শেষটা সুন্দর ২ পর্ব-৪১+৪২+৪৩

0
721

#শেষটা_সুন্দর(সিজন-২)
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৪১।

“তাজমহল” এক প্রেয়সীর নিকট তার স্বপ্নের জায়গা। যার চমৎকার সৌন্দর্য স্বীয় চক্ষে অবলোকন করে আজ সে স্তব্ধ। যদি এই সৌন্দর্যের বর্ণনা করতে বলা হয়; তবে উত্তর হবে, কোনো শব্দের গাঁথুনিতে এই সৌন্দর্যের প্রতিফলন সম্ভব নয়। এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে হবে নিজ অক্ষিতে শায়িত করে।

এই তাজমহলের সামনের চত্বরে করা হয়েছিল একটি বড় “চাহার বাগ”। সেই ভাগ পরবর্তীতে রূপান্তরিত হয়েছিল ১৬টি ফুলের বাগানে। দরজার মাঝামাঝি অংশে এবং বাগানের মধ্যখানে বসানো আছে একটি উঁচু মার্বেল পাথরের পানির চৌবাচ্চা; এবং উত্তর-দক্ষিণে আছে একটি সরলরৈখিক চৌবাচ্চা, যাতে তাজমহলের প্রতিফলন স্পষ্ট।

চাহার বাগ ভারতে প্রথম করেছিলেন প্রথম মুঘল সম্রাট বাবর, যা পারস্যের বাগানের মতো করে নকশা করা হয়েছিল। চাহারবাগ মানেই যাতে স্বর্গের বাগানের প্রতিফলন ঘটবে। মুঘল আমলের লেখায় এক ফার্সি মরমিবাদী স্বর্গের বাগানের বর্ণনা দিয়েছিলেন আদর্শ বাগান হিসেবে, যা পূর্ণ থাকবে প্রাচুর্যে। পানি বা জল এই বর্ণনায় একটি বড় ভূমিকা রেখেছে। ঐ লেখায় আছে, স্বর্গের বাগানের মাধ্যখানে একটি পাহাড় থেকে তৈরি হয়েছে চারটি নদী, আর তা আলাদা হয়ে বয়ে গেছে বাগানের উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে।

প্রায় সব মুঘল চাহারবাগসমূহ চতুর্ভুজাকৃতির, যার বাগানের মধ্যখানে মাজার বা শিবির থাকে। কিন্তু তাজমহলের ব্যাপারটিতে অন্যগুলোর থেকে আলাদা কারণ, এর মাজার অংশটি বাগানের মধ্যখানে হওয়ার বদলে বাগানের একপ্রান্তে অবস্থিত। এবং এই বাগানের বিন্যাস, এর স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য এবং এর ঝরনা, ইট অথবা মার্বেলের রাস্তা এগুলো ছিল হুবহু সালিমারের মতো।

তবে বর্তমানে এখনও এই বাগান জুড়ে দেখা মেলে হরেক রকমের ফুল ও ফলের সমারোহ। চারদিকের মানুষ ছুটে আসে সেই সৌন্দর্য অন্তরে ধারণ করে অন্তঃকরণের পিপাসা মেটাতে। চক্ষু নিমীলিত করে প্রগাঢ় শ্বাস টেনে অন্তর প্রশান্তি করতেও ছুটে আসে তারা। যেমন এসেছে পুতুল। তবে এখানে এসে এমন অনবদ্য এক ক্ষণের সাক্ষী হবে সেটা সে কল্পনাতেও কখনও ভাবেনি। সে বর্তমানে দাঁড়িয়ে আছে তাজমহলের প্রধান ফটক আর বাগানের মধ্যখানে অবস্থিত চৌবাচ্চার ঠিক সম্মুখ প্রান্তে। চতুর্দিকের বহমান মৃদুমন্দ বাতাসে ইতিমধ্যেই অঙ্গে এক শিহরণ জেগেছে তার। আর তার ঠিক মুখ বরাবর এক হাঁটু ভেঙে অধীর আগ্রহে বসে আছে সারাজ। তার তৃষ্ণার্ত পিপাসার্ত চিত্তপট যেন কোনো একটা কিছু শোনার জন্য বড্ড ছটফট করছে। উৎসুক হয়ে চেয়ে আছে আমজনতাও। পুতুল এবার দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঠোঁট নাড়াল। স্মিত সুরে বলল,

‘সেই ছোট্ট পুতুলও তার পরম প্রেমিককে মন দিয়ে বসেছিল আরো আগেই। আজ তবে নতুন করে কীসের অনুমতি দিই, বলো? এই অনুমতি তো আমার জন্ম থেকেই তোমার, আর আজীবন তোমারই থাকবে।’

তার বাক্য বিনিময়ের পরপরই আশপাশ থেকে শোনা যায় করতালির শব্দ। এতক্ষণ অতি উৎসুক জনতা যেন এখন বেজায় খুশি। ওদের এত উৎসাহ দেখে পুষ্প হাসে। সারাজ তখন পকেট হাতড়িয়ে বের করে আনে একটা ছোট্ট বাক্স। যার উপরের অংশটা খুলতেই জ্বলজ্বল করে উঠে একখানা হীরার অঙ্গরীয়ক। আরো একদফা বিস্মিত হয় পুতুল। এসব কখন করল সারাজ? পুতুল ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকে। সারাজ অতি যত্নের সমেত আংটি খানা তার আঙ্গুলে পরিয়ে দেয়। আর তারপর তার পুরু ওষ্ঠ ছোঁয়ায় পুতুল নরম হস্তে। এত মানুষের সামনে এমন কান্ডে লজ্জায় কুন্ঠিত পুতুল। তাই কোনোরকমে লজ্জা নিবারণ করে বলে উঠল,

‘আহা, উঠো এবার। কী শুরু করেছ?’

উঠে দাঁড়াল সারাজ। পুতুলের আরো কাছাকাছি গিয়ে দন্ডায়মান হলো। আশেপাশের এত মানুষকে সে যেন আজ তোয়াক্কা’ই করছে না। সে তার মতো নির্লিপ্ত। চুমু খেল পুতুলের ললাটে। কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,

‘আই লাভ ইউ।’

অতিরিক্ত লজ্জায় মরমর পুতুল এবার বিনা দ্বিধায় বলে উঠল,

‘আই লাভ ইউ টু।’

বেশ চাঞ্চল্য পরিবেশ বিরাজ করছে চারদিকে। যারা এতক্ষণ পুতুল আর সারাজকে দেখছিল তারা এবার একটু বেশিই বিস্মিত। সেই বিস্ময়ের কারণ সারাজের কাছে অজ্ঞাত নয়। তাই সে প্রসন্ন হেসে বলল,

‘আমরা হাজবেন্ড ওয়াইফ। বাংলাদেশ থেকে এখানে এসেছি হানিমুনের জন্য। তাই এই ভালোবাসার মহলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ভালোবাসা জাহির করার সুযোগটাও আর হাতছাড়া করতে পারলাম না। আমাদের জন্য যদি আপনাদের কোনোপ্রকার অসুবিধা হয়ে থাকে তবে আমি দুঃখিত।’

হিন্দি সারাজ ঠিকঠাক বলতে পারে না। আর বাংলা বললেও সেখানের অর্ধেক মানুষ বুঝবে না সে জানে। তাই ইংলিশেই বলল সবটা। আর সবার সবটা বোধগম্যও হলো তাতে। কেউ কেউ অভিনন্দনও জানাল। কেউ বা প্রশংসা করল। আবার কোনো কোনো যুগল আপ্লুত হয়ে দোয়া করল যেন, তাদেরও এমন চমৎকার এক বৈবাহিক জীবন হয়।

এইসব মিলিয়ে একটা মনোমুগ্ধকর দিন উপভোগ করেছে পুতুল। খুশিতে চিত্তপটে দেখা দিয়েছে সমুদ্রের ন্যায় উথাল-পাথাল ঢেউ। এই দিন, এই মুহুর্তগুলো আজনম অন্তরে গেঁথে থাকবে তার। সময়ের বিবর্তনে সবকিছু বদলে গেলেও এই অনুভূতির বদল কখনোই ঘটবে না।

_______

হোটেলের পাশাপাশি সিটে বসে আছে পুতুল আর সারাজ। পুতুলের মুগ্ধ দৃষ্টি তার বাম হাতের অনামিকা আঙ্গুলে অবস্থান করা চকমকে আংটিটার দিকে। বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে সেটা। হঠাৎ প্রশ্ন করে,

‘এটা তুমি কখন কিনেছিলে?’

‘কিনেছিলাম কোনো একসময়। কেন তোর পছন্দ হয়নি?’

‘অবশ্যই পছন্দ হয়েছে। আর যেভাবে তুমি দিয়েছ, পছন্দ না হয়ে উপায় আছে?’

কথাটা বলে টেবিলের দিকে একটু ঝুঁকে আসে পুতুল। তারপর ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,

‘এই, তুমি এত রোমান্টিক কবে থেকে হয়েছ বলোতো? আগে তো এমন ছিলে না।’

‘আগে কি আমি তোর হাজবেন্ড ছিলাম? ছিলাম না। আর এখন আমি তোর হাজবেন্ড, তাই আমার রোমান্টিক হওয়াটা এখন জায়েজ। আগে নাজায়েজ ছিল।’

পুতুল চেয়ারে ঠিকঠাক মতো বসে ভ্রু কুঁচকাল। গম্ভীর আওয়াজে বলল,

‘বিয়ের আগে চুমু খেয়েছিলে। সেটা নিশ্চয়ই জায়েজ ছিল না।’

