শেষ নিঃশ্বাস পর্ব-০২ এবং শেষ পর্ব

0
13

#শেষ_নিঃশ্বাস
#Sonia_Tabassum (Oni)
#পর্ব_২ (শেষ)

প্রহর আর পিয়াস ডক্টরের চেম্বারে বসে আছে। একটু আগেই হাতে রিপোর্ট পেয়েছে তারা। ডক্টর গভীর মনোযোগ দিয়ে রিপোর্ট দেখছেন। প্রহর আর পিয়াসের হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে ভয়ে। মিনিট কয়েক অতিবাহিত হওয়ার পর ডক্টর লাবনী দু’জনের দিকে তাকান। ডক্টর লাবনী কে গম্ভীর হয়ে থাকতে দেখে আর ভয় হচ্ছে দু’জনের। ডাক্তার লাবনী মুচকি হেসে বলেন,

” মিস্টার পিয়াস ভয়ের কিছু নেই। আপতত আপনার স্ত্রী ঠিক আছে। ডাক্তারের কথায় পিয়াসের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। কিন্তু পরমুহূর্তেই ডাক্তারের কথা শুনে মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে যায়।

“মিস্টার পিয়াস তবে একটা প্রবলেম আছে। পিয়াস চমকে ওঠে বলে,

” কি সমস্যা ডক্টর। আপনিই তো বললেন সব ঠিক আছে।

” হ্যাঁ, আমি বলছি সব ঠিক আছে। আগে আমার কথাটা শুনুন।

” জ্বি বলেন।

” বাচ্চা হওয়ার সময় কিছুটা সমস্যা হতে পারে। অ্যাই মিন আমি বলতে চাইছি সিজারের সময়। টেনশনের দরকার নাই আল্লাহ কে ডাকেন ইন শা আল্লাহ তিনি সহায় থাকলে ভালো কিছু হবে। আমি কিছু ওষুধ লিখে দিচ্ছি সেগুলো নিয়ম করে খাওয়াবেন।

পিয়াস মাথা নেড়ে সায় দেয়। ডাক্তার ওষুধ লিখে দিলে প্রেসক্রিপশন আর রিপোর্ট গুলো নিয়ে হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে আসে। সেখান থেকে সোজা বাসায় ফেরে।

*****

দেখতে দেখতে প্রহরের ডেলিভারির সময় হয়ে আসছে। সময় খুব দ্রুত পার হয়ে যাচ্ছে। প্রহরের এখন নয় মাস চলছে। ডক্টর বলছে আর দু’দিন পরেই প্রহরের সিজার করা হবে। ইদানীং প্রহর কে সময় সময় চুপ করে থাকতে দেখা যায়। বাড়ির সকলেই প্রহর কে দুশ্চিন্তায় থাকে।

পিয়াসের বোন বৃষ্টি প্রহর কে দেখতে আসে। কয়েকটা দিন থেকেও যাবে। বৃষ্টি প্রহরের সাথে উঠানে বসে গল্প করছে। প্রহরও হাসি মুখে এটা ওটা বলছে। প্রহরের শাশুড়ী দুপুরের রান্না শেষ করে সবাইকে খাওয়ার জন্য রান্না ঘরে যেতে বলেন। বাড়ির সকলে খাওয়ার জন্য রান্না ঘরে চলে যায়। খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার মতো বিশ্রাম নিতে চলে যায়। প্রহর আস্তে আস্তে নিজের রুমে চলে যায়। বিশ্রাম নেওয়ার জন্য খাটে শুয়ে পরে।

****

দেখতে দেখতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। পাখিরা উড়ে নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। পশুপাখি নিজের জায়গায় ফিরছে।। প্রহরের শাশুড়ী নিজের রুমে নামাজ পরছে। বৃষ্টি ও মায়ের রুমে আছে। প্রাণ বাবা’র সাথে দোকানে গেছে।

প্রহর মাগরিবের নামাজ পরে বিছানায় এসে বসে। রুমে প্রহর ছাড়া কেউ নেই। হঠাৎ করে প্রহরের পেটে অসহ্য ব্যথা শুরু হয়। প্রহর ব্যথায় ছটফট করছে। কাউকে ডাকার শক্তিও পাচ্ছে না।

বৃষ্টি সবেমাত্র রুম থেকে বেড়িয়ে বারান্দায় আসছিল। প্রহরের রুমে থেকে কান্নার শব্দ পেয়ে ছুটে আসে। এসে প্রহর কে কাতরাতে দেখে বুঝতে পারে। বৃষ্টি চিল্লিয়ে মা’ কে ডেকে আনে। প্রহরের শাশুড়ী রুমে এসে প্রহর কে দেখে বুঝতে পারে প্রহরের প্রসব ব্যথা উঠেছে। বৃষ্টি দ্রত পিয়াস কে ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বলে। পিয়াস ছেলেকে নিয়ে বাড়ি আসে। আসার আগে মাইক্রোকার কে ফোন দিয়ে আসতে বলে।

পনেরো মিনিটের মধ্যে গাড়ি চলে আসে। যাবতীয় যা যা লাগে সব গুছিয়ে নেয়। তারপর প্রহর কে নিয়ে হসপিটালে চলে যায়। হসপিটালে পৌঁছানোর পর ডাক্তার রোগী দেখে বলে দ্রুত তাকে এডমিট করতে হবে।

রাত নয়টায় প্রহর কে সিজার করা হয়। প্রহর কে জানানো হয় প্রহরের মেয়ে বাবু হয়েছে। প্রহর আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করে। প্রহর কে এক ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। সুস্থ ভাবেই প্রহরের অপারেশন সম্পূর্ণ হয়। প্রহর কে কেবিনে শিফট করা হয়।

প্রহরের জ্ঞান ফেরার পর প্রহরের কোলে তার বাচ্চা কে দেওয়া হয়। প্রহরের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পরে। প্রহর খুশিতে কাঁদছে। প্রহরের শশুর বাড়ির সবাই খুব খুশি।

সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল কিন্তু কোথা থেকে কি হয়ে গেলো কেউ বুঝতে পারলো না।

গভীর রাত। সবার চোখে ঘুম। কেউ ঘুমাচ্ছে তো কেউ জেগে আছে। প্রহরের মা প্রহরের সিজারের পরেই আসছে। হঠাৎ করে প্রহরের অনেক কাপতে থাকে। ডাক্তারের ভাষায় একে একলেমশিয়া বলে। প্রহর কে কাঁথা কম্বল দিয়ে চেপে রাখা হয়। কয়েক মিনিট হওয়ার পর প্রহর স্থির হয়।

******

ভোর ছয়টা। প্রহর ছটপট করছে। পিয়াস দ্রুত ডক্টর কে ডেকে আনে। পিয়াস প্রহরের হাত ধরে বলে,

” কিচ্ছু হবে না তোমার। তুমি ঠিক হয়ে যাবে। প্রহর মুচকি হেসে কাপাকাপা কন্ঠে বলে,

” তুমি চেয়েছিলে তোমার একটা রাজকন্যা লাগবে। আমি তোমাকে রাজকন্যা উপহার দিলাম।

ডক্টর প্রহরকে চুপ করতে বলে। প্রহর মৃদু হেসে বলে, আমাকে বলতে দেন ডক্টর। ডক্টর আর কিছু বলে না। প্রহর পিয়াসের হাত ধরে বলে,

” আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো পিয়াস। ও আমার নারী ছেড়া ধন। আর আমার প্রাণ টাকে বলবা ওর বোনের যেন কোনো কষ্ট না হয়। আমার হাতে সময় নেই। আল্লাহ হয়তো এ পর্যন্ত আমার হয়াত রাখছিলেন। ভালো থেকো আর আমার বাচ্চাদের দেখে রেখো বলে থেমে যায় প্রহর। হসপিটালের বেডেই #শেষ_নিঃশ্বাস ত্যাগ করে প্রহর।

” প্রহর বলে চিৎকার করে ওঠে পিয়াস। পিয়াস পাগলের মতো করতে থাকে। ডক্টর বলে,

” অ্যাই এম সরি মিস্টার পিয়াস। সি ইজ নো মোর বলে ডক্টর বেড়িয়ে যান।

ডক্টরকে মুখ কালো করে বেড়িয়ে যেতে দেখে ভয় হয় সকলের। ছুটে সবাই রুমের মধ্যে চলে আসে। এসে প্রহর কে চুপ হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে চমকে ওঠে। পিয়াস ফ্লোরে বসে হাউমাউ করে কাঁদছে।

প্রহরের শরীর ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে যেতে থাকে। প্রহরের মা বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন। প্রহর রা চার ভাই বোন। প্রহরের একটা ভাই আর দুইটা বোন। প্রহর সেজো। প্রহরের ভাই আর মেজো বোন টা আগেই মারা গেছে। আর আজ প্রহর মারা গেলো। প্রহরের মারা যাওয়ার খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

হসপিটাল থেকে প্রহরের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এম্বুলেন্সে করে প্রহর কে বাড়ি আনা হয়। সবার মুখে এক কথা বাচ্চা জম্ম দিতে গিয়ে মা মারা গেছে। প্রহরের বাবার বাড়ি থেকে সবাই আসে।

প্রহর কে যখন এম্বুলেন্স থেকে নামানো হয় তখন প্রহরের ছেলে প্রাণ মা কে ধরে পাগলের মতো কাঁদছিল। প্রাণের কান্না দেখে প্রতিটা মানুষের চোখে পানি পরছিল। প্রাণ বলছিল,

” ও মা মা গো তোমাকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকব মা। আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে মা। আমাকে কে ঘুম পাড়িয়ে দেবে মা। আমাকে কে আদর করে ভাত খাইয়ে দেবে মা। মা গো মায়ের মতো তো এই দুনিয়ায় কেউ করে না। মা না থাকলে কেউ ভালো বাসে না। আমাদের দুই ভাই বোনকে এতিম বানিয়ে চলে গেলে। কি দোষ করেছি আমরা। আমার ছোট্ট কলিজার বোন টা যখন বড় হবে তখন ওকে আমি কি বলব মা। ও মা মা গো তুমি ফিরে আসো না। আমি আর দুষ্টুমি করব না। প্রাণের ফুপি বৃষ্টি এসে প্রাণ সরিয়ে নেয়।

প্রহর কে গোসল করানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। গোসল শেষ হলে দাফনের কাজ করে। দুপুর দুইটায় প্রহরের জানাজা সম্পূর্ণ হয়।

****

প্রহর কে হারিয়ে প্রহরের মা বাবা পাগলপ্রায়। মেয়ের শোক কিছুতেই সামলাতে পারছেন না।

পিয়াস নিশ্চুপ হয়ে গেছে। দুধের শিশুকে কিভাবে সামলাবে সে।

প্রহরের মৃত্যুর আজ পাচ দিন। পিয়াস ছোট বাচ্চার জন্য নিজেকে সামলে নিয়েছে। প্রহরের রাখা নাম রাখা হয়েছে আদরী। অতি আদরের মেয়ে যে আদরী।

*****

পিয়াস কঠিন ডিসিশন নিয়েছে। মেয়ে কে মানুষ করতে হলে তাকে অবশ্যই আরেকটা বিয়ে করতে হবে। তার মা মুরব্বি হয়ে গেছে। তিনি এতটুকু বাচ্চা সামলাতে পারবেন না।

প্রহরের মৃত্যুর দুই মাসের মাথায় পিয়াস নতুন বিয়ে করে আনে। দুই মাসের ছোট্ট আদরীর দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়। তিনি হাসি মুখে সবটা মেনে নেয়।

( কিন্তু তিনি কি আদৌও আদরী কে নিজের মেয়ে ভেবে মানুষ করতে পারবেন। পিয়াস কি প্রহরের কথা রাখতে পারবে। তার ছেলে মেয়ে কে সঠিক ভাবে মানুষ করতে )

[ সমাপ্ত ]

বি:দ্র:—

মূলত এটা ছিল অনুগল্প। প্রথম পর্বে শেষ করতে না পারায় দ্বিতীয় পর্বে শেষ করতে হলো। যাই হোক, আমি যতটুকু লিখছি তার সবটুকু সত্য ঘটনা। আমি জানি না কতটুকু ফুটিয়ে তুলছে পেরেছি। আল্লাহ যেন এমন কারোর সাথে না করেন। এমন মর্মান্তিক ঘটনা দেখা যায় না। ছোট্ট নিষ্পাপ শিশু এতিম হয়ে গেলো।
সম্পূর্ণ গল্প টা কেমন হয়েছে অবশ্যই বলবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে