শেষটা সুন্দর পর্ব-৪৯+৫০

0
885

#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৪৯।

আজ বেশ অনেকদিন পর রাবীর আর সাদরাজ আবার মুখোমুখি হয়। একটা মিটিং এর দৌলতে তাদের এই সাক্ষাৎ। সাদরাজ আজ আর রাবীরকে দেখে কিছু বলেনি। তার রাগ, ক্ষোভ, বিদ্বেষ আজ আর প্রকাশ করেনি। রাবীরকে উপেক্ষা করে মিটিং শেষ করে সে চলে যায়। সাদরাজের এমন ঠান্ডা ব্যবহারে রাবীর অভ্যস্ত নয়। তাদের যখনই দেখা হয়েছে, সাদরাজ তো তখনই তার উপর ক্ষিপ্ত হয়েছে। আজ তবে সে এত শান্ত কেন?

রাবীর তার গাড়ির কাছে ফিরে এলে, তার পি.এ বলে,

‘স্যার, সাদরাজ আহমেদের এমন ঠান্ডা ব্যবহার কিন্তু মোটেও সুবিধার লাগছে না। নির্ঘাত উনি কোনো ফন্দি আটছেন।’

রাবীর নিশ্বাস ফেলে। বলে,

‘যাই করুক, অন্যায় করে অন্তত ও জয়ী হতে পারবে না।’

‘স্যার, আপনি কি আজকে এলাকায় বের হবেন?’

‘হ্যাঁ, বিকেলে বের হব। ইলেকশনের প্রচারনার কাজ কতটুকু হচ্ছে দেখতে হবে।’

‘ঠিক আছে, স্যার। আমি সব ব্যবস্থা করে রাখব।’

______________

খালা রান্না করছেন। রিতা রান্নাঘরের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে খালাকে জিজ্ঞেস করল,

‘আচ্ছা খালা, সাদরাজের বাবা কি আমাদের বিয়ে সম্পর্কে জানেন?’

খালা বললেন,

‘বড়ো সাহেবের অনুমতি ছাড়া তাঁর ছেলে কিছুই করেন না।’

‘ওহহ, তাহলে সবকিছু বাপ বেটা মিলেই করছেন?’

‘হ, বাপের বুদ্ধিতেই পোলা সব করে।’

‘আমার না উনার বাবার সাথে দেখা করতে খুব ইচ্ছে করছে। একটা মানুষ এত খারাপ হয় কী করে, উনাকে জিজ্ঞেস করতে পারতাম।’

‘থাক খালা, এসব কথা আপনে সাহেবের সামনে কিন্তু ভুলেও কইয়েন না। সাহেব কিন্তু খুব চেইতা যাইব।’

‘আপনার সাহেব এমনিই চেতে। উনার চেতার কোনো কারণ লাগে না।’

‘আপনি খালা সাহেবরে বশে আনতে পারতেছেন না? এত সুন্দর রূপরে কাজে লাগান না কেন?’

রিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

‘রূপ দিয়ে মানুষকে কতক্ষণ বশে রাখা যায়। এই রূপের মোহ চলে গেলে বশের ক্ষমতাও চলে যাবে। তখন আর লাভের লাভ কিছুই হবে না।’

‘একটা কথা কমু, খালা?’

‘বলুন না।’

‘একটা বাচ্চা লইয়া লন। বাচ্চা হইলেই দেখবেন সব ঠিক হইয়া গেছে।’

রিতা হেসে বলে,

‘কী বলেন? বাচ্চা নিব? এই এতকিছুর মধ্যে বাচ্চা নেওয়ার চিন্তা তো আমি করতেই পারি না। আর সবচেয়ে বড়ো কথা হলো, আমি যাকে এখনো ভালোই বাসতে পারিনি তার বাচ্চা গর্ভে ধারণ করা, অসম্ভব ব্যাপার।’

খালা তখন চোখ মুখ কুঁচকে বললেন,

‘তাইলে কেমনে কী করবেন? এই সামনের ইলেকশনে সাহেব আর রাবীর খানের ঝামেলা আরো বাড়ব। তহন?’

‘সেটারই তো একটা ব্যবস্থা করতে হবে। দাঁড়ান, আমি একবার মেহুলকে কল দেই।’

রিতা তার লুকিয়ে রাখা ফোনটা এনে মেহুলকে কল দেয়। মেহুল ফোন দেখছিল। রিতার কল দেখে কল রিসিভ করে সে। মেহুল তার কাছ থেকে ঐদিকের খবরাখবর নেয়। রিতার অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করে। রিতা বলে, আপাতত সবকিছু ঠিকঠাক আছে। তবে বেশিদিন এই পরিস্থিতি এমন থাকবে না। ইলেকশনের দিন যত আগাবে, দু পক্ষ ততই কঠিন হয়ে উঠবে। তাই আগে থেকেই তাদের সাবধান থাকতে হবে। মেহুল বলে,

‘সাদরাজ আহমেদের প্ল্যান কী, কিছু জানিস?’

‘না, আমার সামনে তো উনি এই নিয়ে কারোর সাথে কোনো আলোচনা’ই করেন না।’

‘তাহলে কী করে বুঝবি, উনি আসলে কী করতে চাইছেন।’

‘বুঝব। বোঝার জন্য আমাকে উনার কাছে যেতে হবে। যতটা সম্ভব উনার সামনে খুব নিঁখুত ভাবে অভিনয় করতে হবে, যাতে উনি কিছু টের না পান।’

‘আচ্ছা। যা করবি সাবধানে। লোকটা কিন্তু খুব চালাক। তাই প্লিজ, বি কেয়ারফুল।’

‘আরে চিন্তা করিস না, আমি সব সামলে নিতে পারব। আমাদের এখন যেভাবেই হোক ঐ শাহাদাত আহমেদকে ধরতে হবে। উনার বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণ খুঁজে বের করতে হবে।’

‘একটা মুখ্যম প্রমাণ তো আছেই, খালা।’

রিতা খালার দিকে তাকায়। খালাও তার দিকে চেয়ে আছে। সে বলে,

‘হ্যাঁ। তবে, এই প্রমাণের জন্য আমাদের অনেক খাটতে হবে।’

‘তা তো খাটতে হবেই। খালা তো আর এমনি এমনি কিছু বলবেন না।’

খালা তখন হুট করেই বলে উঠলেন,

‘খালা, ফোন রাখেন। গাড়ির শব্দ শোনা গেছে। সাহেব মনে হয় আইছেন।’

রিতা তাড়াহুড়ো করে মেহুলকে বলল,

‘আচ্ছা মেহুল, রাখি। পরে আবার কল দিব।’

রিতা তাড়াতাড়ি কল কেটে ভাবছে, ফোনটা কোথায় রাখবে। পরে সে তাড়াতাড়ি খুঁজে রান্নাঘরের চালের ড্রামের ভেতর সেটা রেখে দিল।

সত্যিই সাদরাজ এসেছে। সে কখনো মেইন দরজায় নক করে না। ডিরেক্ট চাবি দিয়ে বাইরে থেকে লক খুলে ঢোকে। আজও তাই করে। সে এসে ড্রয়িং রুমে বসে। খালাকে ডেকে বলে, ঠান্ডা পানি দিতে। রিতা বরাবরের মতো তার জন্য লেবুর শরবত বানিয়ে নিয়ে যায়। রিতাকে দেখে সাদরাজ বলে,

‘তোমাকে না এসব করতে বারণ করেছি।’

রিতা তার সামনের শরবতের গ্লাসটা রেখে বলে,

‘কেন, এখনো কি আমার উপর বিশ্বাস আসেনি? শরবতে কিছু মেশাইনি। খেতে পারেন।’

সাদরাজ কিছু বলে না। তবে তার চোখে মুখে বিরক্ত স্পষ্ট। রিতার এই আগ বাড়িয়ে নরম ব্যবহার তার একদম পছন্দ হচ্ছে না। সে জানে, এই মেয়ে এত সহজ না। উপর দিয়ে যা প্রকাশ করছে, মোটেও সে তেমন না।

সাদরাজ শরবত শেষ করে সোফায় হেলান দিয়ে বসে। গরমে গায়ের পাঞ্জাবীটা ভিজে আছে তার। চোখ মুখ দেখে ক্লান্ত লাগছে। রিতা মৃদু সুরে জিজ্ঞেস করে,

‘মাথা টিপে দিব?’

সাদরাজ বিরক্ত সুরে বলে,

‘আমি বলেছি?’

‘না, আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে মাথাটা টিপে দিলে একটু আরাম পাবেন, তাই…’

‘আমাকে নিয়ে তোমার এত ভাবার কোনো প্রয়োজন নেই। নিজেকে নিয়ে ভাবো। সামনে তোমার জন্য অনেক কিছু অপেক্ষা করছে। তাই আগে থেকেই সে সবের প্রস্তুতি নাও।’

রিতা তখন মৃদু হাসে। বলে,

‘হ্যাঁ, আমি জানি তো। সামনে আপনার ইলেকশন। আর সেই ইলেকশনে আপনি জিতবেন। আর সবাই তখন আমাকে নেতার বউ বলবে। আর এই কথাটা শোনার জন্য তো আমি এখন থেকেই প্রস্তুত।’

সাদরাজ এবার উঠে বসে। রিতার দিকে কপাল কুঁচকে চেয়ে বলে,

‘মাথায় কী চলছে তোমার? আমার সাথে চালাকি করতে এসো না, রিতা। আমার সাথে তুমি পেরে উঠবে না।’

রিতা জোরে নিশ্বাস ফেলে সাদরাজের পাশে বসে। সাদরাজের দিকে চেয়ে বলে,

‘আপনার সাথে লাগার সাহস আমার নেই। আমি তো শুধু একটা সুন্দর সম্পর্ক চাই। বিয়ে যখন হয়েছে, তখন সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিন না। এত রাগ, এত জেদ আর আক্ষেপ দেখিয়ে কী লাভ? কী পাবেন? একটু ক্ষমতা, যেটা আবার ক্ষণস্থায়ী। তাহলে এই ক্ষণস্থায়ী জিনিসের জন্য এত কেন কষ্ট? দরকার কী। জীবনকে সহজ চোখে দেখুন। দেখবেন, সবকিছু কত সুন্দর।’

সাদরাজ সামনের গ্লাসটা দূরে ছুড়ে মারে। সেটা এক নিমিষেই চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়। সাদরাজের এমন কান্ডে রিতা হতভম্ব। সাদরাজ তার দিকে চেয়ে বলে,

‘যাও, ঐ গ্লাসটা আবার জোড়া লাগিয়ে নিয়ে এসো। তারপর আমি তোমার সব কথা মেনে নিব।’

রিতা কী বলবে বুঝে না। সাদরাজ বলে,

‘কী হলো, পারবে না? তাহলে আমিও পারব না। আমার থেকে যে সবকিছু কেড়ে নিয়েছে তাকে আমি কখনোই ক্ষমা করতে পারব না।’

‘আপনার থেকে কে সবকিছু কেড়ে নিয়েছে?’

সাদরাজ দাঁতে দাঁত চেপে জবাব দেয়,

‘রাবীর খান।’

রিতা বলে,

‘আমি যদি বলি, না, রাবীর খান কিছু কেড়ে নেয়নি।’

সাদরাজ বাঁকা হাসে। বলে,

‘তা তো তুমি বলবেই। উনি তো আবার তোমার বেস্টফ্রেন্ডের হাসবেন্ড।’

‘অন্যায় যে করবে, শাস্তি তাকে পেতেই হবে। আর সে হোক,আমার বেস্টফ্রেন্ডের হাজবেন্ড অথবা আমার হাজবেন্ড। শাস্তি সবার জন্য সমান।’

সাদরাজ উঠে দাঁড়ায়। কর্কশ স্বরে বলে,

‘তুমি যেটা জানো না, সেটা নিয়ে কথা বলতে এসো না।’

রিতা তখন শক্ত গলায় বলে উঠে,

‘আপনার মা’কে রাবীর খান মারেননি।’

সাদরাজ থমকে দাঁড়ায়। রিতার দিকে চেয়ে বলে,

‘তুমি এসব কী করে জানলে?’

চলবে….

#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৫০।

রিতা নিজেকে কিছুটা ধাতস্ত করে বলে,

‘খালা বলেছেন।’

সাদরাজ আরেক দফা অবাক হয়। চোয়াল শক্ত হয়ে উঠে তার। সে চেঁচিয়ে ডেকে উঠে,

‘খালা, খালা, এখানে আসো।’

খালা সাদরাজের চিৎকার শুনে ভয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ায়। কাঁপাকাঁপা স্বরে জিজ্ঞেস করে,

‘কী হইছে, সাহেব?’

সাদরাজ উনার দিকে চেয়ে কর্কশ গলায় জিজ্ঞেস করে,

‘তুমি রিতাকে কী বলেছো?’

খালা এবার আরো ভয় পান। ভীত চোখে রিতার দিকে তাকান। রিতা উঠে দাঁড়ায়। নরম গলায় বলে,

‘খালা, ভয় পাবেন না। আপনি আমাকে যা যা বলেছেন, সাদরাজকে তা সব বলুন। উনাকে সব সত্যি জানাতে হবে। উনার মনের ভুল ধারণাকে পাল্টাতে হবে। বলুন, খালা।’

খালার ঠোঁট কাঁপছে। তিনি ক্রমাগত ঢোক গিলছেন। কী বলবেন বুঝতে পারছেন না। সাদরাজ দাঁতে দাঁত চেপে উনাকে আবারও একই প্রশ্ন করে। খালা ভয় পাচ্ছেন খুব। তিনি কম্পিত সুরে বলেন,

‘আমি কাউরে কিছু কই নাই। আমি কিছু জানি না।’

রিতা অবাক হয়ে খালার এক হাত জড়িয়ে ধরে। উনাকে অনুরোধ করে বলে,

‘খালা, প্লিজ ভয় পাবেন না। সত্যিটা বলুন। প্লিজ, খালা।’

খালা তার হাত ছাড়িয়ে বলল,

‘কইলাম তো, আমি কিছু জানি না। আমারে মাফ করবেন। আমি কাজে যাই।’

এই বলে তিনি দ্রুত সেখান থেকে চলে যান। রিতা বিস্মিত হয়ে খালার যাওয়া দেখে। সাদরাজ তখন ক্ষিপ্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

‘কেন মিথ্যে বললে?’

রিতা সাদরাজের দিকে তাকায়। মিইয়ে যাওয়া সুরে বলে,

‘আমি কোনো মিথ্যে বলিনি। সত্যিই এসব কিছু আমাকে খালা বলেছেন। আর খালা এখন আপনার সামনে ভয় পাচ্ছেন। আপনার মা’কে রাবীর ভাইয়া মারেননি। উনাকে মেরেছেন…’

‘শাট আপ। আর একটাও বাজে কথা বলবে না। দিনকে দিন তোমার সাহস বেড়েই চলছে। এইসব ব্যাপারে কথা বলার সাহস হয় কী করে তোমার? তুমি কি ভেবেছ, আমি কিছু বলিনা বলে তুমি যা খুশি তাই করবে আর আমি সবকিছু মেনে নিব? তোমাকে এবার এর শাস্তি পেতে হবে। চলো..’

সাদরাজ এই বলে রিতার হাত ধরে টেনে তাকে উপরে নিয়ে যায়। রিতা বুঝতে পারছে না, তার সাথে কী হতে চলেছে। সে সাদরাজকে বারবার অনুরোধ করে বলছে, একবার তাকে বিশ্বাস করার জন্য। কিন্তু, সাদরাজ এখন আর হুঁশে নেই। মাথা রাগে ফেটে যাচ্ছে তার। সে রিতাকে সেই স্টোর রুমটার ভেতরে নিয়ে গিয়ে রাগি গলায় বলে,

‘তুমি আজ থেকে এখানেই থাকবে। আর আমি না চাওয়া অবধি এই রুম থেকে তোমাকে কেউ বের করতে পারবে না।’

এই বলেই সাদরাজ বাইরে এসে দরজা লক করে দেয়। রিতা ভেতর থেকে চেঁচাতে থাকে। কিন্তু, তার কান্না ভেজা স্বর সাদরাজের কান অবধি আর পৌঁছায় না। সাদরাজ তার রুমে চলে যায়।

এখনো রাগ কমছে না তার। রিতা তাকে কেন এসব বলল? ও কেন এসব নিয়ে কথা বলবে? তার এসব নিয়ে কথা বলার কোনো অধিকার নেই। সাদরাজ রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে রাবীরকে কল দেয়। রাবীর কল রিসিভ করে। সে তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বলতে থাকে,

‘তুই কি ভেবেছিস, রিতার মুখ দিয়ে এসব বলালেই আমি সব বিশ্বাস করে নিব? কখনোই না। তোকে আমি আর বিশ্বাস করি না। আর কখনো করবও না। তুই আমার মা’কে মেরেছিস। তুই আমার মায়ের খু নি। আমি তোকে এর জন্য কখনো ক্ষমা করব না। কখনো না।’

সাদরাজের যেন দম আটকে আসছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। ওপাশে রাবীর নিরব। সাদরাজ জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে বলে,

‘পুরো দুনিয়া তোকে বিশ্বাস করলেও আমি তোকে বিশ্বাস করব না। তুই খুব খারাপ, রাবীর। তুই আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছিস। এর জন্য আমি তোকে শাস্তি দিব’ই। খুব কঠিন শাস্তি দিব।’

‘আমাকে শাস্তি দেওয়ার নামে যে তুই তোর নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস, সেটা বুঝতে পারছিস? পারছিস না। কারণ, কিছু বোঝার জন্য যে নূন্যতম বিবেকের প্রয়োজন হয়, সেই বিবেকটাই তোর নেই। তুই বিবেকহীন হয়ে পড়েছিস। নিজে কিছু ভাবতে পারিস না। মানুষ যা বলে তাই করিস। তোর মধ্যে এখন আর কোনো বোধ বুদ্ধি নেই। অন্যের বুদ্ধি ধার নিয়ে চলছিস তুই। কিন্তু, এভাবে আর কতদিন? এবার তো একটু চোখ খুল। তোর আশেপাশে ভালোভাবে দেখ। দেখবি তোর শত্রুরা কীভাবে তোকে তাদের অস্ত্র বানিয়েছে। তখন বুঝতে পারবি, আসল অন্যায়গুলো কে করছে, আমি না অন্যকেউ।’

সাদরাজ দম নেয়। বলে,

‘কেন সব স্বীকার করছিস না? আমার মা’কে তুই মারিসনি?’

রাবীর শক্ত গলায় জবাব দেয়,

‘না, মারিনি। তোর মা’কে আমি মারতে পারি না। উনি আমারও মা ছিলেন। এই একটা কথা আমি গত পাঁচ বছর যাবত তোকে বুঝিয়ে আসছি। তুই কেন বুঝতে চাইছিস না, বলতো?’

‘কী করে বুঝব? তুই তো কিছু প্রমাণ করতে পারছিস না। প্রমাণ কর, তুই খু নি না। তাহলেই আমি সব বিশ্বাস করব।’

রাবীর তখন তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে,

‘প্রমাণ? তুই যদি আমাকে কোনোদিন বন্ধু হিসেবে একটুও বিশ্বাস করতি, তাহলে আজ আর প্রমাণ চাইতি না। তুই এত বোকা কেন? তোর বাবার সব কথা তুই বিশ্বাস করলি, অথচ আমাকে তুই কিছু বলার সুযোগই দিলি না। আজ আর এসব প্রমাণ করে কী হবে? সেই হারিয়ে যাওয়া পাঁচ বছর কি ফিরে আসবে? আমাদের বন্ধুত্ব কি ঠিক হবে? হবে না। তবুও আমি প্রমাণ করব। কারণ, আমি নিজেও এখন সব সত্যি জেনে গিয়েছি। আসল অপরাধীকে চিনেছি। এবার তার শাস্তি পাওয়ার পালা। তবে তোকে লাস্ট একটাই অনুরোধ করব, তুই আমাদের এসব ঝামেলার জন্য রিতাকে কোনো কষ্ট দিস না। ঐ মেয়েটার কোনো দোষ নেই। এসবের মাঝে ওকে টানিস না, প্লিজ।’

‘সেটা আমি পরে ভেবে নিব। আগে তুই সবকিছু প্রমাণ কর, তারপর আমার সামনে আসিস।’

‘ঠিক আছে। আমি সব প্রমাণ নিয়েই তোর সামনে দাঁড়াব।’

সাদরাজ কল কেটে ভাবতে থাকে, রাবীরের এখনো এত আত্মবিশ্বাস কোথ থেকে আসছে। এতকিছুর পরও তার মাঝে এইটুকুও দূর্বলতা নেই। তার এত এত সাহস আজ তাকে আবার ভাবাচ্ছে। সত্যিই কি রাবীর কিছু করেনি? তবে কি ঐ ভিডিও টা মিথ্যে? কিন্তু, সেটাই বা কীভাবে সম্ভব?

_________________

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। সারাদিন সাদরাজ আর রুম থেকে বের হয়নি। ঐদিকে রিতারও কোনো খবর নেই। খালা এবার ভয়ে ভয়ে সাদরাজের রুমে আসেন। সাদরাজ বিছানায় হেলান দিয়ে চোখ বুজে আছে। খালা এসে বলেন,

‘সাহেব, কিছু খাইতেন না?’

সাদরাজ চোখ বুজা অবস্থাতেই জবাব দেয়,

‘না, যাও।’

খালা গেলেন না। আবারও সাহস করে বললেন,

‘খালাও তো কিছু খায় নাই। খালারে একটু খাবার দেই?’

সাদরাজ উঠে বসে। ধমক দিয়ে বলে,

‘আমি তোমাকে বলেছি? আগ বাড়িয়ে কিছু করতে এসো না।’

খালা ভয় পেয়ে যান। সেখান থেকে চলে যেতে নিলেই সাদরাজ উনাকে আবার ডাকে। খালা ফিরে চেয়ে ভীত সুরে জিজ্ঞেস করেন,

‘কিছু কইবেন?’

সাদরাজ জিজ্ঞেস করে,

‘তুমি কি সত্যিই রিতাকে কিছু বলোনি?’

খালা মাথা নুইয়ে ফেলেন। ভয়ে সত্যি কথাটা বলতে পারছেন না তিনি। সাদরাজ এবার নরম গলায় বলে,

‘ভয় পেও না, খালা। কিছু জেনে থাকলে, বলো।’

খালা মৃদু সুরে বলেন,

‘হ, আমিই খালারে সব কইছি।’

সাদরাজ কপালে ভাঁজ ফেলে জিজ্ঞেস করে,

‘কী বলেছো?’

খালা একটু সময় নিয়ে বলেন,

‘বলছি যে, আপনার মা’রে রাবীর খান খু ন করেন নাই। অন্য কেউ খু ন করছে।’

সাদরাজের কপালের ভাঁজ আরো চওড়া হয়। শক্ত গলায় জিজ্ঞেস করে,

‘কে খু ন করেছে?’

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে