শেষটা সুন্দর পর্ব-৩৫+৩৬

0
855

#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৩৫।

মেহুল একটা হলুদ রঙের শাড়ি পরেছে। চুল থেকে তখন তার পানি পড়ছিল। তাই সে আঁচল’টা কোমরে গুঁজে চুল মুছতে আরম্ভ করে। সেই সময় রামিনা বেগম এসে বললেন,

‘কিরে, এখনো তো কিছুই রেডি হোসনি। তাড়াতাড়ি কর। ঐদিকে ছাদে সবাই অপেক্ষা করছে তোর জন্য।’

মেহুল বলল,

‘আমাকে জাস্ট পাঁচ মিনিট দাও মা। আমি রেডি হয়ে ছাদে যাচ্ছি।’

‘হ্যাঁ, তাড়াতাড়ি কর।’

মেহুল দ্রুত চুল মুছে হালকা সেজে রুম থেকে বের হতেই তার কিছু কাজিন আর রিতা একটা বড়ো ওড়না নিয়ে হাজির হয়। তারপর তারা সেই ওড়না মেহুলের মাথার উপর ধরে তাকে ছাদে নিয়ে যায়। ছাদে আরো আত্মীয়স্বজন ছিল। মেহুলের দাদা আর নানা বাড়ি থেকে ঘনিষ্ঠ কিছু আত্মীয়স্বজন এসেছেন। একটা ছোট্ট স্টেজ করা হয়েছে। মেহুল সেখানেই গিয়ে বসে। চারদিক ফুল আর ফেইরি লাইটে সাজানো। মেহুলের সামনে অনেক কিছুর ডালা রাখা। সে বসার কিছুক্ষণ পর তার পাশে তার মা বাবা গিয়ে বসলেন। তারা হলুদের ডালা থেকে হলুদ নিয়ে মেহুলের মুখে লাগিয়ে দিলেন। তারপর একে একে অনেকেই আসে তাকে হলুদ দিতে।

হলুদের পাঠ চুকিয়ে সবাই যখন মেহেদি দেওয়াতে ব্যস্ত, তখন নিচে থেকে খবর আসে ছেলের বাড়ির থেকে বিয়ের ডালা এসেছে। রিতা বলল,

‘চল মেহুল, নিচে বোধ হয় ভাইয়াও এসেছেন।’

রাবীর এসেছে ভেবে মেহুল খুশি হয়। সেও রিতার সাথে নিচে যায়। তবে বাসায় গিয়ে সব ডালা দেখলেও সেই মানুষটাকে সে দেখে না। কিছু লোক এসে ডালা দিয়ে গিয়েছে, রাবীর আসেনি। সবাই এত ঢালা দেখে বলছে,

‘বাবা, ছেলে তো দেখছি কোনো কিছুরই কমতি রাখেনি।’

মেহুল আর কিছু বলে না। রিতাকে বলে,

‘মেহেদিগুলো নিয়ে আয়। বাকিটা রুমেই দিব।’

এই বলে মেহুল তার রুমে যায়। আর রিতা যায় মেহেদি আনতে।

মেহুলের একটা কাজিন একটা ডালা নিয়ে তার রুমে প্রবেশ করে। মেহুল তখন তাকে বলে,

‘কিরে, ডালা এখানে কেন আনছিস? এগুলো ড্রয়িং রুমে থাকবে।’

‘হ্যাঁ, জানি। কিন্তু, তুমি কি এই ডালাতে কী আছে সেটা দেখেছো?’

মেহুল সবগুলো ডালা ভালোভাবে দেখেনি। তাই সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘কেন, কী আছে?’

ঐ মেয়েটা তার সামনে ডালা’টা রেখে বলে,

‘এই যে দেখো।’

মেহুল চেয়ে দেখে পুরো ঢালা’টা আইসক্রিম আর অনেকগুলো চকলেট দিয়ে সাজানো। যা দেখে সঙ্গে সঙ্গেই মেহুলের মন খুশিতে নেচে উঠে। সে অস্থির হয়ে রিতাকে বলে,

‘রিতা, খুল জলদি।’

মেহুলের হাতে মেহেদি থাকায় রিতা’ই ডালা’টা খুলে। তারপর একে একে সব আইসক্রিম আর চকলেট বের করে। অনেকটা সময় হয়ে যাওয়ায় আইসক্রিমগুলো গলে গিয়েছিল। তাই মেহুল সেগুলোকে ফ্রিজে রেখে আসতে বলল। তারপর সবাই মিলে চকলেটগুলো আলাদা করে। অনেক রকমের চকলেট দিয়েছে। মেহুল পারছেনা সবগুলো একসাথে মুখে পুরে বসে থাকতে। কিন্তু, তার বিচ্ছুসব কাজিনরা তার দিকে হাত পেতে চেয়ে আছে। তাই সে সবার মাঝে চকলেট বিলিয়ে নিজের চকলেটগুলো আলাদাভাবে রেখে দেয়। পরে খাবে।

তার রুম’টা একটু খালি হওয়ার পর মেহুল রাবীরকে কল দেয়। রাবীর কেটে দিয়ে আবার কল ব্যাক করে। মেহুল কোনো কথা বলে না। রাবীর জিজ্ঞেস করে,

‘ডালা সবগুলো ঠিকঠাক মতো পেয়েছেন?’

মেহুল আস্তে করে বলে,

‘জি।’

‘আর, ঐ চকলেট আর আইসক্রিমের ডালা’টা পেয়েছেন?’

‘জি, সবাইকে সবগুলো চকলেট আইসক্রিম ভাগ করে দিয়েছি।’

‘আর আপনি খাননি?’

‘না, আমি কেন খাব? আমি কি বাচ্চা নাকি? ঐসব তো বাচ্চাদের জন্য ছিল, তাই না?’

রাবীর ধীর সুরে বলল,

‘না, আপনার জন্য।’

মেহুল কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল,

‘আপনিও তো আসতে পারতেন।’

‘আমি তো এখনো বাসায়’ই যাইনি। আপনার ঐখানে কীভাবে যাব বলুন?’

মেহুল তখন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,

‘আপনি কি হলুদ করেননি?’

‘না, কালকে একটা জরুরি মিটিং ছিল। কাল সম্ভব না বলে সেটা আজকেই শেষ করতে হয়েছে। আর তাছাড়া আরো কিছু জরুরি কাজ ছিল।’

‘তাই বলে আপনি নিজের হলুদ’টাও করবেন না?’

‘সময় পাইনি। পেলে অবশ্যই করতাম। আপনার ঐদিকে সবকিছু সুষ্ঠু ভাবে হয়েছে?’

‘জি।’

‘উম, পাশে কেউ আছে?’

‘না।’

‘আচ্ছা, ভিডিও কল দিচ্ছি।’

রাবীর ভিডিও কল দেয়। মেহুল কল রিসিভ করে বলে,

‘এখন আর ভিডিও কল দিয়ে কী হবে?’

‘না ভাবলাম, একটু আপনার সাজ’টা দেখি।’

‘থাক, এত ব্যস্ত মানুষের আর আমাকে না দেখলেও চলবে।’

‘কপালে আর গালে দেখি অনেক হলুদ লেগে আছে।’

‘হু, রিতা বেশি হলুদ লাগিয়েছিল।’

‘আপনাকে সুন্দর লাগছে, মেহুল।’

মেহুল বোধ হয় লজ্জা পেল। মৃদু সুরে বলল,

‘সুন্দর মানুষকে তো সবসময় সুন্দর’ই লাগবে, এটাই নিয়ম।’

রাবীর তখন মুচকি হেসে বলল,

‘হ্যাঁ, তা অবশ্য ঠিক বলেছেন।’

রিতা তখন স্ক্রিনের দিকে চেয়ে বলল,

‘একটা কথা বলব?’

‘বলুন।’

‘এখন কি আপনার কোনো কাজ আছে?’

‘না, মোটামুটি সব কাজ গুছিয়ে নিয়েছি।’

মেহুল তখন লজ্জামাখা কন্ঠে বলল,

‘একবার এখানে আসবেন?’

