শুরুটা অন্যরকম পর্ব-২৯

0
1003

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_২৯
#অধির_রায়

“নিয়তি আমি তোমার কিছু হতে দিব না৷ প্লিজ নিয়তি আঁখি মেলে তাকাও?” নিয়তির মাথা কোলে নিয়ে কান্না করতে করতে নির্বণ বলে উঠে।

— নির্বণ চিৎকার করে বলে উঠে, “প্লিজ মা ডক্টরকে ফোন কর? নিয়তি সেন্স হারিয়ে ফেলেছে।”

নির্বণের চিৎকার শুনে বাড়ির সবাই দৌড়ে নির্বণের রুমে আসে৷ সকলের চোখ আকাশ পানে৷ কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না? নির্বণ নিয়তিকে পাঁজা কোলা করে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়৷

একটু আগের ঘটনা..

নির্বণ সোফায় বসে বসে অফিসের কাজ করছিল। নিয়তি রুমে এসে নির্বণকে রুমে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে যায়৷ নিয়তি জানে না যে, “আজ সানডে। ” জানে ঠিক খেয়াল নেই৷

— নিয়তি চকিত হয়ে, ” আপনি এখনও বসে আছেন? অফিসে কখন যাবেন?

— নির্বণ কাজে কনসোনেন্ট করেই বলে উঠে, ” আমি অফিসে কেন যাব? রোজ রোজ অফিসে যেতে ভালো লাগে না৷”

— নিয়তি কিছুটা উঁচু স্বরে, ” বললেই হলো অফিসে যাবেন না৷ এইতো কিছুদিন আগে অনেক অফিস মিস করলেন৷ সুইজারল্যান্ডে ঘুরে আসলাম, তারপর ছোঁয়া।”

— “সুইটহার্ট তুমি কি আমায় একটুও ভালোবাসাে না? সারা দিন স্বামীকে দিয়ে কাজ করাতে মন চাই৷” ঠোঁট উল্টিয়ে বাচ্চাদের মতো করে বলে উঠে।

— ভেংচি কেটে, ” এ্যা শখ কত? আসছে এখানে রোমাঞ্চকর পরিবেশ সৃষ্টি করতে৷” কোনদিন হবে না, রোমাঞ্চকর পরিবেশ।

— প্যাঁচার মতো মুখ করে, ” তুমি সব সময় আমাকে ইগনোর কেন করো?”

— আমি আপনাকে কখন ইগনোর করলাম! আপনার মাথা পুরো গেছে৷ একে কেউ ধরে বেঁধে বাংলাদেশের পাবনা পাঠিয়ে দাও৷

— নিয়তির দিকে ক্ষীণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে, ” আমাকে পাবনায় কেন পাঠাবে? কি আছে পাবনায়?”

— আমাদের দেশে রাচি, আর বাংলাদেশের পাবনায় পাবনায় মানসিক হসপিটাল আছে৷ সেখানে আপনার মতো পাগলদের চিকিৎসা করানো হয়৷

— তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” কি আমি পাগল? আমি পাগল হলে তুমি পাগলী।”
“”পাগলী তোর মনের আশায় কাটে না দিন রাত৷”” এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠে।

— নিয়তি মাথা নিচু করে হাতের উপর আঙ্গুল দিয়ে হিসাব করে, “আপনি একটা এনাকন্ডা। সরি আস্ত একটা হাতি….”

নির্বণ নিয়তিকে ভয় দেখানোর জন্য তার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে৷ নিয়তি আঁখি উপরে তুলতেই নির্বণকে খুব কাছে দেখতে পাই৷ নিয়তি সরে যেতে নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে নিজের কাছে টেনে আনে৷

— নিয়তি কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে, ” আপনি কি করতে চাইছেন? বিশ্বাস করেন আমি আর কিছু বলবো না৷ আমার মতো ভালো মেয়ে এই পৃথিবীতে আর খুঁজে পাবেন না৷”

— তুমি আমাকে কি বলে গালি দিচ্ছিলে সুইটহার্ট? আর একবার দাও না৷ তোমার প্রতিটি গালি আমার কানে ভালোবাসার বার্তা নিয়ে আসে।

— আপনি সত্যি একটা কালপিট। দূরে সরে দাঁড়ান। আমার কেমন জানি লাগছে।

— দুষ্টু হাসি দিয়ে, “কেমন লাগছে? আমার সাথে বাসর করতে মন চাচ্ছে। এত কিছু লাগবে না৷ আজ সানডে। তাই একটা লিপ কিস দিলেই চলবে৷”

— কিস তো দূরের কথা৷ কাছেও ঘেঁষতে দিব না৷ কাছে আসলে খুন করে ফেলবো৷

নির্বণকে ধাক্কা দিয়ে নিয়তি দৌড়ে নির্বণের কাছ থেকে পালানোর চেষ্টা করে৷ কিন্তু নিয়তির মাথা সেন্টার হয়ে যায়। তাকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ঘুরতে শুরু করে ৷ নিয়তি মাথায় হাত রেখে সেন্স হারিয়ে পড়ে যেতে নিলেই নির্বণ ধরে ফেলে।

______

নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, ” এখানে দাঁড়িয়ে মুভির শুটিং দেখে যাচ্ছো৷ কেউ গাড়ি বের করতে বলো। নিয়তিকে এখনই হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।”

— নির্বণের মা নির্বণের কাঁধে হাত রেখে বলে উঠেন, “প্লিজ নির্বণ শান্ত হও৷ আমি ডক্টরকে ফোন করে দিয়েছে। তিনি বলেছেন ” অন দ্যা ওয়ে।” আমরা বরং নিয়তির সেন্স ফেরানোর চেষ্টা করি৷”

— কান্না জড়িত কন্ঠে, ” কিন্তু মা নিয়তি কিছুতেই আঁখি মেলে তাকাচ্ছে না৷ আমি তাকে অনেকে ডেকেছি৷ কিন্তু কোন সাড়া দিচ্ছে না৷ প্লিজ কিছু একটা করো। আমার নিয়তিকে ভালো করে দাও।”

— অরিন গ্লাস এগিয়ে দিয়ে, স্যার ম্যামের চোখে মুখে জল ছিঁটিয়ে দেন৷ ম্যামের জ্ঞান ফিরে আসবে৷ ”

নির্বণ অরিনের হাত থেকে গ্লাস নিয়ে নিয়তির চোখে মুখে জল ছিঁটিয়ে দেয়৷ নিয়তি পিন পিন করে চোখ খুলে। তবে কাউকে দেখতে পাচ্ছে না৷ সবকিছু ঝাপসা দেখাচ্ছে। কারো কথা তেমন কানে আসছে না৷

— নির্বণ হন্তদন্ত হয়ে বলে উঠে, “নিয়তি তুমি ঠিক আছো তো?”

— নিয়তি নির্বণের হাত ধরে মাথা নাড়িয়ে জবার দেয় নিয়তির ঠিক আছে। তখনই ডাক্টর এসে হাজির৷ সবাইকে সাইটে সরিয়ে দিয়ে ডক্টর নিয়তির চেক আপ করেন৷ সকলের মুখে টান টান উত্তেজনা। নিয়তির বাবা রুমের এক সাইট থেকে অন্য সাইডে পায়েচারী করছে৷

— ডক্টর মুচকি হেঁসে বলে উঠে, ” আমি এখন কিছু বলবো না৷ তবে একটা বলতে পারি নিয়তি একদম ঠিক আছে৷”

— নির্বণ রাগী গলায় বলে উঠে, ” ডক্টর আঙ্কেল নিয়তি ঠিক আছে, তাহলে সেন্স হারিয়ে ফেললো কিভাবে? প্লিজ বলেন নিয়তির কি হয়েছে?”

— নির্বণের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে, ” বলতে পারি একটা শর্তে? আমার শর্তে রাজি হলে বলবো।”

— আঙ্কেল আপনি যা চান তাই দিব৷ প্লিজ নিয়তিকে সুস্থ করে দেয়৷

— নির্বণের কাঁধে হাত রেখে, ” নিয়তির কিছু হয়নি৷ এমন সময় এমন একটু হয়৷”

— এ সময় মানে কোন সময়৷ প্লিজ আঙ্কেল আমি এখন কোন ধাঁধার সমাধান করতে পারব না৷

— অরিন যাও সবার জন্য মিষ্টি নিয়ে আসো৷
নির্বণের মায়ের দিকে তাকিয়ে, ” নির্বণের মায়ের দিকে তাকিয়ে, ” মিসেস চৌধুরী আপনি গ্রেনি হতে চলছেন৷ আর নির্বণ তুমি বাবা হতে চলেছো।”

পাতা উল্টে দেখো, একটা গল্প লেখা।
কিছু জানা কাহিনি, কিছু কিছু অজানা
গোধূলি বেলায় কনে দেখার আলোতে,
উলু সানাই এ সাত পাকে বাঁধে যে৷
ছবির মতো ছোট্ট ঘরে, বরণ ডালায় সাজালো কে?

তুমি আমি দু’জনে, রয়েছি হৃদয়ের বাঁধনে
“”””’সাত পাকে বাঁধা “”””

সকলের মুখে হাসি। খুশিতে নির্বণের চোখে জল এসে পড়েছে৷ নির্বণের স্বপ্ন আজ পূরণ হতে চলছে। নির্বণ লাফ দিয়ে বলে উঠে, ” ইয়া হু,, হিপ হিপ হুররে নিয়তি৷ আমি বাবা হবো।”
__________

নিয়তি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নিলেই কোথা থেকে নির্বণ যেন উঠে আসে? নির্বণ এভাবে আসলে দেখে নিয়তি ঘাবড়ে যায়৷

— নিয়তির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, “তোমাকে নিচে নামতে কে বলেছে? কি লাগবে আমাকে বল আমি নিয়ে আসছি?”

— নিয়তি বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে বলে উঠে, ” আমি রুমে বসে থাকতে থাকতে বোরিং হয়ে গেছি৷ আমার ভালো লাগে না এখন ওই রুমে।”

— তোমাকে ওই রুমেই থাকতে হবে৷ সিঁড়ি বেয়ে তোমাকে নিচে নামতে হবে না৷ আমি তোমাকে নিচে নামিয়ে দিচ্ছি৷

— চকিত হয়ে, ” আপনি নামিয়ে দিবেন! মানে আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না৷”

— আমার কথা বুঝার জন্য তোমাকে আরও সাত বার জন্ম নিতে হবে৷ যদি আমার বেবি ব্যথা পাই আমি তোমাকে ছাড়বো না৷

— মুখ ফ্যাকাসে করে, “আরে কিছু হবে না৷ আমি তো মাত্র ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমি সব কিছু করতে পারব৷ আমাকে নিয়ে আপনাকে কোন চিন্তা করতে হবে না৷ ”

নির্বণ নিয়তির মুখে আঙ্গুল দিয়ে বলে উঠে, ” দুই লাইন বেশি বুঝার কোন দরকার নেই৷ ডক্টর বলেছে তোমাকে রেস্ট নিতে৷ সো তুমি বসে বসে রেস্ট নিবে৷”

— পারবা না আমি বসে বসে রেস্ট নিতে৷ বসে থাকতে থাকতে আমি গোল মোলু হয়ে যাচ্ছি৷ পরে তো আমি ডায়াবেটিস রোগী হয়ে যাব৷

— নিয়তির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” একদম বাজে কথা বলবে না৷ তুমি মোটু হও বা চিকন হও আমার কোন সমস্যা নেই৷ তুমি আমারই থাকবে সারা জীবন। আর হ্যাঁ ডায়বেটিস তোমার ধারের কাছেও আসতে দিবো না৷

নিয়তি কিছু বলার আগেই নির্বণ নিয়তিকে পাঁজা কোলায় তুলে নিয়ে৷ নিয়তির চোখের দিকে তাকিয়ে নিয়তিকে চোখ টিপল দেয়৷ নিয়তি লজ্জায় নির্বণের বুকে লুখ লুকায়৷
নির্বণ নিয়তিকে দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ নিয়তিকে নিয়ে এক পা করে সিঁড়ি দিয়ে নেনে যাচ্ছে নির্বণ৷ নিয়তিকে সোফায় বসিয়ে তার পাশে বসে পড়ে নির্বণ৷

— সকলকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে, ” আপনার দেখে ম্যাম আপনাদের ছাড়া একদম থাকতে পারছিল না৷ তাই বাধ্য হয়ে আপনাদের কাছে নিয়ে আসলাম৷

নির্বণ নিয়তির হাত ধরে বসে সবার সাথে গল্প গুজবে মেতে উঠে৷ সকলের সাথে হাসি তামাশা করে দুপুরে গাড়িয়ে রাত্রি হয়ে যায়। নির্বণ নিয়তিরকে খাবার খাইয়ে আবার পাঁজা কোলা করে রুমে নিয়ে আসে৷

__________

— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” আপনি কি আমাকে একটিও ভালোভাবে কথা বলার সুযোগ দিবেন না৷ সব সময় আমার নামের দোষ ধরতেই থাকেন৷”

নিয়তির কোন কথায় পাত্তা না দিয়ে নির্বণ নিয়তির দিকে একটা শাড়ি বাড়িয়ে দেয়। নিয়তির চোখ রসে গোল্লায় পরিণত হয়ে। নিয়তি বুঝতে পারছে না নির্বণ কি করতে চাই?

— নিয়তি বিষ্মণ হয়ে বলে উঠে, ” আমি রাতে শাড়ি দিয়ে কি করব? আমি এই পোশাকে দিব্যি আছি৷ আমাকে নিয়ে এভার ভাবা বন্ধ করেন৷ সারাদিন শুধু আমাকে নিয়েই ভেবে যাচ্ছেন৷ আপনার কি এখন কোন কাজ নেই?”

— নিয়তির কোলে মাথা রেখে, ” আমার কোন কাজ নেই এখন৷ আমি অফিসে বলে দিয়েছি আমি অফিসে এখন আসতে পারব না৷ আমি সব কাজ ভিডিও কনফারেন্সে করবো।”

— কিন্তু কেন? আমি তো ঠিক আছি৷ আপনি কাজে মন দেয়৷

— সুইটহার্ট আমার কাছে তুমিই সব। তোমার থেকে আমার কাজ বড় নয়৷ আর হ্যাঁ কোন কথা না বলে শাড়িটা পড়ে আসো।

— আপনি তো জানেন, “আমি ভালোভাবে শাড়ি পড়তে পারি না৷” যতদিন শাড়ি পড়েছি ততদিন আমি ইউ টিউব দেখে পড়েছে। তার উপর বেল্ট লাগিয়ে পড়েছি৷ এখন বেল্ট লাগানো সম্ভব নয়৷

— নিয়তি কোল থেকে মাথা তুলে, ” কোন চিন্তা করতে হবে না৷ এখন তোমাকে এমন টাইট শক্ত পোশাক পড়তে দিতে পারি না৷ তোমাকে আমি শাড়ি পড়িয়ে দিব৷”

— চকিত হয়ে, ” আপনি আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিবেন! আর ইউ ক্রেজি!”

— হুম৷ তো অবাক হওয়ার কি আছে? আমি শাড়ি পড়িয়ে দিতে মানা কোথায়৷

— না মানে… আসলে…

— কোনো ইয়ে অজুহাত শুনতে চাইনা৷ তোমার মুখ থেকে এখন যা কথা বের হবে সব “হুম” বের হবে৷

নিয়তি কোন উপায় না পেয়ে নির্বণের হাতে শাড়ি পড়তে রাজি হয়ে যায়। নিয়তি ওয়াসরুম থেকে পেটিকোর্ট আর ব্লাউজ পড়ে আসে৷

নির্বণ নিয়তিকে সিল্কের শাড়ি পড়িয়ে দিবে৷ আগে কয়েকবার নির্বণ ইউ টিউবে দেখে নেয়৷ নির্বণ শাড়ি পড়ানোর কথা বললে ভুল হবে৷ নির্বন শাড়ি পড়ানো নামে নিয়তির সাথে শয়তানি করে যাচ্ছে। নির্বণ নিয়তি উম্মুক্ত উদরে একটা ডিপ কিস দেয়৷ নিয়তি নিরর্বণে চুল খামচে ধরে।

চলবে….

ভুল ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিবেন৷

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে