#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_০২_০৩
#অধির_রায়
নিয়তি আলমারি খুলে নির্বণের মায়ের কথা মতো বক্সটা নিয়ে আসে৷ তার পর নির্বণের মা যা বলে নিয়তি উত্তর দেওয়ার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না৷
— নির্বণের মা কোমল কন্ঠে বলে উঠেন, ” নিয়তি এই বক্সে একটা পুরাতন ডিজাইনে গহনা আছে। সেটা আজ থেকে তোমার৷ ওই গহনাটা আমার শ্বাশুড়ি মা আমাকে দিয়েছিলেন। উনার মুখ থেকে শুনা ওই গহনা উনাকে উনার শ্বাশুড়ি মা দিয়েছেন৷ এই গহনা আমাদের বাড়ির বউদের ঐতিহ্য ও সম্মান বহন করে। আজ থেকে তুমি এই বাড়ির বউ। তাই গহনাটা আজ থেকে তোমার। ”
নিয়তি কি বলবে বুঝতে পারছে না? নিয়তি তো এই বাড়ির বউ নয়৷ কিভাবে এই বাড়ির ঐতিহ্য বহন করবে? ড্যাবড্যাব করে হাত কাচুমাচু করছে। নিয়তির এমন অবস্থা দেখে নির্বণের মা হেঁসে উঠেন।
— “আরে বোকা মেয়ে ভাবার কিছু নেই৷ তোমাকে আজ থেকে এই বাড়ির দায়িত্ব বহন করতে হবে৷”
— ইতস্ততভাবে বলে উঠে “আসলে মা… আমি এই গহনা নিয়ে কি করব? আপনি বরং এই গহনাটি আপনার কাছে রেখে দেন। আমি এই গহনার ভার বইতে পারব না৷”
— নিয়তির হাতে হাত রেখে, ” আমাকে কি তোমার নিজের মা মনে হয় না? ভেবে নাও আমি তোমার নিজের মা৷ তোমার মা তোমাকে কিছু দিলে তুমি কি ফিরিয়ে দিতে পারবে?”
— নিয়তি টলমল চোখে বলে উঠে, ” ওকে মা৷ আমি এই গহনা সাদরে গ্রহণ করলাম। এখন আপনি বলেন কি খাবেন? আজ থেকে আপনার সব দায়িত্ব আমার।”
মনে মনে বলে উঠে, ” স্যারের সাথে এই গহনা নিয়ে কথা বলতে হবে। আমি চাইনা কাউকে কষ্ট দিতে। ”
— তুমি যা পছন্দ কর আজ থেকে আমি তাই খাবো। তবে বাঙালি খাবার হতে হবে৷ আমি বাঙালি খাবার বেশি লাইক করি৷
— নিয়তি হাসিমুখে বলে উঠে, ” আপনি রেস্ট নেন৷ আমি আপনার জন্য সব ব্যবস্থা করব৷”
নিয়তি নির্বণের মায়ের গায়ে কম্বল টেনে দেয়। এয়ারকন্ডিশনের পাওয়ার একটু বাড়িয়ে দিয়ে নির্বণের রুমে আসে গহনা নিয়ে৷
— নির্বণ অফিসের কাজ করছিল। নিয়তির উপস্থিতি বুঝতে পেয়ে তার দিকে না তাকিয়েই বলে উঠে, ” মার সামনে ভালোভাবে অভিনয় করার জন্য ধন্যবাদ। ”
— নিয়তি অপ্রস্তুতভাবে বলে উঠে, ” কিসের অভিনয়? আমি কোন অভিনয় করিনি৷ যা করেছি সব সত্য ছিল। ”
নিয়তির এমন কথা শুনে নির্বণ নিয়তির সামনে এসে দাঁড়ায়৷ নির্বণের চোখ দেখে নিয়তি বুঝতে পারে সে ভুল বলে ফেলেছে।
— নির্বণ চোখ পাকিয়ে বলে উঠে, ” তো মিস নিয়তি৷ তুমি এখন নিজেকে মিসেস ভাবা শুরু করে দিয়েছো। তুমি ভালো করেই জানো তুমি এখানে অভিনয় করতে এসেছো। ভুলেও আমার দিকে পা বাড়ানোর চেষ্টা করবে না৷”
— নিয়তি ভয়ে ভয়ে বলে উঠে, ” আসলে স্যার… আমি কোনদিন মায়ের ভালোবাসা পাইনি সেজন্য ভুল করে বলে ফেলেছি৷ আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই আপনার প্রতি৷”
— এই কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে রাখতে পারলেই তোমার জন্য ভালো। আমি চাইনা তুমি আমার জীবনে আসো। ইভেন বিয়ের বন্ধনে আমি বাঁধা পড়তে চাই না৷”
নির্বণ নিয়তির হাতে একটা চুক্তিনামার একটা কপি দিয়ে চলে যেতে নিলেই নিয়তি নির্বণের সামনে এসে দাঁড়ায়।
— নির্বণ ব্রো কুঁচকে বলে উঠে, “আমার পথ আটকানোর মানে কি?”
— আমাকে চুক্তিনামা দিয়ে কিছু বুঝাতে হবে না৷ আমি কখনো নিজের লিমিট ক্রস করব না৷ সেজন্য আমি আপনার কাছে এসেছি৷
— কি বলতে চাও তুমি?
— নিয়তি গহনার বক্সটা নির্বণের হাতে দিয়ে বলে উঠে, ” এই গহনা আপনার মা আমাকে দিয়েছেন৷ গহনাটা এই বাড়ির বউদের সম্মান বহন করে৷ আমি নিতে চাইনি। তিনি জোর করে দিয়েছেন৷ উনার মনে কষ্ট না দেওয়ার জন্য নিয়েছি৷”
— তো.. এখন এই গহনা আমি পড়ে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াবো। নিজের কাছে রাখো। গহনার কোন অভাব নেই৷ এটা পছন্দ না হলে গহনা আমি কিনে এনে দিব৷
— আমি সে কথা বলতে চাইনি৷ আমি এই গহনা নিতে পারব না৷ গহনাটি আপনার কাছে রেখে দেন৷ আমি এই বাড়ির বউ নয়৷
— চৌধুরী বাড়ির কেউ কাউকে কিছু দান করলে সেটা ফিরিয়ে নেয় না৷ রেখে দাও তোমার কাছে। তুমি বুঝাতে চাইছো গহনার প্রতি তোমার কোন লোভ নেই৷ গহনার দিকে মন না দিয়ে আমার মায়ের দিকে মন দাও৷
কথাটি বলেই নির্বণ চলে যায়। নিয়তি এই গহনা নিয়ে কি করবে? কিছু না ভেবে গহনাটি নির্বণের আলমারিতে রেখে দেয়৷ গহনা রেখে রুম থেকে বের হতে নিলেই নির্বণের সাথে ধাক্কা খায় নিয়তি৷ ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলেই নির্বণ নিয়তিকে ধরে ফেলে।
নিয়তি কোমরে নির্বণের ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে কিছুটা কেঁপে উঠে। পড়ে যাওয়ার ভয়ে নির্বণের শার্ট চেপে ধরে। নির্বণ নিয়তিকে দাঁড় করিয়ে দেয়।
— নির্বণ চোখে মুখে রাগ করে নিয়ে বলে উঠে, ” ডিজগাস্টিং। চোখ হাতে নিয়ে ঘুর। দেখতে পাওনা।দিলে তো আমার ড্রেস টা নষ্ট করে দিলে।”
— বিনয় স্বরে বলে উঠে, ” এখানে আমার কোন দোষ নেই৷ আপনি অপজিট থেকে আসছেন আমি কিভাবে জানবো? আমি তো রুম থেকে বের হতে নিচ্ছি৷”
— হয়েছে আর ন্যাকা সাজতে হবে না৷ আমি অফিসে যাচ্ছি৷ মিটিং আছে। আর হ্যাঁ তোমাকে এক মাস অফিসে যেতে হবে না৷ এই এক মাসের বেতন আমি দিয়ে দিব৷ তোমার পরিবর্তে আমার নতুন পিএ কাজ করবে।
নিয়তির কোন জবাব না শুনে হন হন করে নির্বণ অফিসে চলে যায়। নিয়তি দাঁড়িয়ে থেকে সেই ধাক্কা লাগার কল্পনা করতে থাকে। কিভাবে নিয়তিকে প্রটেক্ট করল?
__________
নিয়তি নির্বণের মাকে খাইয়ে দিয়ে বলে উঠে, ” মা আজ থেকে আপনাকে আমার কথা মেনে চলতে হবে।”
— নিয়তির দিকে চোখের মনি ঘুরিয়ে, ” আমি আমার সোনা মার কথা কি ফেলতে পারি৷ বলেন সোনা মা আমাকে কি করতে হবে?”
— কিছু করতে হবে না৷ তবে আপনাকে চেষ্টা করতে হবে৷ মনে সাহস জুগাতে হবে৷ আমি আগে একটা ফিজিওথেরাপি হসপিটালে কাজ করতাম। সেখান থেকে আমার এই অভিজ্ঞতা৷ আপনি যদি এইভাবে শুয়ে থাকেন তাহলে আমাকে সুস্থ করা সম্ভব নয়৷
নিয়তির কথা শুনে নির্বণের মায়ের চোখে জল এসে পড়ে৷ প্যারালাইসিসের পর নির্বণের মা এক ভাবে বিছানায় শুয়ে আছে৷ সার্ভেন্টরা নির্বণের মায়ের দেখাশুনা করত৷ প্রকৃতি ডাক দিলে সার্ভেন্টরা এসে সাহায্য করে।
— চোখের জল মুছে দিয়ে, ” না মা কান্না করবেন না৷ চোখের জল আপনাকে দুর্বল করে তুলবে। এখন থেকে চোখে জল নয়৷ মনে সাহস জোগাতে হবে। ”
— মুচকি হেঁসে, ” কিন্তু মা ফিজিওথেরাপি দিয়ে আমার কোন কাজ নেই৷ আর তো মাত্র ২৭ টা দিন আছি এই দুনিয়ায়।”
— ক্ষেপে বলে উঠে, ” একদম এমন কথা বলবেন না৷ আপনাকে আমি বলেছি না “রাখে হরি মারে কে?” আপনার কিছু হবে না৷”
— আমার সোনা মা আমার কাছে থাকলে আমার কিছু হবে না৷ তুমি তো মা দুর্গা।
— হয়েছে আর আমাকে কিছু বলতে হবে না৷ এখন আপনার কাজ। আপনাকে এখন উঠে বসতে হবে৷
— অবাক চোখে তাকিয়ে, ” তুমি কি ঠিক আছো? আমি কি করে উঠে বসবো। তুমি ভালো করেই জানো আমি উঠে বসতে পারব না৷”
— চোখ পাকিয়ে বলে উঠে, ” আমি কোন কথা শুনতে চাইনা। আমার কথামতো কাজ করতে হবে। এটাই আমার লাস্ট কথা৷” আমি সময় নষ্ট করতে চাই না৷ আজ থেকেই আপনার টেইনিং শুরু।
— ওকে আমাকে সাহায্য করতে হবে তো।
নিয়তি ধীরে ধীরে নির্বণের মাকে তুলে বসায়৷ নির্বণের মা ব্যথায় কেঁদে ফেলে। উঠতে খুব কষ্ট হচ্ছে। উঠতে না পেরে নিয়তির হাত চেপে ধরে। নিয়তি হাতে প্রচুর ব্যথা পাচ্ছে। নিয়তির সেদিকে কোন খেয়াল নেই৷ নিয়তির উদ্দেশ্য হলো সুস্থ করা৷ বহু কষ্টের পর নিয়তি তার কাছে সফল হয়৷
— নিয়তি চোখের জল মুছে দিয়ে, ” মা আপনাকে আমি বলেছি চোখে জল আনবেন না৷ চোখের জল মানুষকে দুর্বল করে তুলে।”
— মা আমি আর পারছি না৷ প্লিজ আমাকে আজকের মতো ছেড়ে দাও। একদিনে এতটাই আমার জন্য অনেক কষ্টকর।
— ছেড়ে দিতে পারি৷ তবে আপনাকে এভাবে দুই ঘন্টা বসে থাকতে হবে। আমার দুই ঘন্টা বাহিরে কাজ আছে। কাজ শেষ করেই ফিরে আসবো।
— সোনা মা তুমি নতুন বউ। এমন সময় বাহিরে যাওয়া ঠিক হবে না৷
— মা ডোন্ট ওরি। আমার কিছু হবে না৷ মা আমি একজন বউ হওয়ার সমস্ত দায়িত্ব পালন করব৷ তেমনি আমাকেও বাহিরে দুই ঘন্টা সময় দিতে হবে। আমি যদি ঘরে বসে থাকি তাহলে তো কাজ আটকে থাকবে।
— মাথায় হাত রেখে, ” আমি তোমাকে আশীর্বাদ করছি তুমি ঘরে বাহিরে দু’টোতেই পারদর্শী হও। অল দ্যা বেস্ট।
নিয়তি নির্বণের মায়ের কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়। একজন সার্ভেন্টকে নির্বণের মায়ের রুমে রেখে যায়।
__________
নির্বণ ডাইনিং রুমে আসতেই নিয়তি দৌড়ে নির্বণের কাছে যায়৷ নিয়তির এমন ব্যবহারে নির্বণ কিছুটা বোকা বনে যায়৷
— মুচকি হেঁসে আনন্দের সাথে বলে উঠে, ” স্যার আপনার জন্য একটা সুখবর আছে। ”
— চোখ ছোট করে, ” আমি বলেছিলাম বাড়িতে আমাকে স্যার বলে সম্মোধন করবে না৷ ”
— নিচু গলায় বলে উঠে “সরি! আসলে একটু সময় লাগবে সব কিছু মানিয়ে নিতে।”
— তুফান মে এখন বল, কি বলতে চাও? আমার জন্য কি সুখবর আছে?
— সেজন্য আপনাকে চোখ বন্ধ করতে হবে৷
— হোয়াট? আমি চোখ বন্ধ করব কেন?
— হাত কাচুমাচু করে, ” আপনি এত রেগে যাচ্ছেন কেন? আপনি নিজের চোখে দেখতে পাবেন৷ ”
— ওকে। আমি চোখ বন্ধ করছি৷
নির্বণ চোখ বন্ধ করতেই নিয়তি নির্বণের চোখ চেপে ধরে। এতে নির্বণ খুব রেগে যায়৷
— হোয়াট দ্যা হ্যাল। তোমার সাহস কি করে হলো আমার চোখ ধরার?
— সরি! আমি আমার স্বার্থের জন্য কিছু করছি না৷ যা করছি আপনার জন্য৷ তাই নিজের রাগটা একটু কন্ট্রোল করেন।
নির্বণের চোখ ছেড়ে দিতেই নির্বণের চোখে জল এসে পড়ে। নির্বণ খুশি হয়ে নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে।
চলবে…..
গতকাল প্রণামের জায়গায় সালাম লেখা হয়েছিল।সেজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমি ভেবেছিলাম সালাম লিখলে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। ভুল ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
ঈদের শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক।
#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_০৩
#অধির_রায়
নির্বণের চোখ ছেড়ে দিতেই নির্বণের চোখে জল এসে পড়ে। নির্বণ খুশি হয়ে নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে।
নির্বণের কোন দিকে তেমন খেয়াল নেই৷ এক মুহুর্তের মাঝে ভুলে গেছে তাদের ছাড়া এখানে তৃতীয় কোন ব্যক্তি আছে৷ নির্বণ তার মায়ের কাশির শব্দে নিয়তিকে ছেড়ে দেয়৷
— নির্বণ আনন্দের সাথে বলে উঠে, ” নিয়তি আমি খুব খুব খুশি। তুমি আজ আমার মাকে বসাতে সক্ষম হয়েছো। তোমার এই ঋণ আমি কোনদিন শোধ করতে পারব না৷ ”
— উনি আমারও মা হন৷ আমি আমার মায়ের জন্য সব রকম চেষ্টা করব৷ কিছুতেই উনাকে এমন অবস্থায় থাকতে দিব না৷ আমি উনাকে ঠিক করে তুলবই৷
— কিন্তু নিয়তি ডাক্তার তো বলেছিল….
— আপনি নিশ্চয় ভুলে গেছেন আমি আপনার অফিসে কাজ করার আগে আমি ফিজিওথেরাপি হসপিটালে কাজ করেছি৷ সেখান থেকে আমার এমন অভিজ্ঞতা। প্যারালাইসিস বলতে কিছু হয় না৷ মানুষের অঙ্গ কাজ বন্ধ করে দেয় কিন্তু রক্ত চলাচল নয়৷ তখন কোন কিছুই সাহায্যে সেই অঙ্গের অনুভূতি জাগাতে পারলে ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায়৷
— নির্বণ নিয়তির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে নিয়তির হাত ধরে , ” নিয়তি প্লিজ তুমি আমার মাকে সুস্থ করে দাও৷ আমি তোমার কাছে এর থেকে বেশি কিছু চাই না৷ আমার মা আমার পৃথিবী।”
— নিয়তি বড় করে একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে উঠে, ” ডোন্ট ওরি। আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে ট্রাই করব৷ আমি মাকে সুস্থ করেই তুলবো।”
নিয়তির হাত ছেড়ে দিয়ে নির্বণ তার মার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে৷ নির্বনের মাথায় নির্বণের মা হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে। নিয়তি দূরে দাঁড়িয়ে থেকে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে। এভাবে সে কোনদিন মায়ের ভালোবাসা পাই নি৷
— মা আমি আজ খুব খুশি। আমি কতটা খুশি তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না৷ (নির্বন)
— শান্ত কন্ঠে বলে উঠেন, ” আমি চাই আমার ছেলে সব সময় সুখী থাকে যেন৷ সৃষ্টি কর্তার কাছে আমার একটাই চাওয়া৷”
নিয়তিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে, ” নিয়তি তুমি দূরে দাঁড়িয়ে আছো কেন? কাছে আসো।”
নিয়তিকে ডাক দেওয়াতে নিয়তি যেন হাতের তলায় চাঁদ পায়৷ নিয়তি এক প্রকার দৌড়ে নির্বণের মায়ের কাছে যায়৷
— নিয়তি নির্বণের মাকে জড়িয়ে ধরলে নির্বণ কিছুটা ইতস্ততভাবে বলে উঠে, ” মা আমি আসছি৷ অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়নি৷ ”
— নির্বণের মা নির্বণের মাথায় হাত রেখে, ” ওকে বাবা৷”
নির্বণ দরজার কাছে এসে আবার থেমে যায়৷ মার কাছে এসে বলে উঠে, ” মা আজ আমাদের কোম্পানি একটা বিশাল বড় প্রজেক্টের কাজ পেয়েছে৷ এতে লাভ থাকবে ১ কোটি টাকার বেশি৷ আমি সব টাকা কর্মচারীদের বোনাস হিসেবে দিয়ে দিব৷”
— মহান কাজের কথা ভেবেছো তুমি। কর্মচারীরা এতে খুশি থাকবে। তোমার বাবাও মাঝে মাঝে এমন সিদ্ধান্ত নিত৷ অল দ্যা বেস্ট।
___________
নির্বণ ফ্রেশ হয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হয়৷ খালি গায়ের জলের ফোঁটা মুক্ত মতোর ঝলমলে করছে৷ টাওয়াল প্যাঁচিয়ে রুমে আসে৷ এমন সময় রুমে বসে ছিল নিয়তি৷
নিয়তি নির্বণকে খালি গায়ে দেখে জোরে চিৎকার করে উঠে। নিয়তির চিৎকার শুনে নির্বণ দৌড়ে এসে নিয়তির মুখ চেপে ধরে।
— চোখ পাকিয়ে বলে উঠে, ” এভাবে চিৎকার করার মানে কি?”
— উম… উম …
— কোনদিন কি আমাকে দেখো নি? আজ কি প্রথম দেখছো? কি হলো কথা বলছো না কোন?
নিয়তি হাত দিয়ে তার মুখের দিকে ইশারা করে৷ নিয়তি ইশারা করে বুঝিয়ে দেয় তার মুখ চেপে ধরে আছে। মুখ চেপে ধরলে কি করে কথা বলবে?
নিয়তি মুখ ছেড়ে দিলেও নিয়তিকে ছেড়ে দেয়নি৷ নিয়তি ঠিক একইভাবে জড়িয়ে ধরে আছে।
— লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলে উঠে, ” আপনি এভাবে খালি গায়ে বের হয়েছেন কেন?”
— ক্ষেপে বলে উঠে, ” তুমি আমার রুমে কি করছো?”
— আমি আপনার রুমে ইচ্ছা করে আসিনি৷ আমি রাতে কোথায় ঘুম আসবো ? বাড়ির সবাই তো জানে আপনি আমার হাসব্যান্ড। এখন আমি কি করব?
নির্বণ নিয়তিকে ছেড়ে দিতেই নিয়তি আবার চিৎকার করতে নেয়৷ নির্বণ এবার নিয়তিকে সামনে থেকে মুখ চেপে ধরে৷
— চোখ পাকিয়ে বলে উঠে, ” এই মেয়ে তুমি চিৎকার ছাড়া আর কিছু করতে পারো না৷”
— আপনার লজ্জা করে না একটা মেয়ের সামনে এভাবে খালি গায়ে ঘুরে বেড়াতে।
— নির্বণ চোখ বড় করে, ” আমাকে খালি গায়ে দেখে তোমার লজ্জা করছে। আমি কি মেয়ে যে খালি গায়ে থাকতে লজ্জা পাবো।”
— ইতস্ততভাবে শান্ত গলায় বলে উঠে, আপনি মেয়ে নয়৷ কিন্তু আপনার কোন বুদ্ধি নেই৷ আপনি একটা মাথা মোটা৷ মেয়েদের সামনে এভাবে খালি গায়ে যেতে নেই৷ ”
— নির্বণ অট্টাহাসি দিয়ে, ” আমি খালি গায়ে থাকলে তোমার লজ্জা লাগে। তাহলে তো আমি সব সময় খালি গায়েই থাকবো। তাহলে তোমার মাঝে লজ্জার ভাব ফুটে উঠবে৷ আমার তো কোনদিন মনে হয়নি তোমার লজ্জা বলতে কিছু আছে?”
— চোখ পাকিয়ে বলে উঠে, ” কি বললেন আপনি? আমার লজ্জা নেই। আমাকে কোন দিক থেকে মনে হয় আমার লজ্জা নেই।”
— লজ্জা থাকলে এভাবে তুফান মে হতে না৷ কথা বলতে নিলে তো থামতেই চাও না৷ তুমি একটা টকেটিভ গার্ল।
— নিয়তি চেচিয়ে বলে উঠে, ” দূরে সরে দাঁড়ান৷ এভাবে আমাকে চেপে ধরে আছেন কেন? আপনার লজ্জা করে না, আমাকে এভাবে চেপে ধরে আছেন৷”
নির্বণ নিয়তিকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে আসতে নিলেই নির্বণের পা স্লিপ কাটে। নির্বণ নিয়তিকে নিয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়৷ নিয়তির ঠোঁট জোড়া নির্বণের ঠোঁটে লেগে যায়৷ দু,জনের চোখ কলকাতার রসে গোল্লায় মতো হয়ে যায়৷ কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না? একে অপরকে দেখে যাচ্ছে।
নিয়তি নিজেকে সংযত করে নির্বণের উপর থেকে উঠে যায়৷ নিয়তি লজ্জা পেয়ে রুম থেকে বাহিরে চলে যায়৷ নির্বণ ফ্লোর থেকে উঠে টু কোয়াটার এন্ড ট্রি শার্ট পড়ে নেয়৷ বিছানা গা এলিয়ে দিতেই নিয়তির কথাগুলো কানে বাজে৷ লিপ কিস চোখে ভাসে।
নির্বণ তারাতাড়ি বিছানা থেকে উঠে নিয়তির কাছে যায়৷ কোথায় গিয়ে ঘুম আসবে নিয়তি সেটা মাথায় আসে। ডাইনিং রুমে এসে দেখে নিয়তি সোফায় বসে ঘুমিয়ে পড়েছে।
— স্যার ম্যাম তো এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছে৷ আপনাকেই ডাকতে যাচ্ছিলাম। সার্ভেন্ট
— তোমাদের সবার খাওয়া হয়ে গেছে।
— স্যার আমরা সবাই খেয়ে নিয়েছি৷ আমাদের কাউকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না৷ ম্যামকে ডেকে দেয়৷
— না লাগবে না৷ আমি তোমার ম্যামকে নিয়ে যাচ্ছি৷
— ওকে স্যার।
নির্বণ তার মায়ের রুম থেকে ঘুরে আসে৷ তার মায়ের রুমের নার্স সার্ভেন্ট দুইজনেই আছে৷ নির্বণ নিশ্চিত হয়ে আসে৷ নিয়তির ঘুম ভেঙে যেন না যায় সেজন্য নির্বণ নিয়তিকে কোলে করে রুমে নিয়ে আসে৷ রুমে নিয়ে এসে নিয়তিকে বিছানায় শুয়ে দেয়৷ নির্বণ চলে আসতে নিলেই নিয়তি নির্বণের হাত ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।
নির্বণ কোন উপায় না পেয়ে নিয়তির পাশে বসে থাকে৷ নিজের হাত ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু নিয়তি কিছুতেই হাত ছাড়ছে না৷ আজ নির্বণ নিয়তিকে এত কাছ থেকে দেখছে। নিয়তির চেহারা মায়ায় জড়ানো। দেখলে মন ভরে যায়৷ ঘুমের মাঝে একদম নিষ্পাপ লাগছে।
নির্বণ কখন যে নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে জানা নেই৷
__________
আঁধার কেটে আসে দিনের আলো। শুরু হয় মানুষের জীবনে নতুন অধ্যায়। সকলে ছুটে চলে নিজ নিজ কাজে। জীবনটাকে উজ্জ্বল করার জন্য সকলে ব্যস্ত হয়ে যায়। শান্ত পরিবেশ ধীরে ধীরে ব্যস্ততায় পরিণত হয়৷
পাখির কিচির মিচির শব্দে নিয়তির ঘুম ভেঙে যায়৷ ঘুম ঘুম ভাবে নিয়তি অনুভব করে কেউ তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে৷ নিয়তি ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে নির্বণ তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে৷
নির্বণকে এত কাছে দেখতে পেয়ে নিয়তি রেগে যায়। নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বুঝার চেষ্টা করে রাতের ঘটনা৷ রাতে তার সাথে কি হয়েছে? নিয়তির মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। নিয়তি কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না সে এখানে কি করে আসলো।
— নিয়তি নির্বণকে ধাক্কা দিয়ে বলে উঠে, ” আপনার সাহস কি করে হলো আমার সর্বনাশ করার? আপনি আমার দুর্বলতার সুযোগ নিলেন।”
— নির্বণ ঘুম ঘুম চোখে, ” কি হয়েছে মা? প্লিজ মা আর একটু ঘুমাতে দাও না৷ প্লিজ ডিস্টার্ব কর না৷”
— নিয়তি চিৎকার করে, ” আমি আপনার মা নয়৷ আমি নিয়তি।”
— নিয়তি নাম শুনে নির্বণ ঘুম থেকে উঠে বসে৷ হুংকার দিয়ে বলে উঠে, ” সকাল বেলা আমার ঘুম না ভাঙলে হতো না৷ তোমাকে এই কাজের জন্য এখানে নিয়ে আসা হয়নি৷”
— নিয়তি চোখ পাকিয়ে, ” আমি কি আপনার হুংকারে ভয় পাই৷ আপনি কিভাবে পারলেন আমার সর্বনাশ করতে৷” রাতে আপনি আমার সাথে… বলেই কান্না করে দিল।
— স্টপ। তুমি নিজেকে কি মনে কর? তোমার প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই৷
— ইন্টারেস্ট নেই৷ তাহলে এভাবে জড়িয়ে ধরে শুয়ে ছিলেন কেন? আমি তো এখানে আপনার রুমে ছিলাম না৷
— হ্যাঁ তুমি আমার রুমে ছিলে না৷ তুমি ডাইনিং রুমের সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছিলে। তোমাকে আমি এখানে নিয়ে এসেছি৷
— আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেন? আপনার উদ্দেশ্য ভালো ছিল না তাই আপনি এখানে নিয়ে এসেছেন!
— আমার কোন বাজে উদ্দেশ্য ছিল না৷ আমি সবার সামনে তোমাকে স্ত্রীর পরিচয় দিতেই এখানে নিয়ে এসেছি৷
— এই তো আসল কথা ভের হয়েছে৷ আপনি কি আমাকে বিয়ে করেছেন? আমাকে কিভাবে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে চান?
— আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা কর৷
— কি বুঝার চেষ্টা করব৷ আপনি একটা ধর্ষক।
ধর্ষক নাম শুনে নির্বণের মাথার রক্ত চেপে উঠে। নির্বণ বেশ রেগে যায়৷ নির্বণ নিয়তির গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
— নিয়তির মুখ চেপে ধরে বলে উঠে, ” সব সময় বেশি বুঝ কেন? আমি তোমার সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়নি৷” তোমার সাথে ঘুমানোর কোন ইন্টারেস্ট ছিল না৷ তুমি আমার হাত ধরে রেখে ছিলে। তাই বাধ্য হয়ে তোমার সাথে ঘুমাতে হয়েছে।
নির্বণ বিছানা থেকে উঠে বেলকনিতে চলে যায়৷ ভাবতে থাকে এই মেয়ে শুধু নেগেটিভ ভাবে কেন সব সময়? মেয়ে হয়েছে বলেই সব সময় নেগেটিভ ভাবতে হবে।
— নিয়তি নিজের গালে হাত রেখে মনে মনে বলে উঠে, ” সরি স্যার! আমি আপনাকে জেনে বুঝে কষ্ট দেয়নি৷ আমি মেয়ে, আমি সব সময় নিজের সম্মান নিয়েই ভাবি৷ মেয়েদের সম্মান মেয়েদের কাছে অমূল্য সম্পদ।
চলবে….
রোমান্টিক + নিরামিষ দুটোই দিয়েছি৷ ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।