#শেষ_ডাইরি
#লেখক_আরিফ_ইসলাম
#ষষ্ঠ_পর্ব
ঈশিতার কন্ঠে নিমিষেই আরিফের দেহ থেকে প্রান চলে যাওয়ার মত অনুভূতি পায়। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ঈশিতার পানে তাকানো যাচ্ছে না। ভিষন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে তার চাহনি। রাগান্বিত ভঙ্গিতে আরিফের পানে এগিয়ে আসছে ঈশিতা । আরিফ বুঝতে পারছিলো তার সাথে খারাপ কিছু হতে চলেছে। সে উঠে দাঁড়াতে চেয়েও ব্যর্থ হয়। ঠিক কাছাকাছি এসে ঈশিতা অগ্নি দৃষ্টিতে আরিফের দিকে তাকিয়ে থাকে।
“_ঈশিতা আমার কথাটা আগে শেষ করতে দাও। তারপর আমার সাথে যা ইচ্ছে করতে পারবে।
ঈশিতা আরিফের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। “_তুমি অনেক কিছু জেনে ফেলেছো আরিফ।
আরিফ ঈশিতা কে তার শেষ কথা গুলো শুনতে অনুরোধ করে। ঈশিতা এতটা ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে যে আরিফের গায়ের রক্ত হিম হয়ে আসছে। চুল গুলো এলোমেলো ভাবে উড়ছে । চোখের নিচে রক্তিম চিন্হ ফুটে উঠেছে। ঠোঁটে ভয়ানক হাসির ফলক। পরিবেশটাও কেমন বেশি ভুতুড়ে হয়ে গেছে। বাতাসের ঝাপটায় আরিফের দেহের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। “_ঈশিতা তোমার আসল পরিচয় কী? ওই লোকটা কে হয় তোমার আর কেনোই বা মানুষ কে হত্যা করে তাদের চোখ উঠিয়ে নিচ্ছো ?
ঈশিতার মুখে বিকট হাসি। নিমিষেই পরিবেশ যেনো দ্বিগুণ ভয়ংকর হয়ে উঠেছে । বিজলীর ঝলকানি মাঝে ঈশিতার সাদা রঙের ফ্রকে পড়তে যেনো আরো অশশরীর মতো চেহারা ফুটিয়ে উঠাচ্ছে ।
“_শুনবে তাহলে আমার গল্প?
আরিফ বিনয়ের সাথে মাথা ঝাঁকায়। ঈশিতা তার জিবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিবরণ দিতে শুরু করে।
“_সালটা ২০০৮ সাল।
আমার বাবা মায়ের সাথে এই বাড়িতে থাকতাম। আমাদের সাথে মায়ের বড় বোনের ছেলে অর্থাৎ আমার খালাতো ভাই থাকতো । ওর নাম ছিলো সাঈদ। ছোট বেলায় খালা মারা যাওয়ার পর খালু অরেকটা বিয়ে করেন। তার পর আমার মা সাঈদ কে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন । বেশ লম্বা চওড়া ছিলো ছেলেটা। আমার থেকে ৫ বছরের বড়। ওর সাথে শৈশব বেশ ভালোই কেটেছে। ঝগড়া ঝাটি, মারা মারি, দৌড়া দৌড়ি , খুনসুটিতে মেতে থাকতাম দুজনে মিলে। সাঈদ ভাইয়া এস সি সি পরীক্ষা দিবে। আর আমি তখন পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনীর জন্য প্রস্তুত নিচ্ছিলাম। একসাথে স্কুল হওয়ায় দুজনে এক সাথেই যেতাম আবার ফিরতাম। একদিন রাস্তা দিয়ে দুজনে বাসায় ফিরছিলাম। হঠাৎ চোখ পড়ে রাস্তার পাশে একটা ছেলে একটা মেয়েকে ফুল দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে ভালোবাসি বলছে। আমারও ভিষন সখ হলো । সাঈদ ভাইয়া আমার মুখ ধরে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিলো । “_ ঈশিতা ওইসব কী দেখছিস হুম? তুই এখনো অনেক ছোট।
আমি সাঈদ ভাইয়া কে বললাম। “_ ভাইয়া আমিও তো তোমাকে ভালোবাসি ! সেদিন না বলেছিলে তুমিও আমাকে ভালবাসো ! তাহলে আজ তুমি আমাকে একটা ফুল দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে এটা বলবে?
সেদিন আমার কথা শুনে সাঈদ ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে তাকায়। আমিও ওর রাগী চাহনি দেখে আর কথা বাড়ালাম না। বুঝিনি সাঈদ ভাই আমাকে বোন হিসেবে ভালোবাসি বলেছিলো ।
দুজনে মিলে বাসায় ফিরলাম। রাতের ডিনারের সময় বাবা ডেকে নিয়ে যায়। খাবার টেবিলে বসে দেখি সাঈদ ভাইয়া আমার দিকে তাকালো না। আমার বেশ খারাপ লাগছে । হয়তো কথাটা বলা আমার উচিৎ হয়নি। বাবা আমাদের বিষয়টা খেয়াল করে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। “_ ঈশিতা কী হয়েছে মা?
কী বলা উচিত বুঝে উঠতে পারছি না। ছোট মন এত কিছু বোঝার বয়সও হয়নি। তাই চুপচাপ খেতে থাকি। সাঈদ কথা কাটিয়ে বাবা কে বলে ”_ কই খালু কিছুই হয়নি ।
অবশ্য আমার বাবা মা সাঈদ ভাই আর আমার বিয়ের ব্যাপারে আগে থেকে অটুট আছেন। খালা কে কথা দিয়েছিলো মা , আমার আর সাঈদ ভাইয়ার বিয়ের জন্য ।
ছোট বেলা থেকেই দেখতাম বেশ কিছু লোক আমাদের এই বাড়িটি দখল করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। বাবা সারাক্ষণ চিন্তায় থাকতেন। বিশেষ করে আমার মা কে নিয়ে। আমার মা অনেক সুন্দরী ছিলেন। যখন আমার বয়স ১০ বছর । তখন একদিন আমার মা আমাকে ঘরে শুইয়ে রেখে রান্না করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বাবা তার ব্যাবসা সামলাতে বেশির ভাগ সময়ই শহরের বাইরে যান । সেদিনও একই ঘটনা ঘটে।সাঈদ ভাইয়া ইক্সট্রা কোচিং করতে গেছে। হঠাৎ আমার মায়ের চিৎকারে ঘুম থেকে উঠে পড়ি। ছোট ছোট পা ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে থাকি । রান্না ঘরের পাশে ছোট একটা ঘর আছে। সেই ঘর থেকেই আওয়াজটা আসছে। পাশে যেতেই দেখি বেশ কয়েকজন লোক সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখি একজন লোক আমার মায়ের উপরে শুয়ে আছে। দুজনেই পোশাক বিহীন। ছোট মন তাই এত কিছু বুঝতাম না। মা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু লোকটা জোর করে মায়ের সতিত্ব হরন করছে। আমাকে সেখানে দেখেই একটা লোক আমার হাত ধরে টানতে টানতে অন্য ঘরে আটকে দেয়।
হৃদয় ফাটানো চিৎকারে ভরে গেছে পুরো বাড়িটা। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছে না । এই ধু ধু প্রান্তরে আসবেই বা কে। এই বাড়ি থেকে জন মানবের বসতি বেশ খানিকটা দূরে হওয়ায় আমাদের আর্তনাদ বাড়িটাতেই সীমা বদ্ধ থেকেছে ।
একটু পরে বাবা কাজ সেরে বাড়িতে পৌঁছাতেই লোক গুলো বাবা কে ধরে ফেলে। কেউ একজন রাগী কন্ঠে বলতে থাকে। “_ তোর তো অনেক দয়া মায়া। আমারে একটু মায়া কইরা বাড়িটা লেইখা দিলে কী অইতো?
কন্ঠটা অনেক চেনা পরিচিত। আগেও শুনেছি এই কন্ঠ। হঠাৎ বন্দুকের গুলির শব্দে আমি ঘাবড়ে যায়। জানালার ফাঁক দিয়ে দেখি আমার মা র*ক্তা*ক্ত অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে আছে। বাবা মায়ের পাশে বসে নিজের প্রান ভিক্ষা চাচ্ছে। কিন্তু লোকটা কোনো কথা শুনতে নারাজ। দ্বিতীয় বার গুলির শব্দ হতেই আমি চিৎকার দিয়ে উঠি । দেখলাম আমার বাবার বুক ভেদ করে দিয়েছে। বাবার নিথর দেহ মায়ের লাশের পাশে পড়ে আছে। খানিক বাদে দরজা ঠেলে সাঈদ ভাইয়া ভিতরে প্রবেশ করেই ঘটনা চাক্ষুষ করে। সব থেকে অবাক হয় যখন খুনির জায়গায় নিজের বাবা কে দেখে । হ্যা আমার খালু আশরাফ মোল্লাই মেরেছিলো আমার বাবা মা কে । “_ বাবা তুমি এটা কী করলে? তুমি খালা- খালুরে খুন করেছো ? আমি তোমায় ক্ষমা করবো না।
আশরাফ মোল্লা খানিক হেসে বলে। “_ সাঈদ এই সম্পত্তি তোর হবে। তাই তুই শুধু শুধু ভাবিস না এসব নিয়ে। ভালো থাকতে গেলে টাকা প্রয়োজন বুঝলি।
কিন্তু সাঈদ ভাই কোনো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। সে ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নিজ পিতার দিকে।
“_ওই যা ওদের দুজনকে ঘরে আটকে রাখ। কিছু খেতে দিবি না পড়ে এমনিতেই বুঝতে পারবে। আর ভর হওয়ার আগেই মেয়েটাকে মেরে সব লাশ নদীতে ফেলে দিয়ে আসবি । আমি আবার অবুঝ শিশুদের হত্যা করি না।
আমাদের দুজনকে ধরে একটা ঘরে আটকে রাখে। নিজের ছেলে বলে সাঈদ কে মারে নি। তার সাথে আমাকেও।
সারা রাত দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকি । সাঈদ আমার হাত শক্ত করে ধরে রইলো। “_ ঈশিতা তুই কাঁদিস না। কথা দিচ্ছি এই যে তোর হাত ধরেছি আর ছাড়বো না। তোকে সারা জীবন আগলে রাখবো আমার বুকের ভিতরে। আমি একনাগাড়ে কাঁদতে থাকি। রাত তখন গভীর। জানালার গ্রিল অনেক কষ্টে সাঈদ ভাইয়া খুলে ফেলে। আমার হাত শক্ত করে ধরে শেষ শক্তি দিয়ে দৌড়াতে থাকি। আমি আর পারছি না । সাঈদ ভাই আমাকে কাঁধে উঠিয়ে দৌড়াতে থাকে। সেদিন জানি মানুষটার অনেক কষ্ট হচ্ছিলো। কিন্তু তবুও আমাকে বাঁচাতে তার অদম্য ত্যাগ । ছুটতে ছুটতে বেশ খানিকটা পথ চলে এসেছি আমরা। রাস্তার পাশে একটা দোকানের বারান্দায় দুজনে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকি। অনেক খুদা লেগেছে আমার। “_এত রাতে খাবার কোথায় পায়?
সাঈদ ভাই দোকানের ঝাপ অনেক কষ্টে খুলে ফেলে। আমরা দুজনে দোকানের ভিতরে ঢুকে পেট ভরে খেয়ে শুয়ে পরি। সকালে দোকানের মালিক দোকান খুলতেই আমাদের পায় । সাঈদ ভাই কে অনেক মার ধর করে। আমি অনেক হাত জোর করার পর তাকে ছেড়ে দেয় । আমাদের দূঃখের কথা দোকানদার কে বললে তার মায়া হয়। একটা এতিম খানায় পাঠিয়ে দেয় আমাদের। সেখানেই শুরু হয় আমাদের বেড়ে উঠা। মাঝে মাঝে আমার মন খারাপ হলে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে আমার আর ওর নাম লিখতো সাঈদ ভাইয়া। ফুল নিয়ে এসে হাঁটু গেড়ে বসে ভালোবাসি বলেছে কত বার রাগ ভাঙাতে। সে পড়া শুনায় অনেক মেধাবী । তাই পড়া শুনা শেষ করে অল্প দিনেই চাকরি পেয়ে যায়। তখন আমি সুন্দরী এক মেয়েতে পরিনিত হয়েছি। এতিম খানার সবাই জানতো আমরা দুজন দুজনকে পছন্দ করি । বেশ ধুমধাম করে বিয়েটা সম্পূর্ণ হলো আমাদের। ছোট্ট সংসার আমাদের। ঢাকার মধ্যে একটা ফ্লাট নিয়েছি সংসার শুরু সেখানেই । এভাবেই দিন কাটছিলো আমাদের।
হঠাৎ একদিন সাঈদ হাঁপাতে হাঁপাতে অফিস থেকে বাসায় ফিরে। “_ কী হলো তোমার হাঁপাচ্ছো কেনো এভাবে?
“_ঈশিতা আমার বাবা আমাকে চিনে ফেলেছে।
সে এখন বেশ বড় বিসনেস ম্যান। আমাদের অফিসে কাজের অর্ডার দিতে এসে আমার সাথে দেখা হয়েছিল। জানি না কিভাবে আমাকে চিনে ফেলেছে।
আতংকিত চাহনি দেখেই বোঝা যাচ্ছে সাঈদ বেশ ঘাবড়ে আছে। আমি পানি এনে সাঈদের হাতে দিলাম। গপগপিয়ে পুরো পানি খেয়ে ফেললো।
“_তুমি চিন্তা করো না, এখন আইন আছে। আমরা আইনের সহায়তা নিতে পারি।
সাঈদ আমার কথাতে সম্মতি দিলো। পরদিন আমরা থানায় গিয়ে কেস করলাম আশরাফ মোল্লার বিরুদ্ধে। এত বড় বিসনেস ম্যানের নামে কেস হওয়াতে মিডিয়া বেশ উঠে পড়ে লেগেছে। আমরা যেনো কেস করে আরো বিপদে পড়লাম। সেদিন রাতে হঠাৎ দরজা ধাক্কানোর শব্দ। তরিঘরি উঠে দরজার সামনে যায়। হয়তো সাঈদ অফিস থেকে বাসায় ফিরেছে। দরজা খুলতেই জন পনেরো লোক হুর হুর করে ঘরে প্রবেশ করে। ভির ঠেলে সামনে এগিয়ে আসে আশরাফ মোল্লা। “_কী মাইয়া এহনো আমার উপরে তোমার রাগ আছে দেখতাছি! কথায় আছে সুখে থাকতি ভুতে কিলায় । কথাটা দেখতাছি আইজ মিললা গেছে গা ।
আমার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে বার কয়েক ঝাকুনি দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেয়। সোফায় বসে সাঈদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে সে।
খানিক বাদে সাঈদ অফিস থেকে ফিরে। ঘরে ঢুকতেই দৃশ্য দেখে ঘাবড়ে যায়। “_ বাবা তুমি এখানে?
“_ ক্যান আব্বা আমি কী তোমাগো বাসায় আইতে পারি না? পোলার বাসায় বাপে আইবো এত অবাক হওনের কী আছে?
কথা শেষ হতেই সাঈদ কোমর থেকে রিভাল ভার উঁচিয়ে ধরে। “_ভালোয় ভালোয় এখান থেকে চলে যাও। না হলে ভালো হবে না কিন্তু!
আশরাফ মোল্লা বিকট হাসি দিয়ে বলল। “_ তাইলে যেইডা শুনছি মিলল গেলো । তুমি মাফিয়া দলের লিডার শুনছিলাম। এখন দেখতাছি সত্যিই!
“_ হ্যা বাবা তোমার ছেলে আমি। তাই ভুলে যেওনা তোমার শরীরে যেই র*ক্ত আমার শরীরে একই র*ক্ত।
তাদের কথা আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো।
সত্যিই কি সাঈদ মাফিয়া কিং ?
আমি তো জানতাম ও একজন সৎ চাকরিজীবী । সাঈদ আমার দিকে বিনয়ের সাথে তাকিয়ে বললো। “_ ঈশিতা আমাকে ক্ষমা করে দিও। আসলে আমি কোনো চাকরি করি না। এই দুনিয়ায় টাকা আর বাপ খালু ছাড়া কোনো চাকরি নেই। তাই এই পথ বেছে নিতে হয়েছে আমার।
সাঈদের প্রতি ঘৃনা হচ্ছিল আমার। নিজের পিতা আর নিজের মধ্যে কী পার্থক্য আছে এখন তার মধ্যে ?
হঠাৎ একজন পেছন থেকে এসে আমার মাথায় পিস্তল ঠেকায় । “_ রিভাল ভার নিচে ফেল, নাইলে তোর প্রানের বউরে মাইরা দিমু।
সাঈদ সন্তর্পণে রিভাল ভার নিচে ফেলে দেয়। প্রচুর মারধর করে ফ্লোরে র*ক্তা,ক্ত অবস্থায় ফেলে দেয় সাঈদ কে। অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছে সাঈদ। আশরাফ মোল্লা পাশের ঘরে চলে যায়। কিছু লোক আমাকে কামুক চাহনি তে দেখতে থাকে। হিংস্র হায়নার ন্যায় আমার দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
ঝাঁপিয়ে পড়ে আমার সতিত্ব হরন করতে। শেষ শক্তি দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছি । তখন হঠাৎ সাঈদ আমার চিৎকারে জেগে উঠে। রিভাল ভার উঁচিয়ে গুলি ছুড়তে থাকে। আশরাফ মোল্লার বুক ঝাঁঝরা করে দেয় । হঠাৎ আমার দিকে তাক করে কেউ গুলি ছুঁড়ে। সাঈদ আমাকে বাঁচাতে নিজের বুক পেতে দেয়। সারা শরীরে র*ক্তের বন্যা ভেসে যাচ্ছে । তবুও আমাকে শক্ত করে ধরে রেখে রিভাল ভার উঁচিয়ে গুলি ছুড়ছে। আমি ভয়ে কানে হাত দিয়ে রেখেছি । সব শেষ হয়ে যায়। সাঈদ আমার কোলে লুটিয়ে পড়ে। মুখে র*ক্তের দাগ। আমি পাগলের মত হাও মাও করে কাঁদতে থাকি । কেউ শুনতে পায়নি আমার কথা। আমার কপালে শেষ র*ক্তিম চুমু এঁকে দিয়ে নিথর হয়ে যায় সাঈদ।
কথা গুলো বলে বার কয়েক দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঈশিতা। সে আবার বলতে থাকে।
“_কিন্তু আমি এত সহজে আমার ভালোবাসা হারাতে দিবো না। তাই লাশ নিয়ে একজন তান্ত্রিকের কাছে যায়। তিনি আমাকে একটা বক্স আর তিনটা কফিন দেন । বলেন ৩০ জোড়া জ্যান্ত চোখ এই বক্সে রাখতে। ১০ জোরা চোখ হলে সাঈদের অশুভ আত্মা ফিরে আসবে কিছু সময়ের জন্য। আর বাকি ২০ জোরা আসলে ওর দেহে অশুভ আত্মা চির দিন থেকে যেতে পারবে। আর এর জন্য আমাকে মানুষের তাজা র*ক্ত খেতে হবে আর মন্ত্র পড়তে হবে।আর এই কারনে আমি তন্ত্র শক্তি পাই। আমি কোনো সাধারণ মানুষ নই। আমার এই কাজটি সহজ করতে সিয়ামের সাথে বিয়ে করি। আমার রূপের মূর্ছনায় সবাই কে আমার ফাঁদে ফেলে হত্যা করে তাদের চোখ তুলে নেই। তোমাদের পরিবারের লোকজনের মায়ায় পড়ে যায় তাই তাদের কোনো ক্ষতি করিনা। কিন্তু একদিন আমার উদ্দেশ্য সিয়াম জেনে যায়। তাই তাকেও হত্যা করতে বাধ্য হই আমি। আমি আমার সাঈদের জন্য যা কিছু করতে পারি।
ঈশিতার কথা শেষ হতেই আরিফ বুঝতে পারে আসল ঘটনা। সে ঈশিতার দিকে তাকিয়ে থাকে। “_তোমার এত বড় সত্যি গোপন রেখে তুমি কী ভালো করেছো?
ঈশিতা বিকট হাসি দিয়ে আরিফের দিকে ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকায়।
“_কোনটা ভালো কোনটা খারাপ, আমি দেখবো না । তোমার ভাইয়ের মত তুমিও সত্যটা যেনো গেছো। আজ তোমার চোখ দিয়ে ১৬ জোড়া সম্পূর্ণ করবো।
বলেই কোমর থেকে ধারালো ছুরি হাতে নিয়ে আরিফের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে ঈশিতা__
চলবে __