শেষটা সুন্দর পর্ব-৪৩+৪৪

0
930

#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৪৩।

স্ক্রিনের উপরে ভেসে উঠা নামটা দেখে সাদরাজ বেশ অবাক হয়। সে তার পি.এ’র দিকে চেয়ে বলল,

‘সূর্য আজ কোনদিকে উঠল বলতো? রাবীর খান আমাকে কল দিচ্ছে।’

তার পি.এ ও কথাটা শুনে বেশ অবাক হয়। সাদরাজ কল রিসিভ করে। হেসে বলে,

‘কলটা কি ভুলে চলে এসেছে নাকি খান সাহেব?’

রাবীর ও মৃদু হাসে। বলে,

‘খান সাহেব ভুলে কোনো কাজ করে না। যা করে ভেবে চিন্তে করে।’

‘আচ্ছা। তা, হঠাৎ কী ভেবে তোমার আমার কথা মনে পড়ল শুনি? উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই ভালো।’

‘হ্যাঁ, অবশ্যই। আমার উদ্দেশ্য সবসময়ই ভালোই থাকে; কেবল কিছু মানুষ সেটা বুঝতে পারে না। যাকগে সেসব, তোমাকে ইনভাইট করতে কল দিয়েছি। কাল আমার আর মেহুলের রিসিপশন। তোমার ওয়াইফকে নিয়ে সেন্টারে চলে এসো।’

‘বাবা, রাবীর খান নিজে আমাকে ইনভাইট করছে! তাহলে তো যেতেই হয়।’

‘হ্যাঁ, তোমরা এলে আমিও খুব খুশি হব।’

সাদরাজ হেসে ফোন কাটে। পি.এ’র দিকে চেয়ে বলে,

‘রাবীর খান তার রিসিপশনের জন্য ইনভাইট করেছেন। তাহলে তো যেতে হবেই।’

পি.এ চিন্তিত সুরে বলল,

‘এমনি এমনি নিশ্চয়ই উনি কিছু করছেন না। উনার আবার অন্য কোনো ইনটেনশন নেই তো?’

সাদরাজ হাসে। বলে,

‘না না, রাবীর খান খুব ভালো করেই জানেন আমার হাতে এখন একটা দামি জিনিস আছে। উনি এখন আর কোনো চালাকি করবেন না। আর করলেও পাল্টা চাল তো আমি দিতেই পারব। আমার কাছে তো সেই অস্ত্র আছেই।’

________

মাগরিবের আযান হয়েছে কিছুক্ষণ হলো। মেহুল বিকেলের দিকে ঘুমিয়েছিল। এখন তার ঘুম ভেঙ্গেছে। তাই সে ফ্রেশ হয়ে এসে রাবীরকে সে কল দেয়। রাবীর কল রিসিভ করলে সে বলে,

‘হ্যালো, আপনি কখন আসবেন?’

‘এই তো রওনা দিয়েছি।’

‘আচ্ছা আসুন, রাখছি তাহলে।’

‘ঠিক আছে।’

রাবীরের সাথে কথা বলা শেষ করে সে নিচে রান্নাঘরে যায়। রান্নাঘরে তখন কেউ ছিল না। মেহুল ভাবছে কিছু একটা নাস্তা বানাবে। যদিও সে তেমন কিছু পারে না। ড্রয়িং রুম থেকে তখন হাসাহাসির শব্দ আসছিল। রাবীরের কাজিনরা বোধ হয় সবাই সেখানেই। সেও তাই ড্রয়িং রুমে যায়। ওদেরকে জিজ্ঞেস করে,

‘তোমরা নাস্তায় কী খাবে?’

সবাই বেশ উৎসুক হয়ে পড়ে তখন। একজন বলে,
ভাবি, আমি চিকেন ফ্রাই খাব। তো আবার আরেকজন বলে, ভাবি, আমি ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। আবার অন্যজন বলে, ভাবি, আমার জন্য প্লিজ নুডুলস বানিও।

সবার এত এত খাবারের লিস্ট দেখে মেহুল অসহায়ের মতো ভাবে, “কেন যে জিজ্ঞেস করতে এসেছিলাম।”

তাও সে হেসে বলে,

‘আচ্ছা, আমি বানিয়ে দিচ্ছি।’

পরে সে রান্নাঘরে চলে আসে। রান্নাঘরে গিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে সে দাঁড়িয়ে থাকে। বিরক্ত হয়ে বলে,

‘ধুর, আমি এতকিছু পারি নাকি? এসব তো রিতা পারতো। ও যে কত রকমের নাস্তা বানাতে পারে। ইস, তখন যদি একটু ওর থেকে শিখে নিতাম তাহলে আজ আর আমার এই অবস্থা হতো না।’

মনে মনে ভীষণ আফসোস করে মেহুল কিছু আলু আর ফ্রিজ থেকে একটা মুরগী বের করে আনল। চিকেন ফ্রাই করতে পারবে কিন্তু, এই মুরগী কাটতে পারবে না। সে অসহায় ভাবে মুরগীর দিকে চেয়ে আছে। তখনই খালা রান্নাঘরে আসেন। মেহুলকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করেন,

‘কী খালা, কিছু রানবেন?’

মেহুল খালাকে দেখে খুশি হয়। বলে,

‘জি, আমাকে কি তুমি একটু মুরগীটা বানিয়ে দিতে পারবে?’

‘হ, এক্ষুনি দিতাছি।’

মেহুল যেন তখন হাফ ছেড়ে বাঁচে।

________

মেহুল রান্না করছিল আর গুনগুন করে গান গাইছিল। যদিও সে খুব একটা খেয়ালে গান গাইছে না। রান্নার প্রতি মনোযোগে সে নিজেও বুঝতে পারেনি সে যে গান গাইছে। হুট করেই তখন পেছন থেকে তার শাশুড়ি এসে বলেন,

‘সব জায়াগায় গান গাওয়া ঠিক না।’

মেহুল চমকে পেছনে তাকায়। শাশুড়ি মা’কে দেখে সে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। বিনয়ের সুরে বলে,

‘না মা, আসলে বুঝতে পারিনি।’

তার শাশুড়ি মা শক্ত গলায় বললেন,

‘ভবিষ্যতে যেন আর এমন কিছু না হয়। আর, তোমাকে রান্নাঘরে আসতে হবে না। বাড়িতে কাজের লোক আছে। পরে আবার আমার ছেলে দেখলে বলবে যে আমি তার বউকে সারাক্ষণ খাটাই।’

‘না মা, আমি তো নিজে থেকেই এসেছি। আসলে সবার জন্য একটু নাস্তা বানাচ্ছিলাম।’

‘আজকে বানিয়ে ফেল। তারপর আর বানানোর দরকার নেই। যা লাগবে খালাকে বলবে, করে দিবে।’

মেহুল মাথা হেলিয়ে বলল,

‘আচ্ছা মা।’

শাশুড়ি মা চলে যাওয়ার পর মেহুল মন খারাপ করে আবার রান্না আরম্ভ করে।

মেহুল সব রান্না করে সুন্দর করে সাজিয়ে ড্রয়িং রুমে নিয়ে যায়। সবাই তো তার রান্না দেখে অবাক। সবাই হাতে হাতে যার যার প্লেট নিয়ে বসে। মেহুল বলে,

‘খেয়ে দেখো তো কেমন হয়েছে। আমি আবার রান্নায় খুব একটা পারদর্শী না।’

কিন্তু সবাই খাবার খেয়ে তার বেশ প্রশংসা করে। মেহুল মনে মনে খুশি হয়। বলে, “ভাগ্যিস, ইউটিউব ছিল। নাহলে আজকে তার কী হতো কে জানে।”

একজন বলে উঠে,

‘ভাবি, ভাইয়া এসেছে তো। যাও ভাইয়াকেও নাস্তা দিয়ে এসো।’

‘ওমা, উনি কখন এলেন?’

‘কিছুক্ষণ আগে। তুমি তখন রান্নাঘরে ছিলে।’

‘আচ্ছা, আমি আগে মা’কে দিয়ে আসি।’

‘না না ভাবি, মামি এসব খান না। ডাক্তারের বারণ রয়েছে।’

‘তাহলে মা সন্ধ্যার নাস্তায় কী খান?’

‘এক কাপ রং চা আর দুটো বিস্কিট।’

‘আচ্ছা, আমি এগুলো বানিয়ে আগে মা’কে দিয়ে আসি।’

শাশুড়ি মায়ের জন্য নাস্তা নিয়ে রুমে ঢুকতেই দেখে রাবীরও সেখানেই। মা তখন বলেন,

‘তোমার বউকে বারণ করেছিলাম কিছু করতে। কিন্তু সে নাকি নিজের হাতে আমাদের জন্য নাস্তা বানাবে। তাই আর না করতে পারিনি। দেখি, আমার চা দাও। খেয়ে দেখি আমার ছেলের বউ কেমন চা বানায়।’

মেহুল মৃদু হেসে চায়ের কাপটা মায়ের হাতে দেয়। তিনি চুমুক দিয়ে বলেন,

‘ভালোই হয়েছে, তবে চিনিটা আরেকটু কম হলে আরো ভালো হতো।’

‘আচ্ছা মা, পরেরবার থেকে খেয়াল রাখব।’

‘ঠিক আছে। এখন রাবীরকে নিয়ে রুমে গিয়ে তোমরাও নাস্তা করো। যাও।’

__________

রাবীরের সামনে নাস্তা রাখতেই সে জিজ্ঞেস করে,

‘এত নাস্তা আপনি বানিয়েছেন?’

‘জি। খেয়ে দেখুন কেমন হয়েছে।’

রাবীর অল্প অল্প করে সবগুলো ট্রাই করল। তারপর বলল,

‘সবগুলোই কিন্তু বেশ ভালো হয়েছে।’

মেহুল হেসে বলল,

‘সত্যি?’

‘হ্যাঁ, সত্যি।’

মেহুলও খায়। তার কাছেও বেশ ভালো লাগে। রাবীর পরে উঠে গিয়ে অনেকগুলো বেলি ফুলের মালা এনে মেহুলের কোলের উপর রাখল। বেলি ফুল দেখে মেহুল প্রচন্ড অবাক হয়ে বলে,

‘আপনি এনেছেন?’

‘হ্যাঁ। আসার সময় সিগন্যালে দেখলাম একজন বিক্রি করছেন তাই আপনার জন্য নিয়ে এলাম।’

মেহুল হেসে বলে,

‘মনে হয় উনার কাছে যা ছিল সব নিয়ে এসেছেন।’

রাবীরও তার কথা শুনে হাসে। মেহুল বলে,

‘এবার এতগুলো আমি কী করব? কালকেই তো সব নষ্ট হয়ে যাবে।’

‘হয়ে গেলে আবার এনে দিব। সমস্যা কোথায়।’

‘এতগুলো আনতে হবে না। দুটো আনলেই হবে।’

‘আচ্ছা বাবা, দুটোই আনব।’

‘এখন তাহলে আমায় পরিয়ে দিন।’

রাবীর দুটো মালা নিয়ে দুইহাতে পরিয়ে দিল। মেহুল নাকের কাছে নিয়ে ফুলগুলোর ঘ্রাণ নিয়ে বলল,

‘আহহ, শান্তি।’

রাবীর তার দিকে চেয়ে মুচকি হাসে। মেহুল তাকিয়ে বলে,

‘আচ্ছা, কাল তো আপনি আমাকে এত দামি একটা গিফ্ট দিলেন আজও এত সুন্দর উপহার আনলেন; আপনার আমার তরফ থেকে কিছু লাগবে না?’

রাবীর বলে,

‘আপনি আমার কাছে আছেন, পাশে আছেন, আমার জন্য সেটাই অনেক বড়ো উপহার।’

মেহুল মৃদু হেসে বলে,

‘তাও আমি আপনাকে কিছু একটা উপহার দিতে চাই।’

‘আপনি দিতে চাইলে আমি অবশ্যই নিব।’

মেহুল তখন রাবীরের দিকে একটু এগিয়ে যায়। আরেকটু এগুতেই রাবীর ভ্রু কুঁচকে বলে,

‘কী ব্যাপার?’

মেহুল বলে,

‘কিছু না।’

এই বলেই সে টুপ করে রাবীরের গালে একটা চুমু দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। রাবীর তো তার এই কাজে পুরো বোকা বনে যায়। সে বড়ো বড়ো চোখে মেহুলের দিকে চাইতেই মেহুল লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বলে,

‘এত অবাক হওয়ার কী আছে? আপনি আমাকে এত উপহার দিয়েছেন তাই আমিও আপনাকে ছোট্ট একটা উপহার দিয়েছে, ব্যস এইটুকুই।’

রাবীর কিছু একটা বলতে চাইছিল, মেহুল সেটা না শুনেই দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে যায়। সে জানে এখানে আর বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে রাবীর তাকে লজ্জা দিতে দিতে মেরে ফেলবে …

চলবে….

#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৪৪।

ঘড়িতে ঠিক বারোটা বাজছে। রিতা তখন থেকে খাবার টেবিলে বসে আছে। যদিও সে যা করছে সব তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। শুধু খালা তাকে দিয়ে জোর করিয়ে এসব করাচ্ছেন। তবে বসে থাকতে থাকতে বর্তমানে তার ভীষণ খিদে পেয়েছে। কিন্তু, খালা বলেছেন সাদরাজ আসলে তার সঙ্গে একসাথে খাওয়ার জন্য। এইদিকে আবার তার ঘুমও পাচ্ছে খুব। রিতা বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। বারোটার উপরে বাজে, এখনো লোকটা আসছে না কেন? খালা বলে নিজেও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। সেও এবার বিরক্ত হয়। আর অপেক্ষা করতে পারবে না। রিতা খাবার বেড়ে খেতে আরম্ভ করে। তার খাবার খাওয়াও শেষ হয়ে যায়। বারোটা ত্রিশ বাজে। সাদরাজের আসার এখনো কোনো নাম গন্ধ নেই। রিতা তখন আর বসে না থেকে সব খাবার ঘুরে রেখে তার শোয়ার রুমে চলে যায়।
ভাবে শুয়ে শুয়ে আরেকটু অপেক্ষা করবে। কিন্তু সে শুতে শুতেই প্রচন্ড ঘুমে চোখ ভরে আসে তার। আর তার কিছুক্ষণের মধ্যে সে ঘুমিয়েও পড়ে।

হঠাৎ টের পায়, সে নিশ্বাস ফেলতে পারছে না। কিছু একটা ঝাপ্টে জড়িয়ে ধরে আছে তাকে। তার অস্বস্তি হচ্ছে। সে চোখ মেলে তাকায়। রুমটা অন্ধকার। সে ভালোভাবে খেয়াল করতেই দেখল সাদরাজ তার বুকের উপর মাথা রেখে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে তাকে। রিতা যে একটু নড়বে সেই সুযোগও নেই। সে সাদরাজকে সরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাকে এক চুল নড়ানোর শক্তিও তার গায়ে নেই। পরে সে বিরক্ত হয়ে ওভাবেই ঘুমিয়ে পড়ে।

___________

দরজার ঠকঠক শব্দে মেহুলের ঘুম ভাঙ্গে। উঠে বসে ঘড়িতে দেখে সাতটা বাজে। এত সকালে কে এলো। সে বড়ো একটা হাই তুলে চোখ মুখ কঁচলে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। গিয়ে দেখে দু’টো মেয়ে দাঁড়ান। মেয়ে দুটো তাকে দেখে সালাম দেয়। মেহুল তাদের চিনতে পারে না। তখন পেছন থেকে তার শাশুড়ি এসে বলেন,

‘ওরা পার্লার থেকে এসেছে, তোমাকে সাজাতে।’

মেহুল বলে,

‘ওহ আচ্ছা। আপনারা ভেতরে এসে বসুন। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।’

দশটা বাজে। মেহুলের সাজ প্রায় শেষের দিকে। মেহুল ভাবছে, এত সকালে সেজে তার কী লাভ। অনুষ্ঠান তো শুরু হবে আরো দু ঘন্টা পর। এই দু ঘন্টা তাকে এভাবেই পুতুল সেজে বসে থাকতে হবে। এইদিকে আবার তার প্রচন্ড খিদেও পেয়েছে। কেউ তাকে একটু খাবারও এনে দিচ্ছে না। রাবীরও যে সকাল থেকে কোথায় কে জানে। একটা পার্লারের মেয়ে তখন বলল,

‘ম্যাম, লিপস্টিকটা দেওয়ার আগে আপনি কিছু খেয়ে নিন। পরে না হয় অসুবিধা হবে।’

মেহুল তখন ভাবছে সে এখন খাবারের জন্য কাকে ডাকবে। পরে ভাবতে ভাবতেই দেখে যে তার শাশুড়ি মা খাবার নিয়ে এসেছেন। তিনি এসে বলেন,

‘নিচে পরিচিত পরিজনরা অনেকেই চলে এসেছেন তো তাই উনাদের নাস্তা পানির ব্যবস্থা করতে গিয়ে তোমার জন্য নাস্তা আনতে লেইট হয়ে গিয়েছে।’

মেহুল মৃদু হেসে বলে,

‘সমস্যা নেই মা।’

মেহুল বিছানায় বসে। শাশুড়ি মা খাবারের প্লেটটা তার সামনে রাখেন। মেহুল হাতটা খাবারের কাছে নিতেই তিনি দেখে বলেন,

‘আরে তোমার হাত নষ্ট হবে। দাঁড়াও, আমি খাইয়ে দিচ্ছি।’

পরে তিনিই খুব যত্ন করে মেহুলকে খাইয়ে দেন। খাওয়ানো শেষ করে পানি খাইয়ে মুখ মুছে দিয়ে তিনি চলে যান। মেহুল মনে মনে খুব শান্তি পায়। মায়ের পর প্রথম উনার হাতে খেয়েই সে এত তৃপ্তি পেয়েছে।

__________

মেহুল সেন্টারে গিয়ে দেখে পুরো সেন্টার মানুষে গিজগিজ করছে। এত মানুষ! মেহুলের যেন ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে। কিন্ত সেই অস্বস্তি মুহুর্তেই ফুস হয়ে যায় যখন সে রাবীরকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে। রাবীর তার শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে একটা কালো রঙের পাঞ্জাবী পরেছেন। সাদা রঙের পর আবার এই কালো রঙেও মারাত্মক লাগছে তাকে। সে এসে মেহুলের হাত ধরে তাকে নিয়ে স্টেজে যায়।

অনেক মানুষের ভীড়ে মেহুল তার পরিচিত মুখগুলোকে খুঁজছে। তার পরিবারের মানুষরা এখনো আসেনি। আর রিতা সেও কেন এখনো আসছে না কে জানে।

একে একে সব মেহমান চলে আসেন। সবাই মেহুল আর রাবীরের সাথে ছবি তুলছেন। মেহুলের মা বাবা সহ আরো কিছু আত্মীয়স্বজন এসেছেন। কিন্তু রিতা এখনো আসছে না। মেহুল চিন্তায় পড়ে। রিতার সাথে কি আজকেও তার কথা হবে না?

সবাই মেহুল আর রাবীরকে খাবার টেবিলে বসতে বলছে। কিন্তু, মেহুল এখনই বসতে চাইছে না। সে রাবীরের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘সাদরাজ আহমেদ কি রিতাকে নিয়ে আসবেন না?’

‘আসবে। আমি যখন বলেছি তখন ও অবশ্যই আসবে।’

আর সত্যিই তাই হয়। সাদরাজ রিতাকে নিয়ে সেখানে হাজির হয়। রিতাকে দেখে মেহুল উঠে দাঁড়ায়। সাদরাজ তার ওয়াইফকে সবটুকু দিয়ে সাজিয়ে এনেছে। আর সত্যি রিতাকেও কোনো অংশে মেহুলের চেয়ে কম সুন্দর লাগছে না। রিতা এসেই মেহুলকে জড়িয়ে ধরে। মেহুলও জড়িয়ে ধরে তাকে। সাদরাজ এগিয়ে হেসে রাবীরের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। রাবীরও তখন বাঁকা হেসে তার সাথে করমর্দন করে। রাবীর বলে,

‘তোমাদের দেখে খুশি হয়েছি।’

‘তুমি বলেছ আর না এসে পারা যায়?’

‘হ্যাঁ জানি, আমার কথা তুমি কোনো সময়ই ফেলতে পারো না।’

‘বুঝতে হবে। আমার একমাত্র প্রিয় শত্রু। তার কথা আমি কীভাবে ফেলি, বলো?’

সাদরাজ তখন রিতার দেখে চেয়ে বলে,

‘রিতা, চলো আমরা ওদের সাথে একটা ছবি তুলে আজকের দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখি।’

তারা চার জন ছবি তুলে। সাদরাজকে এখানে দেখে রাবীরের দলের লোকেরা খুব অবাক হয়। অনেকে আবার তার বউকে দেখেও খুব অবাক হচ্ছে। আর সবার আগ্রহ কমাতে রাবীর তখন একটা মাইক নিয়ে সবার সামনে বলে,

‘উপস্থিত সবাইকে আমি আরেকটা সুখবর দিতে চাই। এই যে আমার পাশে দাঁড়ান সাদরাজ আহমেদ, আমার সবথেকে বড়ো কম্পিটেটর। কিন্তু, বর্তমানে সে আমার খুব কাছের একজন আত্মীয় হয়ে উঠেছে। কারণ সে আমার ওয়াইফের একমাত্র বেস্টফ্রেন্ডকে বিয়ে করেছে। আর তাই আপনারা সবাই ওদের নতুন জীবনের জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা জানাবেন। যেন আমাদের মতো ওরাও খুব সুখী দম্পতি হয়ে উঠতে পারে। তাই না?(সাদরাজের দিকে চেয়ে)’

সাদরাজ হেসে বলে,

‘অবশ্যই।’

রাবীর পরে মাইকে রেখে বলে,

‘সাংবাদিক এসেছে। যাও, ওদের মুখোমুখি হও।’

সাদরাজ বলে,

‘ওদের মুখোমুখি হওয়ার জন্যই তো আমি এখানে এসেছি। রিতা, চলো।’

সাদরাজ রিতাকে নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে যায়। তাদের নানান প্রশ্নের সে এক এক করে জবাব দিতে থাকে। রিতার এসব ভালো লাগছে না। তার তো মেহুলের সাথে কথা বলা জরুরি। সে মেহুলের দিকে তাকায়। মেহুল তাকে ইশারা দিয়ে সেখান থেকে চলে আসতে বলে। কিন্তু রিতা ভাবছে এখান থেকে সে কীভাবে যাবে। সাদরাজ তো তাকে যেতে দিবে না। তাও সে একবার ট্রাই করল। সাদরাজের দিকে চেয়ে হেসে বলল,

‘সাদরাজ, তুমি উনাদের সাথে কথা বলো। আমি একটু মেহুলের সাথে কিছু সিংগেল ছবি তুলে আসি।’

এই বলে সে আর না দাঁড়িয়ে দ্রুত সেখান থেকে সরে আসে। সাদরাজ তাকে তখন আটকাতে পারে না। সাংবাদিকরা তাকে এমন ভাবে ধরে রেখেছে যে চাইলে সেখান থেকে এখন বেরুতে পারবে না। রিতা মেহুলের কাছে ছুটে আসে। মেহুল তার হাত ধরে রাবীরের দিকে চেয়ে বলে,

‘আমরা ঐদিকে যাচ্ছি। আপনি সাদরাজকে সামলে নিয়েন।’

‘আচ্ছা, যান।’

রিতাকে নিয়ে মেহুল দ্রুত একটা ফাঁকা রুমে যায়। রুমে গিয়েই দরজা আটকে দেয় সে। রিতার দিকে চেয়ে বলে,

‘দোস্ত, দ্রুত আমাকে সবকিছু বল। কেন তুই সাদরাজকে বিয়ে করেছিস? উনি তোকে কী জন্য বিয়ে করেছে? সব বল আমায়।’

রিতা ঢোক গিলে বলে,

‘উনি আমায় কেন বিয়ে করেছেন জানি না। তবে আমি উনাকে বিয়ে করেছি সিয়ামকে বাঁচাতে। সেদিন পার্লারে একটা নাম্বার থেকে কল আসে। বলে যে, আমি যদি এক্ষুনি তাদের বলা এড্রেসে না যায় ওরা নাকি সিয়ামকে মেরে ফেলবে। ওরা সিয়ামের হাত পা বাঁধা একটা ভিডিও পাঠায়। আর সেটা দেখে আমি ভয়ে দ্রুত সেখানে চলে যায়। আর তারপর সেখানে গিয়ে সাদরাজ আমাকে জোর করে সিয়ামকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে বিয়ে করে। তবে উনি যে আমাকে কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে বিয়ে করেছেন সেটা আমি বেশ বুঝতে পারছি।’

মেহুল তখন শক্ত গলায় বলে,

‘তুই এই কথাগুলো পুলিশের সামনে বলবি। আমি রাবীরের সাথে কথা বলছি।’

রিতা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

‘না না, আমি পুলিশের সামনে কিচ্ছু বলব না।’

‘কেন? ভয় পাচ্ছিস? ভয় পাস না দোস্ত। আমরা সবাই আছি তোর সাথে।’

‘না মেহুল, উনাকে পুলিশে ধরিয়ে দিলে কোনো লাভ হবে না। বরং উনার আর রাবীর ভাইয়ার সম্পর্কটা ঠিক করতে হবে।’

‘রাবীর আর উনার সম্পর্ক জীবনেও ঠিক হবে বলে তোর মনে হয়? উনাদের সাপে নেউলে সম্পর্ক। এই সম্পর্ক কখনোই ঠিক হবে না।’

‘হবে। অবশ্যই হবে। তুই হয়তো জানিস না, উনারা দুজন একসময় বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল।’

মেহুল চমকে বলে,

‘কী!’

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে