শেষ ঠিকানা পর্ব-১১

0
450

#শেষ_ঠিকানা
#পর্ব_১১
#মেহরিন_রিম
_হ্যালো, কে বলছেন?
_আমি হিমি, আপনি আজ দুপুরের দিকে আমাকে কল করেছিলেন। কিছু একটা বলবেন বলছিলেন।

অপর পাশের ব্যাক্তি হিমির কথা শুনে কিছুটা হকচকিয়ে উঠে বললো,
_তেমন কিছু না, আসলে আমি তোমার সাথেই পরি। আমাদের এক্সাম এর ডেট ঠিক হয়েছিল। তুমি খবর পেয়েছো কিনা সেটা জানাতে ফোন করেছিলাম আরকি।

হিমির কিছুটা খটকা লাগলো। ভ্রু কুচকে বললো,
_হ্যা সেটাতো আমি জানি, ডেট তো আরো আগেই ঠিক করা হয়ে গেছে।

_ওহ আচ্ছা,ঠিক আছে আমি তাহলে রাখি হ্যা।

_এক মিনিট, আমিতো তখন ফোনটা না কেটেই চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু আপনি ৪ মিনিট পর্যন্ত কলটা ধরে রেখেছিলেন কেন?

_আমার একটু কাজ আছে,আমি রাখছি।

_আরে উত্তর টা তো…

হিমি আর কিছু বলার আগেই কলটা কেটে যায়। হিমি তাকে আবার কল করতে যাবে তার আগেই কারোর পায়ের শব্দ পেয়ে থেমে যায় সে।
অর্নব ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করে হিমির দিকে একবার তাকায়। তারপর দরজা আটকে দিয়ে ড্রেসিং টেবিল এর সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ঘড়ি খুলতে থাকে। হিমি তখনো তার দিকে তাকিয়ে ছিল।
অর্নব হিমির দিকে তাকাতেই সে চোখ সরিয়ে নেয়। বেশ কিছুটা সময় সেভাবেই কেটে যায়,অর্নব একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হিমির দিকে।
অর্নবকে চুপ থাকতে দেখে হিমি কিছুটা ইতস্তত বোধ করলো। কাপা কাপা গলায় বললো,
_আ আমার আপনার সঙ্গে কিছু কথা ছিল।

হিমির কথায় অর্নবের ধ্যান ভাঙলো, তবে কোনো উত্তর দিলো না। কিছুক্ষন সেভাবে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে লাগলো,
_কি আর বলবে? তোমার অতীত সম্পর্কে? বিশ্বাস করো আমার সেই বিষয়ে জানার কোনো ইচ্ছে নেই। অপূর্বর ব্যাপারে আমি সবটাই জানি, আর এর চেয়ে বেশি কিছুও যদি হয়ে থাকে তাতেও আমার কোনো প্রবলেন নেই। সর্বোচ্চ তোমাদের মধ্যে ফিজিক্যাল…

_প্লিজ…চুপ করুন আপনি।
হিমি চোখ খিঁচে বন্ধ করে কথাটা বললো। অর্নব আর কিছু না বলে চুপ করে রইলো। হিমি চোখ তুলে অর্নবের দিকে তাকিয়ে বললো,
_আমাদের সম্পর্কের মধ্যে খারাপ কিছুই ছিলোনা। আমরা একে অপরকে মন থেকে ভালোবাসতাম।

অর্নব কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো হিমির দিকে। তারপর ধীর পায়ে তার পাশে এসে বসলো। হিমির চোখে চোখ রেখে বললো,
_তুমি নাহয় মন থেকে ভালোবাসতে,কিন্তু অপর পাশের লোকটার কথা গ্যারিন্টি নিয়ে কি করে বলতে পারো তুমি?

_মানে? আপনি কি বলতে চাইছেন?

অর্নব চোখ সরিয়ে নিলো। সামনের দিকে তাকিয়েই বললো,
_কিছুনা। রাত অনেক হয়েছে, তুমি ঘুমিয়ে পরো।

_আর আপনি?

অর্নব একনজর হিমির দিকে তাকালো। কোনো উত্তর না দিয়েই উঠে ব্যালকনি তে চলে গেলো। হিমি তাকিয়ে রইলো অর্নবের দিকে,বোঝার চেষ্টা করছে তাকে।

____
কেটে গেছে আরো দুটো মাস। এতদিনে হিমির অনেকটা উন্নতি হয়েছে, থেরাপি দেওয়ার ফলে হিমি হুইল চেয়ার ছেড়ে দুটো ক্রাচ নিয়েই হাটতে পারে। দুদিন আগে থেকে একটা ক্রাচ নিয়েও হাটার চেষ্টা করছে।
অর্নবের সঙ্গে তার সম্পর্কটা ধীরে ধীরে গভীর হতে শুরু করেছে,অন্তত তাদের মধ্যকার গম্ভীর্যতা কিছুটা হলেও কেটেছে। হিমিও মেনে নিয়েছে নিজের ভাগ্যকে। এতদিনেও অপূর্ব তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি, হিমিও আর সেদিনের পর থেকে খোজ নেওয়ার চেষ্টা করেনি। হিমিও অর্নবকে বোঝার চেষ্টা করছে, চেষ্টা করছে তার সঙ্গে সম্পর্ক টা স্বাভাবিক করে তোলার।

বিয়ের পর থেকেই হিমি খেয়াল করছে অর্নব রেগুলার সিগারেট খায়,ব্যাপারটা একদমই পছন্দ না হিমির। তবে সরাসরি কিছু বলে ওঠার সাহস পায়নি। তবে আজ ঠিক করেছে,অর্নবকে এই বিষয়ে কিছু বলবে।

রাত প্রায় ১১ টা বাজে। ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে অর্নব। হিমি অনেক্ষন রুমে বসে সেটা দেখছে,এবার ক্রাচ টা নিয়ে উঠে দাড়ালো। ধীরে ধীরে গিয়ে দাড়ালো অর্নবের পাশে। অর্নব একবার হিমির দিকে তাকালেও কিছু বলল না। বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর হিমি অর্নবের দিকে তাকিয়ে বললো,
_আপনি এত স্মোক করেন কেনো?

অর্নব তাকালো হিমির দিকে,তারপর আবারো চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,
_এমনি।

_আগে থেকেই করতেন?

অর্নব হিমির দিকে তাকিয়ে সামান্য হেসে বলল,
_কেন? আগে কখনো স্মেল পেয়েছিলে বুঝি?

হিমি সরু চোখে তাকিয়ে মাথা নাড়লো।
অর্নব আবারো বললো,
_তাহলে?

_যদি আগে নাই করে থাকেন। তাহলে শুরু করলেন কেন?

অর্নব চোখ সরিয়ে আবারো আকাশের দিকে তাকালো। হিমি কিছুক্ষন চুপ থেকে গলা খাঁকড়ি দিয়ে বললো,
_যদি আমার জন্য শুরু করে থাকেন,তাহলে আমার জন্য নাহয় ছেড়েও দিন।

হিমির কথা শুনে অর্নব অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে। কিছুক্ষন এভাবেই তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলো। হিমি এবার চোখ নামিয়ে সেখান থেকে যেতে চাইলেই অর্নব তাকে আটকে দেয়। হিমির সামনে গিয়ে বলে,
_অর্ডার করলে?

_আপনি চাইলে ভাবতে পারেন।

অর্নব হিমির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। তারপর ঘরে গিয়ে ড্রয়ার থেকে সিগারেট এর প্যাকেট টা এনে ব্যালকনি তে থাকা ডাস্টবিন এ ফেলে দিয়ে আবারো হিমির সামনে গিয়ে দাড়ালো। হিমির কানের কাছে কিছুটা ঝুকে বললো,
_মাঝেমাঝে এমন ছোটখাটো অর্ডার পেলে মন্দ হয়না।

মুচকি হাসলো হিমি। অত:পর অর্নবের পাশ থেকে ঘরে চলে এলো সে। এখন আর তার নিজের সিদ্ধান্তের উপর সন্দেহ হয়না। হিমি বুঝতে পারছে, সে সঠিক সিদ্ধান্তই নিতে পেরেছে।
____
অর্নবের বাবা দেশে ফিরে আসায় হিমি-অর্নবের বিয়ের অনুষ্ঠান এর দিন ঠিক করা হয়েছে। হিমিও এতে কোনো আপত্তি করেনি, এখনো দিবা ছাড়া আর কোনো বন্ধুকেই সে নিজের বিয়ের কথা জানায়নি।
হিমি,অর্নব,দিবা,হুর,অরি সবাই একসাথে বিয়ের শপিং এ এসেছে। অরি আর হুর তো নিজেদের খুশি সামলাতেই পারছে না। বিয়েতে কি কি করবে সেই প্লান করতে করতেই তাদের দিন কেটে যাচ্ছে। হিমিও এখন বেশ হাসিখুশি ভাবেই দিন কাটাচ্ছে,যতটা সম্ভব অপূর্বকে ভুলে থাকছে সে।

শপিং শেষে দিবা নিজের বাড়িতে চলে যায়। অরি আর হুর কে বাড়িতে ড্রপ করে অর্নব আবারো হিমিকে নিয়ে বেড়িয়ে পরে।
বেশ কিছুক্ষন গাড়িতে বসে থাকার পর হিমি জিজ্ঞেস করে,
_কোথায় যাচ্ছি আমরা?

অর্নব সামনের দিকে নজর রেখেই বলল,
_তুমি বল কোথায় যেতে চাও?

হিমি অতি উৎসাহ নিয়ে বলল,
_আমার তো রাসেল মামার ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে, চলুন না সেখানে যাই। আপনার মনে আছে..

_মনে থাকবেনা কেন! আচ্ছা চলো সেখানেই যাওয়া যাক।

নিজেদের গন্তব্যের কিছুটা আগেই নেমে যায় হিমি আর অর্নব। এখানে গাড়ি পার্ক করে তারপর ফুচকা খেতে যাবে। সেখানেও আসেপাশে কিছু ফুচকার দোকান ছিলো, অর্নব হিমিকে পাশে বসতে বলে গাড়ি পার্ক করতে চলে যায়।
হিমিও অর্নবের কথা অনুযায়ী একটা চেয়ারে বসে পরে। হিমি আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখতে থাকে,অনেকদিন হলো ওই জায়গায় আসেনা সে। আগে প্রায়ই অপূর্বের সাথে এখানে আসা হতো।
হিমির এসব চিন্তার মাঝেই হঠাৎ পিছন থেকে কেউ তাকে ডাক দিলো।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে