#শেষ_ঠিকানা
#পর্ব_১৩
#মেহরিন_রিম
বিছানার উপর মাথা চেপে ধরে বসে আছে হিমি। কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। অপূর্বের সঙ্গে যে এত কিছু ঘটে গেছে তা ওর কল্পনার ও বাহিরে ছিল। তার ই বা কি করার ছিল তখন! পরিস্থিতি টা এমনই ছিল যে না চাইতেও অপূর্বকে ভুল বুঝতে হয়েছিল। এমন নয় যে নিজের সিদ্ধান্তের উপর আফসোস হচ্ছে হিমির,তবে খারাপ লাগছে অপূর্বের জন্য।
ঐসময়ে অর্নবের গায়ে হাত তোলার পর থেকে নিজের উপর রাগ হচ্ছে হিমির। তবে তখন অর্নবকে থামানোর আর কোনো উপায় ছিল না। হিমি বেশ ভালো করেই জানে অর্নব রেগে গেলে ঠিক কি কি করতে পারে।
হিমির চিন্তার মাঝেই ঘরে প্রবেশ করলো অর্নব। তবে সে একবারো হিমির দিকে তাকালো না। হিমি বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে অর্নব তার উপর রেগে আছে। হিমি নিজের ক্রাচ টা নিয়ে উঠে দাড়ালো।
অর্নবের দিকে তাকিয়ে বললো,
_অর্নব আমার আপনাকে কিছু বলার আছে।
অর্নব কোনো উত্তর না দেওয়ায় হিমি আবারো দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
_দেখুন আপনি সবটা জানেন না বলেই এভাবে ভুল বুঝছেন। ঐসময়ের ঘটনার জন্য আই এম রিয়েলি সরি।
_হিমি প্লিজ,আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা এই বিষয়ে।
হিমি অর্নবের কাছে গিয়ে বললো,
_আপনাকে শুনতেই হবে।
কথাটা বলেই হিমি অর্নবকে অপূর্বের ব্যাপারে সব কথাগুলো বলতে লাগলো। সবটা শোনার পর অর্নব অবাক চোখে হিমির দিকে তাকালো।
হিমি এবার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
_আমি বলছিনা যে আমি অপূর্ব কে সম্পূর্নভাবে ভুলতে পেরেছি। তবে আমি সজ্ঞানে যখন আপনাকে বিয়ে করেছি, তখন সেই বিয়েটাও আমি মেনে নিয়েছি। আমি জানি অপূর্ব এই কথাটা জানলে কখনই আমাকে ওভাবে বিয়ের কথা বলত না। আর যদি বলত, তবুও যে আমি রাজি হয়ে যাবো এটা আপনি ভাবলেন কি করে বলুন তো। একটা সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস জিনিসটা সবচেয়ে বড়, আপনার কি আমার প্রতি সেই বিশ্বাস টুকুও নেই?
অর্নব এবার হিমিকে জড়িয়ে ধরে বলল,
_অবিশ্বাস নয় হিমপরি, ব্যাপারটা ভয়ের। বড্ড ভয় হয় আমার, তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়।
হিমি চুপ করে রইলো,অর্নবের অবস্থাটা সে বুঝতে পারছে। তবে হঠাৎ করে তার ভয় হচ্ছে অপূর্বের জন্য, ও যদি ভুল কিছু করে ফেলে।
___
নদীর পারে বসে আছে অপূর্ব। তার দৃষ্টি আকাশের দিকে। তবে সেখানে সে একা বসে নেই,পাশে বসে আছে দিবা। তাদের মধ্যে নিরবতা বিরাজ করছে অনেক্ষন ধরে। হিমি ই দিবাকে অপূর্বের ব্যাপারে জানিয়েছিল। আর দিবা জানে এই সময়ে অপূর্ব কোথায় যেতে পারে, সেই ধারণা নিয়েই এখানে এসেছিল সে। আর তার ধারণা সঠিক হয়ে গেলো।
অবশেষে নিরবতা ভাঙিয়ে দিবা বলল,
_তুই হিমিকে ভুল বুঝিস না অপু। আমি জানি তুই ওকে ভালোবাসিস,তবে ওর এখন বিয়ে হয়ে গেছে সেটা তোকে বুঝতে হবে। এখন যদি তুই…
_আমাকে কি তোর সিনেমার হিরো মনে হয়?
দিবা অবাক হয়ে বললো,
_মানে?
অপূর্ব দিবার দিকে তাকিয়ে বলল,
_আমি কোনো অসাধারন মানুষ নই দিবা। আমি খুব সাধারণ একটা মানুষ। আমি চাইলেই কোনো গল্পের নায়কের মতো হিমিকে তুলে আনতে পারব না। চাইলেই ওর হাসবেন্ড এর ক্ষতি করতে পারবোনা, ওর হাসবেন্ড এর নামে ওর কাছে খারাপ কথা বলতে পারবোনা। ভালোবাসার পরিনতি টা অধিকাংশেই অনেক বেশি নির্মম জানিস তো,ভালোবাসলে কাউকে না কাউকে কষ্ট পেতেই হবে। যেমন এক্ষেত্রে আমি পাচ্ছি। তবে হিমি আমাকে ভুলে অন্য কাউকে মেনে নিতে পারলেও, আমার পক্ষে হয়তো সেটা সম্ভব হবে না। আমি ওকেই ভালোবাসি আর ভালোবেসে যাবো।
দিবা অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো অপূর্বের দিকে। অপূর্ব দিবার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে বলল,
_ভালোবাসতে চাইলে না ভালোবাসার মানুষটাকে খুশি থাকতে দিতে হয়। এই কথাটা বোধ হয় তুই জানতিস না তাইনা?
_ত তুই কি বলতে চাচ্ছিস?
_তোর কি মনে হয় বলতো? আমি কিছুই জানিনা! হাহ,এই সবকিছুর পিছনে আসল মানুষটা যে তুই সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি দিবা।
বড়বড় চোখে অপূর্বের দিকে তাকালো দিবা। অপূর্ব আবারো বাকা হেসে বলতে লাগলো,
_মা যাওয়ার আগে আমাকে সবটাই বলেছে দিবা। এই সব প্ল্যান যে তুই মায়ের মাথায় ঢুকিয়েছিস সেটা আমি জানি। অর্নব এর ব্রেইন ওয়াশ করা থেকে শুরু করে সেদিন যখন আমার বন্ধু হিমিকে সবটা জানাতে কল দিয়েছিল, সেদিন তুই ই ওকে ভুল ভাল বুঝিয়েছিলি সেটাও আমি জানি।
দিবা কিছু বলতে পারলো না,অপূর্ব যে সবটা জানতে পেরে যাবে এটা সে ভাবতেও পারে নি।
অপূর্ব দিবার দিকে তাকিয়ে বলল,
_ভালো লাগছে তোর? আমাকে এই অবস্থায় দেখে তো তোর আনন্দ হওয়ার কথা।
দিবা এবার কাঁদতে কাঁদতে বলল,
_অপু বিশ্বাস কর,আমি তোকে..
_ভালোবাসিস,তাইতো? তাইতো হিমিকে আমার জীবন থেকে সরিয়ে দিলি,আমি আমার মাকে পর্যন্ত হারালাম। এরপর ও কথাটা বলতে পারবি তুই?
_আমি এতকিছু বুঝতে পারিনি অপু,আমার ভুল হয়ে গেছে।
অপূর্ব তাচ্ছিল্যের সূরে হেসে উঠে দাড়ালো। সেখান থেকে চলে যেতে নিয়ে আবারো পিছনে তাকালো। দিবার দিকে তাকিয়ে বলল,
_চিন্তা করিস না,আমি হিমিকে কিছু বলবো না। তোদের বন্ধুত্ব নষ্ট করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। তবে একটা রিকুয়েস্ট রাখবি প্লিজ, আমার সামনে আর কখনো আসিস না।
অপূর্ব চলে গেলো সেখান থেকে। তবে দিবা একই জায়গায় বসে রইলো, নিজের কাজের জন্য এখন নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছে তার। নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে পাওয়ার জন্য তাকে এতটা কষ্ট দিয়ে ফেললো,এমনকি সেই মানুষটা এখন তার মুখ পর্যন্ত দেখতে চায় না। এটাই হয়তো তার প্রাপ্য।
____
কেটে গেছে আরো ছয় মাস। অপূর্ব এতদিনে আর হিমির সামনে আসেনি। হিমি এখন ক্রাচ ছাড়াই হাটতে পারে। অর্নবের সাথে বেশ সুখেই আছে সে,তবে মাঝে মধ্যে অপূর্বের কথা ভেবে নিজের মাঝে অপরাধবোধ কাজ করে হিমির।
রাত ৮ টা বাজে,অর্নব কিছুক্ষন পরেই চলে আসবে। হিমি বসে বসে টিভি দেখছিল এমন সময় তার ফোনে দিবার কল আসে। হিমি কলটা রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে দিবা কাঁদতে কাঁদতে বলে,
_হিমি অপু..
#চলবে