সারাজও ভ্রু কুঁচকাল। বলল,

‘সেই নাজায়েজ কাজটা করতে তুই’ই বাধ্য করেছিলি। এমন ভাবে সেজে এসেছিলি যে, তোর সাজ আমাকে নিজের কাবুতে করে নিয়েছিল। আর আমার সেই ভুলের জন্য অবশ্যই তুই দায়ী।’

মুখ ভেংচাল পুতুল। উঁচু আওয়াজে বলল,

‘শুনো, আমি কোনো দায়ভার নিতে পারব না। নিজে পাপ করবে আর সেই পাপের দায়ভার নাকি আমি নিব; মগের মুলুক পেয়েছ নাকি? যার যার পাপের হিসাব তার তার কাছে, বুঝেছো?’

সারাজ ক্ষুব্ধ হয়ে একপল পুতুলের দিকে চেয়ে থেকে বলল,

‘একটা চুমু খেয়েছিলাম বলে এত কথা শুনাচ্ছিস? ঠিক আছে, আজ থেকে নো চুমু। নো মানে নো। মানে বুঝছিস, তোকে আর একটাও চুমু খাব না। চুমুর অভাবে তুই শুকিয়ে মরে গেলেও না।’

পুতুল বোকার মতো চেয়ে বলল,

‘চুমুর অভাবে কে শুকিয়ে মরে?’

‘কেউ না মরলেও তুই মরবি। আমার চুমু না পেতে পেতে একদিন সেই চুমুর অভাবেই আধমরা হয়ে যাবি। তখন হাজার অনুরোধ করলেও আমি তা পাত্তা দিব না। তখন বুঝবি, চুমুর অভাব কী মারাত্মক জিনিস।’

সারাজের এহেন আত্মবিশ্বাসে দাঁত কেলিয়ে হাসে পুতুল। সে জানে, ভদ্রলোকের এই আত্মবিশ্বাস ভাঙতে তার দুমিনিটও লাগবে না। তাই পুতুলও বেশ দাম্ভিকতার সুরে বলে উঠে,

‘ঠিক আছে। আমিও চ্যালেঞ্জ করলাম, তুমি নিজে থেকেই তোমার এই পণ ভাঙবে। আর সেটাও আজ রাতের মধ্যেই।’

সারাজ হেসে বলে,

‘অসম্ভব।’

পুতুলও পরপর হাসে। বলে,

‘আচ্ছা। আজ রাতেই দেখা যাবে, কে জিতে আর কে হারে।’

সারাজ ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,

‘মাথা থেকে সব শয়তানি বুদ্ধি ঝেরে ফেল। জিত আমারই হবে।’

পুতুল ততক্ষণাৎ টেবিলে চাপড় মেরে বলে উঠে,

‘রাত আসুক না। তখনই প্রমাণ হবে সব।’

চলবে…..

#শেষটা_সুন্দর(সিজন-২)
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৪২।

আজ পুরোটা দিন সারাজ আর পুতুল অনেক জায়গায় ঘুরেছে। আশেপাশের সমস্ত পর্যটন কেন্দ্র তাদের ঘোরা শেষ। কেনাকাটাও করেছে অনেক। এবার নৈশভোজ সেরে হোটেলে ফেরার পালা। তাই কাছেরই একটা হোটেলে ঢুকল সারাজ আর পুতুল। সারাদিনের এত ঘোরাঘুরিতে বড্ড ক্লান্ত পুতুল। কোনোরকমে খাবার খেয়ে যাত্রা করল হোটেলের উদ্দেশ্যে।

রুমে এসে পুতুল তার ক্লিষ্ট শরীর বিছানায় এলিয়ে দিল। আর সারাজ ঢুকল ওয়াশরুমে। এক পল চোখ বোজে থেকে আবার কী ভেবে যেন উঠে বসল পুতুল। চট করে গিয়ে ব্যাগ খুলে বের করল একটা লাল রঙের শপিং ব্যাগ। সেটা তুলে বিছানায় রেখে, উঠে গিয়ে ওয়াশরুমের দরজাখানা বাইরে দিয়ে আটকে দিল। মনে মনে দারুণ এক পরিকল্পনা এঁটে ঠোঁট চেপে হাসল সে। অতঃপর আদ্যোপান্ত আর না ভেবে লেগে পড়ল সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে।

মাঝ পথেই দরজায় করাঘাত করতে আরম্ভ করল সারাজ। ডেকে বলল,

‘এই পুতুল, ওয়াশরুমের দরজা কি বাইরে দিয়ে আটকানো? আমি খুলতে পারছি না কেন?’

পুতুল অস্থির গলায় বলল,

‘হ্যাঁ, আমি লাগিয়েছি। ওয়েট করো, একটু পর খুলে দিব।’

সারাজ করাঘাতের শব্দ উল্টো আরো তীব্র করল। বলল,

‘মানে কী? দরজা আটকে দিয়ে তুই কী করছিস?’

নিঃস্পৃহ সুরে পুতুল বলে উঠল,

‘আহা, একটু দাঁড়াও না। খুলছি তো।’

সারাজ কপট রাগ দেখিয়ে জবাব দিল,

‘দুই মিনিটের মধ্যে খুলবি। নয়তো আমি কিন্তু দরজা ভাঙব।’

সারাজের ঠান্ডা হুমকি গলাধঃকরন করে পুতুল জলদি তার হাত চালাল। দুই মিনিটের জায়গায় দীর্ঘ পনেরো মিনিট সময় নিল সে। সারাজ ইতিমধ্যেই রেগে আগুন। ভেতর থেকে চেঁচিয়ে মরছে। পুতুল এতক্ষণে তার সেই রাগকে আমলে নিল। ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে গিয়ে খুলে দিল দরজাখানা। সারাজ প্রস্তুতি নিয়েছিল, আজ ভীষণ রাগ দেখাবে। কয়েকশো ধমক তো অবশ্যই দিবে। কিন্তু, হলো সব উল্টো। দরজা খুলে চোখের সম্মুখে স্থির পুতুলকে দেখে হৃদপিন্ডের গতি কয়েক দফা তড়ান্নিত হলো। সেই প্রণয়িনীর আপাদমস্তক একবার পরখ করতেই গলা শুকিয়ে উঠল তার। তাই পরপর দুখানা ঢোকও গিলল। কম্পিত সুরে জিজ্ঞেস করল,

‘এসব কী?’

ঠোঁট চেপে হাসি আটকাল পুতুল। সারাজের বিভ্রান্ত চোখ মুখ দেখে বড্ড হাসি পাচ্ছে তার। তাও সেটা চেপে অতি আহ্লাদের সহিত বলল,

‘তোমার জন্য একটা ছোট্ট সারপ্রাইজ।’

সারাজ বড়ো করে নিশ্বাস ফেলল। সারপ্রাইজ না ছাই! সারাজ জানে, এই মেয়ে এসব কেবল তার চুমু না খাওয়ার পণ ভাঙতে করছে। সেও তাই ঠিক করল, যাই হয়ে যাক না কেন আজ সে হারবে না। কথাখানা মস্তিষ্কে বার কয়েকবার আওড়িয়ে পুতুলকে পাশ কাটিয়ে সামনে এগুলো সে। ভ্রু কুঁচকে চাইল পুতুল। জিজ্ঞেস করল,

‘কী হলো, আমাকে ইগনোর করছ কেন?’

সারাজ প্রথমে উত্তর না দিয়ে, টেবিল থেকে তুলে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি গিলল। অতঃপর গিয়ে বসল বিছানার পশ্চাৎ পার্শ্বে। পুতুলের দিকে চেয়ে বলল,

‘কোথায় তোকে ইগনোর করলাম?’

পুতুল এগিয়ে এসে বসল সারাজের একদম গা ঘেঁষে। বলল,

‘খুব গরম লাগছে, তাই না? এসি’টা একটু ছাড়ব?’

সারাজ অন্যদিকে চেয়ে বলল,

‘হ্যাঁ ছাড়। তোকে না করল কে।’

পুতুল এসির রিমোট নেওয়ার বাহানায় সারাজের আরেকটু ঘনিষ্ঠ হতে নিলেই সে চট উঠে দাঁড়াল। পুতুল ভ্রু নাচিয়ে বলল,

‘কী হলো?’

সারাজ রুদ্ধশ্বাস ছাড়ল। বলল,

‘কিছু না। এসি ছাড়।’

এসি ছাড়া হলো। সারাজ দ্রুত করে গিয়ে শুয়ে পড়ল বিছানার অপর পার্শ্বে। হাসল পুতুল। কিন্তু সেটা সারাজের অগোচরেই। পুতুলও তার সিদ্ধান্তে অটল। সারাজের পণ আজ রাতের মধ্যেই ভাঙিয়ে ছাড়বে। তাই সে গিয়ে বসল সারাজের অতি নিকটে। হাত ছোঁয়াল তার প্রশ্বস্থ ললাটে। ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘ঘুম পাচ্ছে, সুইটহার্ট?’

বিস্ফোরিত চোখে চাইল সারাজ। বলল,

‘এই মেয়ে, কী চাচ্ছিস তুই?’

পুতুল কষ্টে হাসি চাপল। বলল,

‘তোমাকে।’

সঙ্গে সঙ্গেই চোখ বোজল সারাজ। বলল,

‘আমার এখন ঘুম পাচ্ছে।’

‘আমার তো পাচ্ছে না।’

‘তো, আমি কী করব?’

উত্তর দিতে তার কানের কাছে মুখ এগিয়ে নিল পুতুল। ঠোঁট নাড়িয়ে মৃদু আওয়াজে বলল,

‘আদর করবে।’

‘অসম্ভব। আজ কোনোমতেই আমি তোর কথা শুনব না।’

এবার কিঞ্চিৎ শব্দ করে হাসল পুতুল। বলল,

‘অবশ্যই শুনবে। শুনতে তো তোমাকে হবেই।’

বলেই উঠে দাঁড়াল সে। তার গায়ে জড়ানো লাল রঙের পাতলা রাত পোশাকের উপরের অংশটার কাঁধের পাশটা একটু নামাল। শিষ বাজিয়ে সুর টেনে বলল,

‘জানেমান, ও মেরি জানেমান; একবার দেখো আমায়।’

সারাজ কপাল ভাঁজ করল, তবুও চাইল না। নাক ফুলিয়ে হাসল পুতুল। উঁচু আওয়াজে বলল,

‘আমিও দেখি, ঠিক কতক্ষণ তুমি আমাকে অগ্রাহ্য করে থাকতে পারো।’

অতঃপর উপরের অংশটা উন্মুক্ত করল সে। সেটা ছুঁড়ে মারল সারাজের মুখের উপর। এবার ক্ষিপ্ত হয়ে চোখ মেলে তাকাল সারাজ। পুতুলের দিকে চাইতেই মাথা আরও গরম হলো তার। রাগ দেখিয়ে বলল,

‘পাগল হয়েছিস?’

পুতুল সেসব তোয়াক্কা না করে বলল,

‘জানো, আমার ভার্সিটিতে সাহেল নামের একটা ছেলে আমাকে পছন্দ করত; ওকে এখন একটা ভিডিও কল দেই?’

‘তোকে এক থাপ্পড় দিয়ে আমি ছয় তালা থেকে নিচে ফেলে দিব, ফাজিল মেয়ে। এসব ঢং বন্ধ করে চুপচাপ শুতে আয়।’

‘উঁহু, আজকে নো শোয়া শোয়ি।’

পুতুল এগিয়ে গিয়ে ফের সারাজের অতি নিকটে বসে পড়ে। দুহাতে সারাজের গলা জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,

‘তুমি এত সুন্দর কেন, সারাজ? আমি বার বার কেন তোমার প্রেমে পড়ি বলোতো?’

কথার মাঝেই তার এক হাত ইতিমধ্যে সারাজের গলা ছেড়ে আরেকটু নিচে নেমে গিয়েছে। সারাজ খপ করে সেই হাতখানা ধরে বলল,

‘খুব চালাক, তাই না? ইচ্ছে করে এসব করছিস? তুই জানিস, আমি আজ ক্ষেপলে তোর অবস্থা কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে।’

পুতুল আরেকটু ঘনিষ্ঠ হলো। বলল,

‘হোক। আমি ভয় পাই না।’

ক্রূর হাসল সারাজ। বলল,

‘তাই?’

পুতুল দম্ভ দেখিয়ে বলল,

‘হ্যাঁ।’

সারাজ এগিয়ে এল। দু হাতের আঁজলায় পুতুলের নিরুপম সুন্দর মুখখানা নিয়ে বলল,

‘তবে তাই হোক। আজ জিত’টা তোরই হোক। আমি না হয় এই পরাজয়টাই হাসি মুখে বরণ করে নিব।’

ঠোঁট ছড়িয়ে হাসল পুতুল। সারাজ আরেকটু এগিয়ে এল। দুই জোড়া ওষ্ঠ মিলতে আর এক পলও বিলম্ব হলো না।

আজ আর পুতুল লজ্জা পেল না। ভুলে গেল সমস্ত লাজুকতা। চিত্তপটে কেবল একটাই খুশির স্রোত বইছে, সে জিতেছে। অথচ, সারাজ যেন আজ হেরে গিয়েও জিতে গিয়েছে। যদি হেরে যাওয়ার ফল এত সুখকর হয়, তবে এভাবে আরো হাজাবার হারতে রাজি সে।

_______

সকাল পেরিয়ে বর্তমানে দুপুর বারোটা পনেরো বাজে। পুতুলের উঠার কোনো নাম গন্ধ’ই নেই। সেই দশটা থেকে সারাজ তাকে টানা ডেকে যাচ্ছে। কিন্তু, সেই ডাক আদৌ পুতুলের কর্ণকুহুরে পোঁছাচ্ছে কি-না সেটা নিয়ে আছে যথেষ্ঠ সন্দেহ। পুতুলের মাঝে কোনো হেলদোল নেই। এমন ভাবে ঘুমাচ্ছে যেন, গত কয় মাস ধরে ঘুমহীন ছিল সে। সারাজও ডাকতে ডাকতে এবার বীতঃস্পৃহ। তাই ডাক বন্ধ করে রুমে বসেই সকালের নাস্তা অর্ডার করল।

পুতুলের ঘুম ভাঙল আরো বিশ মিনিট পর। তাও সারাজের তাকে টেনে বসাতে হলো। চোখ কচলিয়ে এদিক ওদিক চেয়ে সে বলল,

‘কয়টা বাজে?’

সারাজ নাস্তাগুলো গুছাতে গুছাতে বলল,

‘বেশি না, বারোটা চল্লিশ।’

চেঁচিয়ে উঠল পুতুল। বলল,

‘একটা বাজতে চলল, আর তুমি আমাকে ডাকোনি?’

সারাজ কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,

‘ডাকিনি মানে; ডাকতে ডাকতে গলা শুকিয়ে ফেলেছি। যা, এখন তাড়াতাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। নাস্তা ঠান্ডা হচ্ছে।’

পুতুল বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই মৃদু আর্তনাদ করে ওঠল। সারাজ চিন্তিত সুরে বলল,

‘কী হয়েছে?’

জবাবে ক্ষুব্ধ হয়ে তার দিকে চাইল পুতুল। পুতুলের অমন চাহনি দেখে ফিচেল হাসল সারাজ। বলল,

‘কাল রাতেই সাবধান করেছিলাম। এখন ওভাবে তাকিয়ে কোনো লাভ নেই।’

নাক মুখ মাত্রাধিক কুঁচকে পুতুল আওয়াজ করে বলল,

‘অসভ্য।’

চলবে….

#শেষটা_সুন্দর(সিজন-২)
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৪৩।

দীর্ঘ এক সপ্তাহের ভ্রমণ শেষে আজ সন্ধ্যায় বাড়ি এসে পৌঁছে সারাজ আর পুতুল। তিন দিন একটু আরামে থাকতে পারলেও বাকি চারদিন তাদের যাতায়াতেই কেটে যায়। পুতুলের শরীর এখন বড্ড ক্লান্ত। তাদের পেয়েই খুশিতে ঝলমল করে উঠে রিতা। এগিয়ে এসে পুতুল আর সারাজকে জড়িয়ে ধরে। পুতুল তখন সঙ্গে সঙ্গেই বলে উঠে,

‘মামনি জানো, আমি তোমার জন্য অনেকগুলো মশলা আনতে চেয়েছিলাম; কিন্তু, তোমার ছেলে দেয়নি। কত করে বলেছি, ইন্ডিয়ান মশলা খুব ভালো, একটু বেশি করে নিই; কিন্তু উনি নিতেই দিলেন না।’

সারাজ দুহাত পকেটে পুরে ক্ষুব্ধ হয়ে চাইল। বলল,

‘বাসায় আসতে না আসতেই আমার নালিশ দেওয়া শুরু? আগে একটু জিরিয়ে নে মা, নালিশ দেওয়ার সময় তো আর চলে যাচ্ছে না।’

রিতা ভ্রু কুঁচকে বললেন,

‘তুই মশলা আনতে দিলি না কেন?’

‘আম্মু, ঐসব মশলা তো আমাদের দেশেই আছে। অযথা সেখান থেকে এত বোজা বয়ে আনার কী দরকার?’

‘কী দরকার, সেটা তুমি বুঝলে তো হতোই। থাক মামনি কষ্ট পেও না, আমি পরেরবার একা গিয়ে তোমার জন্য অনেকগুলো মশলা নিয়ে আসব। তোমার ছেলের সাথে আর যাব না। আমি একটা সুন্দর ছোট্ট তাজমহল কিনতে চেয়েছিলাম সেটাও আমাকে কিনে দেয়নি। শুনো, পরের বার তুমি, আমি আর মা যাব। আর সব ছেলেরা বাড়িতে থাকবে। তখন আমরা যা খুশি তা কিনতে পারব, ভালো হবে না বলো?’

সারাজ ফিচেল হেসে বলল,

‘হ্যাঁ, খুব ভালো হবে। টাকাটা তখন কে দেয় দেখব।’

পুতুল তেতে উঠে বলল,

‘তুমি আমাকে টাকার খোঁটা দিচ্ছ?’

‘না, খোঁটা দিচ্ছি না। শুধু বাস্তবতাটা বললাম। স্বামীদের টাকা আছে বলেই তো স্ত্রীরা এত খরচ করতে পারে, নয়তো কি পারত?’

পুতুল নাক ফুলিয়ে কাঠকাঠ গলায় বলল,

‘আলবাত পারত। মেয়েরা কি রোজগার করছে না।’

‘সেই হিসাব তো আলাদা। তবে সত্যি তো এটাই, একটা ছেলের সমস্ত সম্পত্তির মালিক তো তার স্ত্রী’ই হয়। সেক্ষেত্রে আমার সব সম্পত্তির মালিকও তুই।’

নাক মুখ কুঁচকে পুতুল জবাব দিল,

‘আমার তোমার কোনো সম্পত্তি লাগবে না। আমি নিজেই নিজের সম্পত্তি গড়ব। নিজের উপার্জন করব, তারপর ইচ্ছে মতো খরচ করব। তোমার টাকা আমার লাগবে না, বুঝেছো?’

হাসল সারাজ। বলল,

‘ঠিক আছে।’

বলেই সে অগ্রসর হলো নিজের কক্ষের দিকে। রিতা এতক্ষণে হতাশ গলায় জিজ্ঞেস করল,

‘তোরা কি হানিমুনে গিয়েও সারাদিন এমন ঝগড়াই করেছিস?’

“হানিমুনের” কথা শুনতেই লজ্জায় লাল হলো পুতুলের ফর্সা গাল যুগল। সে এখন কী করে বলবে যে, হানিমুনে তারা তো সব দুষ্টু দুষ্টু কাজ করেছে। ঐসব কি আর শাশুড়িকে বলা যায়? পুতুলের লাজমাখা মুখশ্রী রিতার নজর এড়াতে পারল না। রিতাও বুঝল সব; ঠোঁট চেপে হাসল। বলল,

‘হয়েছে, আর কিছু বলতে হবে না। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট কর। খাবার তৈরি হলে আমি ডাকব।’

অতি ভদ্র মেয়ের ন্যায় মাথা নাড়িয়ে পুতুল সেই জায়গা ছাড়ল। ইশ, সব শেষ করে এখন এত লজ্জা লাগছে কেন?

_________

রাতের খাবারের সময় হয়েছে। পুতুল সেই সন্ধ্যায় ঘুমিয়েছিল এখনও উঠার নাম গন্ধ নেই। সারাজ নিচে বসার ঘরে সাদরাজের সাথে কথা বলছে। টেবিলে খাবার দিয়ে রিতা আসে পুতুলের রুমে। পুতুলের শিউরে আলতো করে বসে তার মাথার উপর নিজের হাত ঠেকায়। মৃদু আওয়াজে ডাকে,

‘পুতুল, এই পুতুল, উঠ না। খাবার বেড়েছি তো, ঠান্ডা হয়ে যাবে।’

ঘুম জড়ানো কন্ঠে পুতুল জবাব দিল,

‘আরেকটু পরে উঠি, মামনি?’

‘না না, মা। এখনই উঠতে হবে, নয়তো পরে খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে।’

‘মামনি, আমার ঘুম পাচ্ছে ভীষণ। এই কয়দিন আমি একটুও ঘুমাতে পারিনি। তোমার ঐ অসভ্য ছেলে…’

বাকিটা শেষ করার পূর্বেই মস্তিষ্ক জেগে উঠে তার। হায় হায়, কী বলতে যাচ্ছিল সে। দুহাতে মুখ চেপে চট করে উঠে বসে। ঘুমের ঘোরে বুদ্ধিসুদ্ধি সব লোপ পেয়েছিল নাকি? লজ্জায় লাল হয়ে রিতার দিকে এক পলক চাইল। দেখল, রিতা ঠোঁট গুঁজে হাসছে। পুতুল মাথা চুলকে উঠে দাঁড়াল। আমতা আমতা করে বলল,

‘ইয়ে, মামনি… আমি আসলে ঘুমের ঘোরে কী কী যেন বলে ফেলেছি।’

রিতা এবার শব্দ করেই হেসে ফেলল। হাসি জারি রেখেই বলল,

‘ইশ, আমার অসভ্য ছেলেটা বুঝি তোকে খুব বিরক্ত করেছে? একটুও ঘুমাতে দেয়নি, তাই না?’

লজ্জায় রা খুইয়েছে পুতুল। অস্বস্তিতে শরীরে কাটা দিচ্ছে। দৌড়ে সে ওয়াশরুমের কাছে চলে যায়। জোরে দম নিয়ে বলে,

‘উফফ, মামনি… তুমিও দেখছি তোমার ছেলের মতো ঠোঁটকাটা হয়ে যাচ্ছ।’

বলেই ওয়াশরুমে গিয়ে ঘাপটি মেরে বসে। অপরদিকে রিতা তার কথা শুনে হাসতে হাসতে কুপোকাত।

______

খাবার টেবিলে চুপচাপ খাবার শেষ করে পুতুল গিয়ে বসল বসার ঘরে। সারাজ আর সাদরাজ এখনো খাচ্ছে। পুতুল টিভি ছেড়ে সোফায় দু পা তুলে আরাম করে বসে। খাওয়ার মাঝেই সারাজ বলে উঠে,

‘আব্বু, ভাবছি এবার অফিসের সাথে সাথে বাবার কাজটাও একটু আধটু দেখব। রাজনীতি না করি, কিন্তু টুকটাক বাবাকে সাহায্য করতে তো আর অসুবিধা নেই।’

সাদরাজ এক পলক ছেলেকে অবলোকন করে বলল,

‘দুদিক একসাথে সামলাতে পারবে না। কষ্ট হবে।’

‘আমি ম্যানেজ করতে পারব।’

‘সারাজ, তোমার জন্য চাপ হয়ে যাবে। কী দরকার? আর রাবীর তো বলেছেই…’

‘আব্বু, প্লিজ। প্লিজ আমাকে সবটা সামলাতে দাও। আমারও একটা শখ আহ্লাদ আছে। আর আমি তো তোমার কাজের ক্ষতি করে কিছু করছি না। দুইদিক আমি ঠিক সামলে নিতে পারব।’

সাদরাজের ঠিক পছন্দ হলো না কথাটা। সে নিঃস্পৃহ সুরে বলল,

‘এত বোঝানোর পরও যখন তুমি আমার কথা শুনবে না, তখন আমার আর কিছুই বলার নেই। যা খুশি করো।’

বাকিটা সময় নিরবতা বজায় রেখে খাবার শেষ করে উঠে পড়ে সাদরাজ। সে চলে যেতেই রিতা প্রশ্ন ছুড়ে,

‘কী দরকার এসবের, সারাজ? রাজনীতি তোর বাবার পছন্দ না, এসবের মাঝে নিজেকে জড়াস না। অযথা তোদের সম্পর্ক খারাপ করিস না, বাবা। একটু বোঝ।’

‘আম্মু, তোমাদেরও তো একটু বোঝা উচিত। প্রত্যেক মানুষের’ই তো একটা স্বপ্ন থাকে, একটা প্যাশন থাকে। আর আমার কাছে রাজনীতি ভীষণ পছন্দের একটা জিনিস। সবার চিন্তা ভাবনা তো আর সমান না। আব্বু কেন বুঝতে পারছেন না? আমি কখনোই রাজনীতির অপব্যবহার করব না। বাবাকে দেখেই আমি অনুপ্রাণিত। প্লিজ, তোমরা কেউ আমাকে বাঁধা দিও না। আমি তোমাদের কথা রাখতে পারব না।’

বলে সেও সে জায়গা ছেড়ে প্রস্থান ঘটাল। বসে রইল কেবল রিতা আর পুতুল। পুতুল নিমিষ চেয়ে আছে রিতার মুখের দিকে। রিতার চোখে মুখে অস্থিরতা স্পষ্ট। পুতুল উঠে দাঁড়িয়ে তার সামনে গিয়ে হাজির হয়। আশ্বাসের স্বরে বলে উঠে,

‘মামনি, আমি উনাকে বুঝিয়ে বলব।’

রিতা রুদ্ধশ্বাস ছাড়ল। মলিন হেসে বলল,

‘আমি জানি তুই পারবি। ওকে বোঝা। আমি বাবা ছেলের মাঝে কোনো অশান্তি চাই না, পুতুল।’

________

পুতুল রুমে এসে দেখল, সারাজ রুমে নেই। তাই বারান্দার দিকে পা বাড়াল সে। সেখানেই সারাজ উপস্থিত। পুতুল মৃদু শব্দে তার পার্শ্বে নিজের অবস্থানের জানান দেয়। পুতুলের উপস্থিতি টের পেয়েও নির্লিপ্ত সারাজ। কেবল নিমিষ চেয়ে আছে উন্মুক্ত অন্তরিক্ষের দিকে। পুতুল নিরব রইল। সারাজ আরো কিছুক্ষণ সময় ব্যয় করে অতঃপর বলল,

‘কেউ আমাকে না বুঝলেও তুই নিশ্চয়ই আমাকে বুঝবি, পুতুল। বুঝবি না?’

বিষন্ন শোনাল সারাজের গলার স্বর। পুতুল জবাবে কী বলবে ভাবছে। রিতাকে যে সে অন্য কথা দিয়ে এসেছে। এখন সারাজকে সে কী করে বোঝবে? কথা না পেয়ে নিরবতাই শ্রেয় মনে হলো পুতুলের। সারাজ পুনরায় গম্ভীর আওয়াজে বলল,

‘আম্মু নিশ্চয়ই আমাকে বোঝাতে বলেছেন?’

প্রশ্ন করে সে চাইল পুতুলের দিকে। পুতুল উপর নিচ মাথা নাড়াল। যার উত্তর বোঝে সারাজ বলল,

‘যার নিজ থেকেই বোঝার ইচ্ছে নেই, তাকে কেউ হাজার চেষ্টা করেও বোঝাতে পারে না। তাই এসব নিয়ে তোর কথা না বলাই শ্রেয়।’

বলেই বারান্দা ছেড়ে রুমে চলে যায় সারাজ। পুতুলের ততক্ষণাৎ মনঃস্তাপ হয়। মনে মনে আওড়ায়,

‘একবার আমার কথাটাও শুনলে না, সারাজ। এত জেদ!’

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে