#শেষ_ডাইরি
#লেখক_আরিফ_ইসলাম
#অন্তিম_পর্ব
_কোনটা ভালো কোনটা খারাপ, আমি দেখবো না । তোমার ভাইয়ের মত তুমিও সত্যটা যেনো গেছো। আজ তোমার চোখ দিয়ে ১৬ জোড়া সম্পূর্ণ করবো।
বলেই কোমর থেকে ধারালো ছু*রি হাতে নিয়ে আরিফের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে ঈশিতা । আরিফ শুয়া অবস্থাতেই পেছন দিকে চলছে। ঈশিতার মুখে বিকট হাসি।
আরিফের বেশ কাছে চলে এসেছে ঈশিতা। চোখ বন্ধ করে আল্লাহ কে ডাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই আরিফের কাছে। ঈশিতা সং*স্পর্শে আসতেই আরিফের ধারকান দ্বিগুণ বাড়ছে। ছুড়ি উঁচিয়ে আরিফের চোখ বরাবর নিয়ে এসেছে। নিজেকে বাঁচানোর সব রকম চেষ্টা করছে আরিফ। কিন্তু তার দেহ অবশ হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে কোনো অদৃশ্য শক্তি তাকে বেঁধে রেখেছে। চারিদিকে ভুতুড়ে আওয়াজ কানে আসছে। মনে হচ্ছে অনেক মানুষ একসঙ্গে আর্তভরা ডাক দিচ্ছে আরিফ কে। ঝড়ো হাওয়া বইছে বাড়িটির প্রতিটি কোনায়। তবে কী আরিফের এটাই শেষ প্রহর?
চোখের সামনে পুরোনো স্মৃতি গুলো আবছা হয়ে ভেসে উঠেছে। বাবা মায়ের মুখ খানা বড়ই মায়াবী লাগছে।
চিৎকার দিতে চেয়েও সে আজ নির্বা হয়ে গেছে।
হঠাৎ কোনো অদৃশ্য শক্তি যেনো হাওয়ার বেগে ঈশিতা কে শূন্যে ছুড়ে ফেলে। আরিফ নড়েচড়ে বসে ।
ঈশিতা উড়ে গিয়ে দেওয়ালে প্রচন্ড ধাক্কা খায়। তন্ত্রমানবী ঈশিতার রূপ ক্রমশ ভয়ংকর হতে থাকে। অগ্নি শিখার চাহনি তে আরিফের দিকে এগিয়ে আসছে। ছুড়ি উঁচিয়ে তেড়ে আসছে। সং*স্পর্শে আসতেই আবারো অদৃশ্য শক্তির আবির্ভাব। পুনরায় ঈশিতা শূন্যে উড়ে গিয়ে দেওয়ালে ধাক্কা খায়।
“_কে তুই? আমি তোর সংস্পর্শে যেতে পারছি না কেনো?
আরিফের দিকে বজ্র কন্ঠে বলতে থাকে ঈশিতা। রাগে ফুঁসতে থাকা ঈশিতার চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। কিন্তু এগুলো কী হচ্ছে আরিফ কিছুই বুঝতে পারছে না।
“_এই অদৃশ্য শক্তি কোথা থেকে এলো?
জল্পনা কল্পনা করতে থাকে আরিফ। কিন্তু আগের থেকে বেশ সাহসী হয়ে উঠেছে সে। কারন ঈশিতা তার সংস্পর্শে আসতে পারছে না। আরিফ সেখান থেকে পালাতেও পারছে না। চারিদিকে দরজা আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেছে । যেনো এক ভয়ের কুয়োই ডুবে আছে সে। ঈশিতা শূন্যে ভাসছে আরিফের চারি ধারে। মুখে তার ভয়ংকর হাসি, চোখে অগ্নি শিখা ।
ঈশিতার তন্ত্র শক্তি দিয়ে ঝড় আরো দ্বী গুন বাড়িয়ে দিয়েছে। আরিফ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। হঠাৎ ফ্লোরে নজর যেতেই সিয়াম ভাইয়ের সেই শেষ ডাইরি টা চোখে পড়ে।
বেশ চমকে উঠে আরিফ। “_ আরে এই ডাইরি টা তো মির্জা বাড়িতে থাকার কথা। আমি তো সেখানেই এই ডাইরি টা রেখেছিলাম। তাহলে এখানে আসলো কেমন করে?
