমার আর আলাদা শুতে হবে না।
আমার কথা শুনে মনে হলো রাজন বেশ খুশি হয়েছে। খুশি খুশি মনে “আচ্ছা ” বলে রাজন রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
.
.
.
রাজন চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে আমি নীলিমাকে ডাক দিলাম।
নীলিমা এলে আমি ওর হাতে রাজনের আনা ফলের ব্যাগগুলো তুলে দিয়ে বললাম,
-দেখ না নীলিমা, বাসায় ফল থাকতেও কত ফল নিয়ে এসেছে আমার জন্য। সাথে মাদার হরলিক্স আরও কি কি যেন এনেছে। একটা কাজ কর না বোন, এগুলো নিয়ে একটু ফ্রিজে রেখে দে।
রাজন আমার জন্য এসব এনেছে শুনে নীলিমার মুখটা কালো হয়ে গেলো।
আমি ব্যাপারটা এড়িয়ে বললাম,
-আজ দুপুরে আমার শ্বশুর আসবেন। সাথে ওনার কিছু নিকটাত্মীয়-স্বজনও থাকবে।
আমার শরীরটা তেমন ভালো না। এই শরীর নিয়ে তাদের আপ্যায়নের জন্য এতো রান্নাবান্না কিভাবে করবো! এটা ভেবে তাদের আসতে নিষেধ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরে আবার ভাবলাম, আমার লক্ষী বোনটা তো আছে। তুই তো এমনিও বাসার কাজবাজ করতে ভালোবাসিস। তাই তোর ভরসায় তাদের সবাইকে আসতে বলেছি।
ভালো করেছি না বল?
আমার কথা শুনে নীলিমা হাসি দিয়ে বললো,
-হ্যা ঠিক করেছিস। আমি থাকতে তোর চিন্তা কি, আমি সব করে নেবো।
আমি নীলিমার গাল ধরে হালকা টেনে দিয়ে বললাম,
-এইতো আমার লক্ষী বোন।
আচ্ছা শোন, আজ যারা যারা আসবেন তারা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ মেহমান। তাদের আপ্যায়নে কমতি থাকলে চলবে না।
আইটেমের লিস্টটাও বড় রাখবি। কি কি রান্না করবি আমি বলে দিচ্ছি,
“পোলাও, গরুর মাংসের কালা ভুনা, মুরগির রোস্ট, হাঁসের মাংস, ডিমের কোরমা, ইলিশের পাতুরি, চিংড়ি মাছের মালাই কারি, পাতলা ডাল,গোল গোল করে বেগুন ভাজা, পায়েস, বাবার জন্য ছোট মাছের চচ্চড়ি করিস একটু, রহিম আংকেলকে আনতে বলেছি।”
আমার কথা শুনে নীলিমা চোখ বড় বড় করে বলে, -দুপুরের মধ্যে এতোসব রান্না? ছোট মাছ কি কাটতেও হবে?
-হ্যা কেন পারবি না?
মুখটা কালো করে নীলিমা বললো,
-হ্যা পারবো। না পারার কি আছে।
-আচ্ছা তাহলে এগুলো ফ্রিজে রেখে দে।
আর শোন, ভালোভাবে রান্না করবি, আমার শ্বশুরকে তোর রান্নার মাধ্যমে আমি বুঝিয়ে দেবো,
তুই কতোটা লক্ষী মেয়ে।
নীলিমা কিছু না বলে ফলগুলো নিয়ে কিচেনের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো।
.
.
.
.
নীলিমার রান্না শেষ করতে করতে বিকাল ৪ টা বেজে গেলো।
নীলিমাকে সবকিছু টেবিলে গুছিয়ে রাখতে বলে আমি মেহমানদের ডাকতে গেলাম শ্বাশুড়ি মার রুমেই ছিলেন তারা।
মেহমান সবাই এলে নীলিমা খাবার সার্ভ করতে শুরু করলো।
নীলিমাকে খাবার সার্ভ করতে দেখে মেহমানদের মধ্য থেকে একজন বললো,
-এই মেয়েটা কে? আগে কখনো দেখিনি তো।
আমি হাসিমুখে উত্তর দিলাম,
-ওর নাম নীলিমা। আমার চাচাতো বোন। আমাদের বাসাতেই থাকে, বাড়ির দেখাশোনা করে, বাড়ির সব কাজ নিজ হাতেই করে। এমনকি বুয়ারও প্রয়োজন হয় না।
আমার কথা শুনে নীলিমা থমকে গেলো।
পরমুহূর্তে আবার তাড়াতাড়ি সবাইকে সার্ভ করে দ্রুত পায়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
আমি জানি আমার কথায় নীলিমা কষ্ট পেয়েছে।
তবে আমার একটুও খারাপ লাগছে না এতে।
ওরা যা করেছে তার জন্য ভয়ংকর শাস্তি তো অপেক্ষা করছেই, তবে সেই শাস্তিটা হবে ওর কর্মের ফল। তার আগে আমি ওকে বোঝাতে চাই, ও কি পেয়েছিলো আর কি হারালো।
.
.
.
রাত ১১ টা বাজে।
উদাস মনে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে রাজন। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট।
হঠাৎ পেছন থেকে কারও স্পর্শে কেঁপে ওঠে সে।
পেছন ফিরে দেখে নীলিমা দাঁড়িয়ে আছে।
পেছন দিকে ফিরতেই রাজনকে জড়িয়ে ধরে নীলিমা।
এই প্রথমবার নীলিমা জড়িয়ে ধরাতে রাজনের খুব বিরক্ত লাগছে।
রাজন হাত থেকে সিগারেট ফেলো দিয়ে, নীলিমাকে টেনে বুক থেকে সরিয়ে বলে,
-প্লিজ নীলিমা এমন করো না। যেকোনো সময় কেউ চলে আসতে পারে। এভাবে দেখে ফেললে ব্যাপারটা ভালো হবে না।
-বাব্বাহ! তুমি আবার কবে থেকে মানুষের চিন্তা করা শুরু করলে?
বুঝেছি কালকের ব্যাপার নিয়ে আমার উপর এখনো রাগ করে আছো তাই না?
যা হয়েছে ভুলে যাওনা, এখন বলো আমরা বিয়ে করছি কবে?
নীলিমার কথার উত্তরে রাজন বললো,
-সরি নীলিমা। আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না। আমি বুঝতে পেরেছি, তোমার প্রতি এতোদিন যেটা ছিলো, সেটা ভালোবাসা না। সেটা মোহ।
যেই মোহ এখন কেটে গেছে। আমার ভালোবাসা তো তুবা। কিন্তু আমি মোহে পরে সেই তুবাকেই ঠকিয়েছি এতোদিন। আমার সব কর্মের জন্য আমি অনুতপ্ত। হয়ত কোনো না কোনোভাবে শাস্তিও পাচ্ছি।
রাজনের কথা শুনে নীলিমা বলে,
-এসব কি বলছো রাজন! এতোদিন আমার সাথে সম্পর্ক চালিয়ে আজ বলছো, তুমি নীলিমাকে ভালোবাসো? তারমানে তুমি আমাকে এতোদিন ইউজ করেছো?
-তোমাকে আমি ইউজ করিনি। তুমি স্বইচ্ছায় ইউজ হয়েছো। দেখো নীলিমা, আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি, ভালো হয় এতে যে তুমিও সঠিক পথে চলে আসো।
-চুপ করো রাজন।
ওই তুবার জন্য তুমি আমাকে কথা শুনাচ্ছো?
কোথায় আমি আর কোথায় ও। কি আছে ওর মাঝে? না আছে আমার মতো সুন্দর চেহারা, আর না আমার মতো স্মার্ট। গাইয়ে স্বভাবের একটা খ্যাত মেয়ের জন্য তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে চাচ্ছো? বড্ড বোকামি করছো।
-তুবার কাছে সবচেয়ে বড় একটা জিনিস আছে,
যা তোমার কাছে নেই, সেটা হলো তুবার মন এবং নিষ্পাপ চরিত্র।
রাজনের কথার প্রতিত্তোরে নীলিমা তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,
-চরিত্রের কথা শোনাচ্ছে কে?
ঘরে গর্ভবতী বউ রেখে তারই বোনের সাথে, রাতের বেলায় ফষ্টিনষ্টি করে যে সে? হাহা শয়তানের মুখে ধর্মের কথা।
কথাটা শুনে রাজন নীলিমাকে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দেয়। থাপ্পড়ের বেগ সামলাতে না পেরে নীলিমা ফ্লোরের উপর পরে যায়।
থাপ্পড় দিয়ে ” তোমার মতো একটা নষ্ট মেয়ের জন্য আমি তুবাকে ঠকিয়েছি ভাবতেই নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছে ” বলে রাজন প্রস্থানের জন্য পা বাড়ায়।
পেছন থেকে নীলিমা বলে,
-কেমন হবে যখন আমার সাথে করা তোমার রোমান্টিক ভিডিও গুলো তুবা, আত্মীয় স্বজন এবং তোমার অফিসের সবার কাছে পৌঁছে যাবে?
তখন সবটা সামলাতে পারবে তো?
নীলিমার কথা শুনে রাজন থমকে দাঁড়ায়।
দরদরিয়ে ঘামতে শুরু করেছে সে।
.
.
.
.
চলবে।
লেখিকা- Tuba Binte Rauf