#শেষ_নিঃশ্বাস
#Sonia_Tabassum (Oni)
#সূচনা_পর্ব
১২ বছর পর দ্বিতীয় বার অন্তঃসত্ত্বা হয় প্রহর। চৌদ্দ বছর সংসার জীবনে দ্বিতীয় বার মাতৃত্তের স্বাদ পেতে চলেছে সে। খুশি তে তার চোখ টলমল করে ওঠে। শশুর বাড়ির সকলেই খুব খুশি। অনেক চেষ্টা প্রচেষ্টার পর অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে প্রহর। প্রহরের স্বামী পিয়াস খুশিতে মহল্লার সকলকে মিষ্টি মুখ করিয়েছে।। প্রহরের বিয়ে হয়েছে চৌদ্দ বছর। বিয়ের দুই বছর পরই অন্তঃসত্ত্বা হয় প্রহর। প্রহরের গর্ভে ছোট্ট প্রাণের অস্তিত্ব বেড়ে ওঠে। প্রহর আর পিয়াসের প্রথম ছেলে সন্তান হয়। সেদিন প্রহর খুব করে কেঁদেছিল। সেটা ছিল প্রহরের খুশির কান্না। ছেলে সন্তান হওয়ায় সেদিন শশুর বাড়ির প্রতিটা মানুষ খুশি হয়েছিল। প্রহর কে মাথায় করে রাখছিল। আদর করে প্রহরের ছেলের নাম রাখা হয় প্রাণ। প্রাণ সবার চোখের মণি। প্রাণ কে ছাড়া কেউ বাঁচতে পারে না।
****
প্রাণের বয়স চার বছর হওয়ার পরপরই আবার সন্তান নেওয়ার জন্য চেষ্টা করে তারা। কিন্তু কিছুতেই প্রহর কনসিভ করতে পারে না। পিয়াস ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়ে দেখিয়ে হাঁপিয়ে ওঠেছে। তবুও হাল ছাড়ে না। দীর্ঘ ১২ বছর পর প্রহর অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে।
এই বারো বছরে কম চেষ্টা করেনি একটা সন্তান নেওয়ার জন্য।
প্রাণ ও একটা বোনের জন্য খুব কান্না করতো। ছেলের মুখের দিকে তাকালে প্রহরের বুক দুমড়ে মুচড়ে যেতো। কিছু করার উপায় ছিল না। সেই বা কি করতে পারে। সব দেওয়ার মালিক আল্লাহ। তিনি না চাইলে গাছ থেকে একটা পাতাও পরে না।
প্রাণ বড়ো হতে থাকে। তার যথেষ্ট বুদ্ধি হয়েছে। সেজন্য আর কান্নাকাটি করে না। আল্লাহ চাইলে নিশ্চয়ই তার একটা বোন হবে।
প্রাণ যখন দাদি’র মুখে শোনে তার একটা খেলা’র সাথি হবে। তার ছোট্ট একটা বোন হবে। যে তার কাছে সকল আবদার করবে। প্রাণ তখন ছুটে মা’য়ের কাছে দৌড়ে আসে। প্রহর তখন বিছানায় বসে ছিল। প্রাণ দৌড়ে এসে মা’কে জড়িয়ে ধরে বলে,
” আম্মু আমি খুব খুশি। আমারও একটা খেলা’র সাথী হবে। সারা বাড়ি গুটিগুটি পা’য়ে হেটে বেড়াবে। আমার কাছে সকল আবদার করবে। আমি তার সব আবদার পূরণ করব। আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে। আমার কাছে চকলেট খেতে চাইবে। আই এম সো হ্যাপি আম্মু! অ্যাই এম সো হ্যাপি!
ছেলের কথা শুনে হৃদয় জুড়ে প্রশান্তি’র বয়ে যায়। প্রহরের এত ভালো লাগছে যা বলার বাইরে। প্রহর প্রাণের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
” আমি জানি তো আমার প্রাণ সোনা খুব খুশি। সে তার বোনের জন্য সব করতে পারবে।
প্রাণ সোজা হয়ে বসে মা’য়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
” আম্মু তুমি জানলে কেমনে আমার বোন হবে। দাদিও বলল তোর একটা বোন হবে। প্রহর মুচকি হেসে বলে,
” ও তুই বুঝবি না। মা’য়ের মনে যা ডেকে বলে ঠিক তাই ই হয়। তুই দেখিস তোর বোন’ই হবে।
” বোন হলে আমি সবচেয়ে খুশি হবো আম্মু। আমার ফ্রেন্ডদের সবার বোন আছে। আমারও বোন হবে।
পিয়াস দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মা ছেলের কথোপকথন শুনছিল। পিয়াস ও চাই তার একটা রাজকন্যা হোক। যে ছোটো ছোটো পা’য়ে সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখবে। তার দুষ্টুমিতে সবাই মেতে থাকবে। পিয়াস হালকা কেশে বলে,
” কি ব্যাপার মা ছেলে কি এতো কথা হচ্ছে শুনি? আমাকেও বলো?
প্রাণ কিছু না বলে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। প্রহর লাজুক হেঁসে পিয়াসের দিকে তাকায়। পিয়াস রুমের দরজা দিয়ে এসে প্রহরের কোমড় জড়িয়ে ধরে। প্রহর কিছুটা কেঁপে ওঠে। প্রহর আমতা আমতা করে বলে,
” দুই বাচ্চা’র বাপ হতে চললে এখনো স্বভাব ভালো হলো না। কয়দিন পর তো ছেলে’র বিয়ের বয়স হয়ে যাবে।
পিয়াস দুষ্টু হেসে বলে,
” পুরুষের স্বভাব কোনো দিন ভালো হয় না জানো না তুমি। পুরুষ তার বউয়ের সামনে সবসময় খোলা বইয়ের মতো থাকে।
” ধ্যাত তোমার ডং বাদ দাও তো। আমার অনেক কাজ আছে। আমাকে ছাড়ো।
” পিয়াস আরো শক্ত করে প্রহরের কোমড় জড়িয়ে ধরে। পিয়াস ধীর কন্ঠে বলে,
” খবরদার তুমি কোনো কাজ করবে না। ডক্টর পইপই করে বলে দিছে ভাড়ি কোনো জিনিস তুলতে পারবে না। তোমার শরীর খুব দুর্বল। তোমাকে সবসময় সচেতন থাকতে বলছে।।
প্রহর মুচকি হেসে বলে, আমার কিচ্ছু হবে না। আমার খেয়াল রাখার জন্য তো তুমি আছোই।
” তবুও আমি চাই না। আমাদের একটা ভুলের জন্য কোনো ক্ষতি হয়ে যাক।
_________________________
পিয়াস বাবা মা’য়ের একমাত্র ছেলে। পিয়াসের থেকে বছর তিনেকের ছোট পিয়াসের বোন বৃষ্টি। বৃষ্টি’র বিয়ে হয়ে গেছে বছর পাঁচেক আগে। বাবা মা স্ত্রী পুত্র নিয়েই তাদের পরিবার। আর পাঁচ টা মানুষের মতো তাদের নেই বড়ো বাড়ি। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে পিয়াস। তাদের বাড়িটা ইট দিয়ে গাথা উপরে টিনের চাল দেওয়া । তাদের নেই বিলাসবহুল জীবনযাপন। খুব সাটা মাটা ভাবেই তারা চলে। তাদের জীবনে সুখের অভাব নেই। পিয়াস প্রাইমারি স্কুলের মাস্টার। তার বাবা’ও এখানকার স্কুলের মাস্টার ছিলেন। তিনি এখন রিটার্ড হয়ে গেছেন। মাস শেষ বেতন পেলে সেই টাকা দিয়েই তাদের সংসার চলে।
***
প্রহর কে তার শাশুড়ী মর্জিনা বেগম কিছু করতে দেন না। তিনি খুব সতর্ক মানুষ। বৃদ্ধ বয়সেও তিনি বাড়ির সকল কাজকর্ম এক হাতে করছেন । প্রহর করতে চাইলে তাকে নিষেধ করে দিছে। মর্জিনা বেগম কোনো রকম গাফিলতি করতে চান না। তিনি চান বংশের প্রদীপ সহি সালামত পৃথিবীতে আসুক।
**
দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন কেটে গেছে। প্রহর খুব সাবধানে হাঁটাচলা করে। প্রহরের গোসলের সময় হলে পিয়াস কিংবা শাশুড়ী মা কল থেকে পানি তুলে দেন। ডাক্তারের কথা মতো প্রহর কোনো ভাড়ি কাজ করে না। প্রহরের প্রেগন্যান্সিতে অনেক সমস্যা আছে। এজন্য সব মেনে চলতে হচ্ছে। এমন একটা পরিবার পেয়ে প্রহর খুব ভাগ্যবতী। এমন পরিবার ক’জনের ভাগ্যে বা জোটে।
**
প্রহর পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আগের তুলনায় প্রহরের পেট খানিকটা উঁচু হয়েছে। প্রহর গভীর ঘুমে আছে। তার পাশে পিয়াস বসে মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে। প্রহরের শরীরটা আজ ভালো না। সকাল থেকেই খারাপ। জানের ভিতরে অশান্তি লাগছে। এক জায়গায় বসে থাকতেও পারছে না। শুয়ে থাকলেও ভালো লাগছে না। প্রহরের শরীরে অস্থিরতা কাজ করছে। হঠাৎ এমন হওয়ায় ঘাবড়ে যায় পিয়াস। বাড়ির সকলেই টেনশনে পরে যান।
পিয়াস জোর করে প্রহর কে বিছানায় শুইয়ে তার পাশে বসে মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে যাতে একটু আরাম পায়। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে প্রহর ঘুমিয়ে পড়ে।
পিয়াস এক দৃষ্টিতে অর্ধাঙ্গিনী’র দিকে তাকিয়ে আছে। পিয়াসের মনে অজানা ভয় এসে হানা দিচ্ছে। পিয়াস ভয় পাচ্ছে খারাপ কিছু হবে না তো।
অনেক সময় আমাদের মনে ডেকে যেটা কয় ঠিক সেটাই বাস্তবে ঘটে যায়। কারোর কিছু করার থাকে না। আর না আমাদের করার হাত থাকে।
মা’য়ের অসুস্থতা দেখে প্রাণ ভয় পেয়ে যায়। ঘরের কোনে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পিয়াস ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে,
” প্রাণ এদিকে আয়। প্রাণ বাবা’র কাছে এগিয়ে আসে। পিয়াস ছেলের মাথায় হাত দিয়ে বলে,
” কোনো ভয় নেই বাবা। মা সুস্থ হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ। এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। প্রাণ মাথা ঝাকিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
পিয়াস প্রহরের পাশে শুয়ে পরে। এক ধ্যানে বউয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।* পিয়াসও সেই ভাবেই ঘুমিয়ে পড়ে।
প্রহরের অসুস্থতার কথা শুনে পরের দিনই ছুটে আসেন প্রহরের বাবা মা। প্রহরের মা আসার পর থেকে কান্না করেই যাচ্ছেন। প্রহর এখন আগে থেকে সুস্থ। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পিয়াস প্রহরকে ঘুম পাড়িয়ে দিছিল কাল। প্রহর কে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো যায়নি কারণ প্রহর পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। মর্জিনা বেগম বেয়াইন কে শান্ত্বনা দিচ্ছেন প্রহরের কিছু হবে না। প্রহর ঠিক হয়ে যাবে। প্রহরের মা কয়েকদিন থেকে যাবেন এখানে। অসুস্থ মেয়েকে একা রেখে যেতে মন সায় দিচ্ছে না তার। স্বামী কে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন।
প্রহর কে নিয়ে ডক্টরের কাছে চেকাপ করাতে যায় পিয়াস। বাচ্চা সুস্থ আছে নাই দেখার জন্য। ডক্টের কাছে আসলে ডক্টর অনেক গুলো রিপোর্ট করতে বলে। পিয়াস প্রহর কে নিয়ে অন্য ডক্টরের কাছে যায় যে ডক্টর প্রহরের আল্ট্রাসনোগ্রাফি সহ আরও কিছু পরীক্ষা করবেন। সব পরীক্ষা শেষ হলে প্রহর কে নিয়ে চেয়ারে বসে। রিপোর্ট এখনো হাতে আসেনি। পিয়াস বারবার আল্লাহ কে সরণ করছে যেন রিপোর্ট ভালো আসে।
#চলবে ইন শা আল্লাহ ~