আরো বেশি ঘাবড়ে যায় তার নিজের বাবা মায়ের খন্ড বিখন্ড লাশ দেখে। তার পাশেই বিভৎস অবস্থায় পড়ে আছে তার বাবা মির্জা হারুন অর রশিদ ও মা সালেহা বেগমের মৃত দেহ। তাদের চোখ জোড়া উপরানো । আরিফের হৃদয় ফাটা চিৎকারে পুরো বাড়িটা উত্তল হয়ে পড়েছে। ঈশিতার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরিফ। রাগে তার দেহের প্রতিটি শিরা-উপশিরার র*ক্ত টগবগ করছে। “_ ডাইনি তুই এটা কী করলি? যেই মা তোকে নিজের মেয়ের মত আদর করেছে তাকে মারতে একটুও হাত কাপলো না তোর? যেই বাবা তোকে সারা জীবন পুত্র বধু হিসেবে রাখতে চেয়ে এক ছেলের মৃত্যুর পর অন্য ছেলের অমতে তোকে পুনরায় বিয়ে দেয় সেই পিতাকে কিভাবে হত্যা করলি?
ঈশিতা আরিফের কোনো কথাই কানে নিচ্ছে না। “_ আমি হিংস্র। কারো প্রতি মায়া নেই আমার। আমার উদ্দেশ্য হাসিল করতে আমি যা খুশি করতে পারি ।
এই বলে ঈশিতা বিকট শব্দে হাসতে থাকে। আরিফ রেগে আগুন হয়ে উঠেছে। “_ আরে ডাইনি তুই কোন ভালোর কথা বলছিস? তোর ভালোবাসার মানুষ সাঈদ যদি সত্যিই পুনরায় জীবিত হতো তবুও সে একটা খারাপ আত্মা হয়ে ফিরবে। এটা কিভাবে ভালো হতে পারে?
ঈশিতা আরিফের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।”_ যে ভাবেই ফিরুক, সে তো ফিরবে! প্রতিদিন এক জোড়া চোখ দিলে ওর আত্মা বারো ঘন্টা আমার সাথে থাকে। ৩০ জোড়া পূর্ণ হলে সাড়া জিবন থাকবে।
ভাবতেই আশার ঝলক ফুটে উঠেছে ঈশিতার চোখে।
আরিফের নজর আবার সেই ডাইরিটার দিকে পড়ে। হাওয়ার ঝাপটায় ডাইরিটার পাতা উল্টে আছে। হয়তো ডাইরিটা আরিফ কে কিছু বলতে চাচ্ছে। আরিফ দেরি না করে দৌড়ে ডাইরি টার কাছে যায়। দ্রুত ডাইরিটা হাতে তুলে নেয়।
র*ক্তিম কালি দিয়ে লেখা আছে “ঈশিতার সব থেকে বেশি পছন্দের জিনিস পুড়িয়ে দাও” ।
আরিফ প্রচন্ড ঘাবড়ে আছে। এখনো অনেক কিছু অস্পষ্ট হয়ে আছে তার কাছে। আরিফের কাছে কেনো ঈশিতা আসতে পারছে না ? তার কোনো ক্ষতি কেনো করতে পারছে না? সব কেমন তালগোল পাকিয়ে ফেলছে আরিফ। ঈশিতা আরিফের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য শক্তির কাছে পরাজিত হচ্ছে বার বার।
হঠাৎ আরিফের পকেট থেকে এক উজ্জ্বলিত রশ্মি বের হতে থাকে। তখনই আরিফের মনে পড়লো সকালে ঘটে যাওয়া ঘটনা ।
সোহেল কে দাওয়াত দেওয়ার পর মূহুর্তে আরিফ বাজার করতে বের হয়। রাস্তায় হঠাৎ একটা অদ্ভুত ফকিরের সাথে দেখা হয় তার। হ্যাংলা পাতলা চেহারা লোকটার। মনে হচ্ছে বেশ কিছু দিন ধরে কিছু খেতে পায়না। আরিফ আগে থেকেই বেশ দয়ালু স্বভাবের। তাই লোকটার পরিস্থিতি দেখে বেশ মায়া হলো তার। পকেট থেকে কয়েক শত টাকা হাতে ধরিয়ে দিতেও নিতে অস্বীকার করেন লোকটা। “_ এ কেমন ফকির রে বাবা ? এত গুলো টাকা দিলাম তবুও নিলো না।
বিরক্ত হয়ে আরিফ বিড়বিড় করে বলছিলো । তবুও সে লোকটাকে পুনরায় বললো । “_ চাচা কিছু না নিলেন। কিন্তু আমার সাথে বসে কিছু খেতে তো পারেনই।
লোকটা লাজুক হাসি দিলো । মুখের ভঙ্গিমা দেখে বুঝা গেলো সে রাজি আছে। আরিফ লোকটাকে সাথে নিয়ে পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে বসে। দুজনে পেট ভরে খেয়ে লোকটার হাতে পুনরায় টাকা দিলে সে নেয়। বিনিময়ে আরিফের হাতে একটা মাদুলি (তাবিজ) দেয় লোকটা। বিদায় বেলা বলেও দেয় এই তাবিজ টি সব সময় তার সাথে রাখতে।
“_তারমানে সেই লোকটার তাবিজ আজ আমাকে রক্ষা করছে? আর তাই ঈশিতা আমার সংস্পর্শে আসতে পারছে না!
হঠাৎ ঝড়ের প্রচন্ড ধাক্কায় আরিফ ছিটকে পড়ে যায়। পকেট থেকে অপ্রত্যাশিত ভাবে তাবিজ টিও ছিটকে পড়ে যায়। আরিফ প্রান পনে তাবিজ টি খুঁজতে থাকে। কিন্তু আশে পাশে তাবিজ টি নেই। ঈশিতা এই সুযোগে আরিফ কে শূন্যে ছুড়ে ফেলে দেয়। বেশ কয়েক বার এক দেয়াল হতে অন্য দেয়ালে পালাক্রমে ছুড়ে ফেলে আরিফ কে। হঠাৎ সাঈদের কফিনের পাশে মুখ থুবড়ে পড়ে যায় আরিফ। সাথে পকেটে থাকা সেগারেট ও লাইটার। আরিফের হঠাৎ মনে পড়ে যায় ঈশিতার সব থেকে বেশি পছন্দের জিনিস তো তার ভালোবাসার মানুষ সাঈদ।
আরিফ লাইটার হাতে নিয়ে দ্রুত উঠে দাঁড়ালো। লাইটার জ্বালিয়ে ঈশিতার সামনে হাত উঁচিয়ে ধরে। ঈশিতার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট ভেসে উঠেছে।
“_না আরিফ তুমি এটা করতে পারো না। আমি তোমার ক্ষতি করেছি, তুমি আমায় যা খুশি করতে পারো । কিন্তু দোহাই সাঈদের কোনো ক্ষতি করো না।
আরিফ ঈশিতার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। ।”_ দুষ্টু লোকের মিষ্টি কথায় ভুলবো ভেবেছো ? আজ তোমার সব খেল খতম ঈশিতা।
লাইটার কফিনের গায়ে ছোঁয়াতেই দাও দাও করে আগুন জ্বলে ওঠে। পুরো বাড়িতে যেনো ভূমিকম্প শুরু হয়েছে। ভূ কম্পনে ঘরের দেয়াল ধ্বসে পড়া শুরু করেছে। আরিফ দেরি না করে মা বাবার মৃত দেহের দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু ভূ কম্পন এতটাই জড়ালো যে আরিফের চোখের সামনে তার বাবা মায়ের লাশ পড়ে থাকা ঘরটার ছাদ ভেঙে পড়ে। আরিফ নিজেকে বাঁচাতে বাইরের দিকে ছুটে যায়। কফিনের আগুন নেভাতে ঈশিতার গায়ে আগুন ধরে গেছে। আজ আর ঈশিতার রক্ষা নেই। আজই বন্ধ হবে এই মৃত্যুর খেলা । স্পষ্ট হবে এই চোখের ভয়াবহ রহস্য।
বাড়ি থেকে বের হতেই বিকট শব্দে পুরো বাড়িটা ধ্বসে পড়ে।
আরিফ ক্লান্ত দেহ মাটিতে এলিয়ে দেয়। চোখ ভিজে আসছে বাবা মায়ের জন্য। আজ যে সে বড়ই একা ।কেউ রইল না যে তার। বুক ফেটে চিৎকার আসছে তার। নির্বাক চাহনিতে তাকিয়ে আছে বিধ্বস্ত বাড়িটার দিকে।
আজ ২০২২ সাল ।
এখনো আরিফ অগোছালো এলোমেলো চুলে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেই বাড়িটার দিকে। মির্জা বাড়িটাও বিধ্বস্ত প্রায়। আরিফের ঠিকানা এখন পথে ঘাটে। কিন্তু প্রতিদিন একবার হলেও সে মির্জা বাড়ি ও ভাঙা বাড়ির পাশে যাবেই। এটা যে তার নিত্য দিনের অভ্যাস। নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বাড়িটার দিকে।
সে যে এখন মানুষিক ভারসাম্য হীন।
*সিয়ামের একটা ভুলের জন্য তার পুরো পরিবারটা আজ শেষ। তাই কবি বলেছেন,,
ভাবিয়া করিও কাজ!
করিয়া ভাবিও না !
সমাপ্ত।
এই গল্পের কাহিনী সম্পূর্ণ কাল্পনিক।