রাবীর ইতস্তত সুরে বলল,

‘এখন তো সম্ভব না মেহুল। আ’ম সরি।’

মেহুল মেকি হেসে বলল,

‘না না, থাক। সমস্যা নেই। আচ্ছা, রাখছি। আপনি কাজ করুন।’

মেহুল কল কেটে দেয়। মন খারাপ হয় তার। তবুও কী করবে। রাবীর ব্যস্ত মানুষ। আর তার এই ব্যস্ততায় তাকেও একসময় অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে।

________

শাড়ি পরেই এক চোট ঘুমিয়ে উঠেছে মেহুল। ঘুম ভাঙতেই হাতের দিকে চেয়ে দেখে মেহেদিগুলো শুকিয়ে গিয়েছে। সেগুলো তুলার জন্য তখন সে বারান্দায় যায়। আর সেই মুহুর্তেই একটা গাড়ি এসে তাদের গেইটের সামনে দাঁড়ায়। যেটা দেখা মাত্রই খুশিতে তার চোখ মুখ ঝলমলিয়ে উঠে। গাড়ি থেকে সেই ব্যক্তিটা নামতেই মেহুল বড়ো বড়ো চোখে তার দিকে তাকায়। রাবীর উপরের দিকে চেয়ে ইশারায় তাকে নিচে নামতে বলে। মেহুলও দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে দরজার কাছে যায়। তার চাচি পেছন থেকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন,

‘মেহুল, কোথায় যাচ্ছো?’

‘একটু নিচে যাচ্ছি চাচি। এখনই চলে আসব।’

‘আরে, এভাবে নিচে যাচ্ছো কেন? কিছু লাগলে অন্য কাউকে বলো।’

‘না না, চাচি। তুমি মা’কে বলো না। আমি যাব আর আসব।’

এই বলে মেহুল দ্রুত নিচে নামে। তার চাচি বুঝতে পারেন না কী হয়েছে। তাই তিনি মেহুলের বারান্দার সামনে গিয়ে দাঁড়ান। নিচে তাকিয়ে দেখেন রাবীর এসেছে। রাবীরকে নিচে দেখে আশ্বস্ত হন তিনি। পরে মুচকি হেসে বারান্দা থেকে চলে আসেন।

মেহুল মাথায় বড়ো ঘোমটা টেনে রাবীরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। রাবীর তার দিকে চেয়ে বলে,

‘এত জরুরি তলপে ডেকে যদি এতবড়ো ঘোমটাই দিয়ে রাখেন, তাহলে এখানে এসে আমার লাভ কী হলো?’

মেহুল তখন মুচকি হেসে বলল,

‘আপনার লাভের প্রয়োজন নেই। আমার লাভ হলেই হবে।’

‘আপনার লাভ? কীভাবে?’

মেহুল তখন সঙ্গে সঙ্গেই তার পেছন থেকে দু’হাত বের করে রাবীরের গালে ঘষে বলল,

‘এই যে আমার লাভ।’

রাবীর গালে হাত ছুঁয়ে দেখল, তার গাল হলুদে ভর্তি। সাথে হলুদ গাল থেকে পাঞ্জাবীতে পড়ে সেটার অবস্থাও খারাপ। মেহুল তাকে দেখে হেসে বলল,

‘এবার আপনি আসতে পারেন।’

রাবীর কিছুক্ষণ তার দিকে চেয়ে থেকে বলে,

‘আশেপাশে মানুষ আছে বলে আপনি আজ বেঁচে গিয়েছেন। নয়তো…’

মেহুল ভ্রু উঁচিয়ে বলল,

‘নয়তো কী? আপনি আমি ভয় পাই নাকি?’

রাবীর হেসে বলল,

‘ভয় পান না?’

‘না, মোটেও না।’

রাবীর মেহুলের হাত টেনে ধরে বলে,

‘চলুন তাহলে।’

মেহুল চমকে বলে,

‘কোথায়?’

রাবীর তাকে টেনে নিয়ে গিয়ে তার গাড়িতে বসায়। সেও ড্রাইভিং সিটে বসে জানলার গ্লাসগুলো তুলে দেয়। মেহুল ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করে,

‘কী হলো? আপনি আমাকে গাড়িতে কেন নিয়ে এলেন?’

রাবীর তখন কোনো উত্তর না দিয়ে মুচকি হাসে।

চলবে…

#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৩৬।

রাবীর মেহুলের দিকে এগিয়ে আসতেই মেহুল আরো পিছিয়ে যায়। ভীত সুরে জিজ্ঞেস করে,

‘কী হলো?’

রাবীর জবাব না দিয়ে আরো অগ্রসর হয়। মেহুলের চোখে মুখে ভীষণ অস্বস্তি। রাবীর এগিয়ে গিয়ে মেহুলের দুই গালে তার গাল ঘষে। মেহুল চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেলে। রাবীর সিটে সরে এসে বলে,

‘এবার ঠিক আছে।’

মেহুল চোখ মেলে তাকায়। বলে,

‘আমার গালে কি হলুদ কম ছিল যে আপনাকেও লাগাতে হয়েছে?’

রাবীর মৃদু হেসে বলে,

‘হলুদ ছিল, তবে আমার ছোঁয়া ছিল না। তাই সেটাও পরিপূর্ণ করে দিলাম।’

মেহুল কপাল কুঁচকে তার গালে হাত দিয়ে মিনমিনিয়ে বলে,

‘দাঁড়ি তো নয় যেন ক্যাকটাস। গাল’টা জ্বালা করে দিয়েছে।’

রাবীর তার দিকে চেয়ে বলে,

‘কী হলো, গালে হাত দিয়ে বসে আছেন কেন? এবার আপনি বাসায় যেতে পারেন। আমার কাজ শেষ।’

‘হু, যাচ্ছি। আপানাকে ডাকা’ই আমার ভুল হয়েছে।’

মেহুল গাড়ি থেকে নেমে দু’কদম এগিয়ে গিয়ে আবার গাড়ির কাছে গিয়ে বলে,

‘আপনি ভেতরে যাবেন না?’

‘না। আজ আর যাব না। কাল একেবারে আসব। আসছি।’

রাবীর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। মেহুলও আর দাঁড়িয়ে না থেকে নিজের রুমে চলে যায়।

________

পরদিন খুব সকালেই মেহুল রিতাকে নিয়ে পার্লারে চলে যায়। বউ সাজাতে অনেক সময় লাগে। তাই একটু তাড়াতাড়িই চলে গিয়েছে সে। রিতাও তার সাথে সাজবে। মেহুলের সাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। ব্রাইড সাজানোর রুমটা আলাদা। রিতা তাই সাজার জন্য অন্য রুমে বসেছে। তবে রিতার সাজ শুরু হওয়ার আগেই তার ফোনে একটা কল আসে। রিতা কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন কিছু বলে তাকে। যেটা শুনে সে আর বসে থাকতে পারে না; দ্রুত পার্লার থেকে বেরিয়ে যায়। তবে মেহুল তখন এসবের কিছুই জানতো না।

প্রায় চার ঘন্টা পর মেহুলের সাজ শেষ হয়। ঘড়িতে তখন এগারোটা বাজে। একটা লাল রঙের গর্জিয়াস বেনারসী পরেছে সে। তার সাথে গয়না আর গর্জিয়াস একটা মেকআপে অসাধারণ লাগছে। নিজেকে আয়নায় দেখে নিজেই যেন চিনতে পারছে না। সে পুরোপুরি রেডি হওয়ার পর একজন মেকআপ স্টাফকে বলল,

‘ঐ রুমে আমার একজন ফ্রেন্ড আছে, ওর মেকআপ কি হয়ে গিয়েছে?’

মেয়েটি বলল,

‘নাম কী উনার?’

‘রিতা।’

‘ননব্রাইডাল মেকআপ তো, এতক্ষণে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। আচ্ছা আপনি বসুন, আমি দেখছি।’

মেহুল একটা চেয়ারে বসে। ফোনটা পার্স থেকে বের করে অনেকগুলো ছবি তুলে। রাবীরকে ছোট্ট একটা মেসেজ দেয়, “কখন আসছেন?”

সেই মেয়েটি আবার রুমে এসে বলল,

‘ম্যাডাম, রিতা নামের ঐ রুমে কেউ নেই।’

মেহুল ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘মানে? ও তো আমার সাথেই এসেছিল। আপনারাই তো ওকে ঐ রুমে সাজার জন্য যেতে বললেন।’

‘হ্যাঁ, কিন্তু এখন তো উনি ঐ রুমে নেই। হয়তো সাজ শেষে চলে গিয়েছেন।’

‘না না, আমাকে না নিয়ে ও যাবে না।’

মেহুল তখন তার ফোন দিয়ে রিতার নাম্বারে কল লাগায়। কিন্তু, অদ্ভুত ব্যাপার! তার নাম্বার বন্ধ বলছে। মেহুল পরে সেই রুম থেকে বেরিয়ে পুরো পার্লার ভালোভাবে খুঁজে। কিন্তু রিতাকে সে কোথাও খুঁজে পায় না। সে এবার চিন্তায় পড়ে যায়। বাসায় মা’কে কল দেয়। জিজ্ঞেস করে, সেখানে রিতা গিয়েছে কিনা। কিন্তু রামিনা বেগম বললেন, রিতা সেখানে যায়নি। মেহুল রিতার মা’কে কল করে। জিজ্ঞেস করে, উনি কিছু জানেন কিনা। কিন্তু রিতার মাও কিছু বলতে পারেন না। মেহুল এবার ভীষণ চিন্তায় পড়ে। মেয়েটা হুট করে কোথায় চলে গেল? সে আরো কয়েকবার রিতার ফোনে কল করে কিন্তু, বরাবরই ফোনটা বন্ধ বলছে। মেহুল কী করবে বুঝতে পারছে না। সেই সময় তার ফোনে রাবীরের মেসেজ আসে। সে লিখেছে, তারা আর আধ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাবে। মেহুল সময় দেখে।।বারোটা বাজতে চলল। এইদিকে রিতার কোনো খোঁজ নেই। পার্লারে ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখল, রিতা নাকি সাজতেই বসেনি। এর আগেই নাকি সে চলে গিয়েছে। মেহুল কোনো উপায় না পেয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে। তার গার্ডকে জিজ্ঞেস করে,

‘আপনি কি আমার ফ্রেন্ডকে পার্লার থেকে বেরুতে দেখেছেন?’

‘ম্যাডাম, আসলে অনেকেই তো যাচ্ছে বের হচ্ছে, আমি তো অতটা খেয়াল করিনি। কেন ম্যাডাম, কিছু হয়েছে?’

‘আসলে, ওকে কলে পাচ্ছি না। কোথায় আছে, সেটাও বুঝতে পারছি না।’

‘উনি হয়তো বাসায় চলে গিয়েছেন।’

‘না, বাসায় তো কল করিছি। বাসায় যায়নি।’

‘হতে পারে কোনো জরুরি কাজ পড়েছে। সেখানেই গিয়েছেন।’

মেহুলের চিন্তা বাড়ছে। সে বলে,

‘আচ্ছা আপনি বাসায় চলুন।’

মেহুল বাসায় গিয়ে সবাইকে জিজ্ঞেস করে, রিতা এসেছে কিনা বা কারোর রিতার সঙ্গে কথা হয়েছে কিনা। কিন্তু, সবাই তাকে বলে, রিতা এখানে আসেনি। তার চাচি বলেন,

‘রিতা তো তোমার সাথে গিয়েছিল তারপর তো সে আর এখানে আসেনি। তুমি একা গেলে যে?’

মেহুল বিচলিত সুরে জবাব দেয়,

‘চাচি, ও আমার সাথে গিয়েছিল ঠিকই কিন্তু হুট করে আবার পার্লার থেকে বেরিয়ে যায়। আর তারপর থেকে ওকে আমি অনেকবার করে কল দিয়েছি কিন্তু ওর ফোনও বন্ধ বলছে। আন্টিকেও কল দিয়েছিলাম কিন্তু আন্টি বলেছেন উনিও কিছু জানেন না। মেয়েটা হুট করে কোথায় চলে গেল? কোথাও যাওয়ার আগে তো ও অবশ্যই আমাকে বলে যেত। কিন্তু এভাবে না বলে কয়ে হঠাৎ কোথায় উধাও হয়ে গেল? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না চাচি।’

চাচি বলেন,

‘আরে, এত টেনশন করো না। চলে আসবে।’

মেহুল কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছে না। রিতা তো কখনোই এমন কিছু করেনি। কিছু আবার হয়নি তো?

বরপক্ষ সেন্টারে পৌঁছে গিয়েছে। বাসায় এখন কোনো মেহমান নেই। কেবল আছেন মেহুলের মা আর চাচি। বাকি সবাই সেন্টারে। তারা এখন মেহুলকে নিয়ে বেরুবেন। মেহুল তখনও রিতাকে লাগাতার কল করে যাচ্ছে, মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না। তার চিন্তার মাত্রাও বাড়ছে। ঐদিকে রিতার মা বাবাও সেন্টারে গিয়ে মেয়েকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছেন না।

মেহুল গাড়িতে বসে অস্থির গলায় মা’কে বলল,

‘মা, রিতার ফোন তো এখনও বন্ধ বলছে।’

রামিনা বেগমও চিন্তায় পড়লেন। বললেন,

‘কোথায় গেল মেয়েটা?’

‘বুঝতে পারছি না মা। ওর কোনো বিপদ হয়নি তো?’

‘আরে না, কিচ্ছু হবে না। চিন্তা করিস না দেখবি সেন্টারে ঠিক চলে আসবে।’

মেহুল সেন্টারে গিয়ে পৌঁছানোর পর তার সব কাজিনরা তার কাছে ছুটে আসে। মেহুল তখনও তাদের মাঝে রিতাকে খুঁজে। কিন্তু এখানেও রিতা নেই। সবাই তাকে ধরে ভেতরে নিয়ে যায়। মেহুল আশেপাশে রিতাকে খুঁজে চলছে। তবে পায়না। তাকে নিয়ে রাবীরের পাশে বসানো হয়। আর এত চিন্তায় চিন্তায় সে রাবীরের দিকে তাকানোর কথাও ভুলে গিয়েছে। তবে রাবীরের কাছে তার চোখ মুখ দেখে অন্যরকম লাগে। কিছুক্ষণ পরই সেখানে রিতার মা এসে মেহুলকে জিজ্ঞেস করেন,

‘মেহুল, তোমার রিতার সাথে কথা হয়েছে?’

‘না আন্টি। ও নাম্বার তো বন্ধ দেখাচ্ছে।’

‘হ্যাঁ। আমরাও তো ওকে খুঁজে পাচ্ছি না। ও কোথায় গিয়েছে?’

‘এই সেন্টারে কোথাও নেই?’

‘না, ভালোভাবে খুঁজেছি। পাইনি কোথাও।’

‘আচ্ছা আন্টি। আপনি চিন্তা করবেন না। চলে আসবে। হয়তো আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য কোনো প্ল্যান করছে।’

রিতার মা চলে গেলেন। রাবীর তখন জিজ্ঞেস করল,

‘কী হয়েছে? কোনো সমস্যা?’

‘হ্যাঁ, রিতাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’

‘খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মানে? এখানেই আছে হয়তো। এত মানুষের ভিড়ে হয়তো বুঝতে পারছেন না।’

‘না রাবীর। ও এখানে নেই। আমার সাথে পার্লারে গিয়েছিল। তারপর সেখান থেকেই উধাও। আর এখন পর্যন্ত ওর ফোনও বন্ধ। চিন্তা হচ্ছে খুব।’

রাবীর তাকে আশ্বাস দিয়ে বলে,

‘চলে আসবে মেহুল। চিন্তা করবেন না।’

________

চারদিকে বেশ হৈ চৈ। মেহমানরা খেতে বসেছেন। ফটোগ্রাফাররা সব ছবি তুলাতে ব্যস্ত। তবে মেহুল ঠিকমতো কিছুই করতে পারছে না। রিতার এখনো কোনো খোঁজ নেই। চিন্তায় বুক ধুকধুক করছে তার। একটু সময় পেলেই রিতাকে কল করছে। রিতার মা বাবাও ঐদিকে খুব অস্থির। উনারাও তার সাথে যোগাযোগ করার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কিন্তু সবাই বরাবরের মতোই ব্যর্থ।

এতসবের মাঝেই হুট করেই সেখানে অনেক সাংবাদিক এসে হাজির হন। সাংবাদিক দেখে মেহুল মেজাজ হারায়। রাবীরকে জিজ্ঞেস করে,

‘সাংবাদিক কেন? আপনি ডেকেছেন উনাদের?’

রাবীর অবাক হয়ে বলে,

‘না, আমি তো ডাকিনি।’

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে